পদার্থ বিজ্ঞান

১।অতিবেগুনী রশ্মি (Ultraviolet Ray) কি?
বর্ণালীতে বেগুনী আলোর বাহিরে যে অদৃশ্য আলো, যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 3.8 x 10 মিটার থেকে 6 × 10 মিটার পর্যন্ত তাকেই অতিবেগুনী রশ্মি বলে। অণু ও পরমাণু থেকে তড়িৎ মোক্ষনের সময় এই তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। সূর্যের আলেতে এই রশ্মি -10, থাকে তবে তার অধিকাংশই বায়ু শোষণ করে রাখে। বেশী তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের এই রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। এই রশ্মি চোখের পক্ষে ক্ষতিকর সেজন্য ওয়েলডিং করার সময় রঙিন চশমা পড়া উচিৎ। এই রশ্মি জীবাণুনাশক। সর্বপ্রকার আলোর উৎস থেকেই কমবেশি এই রশ্মি পাওয়া যায়। ফ্লুরেসেন্ট টিউবে এই রশ্মি শোষণ করিয়া দৃশ্য আলো সৃষ্টির জন্য টিউবেরভিতরের দেওয়ালে ফ্লুরেসেন্ট পদার্থ লাগিয়ে দেওয়া হয়। চর্বিযুক্ত পদার্থের উপর এই রশ্মি পড়লে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়।
 


২। অপরাধী সনাক্ত করার সর্বাধুনিক পদ্ধতি কি?
অপরাধী সনাক্তকরণে লাইডিক্টেটর পদ্ধতির উপর 100% আস্থা রাখা যায় না তাই এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে নাম তার ব্রেন ফিংগার প্রিন্টিং। এই পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তির মস্তিষ্কে জমা তথ্যাবলী বের করে আনা যায়। এর জন্য ঐ ব্যক্তির মনঃসংযোগের প্রায়োজন হয় না। নির্দিষ্ট ব্যক্তির মাথায় বসিয়ে দেওয়া ২য় 24 টি ইলেকট্রোড যুক্ত একটি টুপি তার সামনে থাকে কমপিউটার যাতে ফুটে উঠবে অপরাধ সংক্রান্ত ছবি ও তথ্য, এর প্রতিক্রিয়া সংকেত ইলেকট্রোডগুলির মাধ্যমে পড়ে নেবে এই ইইজি যন্ত্র (Electro Encephalogram) ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাম। বিশেষজ্ঞগণ পরবর্তি সময়ে তথ্য ও সংকেত বিচার, বিশ্লেষণ করে অপরাধীকে সনাক্ত করে থাকেন।
 


৩।অবলোহিত (বিকিরণ রশ্মি) (Infrared Ray) কি?
যে অদৃশ্য আলো বা বিকিরণে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 103 মিটার থেকে -10 7.8 x 10 মিটার পর্যন্ত তাদের কে অবলোহিত রশ্মি বলে।বস্তু উত্তপ্ত হলে তা থেকে এই রশ্মি নির্গত হয়। ঐ রশ্মি কোন বস্তুর উপর পড়লে উত্তাপের সৃষ্টি হয়। এইজন্য থার্মোকাপল-এর সাহায্যে এই রশ্মির অস্তিত্ব নির্ণয় করা যায়। কোনও কাপড়ের রক্তের দাগ ধুয়ে ফেললে বা কাগজের লেখা তুলে দিলে তা এই রশ্মি দ্বারা ছবি তুললে তা ধরা সম্ভব, এইজন্য এই রশ্মি অপরাধ বিজ্ঞানের কাজে ও জ্যোতির্বিদ্যা ও শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। এই রশ্মিও বিশেষ ধরনের ফিল্টারের লেন্স ব্যবহার করে প্রায় ৫০ কিমি দূরের বস্তুর ফটো তোলা সম্ভব।
 


৪। আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে ট্রানজিস্টার রেডিওতে শব্দ হয় কেন?
বেতার ও টিভি সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে 0.3 মিটার থেকে কয়েক কিমি তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের গ্রাহক যন্ত্রে (রেডিও, ট্রানজিস্টারে) ওই তরঙ্গের তড়িৎ সংকেত আলাদা হয়ে শব্দ তরঙ্গে রূপান্তরিত হয় এবং শব্দ শুনি। যখন বিদ্যুৎ চমক হয় তখন ও বেতার তরঙ্গ তৈরী হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পরে এবং আমাদের গ্রাহক যন্ত্রে পক্ষে অনুকুল সেই তরঙ্গগুলি ঢুকে পরে এবং অবাঞ্ছিত শব্দ সৃষ্টি করে, তবে শুধু বিদ্যুৎ চমকালেই নয় বাড়ীতে সুইচ, পাখা খারাপ থাকলে বা ইলেকট্রিক স্পার্কেও এরূপ শব্দ শোনা
যায়।


৫। অ্যান্টিম্যাটার কি?
বিজ্ঞানী ডিরাকের তত্ত্ব থেকে জানা যায় যে প্রত্যেক কণার একটি বিপরীত কণা আছে, তাদেরকে অ্যান্টিকণা বলা হয়। বাস্তব কণার সাথে বিপরীত কণার শুধু পার্থক্য বৈদ্যুতিক চার্জ বিপরীত। ইলেকট্রনের বিপরীত কণা পজিট্রন, আবিস্কার করেন অ্যান্ডারসন।প্রোটন ও নিউট্রনের বিপরীত কণার নাম অ্যান্টি প্রোটন ও অ্যান্টি নিউট্রন এই দুই কণাই আবিস্কৃত হয়েছে। কণার সাথে বিপরীত কণার সাক্ষাৎ হলেই তাদের বিনাশ হবে পড়ে থাকবে শুধু ফোটন অর্থাৎ তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি। আর বিপরীত কণা একত্রিত করলে বিপরীত পদার্থ তৈরী হবে, কিন্তু বাস্তবে এখনও বিপরীত পদার্থের সন্ধান পাওয়া যায়নি। হাইড্রোজেন বোমাতে মাত্র 1% ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয় কিন্তু যদি পদার্থ ও বিপরীত পদার্থ একে অপরের সাথে স্পর্শ ঘটে তবে 100% পদার্থ শক্তিতে রূপান্তরিত হবে তখন শক্তির পরিমাণ কত হবে?!!!


৬। আবহাওয়া অফিস থেকে কিরূপে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকে?
কোন স্থানের কোন নির্দিষ্ট সময়ের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য কতগুলি বিষয়ের বিস্তারিত তথ্য জানা প্রয়োজন। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, বেলুন, উপগ্রহ থেকে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা, চাপ, আদ্রতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বায়ুর বেগ, নিকটবর্তী ও দূরবর্তী অঞ্চলের বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন উচ্চতার তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তারপর কমপিউটারের সাহায্যে আবহাওয়ার মানচিত্র অংকন করা হয়। বিজ্ঞানীগণ ঐ মানচিত্র বিশ্লেষণ করে পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন, তা রেডিও, টিভির মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে আবহাওয়া বিজ্ঞান এখনও অপরিণত। বায়ুমন্ডলের বহু জানা, অজানা চলরাশির উপস্থিত থাকার জন্য নিখুঁত বা সঠিক আভাস দেওয়া সম্ভব হয় না তবে পূর্বাভাস যদি দুই তিনঘন্টা বা তার কম সময় দেওয়া হয় তবে অনেকটাই নিখুঁত বা সঠিক হতে পারে।


৭। অ্যান্টেনা কি? (Antenna) ?
ইলেকট্রনিকের সাহায্যে বৈদ্যুতিক সংকেত বা সংবাদ আদান প্রদানের জন্য ছোট বা বড় যে কোন ব্যবস্থাতেই অ্যান্টেনা থাকে। এর প্রধান কাজ তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ প্রেরণ ও গ্রহণ করা। আমরা সাধারণত ট্রানজিস্টার রেডিও, টিভি, ওয়ারলেস ভ্যানে, বেতার সম্প্রচার কেন্দ্রে এবং আজকাল মোবাইল ফোন পরিষেবার জন্য বড় বাড়ীর ছাদে বা সুউচ্চ টাওয়ারে অ্যান্টেনা দেখে অভ্যস্ত। এছাড়া মোবাইল ফোনে, রাডার, রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবস্থাতেও অ্যান্টেনা ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টেনার আকার ও আকৃতি, কি ধরনের সংকেত প্রেরণ ও গ্রহণ করা হবে তার উপর নির্ভর করে। অ্যান্টেনা একটি দন্ডাকৃতি, দুটি দন্ড যুক্ত, গোলাকার,ডিশ, অথবা গোলাকৃতি তৈরী করা হয়। কিন্তু ওই আকার ও আকৃতি ডিজাইন তৈরীতে গণিতের নিয়ম ব্যবহৃত হয়ে থাকে।


৮। আর ডি এক্স (RDX) কি?
পুরো কথাটি হল রিসার্চ ডেভলপমেন্ট এক্সপ্লোসিভ। এটি একটি বিস্ফোরক পদার্থ যার রাসায়নিক নাম সাইক্লোনাইট, অনেকস্থানে টি ফোর (T4) বলা হয়। জার্মানীর হান্স হেলিং নামে এক রসায়নবিদ আবিস্কার করেন। মাটির নীচে খনিতে, প্রতিবন্ধক সরানোর কাজে, সামরিক বাহিনীতে বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়। এর ক্ষমতা TNT বিস্ফোরকের চেয়েও শক্তিশালী তবে এর সাথে অন্য পদার্থ মিশিয়ে বিস্ফোরণের ক্ষমতা হ্রাস বৃদ্ধি করা যায়।
 


৯। আলোকরশ্মি কিরূপে তারের মধ্যে দিয়ে যায়?
আজকাল কাঁচ অথবা প্লাস্টিকের সরু তারের মত নল তৈরী করা হচ্ছে যাদের ব্যাসার্ধ 106 মিটার, এদেরকে আলোকবাহী তন্তু (optical fibre) বলে। এই তন্তুর কেন্দ্রিয় অংশ উচ্চমানের প্রতিসারঙ্ক এবং বাহিরে কম প্রতিসারঙ্ক যুক্ত কাচের আবরণ থাকে। ফলে ঐ তন্তুর এক প্রান্তে আলোকের বিন্দু খুব ক্ষুদ্র কোণে আপাতিত হলে তত্তর দেওয়ালে বার বার অভ্যন্তরীন পূর্ণ প্রতিফলিত হয়ে অপরপ্রান্তে পৌছায়। এই তত্তর সাহায্যে বহুদূর পর্যন্ত আলোকীয় সংকেত পাঠানো যায়। আজকাল ফাইবার অপটিকস্ যন্ত্রের সাহায্যে টিভি ও টেলিফোনের বার্তা প্রেরণ করা হয়। এছাড়া এই তত্ত্ব ব্যবহার করে পাকস্থলির অভ্যন্তর পর্যবেক্ষণ করা হয়।
১০। উজ্জ্বল সূর্যালোক থেকে অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করি তখন কিছু সময় দেখতে অসুবিধা হয় কেন?
আমাদের চোখে কতটা আলো প্রবেশ করবে তা নিয়ন্ত্রণ করে চোখের মণি বা তারা। যখন আমরা উজ্জ্বল আলোতে থাকি তখন মণি ছোট হয় কম আলোয় প্রবেশ করে। যখন অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করি তখন কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয় মণি বা তারা বড় হতে যাতে বেশী আলো প্রবেশ করতে পারে এবং পরিস্কার দেখতে পারি। এরূপ ঘটনা সাধারণত দিনের বেলা প্রেক্ষাগৃহে বড় হলঘরে প্রবেশ করলে ঘটে থাকে।


১১। এয়ারোসেল কি?
বায়ুতে যে ভাসমান কঠিন ও তরল সূক্ষ্ম কণা (ব্যাস 10-5 107 cm ) ভেসে বেড়ায় এদের কে এয়ারোসেল বা SPM (সাসপেনডেড্ পার্টিকুলেট ম্যাটার) বলা হয়। প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্টি দুই প্রকারেই এর বৃদ্ধি হতে পারে। তবে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে, সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস, মরুভূমির ধূলিঝড় এবং দাবানলে প্রায় 90% এয়ারোসেল তৈরী হয় বাকী 10% তৈরী হয়। যানবাহনের নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া, কলকারখানার নিঃসৃত ধোঁয়া, ফ্লাইঅ্যাস, কার্বণযুক্ত জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনে সৃষ্ট কার্বনডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইড। কয়লা ও কাঠের দহনে সৃষ্ট ধোঁয়া আরও কত কি? এই কণা ভেদ করে সূর্যের আলো পৃথিবীতে কম আসে ফলে ফসল কম হয়। বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে, এই কণা পাতার উপর জমা হলে সালোক সংশ্লেষে বাধা দেয়। আর মানুষের ফুসফুসের নানা রোগ যেমন শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, লাং ক্যানসার, শ্বাসনালীর ক্ষতি সাধন করে শ্বাসক্রিয়ায় ব্যঘাত ঘটায়।
 


১২। এসি (AC) এবং ডি. সি (DC) কোনটি বেশী বিপজ্জনক?
সাধারণ ধারণা আছে যে, যদি কারো DC বৈদ্যুতিক শক লাগে তবে তাকে ছুড়ে ফেলে দেয় এবং সামান্য ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু AC র ক্ষেত্রে তাকে ধরে বা টেনে রাখে আমৃত্যু পর্যন্ত। এই ধারনার মধ্যে আংশিক সত্য আছে আর তা হল যখন কারোর DC শক লাগে তখন দেহের (reflex) প্রতিবর্তক্রিয়ার জন্য দেহ সরে আসে, দেখে মনে হয় বিদ্যুৎ তাকে সরিয়ে দিয়েছে, কিন্তু AC এর ক্ষেত্রে নার্ভ বা শিরার আক্ষেপ ঘটে অর্থাৎ অসাড় হয়ে নড়াচড়া বা সরে আসতে পারে না এমন কি হাত দিয়ে কিছু ধরা অবস্থায় থাকলে হাতে মুষ্ঠি খুলতে পারে না, মনে হয় বিদ্যুৎ হাত টেনে রেখেছে। এবং অনবরত বৈদ্যুতিক শক্ লাগার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই AC, DC -এর চেয়ে ভয়ানক বিপজ্জনক।


১৩। ওজোন স্তরের ভূমিকা কি?
এই স্তরটি বায়ুমন্ডলের স্ট্যাটোস্ফিয়ারের 20 থেকে 50 কিমি উচ্চতার মধ্যে একটি ছাতার মত আবরণ তৈরী করে সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে জীবকূলকে রক্ষা করে। আধুনিক সভ্যতা সৃষ্ট বিভিন্ন প্রকার গ্যাস ক্লোরো-ফ্লুরো কার্বন (CFC) ইত্যাদি বহুল পরিমাণে হিমায়ন ব্যবস্থা, স্প্রে, রং, প্লাস্টিক শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে, তা থেকে নিঃসৃত ঐ গ্যাস সমূহ অতিবেগুনি রশ্মির সাথে বিক্রিয়া করে ক্লোরিন পরমাণু তৈরি করে যা ওজন বিধ্বংসী। একটি ক্লোরিন পরমাণু ওজনের লক্ষাধিক অণুকে ধ্বংস করতে পারে। এইরূপে ওজন স্তর ক্রমশঃ পাতলা হয়ে ছিদ্র সৃষ্টি করছে, ফলে অতি বেগুনি বেশী পরিমাণে পৃথিবীতে পৌছাচ্ছে। ফলে উদ্ভিদকূলের তথা প্রাণী এবং আমাদের ত্বকে অ্যালার্জি, ক্যান্সার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, চোখে ছানি পড়া, ইত্যাদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। ওজন স্তর রক্ষার জন্য ঐ সদৃশ গ্যাসের ব্যাবহার ক্রমশঃ কমাতে হবে এবং সাথে সাথে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে হবে। 


১৪। কঠিন পদার্থ (চাল, ডাল, আটা, পাউডার ইত্যাদি) উপর থেকে ঢেলে দিলে শঙ্কু আকৃতি স্তূপের আকার ধারণ করে কেন?
তরলের চেয়ে ঐ পদার্থগুলির কণার মধ্যে আকর্ষণ বেশী থাকে যখন উপর থেকে ঢেলে দেওয়া হয় তখন প্রথমত তলের উপর ছড়িয়ে পড়ে এবং যে বরাবর ঢালা হচ্ছে ঐ স্থানে স্তর তৈরী হতে থাকে এবং পরবর্তী পদার্থ ঐ স্তর থেকে নীচের দিকে নামতে থাকে, একেবারে তলের নীচে বৃত্তাকার আকৃতি ধারণ করে এবং মাঝখানটাতে ক্রমশঃ উচু হতে থাকে। পদার্থগুলি তলদেশে নামার ফলে শঙ্কু আকৃতি স্তুপের আকার ধারণ করে। তবে স্তুপের উচ্চতা পদার্থ কণার ভর, আকার ও মসৃণতার উপর নির্ভর করে। 


১৫। কসমিক রে (Cosmic Ray) কি?
বিশ্বের সব জায়গায় অনুভূত, এমনকি সমুদ্রের তলদেশেও এবং অত্যন্ত শক্তিশালী গামারশ্মির চেয়েও উচ্চভেদ ক্ষমতা সম্পন্ন যে রশ্মি তাই কসমিক-বেনামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদেরনিরলস পরিশ্রমের ফলে জানা যায় এই রশ্মির উপাদান প্রধানতঃ প্রোটন কণা এবং এতে কিছু আলফা কণা, নিউট্রন ও মেসন কণা এমনকি ইলেকট্রন কণাও থাকতে পারে। ভূপৃষ্ঠে যে কসমিক রশ্মি পৌঁছায় তার প্রায় 75% ই মেসন কণা। ইহাকে কসমিক রেডিয়েশন বলা হয়। এই রশ্মির উৎস সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনও বিতর্কের অবকাশ আছে। তবে বর্তমানে বহুবিজ্ঞানীর মতে সূর্য ও অন্য নক্ষত্রে চৌম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তনই এই রশ্মির উৎস।


১৬। কোয়ার্ক (Quark) কি? 
আমরা জানি পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা পরমাণু। পরমাণু সৃষ্টি হয় প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রন কণা দ্বারা তৈরী। এদেরকে মৌলিক কণা বলে। আজ পর্যন্ত কয়েক শত মৌলিক কণা আবিষ্কৃত হয়েছে। পদার্থবিদ মারে গেলম্যান (Gell Mann) বলেন এ ক্ষুদ্রকণাগুলি ক্ষুদ্রতর কণা দ্বারা গঠিত। এই কণাগুলির নাম দেন কোয়ার্ক (Quark)। কোয়ার্ক কণা ছয় প্রকারের। নামগুলি হল up, down, strange, charmed, bottom top প্রোটন কণা দুটি up ও একটি down কণা দ্বারা গঠিত। নিউট্রন কণা একটি আপ ও দুটি ডাউন কণা দ্বারা গঠিত। কোয়ার্ক কণার বৈশিষ্ট্য হল এদের আধান ভগ্নাংশিক। যেমন : up কোয়ার্কের আধান 2/3, down -এর আধান – 1/3।


১৭। কাঁচ কি দিয়ে তৈরী হয়?
কাঁচ তৈরীর জন্য প্রধান উপাদান হল সিলিকা, সোডিয়াম ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এছাড়া জিঙ্ক অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড প্রয়োজন। এই পদার্থগুলি গুড়ো করে মিশ্রিত করে চুল্লীতে তাপে গলানো হয়। শেষে ছাঁচে ফেলে যা পাওয়া যায় তাই কাঁচ। অবশ্য রঙিন কাঁচ তৈরীর জন্য লোহা, তামা, কোবাল্ট প্রভৃতির অক্সাইড ব্যবহৃত হয়।


১৮। কাঁচ কি দিয়ে তৈরী হয়?
কাঁচ তৈরীর জন্য প্রধান উপাদান হল সিলিকা, সোডিয়াম ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এছাড়া জিঙ্ক অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড প্রয়োজন। এই পদার্থগুলি গুড়ো করে মিশ্রিত করে চুল্লীতে তাপে গলানো হয়। শেষে ছাঁচে ফেলে যা পাওয়া যায় তাই কাঁচ। অবশ্য রঙিন কাঁচ তৈরীর জন্য লোহা, তামা, কোবাল্ট প্রভৃতির অক্সাইড ব্যবহৃত হয়।


১৯। কৃত্রিম উপগ্রহ কি?
মহাকাশে যে সকল জিনিস নিজস্ব কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে তাদেরকে উপগ্রহ বলে যেমন চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। সৌর জগতে এরূপ 61 টি উপগ্রহ আছে। বিজ্ঞানের নানা সূত্র ও তথ্য থেকে হিসাব করে দেখা গেছে কোন বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট গতিতে নিক্ষেপ করলে বস্তুটি একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে থাকে তখন ঐ বস্তুটিকে পৃথিবীর কৃত্রিম উপগ্রহ বলে। 1957 সালে U.S.S.R কর্তৃক মানুষের তৈরী প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ নিক্ষিপ্ত হয়, নাম তার স্পুটনিক 1। ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহটির নাম ‘আর্যভট্ট’ এবং সর্বশেষটির নাম INSAT 4B । বর্তমানে মহাকাশে 2.5 হাজারের বেশী কৃত্রিম উপগ্রহ কর্মরত অবস্থায় আছে। এর মাধ্যমে বেতার সংকেত, টিভি, টেলিফোন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সামরিক প্রয়োজনে স্পাই উপগ্রহ এবং মহাকাশ গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে গ্লোবাল পজিসনিং সিস্টেম (GPS) 24 টি উপগ্রহ সাহায্যে পৃথিবীর যে কোন স্থানের বস্তুর সঠিক অবস্থান নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে যার কর্তা আমেরিকা।


২০। কৃত্রিম উপগ্রহে নিজেকে ভারহীন মনে হয় কেন?
পৃথিবী কোন বস্তুকে নিজের কেন্দ্রের দিকে যে বলের দ্বারা আকর্ষণ করে তাকে বস্তুটির ওজন বলে। অন্য কোন বলের দ্বারা এই অভিকর্ষ বা অভিকর্ষ বলকে প্রশমিত অর্থাৎ নিস্ক্রিয় করতে পারলেই বস্তুর ওজন শূণ্য হবে। যখন কোন কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে থাকে তখন অপকেন্দ্র নামক বল উৎপন্ন হয়। যেবল অভিকর্ষ বলের সমান ও বিপরীতমুখী হওয়ায় অভিকর্ষ বল প্রশমিত হয় ফলে উহার মধ্যের সকল বস্তুর ওজন শূণ্য হয়। কৃত্রিম উপগ্রহে মহাকাশচারীর ওজন শূণ্য হয় বলিয়া যে তলের উপর অবস্থানে করে তার উপর কোন বল প্রয়োগ করে না, তাই কোন প্রতিক্রিয়া বল অনুভব করে না, সেজন্য নিজেকে ভারহীন বোধ করেন।


২১। কৃত্রিম বৃষ্টি কিরূপে ঘটানো যায়?
বৃষ্টিপাত হওয়ার জন্য প্রয়োজন বায়ুতে জলীয় বাষ্প যা ভাসমান ধূলোবালি ও অন্যান্য কণার গায়ে জমে ছোট ছোট জলবিন্দু আকারে ভাসতে থাকে তাই (মেঘ)। ঐ ছোট ছোট জল বিন্দু যুক্ত হয়ে আকারে বড় ও ভারী হলে অভিকর্যের ফলে নীচে পড়ে তাই বৃষ্টি। কিন্তু যদি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে বায়ুতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা অর্থাৎ মেঘ আছে অথচ কোন কারণে বৃষ্টি হচ্ছে না তখন বিমানে মেঘের মধ্যে শুষ্ক বরফ ছড়িয়ে দিয়ে বা সিলভার আয়োডাইড অথবা খাবার লবণ ছড়িয়ে দিয়ে ছোট ছোট জলকণাকে বড় বড় জল ফোঁটায় পরিণত করে কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঘটানো সম্ভব।


২২। কোল্ড ফিউশন (cold fussion) কি?
হাইড্রোজেন পরমাণু প্রচণ্ড উত্তাপে একত্রিত হয়েহিলিয়াম পরমাণু তৈরী করে এবং প্রচুরশক্তি ও নানা রশ্মি তৈরী করে। একেই ফিউশন বলে। এই বিক্রিয়া ঘটাতে প্রচণ্ড উত্তাপের প্রয়োজন হয়। তা পাওয়া যায় শুধুমাত্র পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে। তাই হাইড্রোজেন বোমার ট্রিগার হল পরমাণু বোমা। পরমাণু বোমাকে নিয়ন্ত্রিত করে বিজ্ঞানীগণ তৈরী করেছেন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। পৃথিবীতে পাঁচশোরও বেশী পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে, কিন্তু ফিউশন বা হাইড্রোজেন বোমাকে নিয়ন্ত্রিত করে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ তৈরী এখনও সম্ভব হয় নি। তবে জাপানের রোক্কাসোতে পৃথিবীর ৪টি দেশ একত্রিত হয়ে নির্মাণ করছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের মধ্যে বির্তকের সূত্রপাত হয়েছে একটি বিষয় নিয়ে নাম তার “কোল্ড ফিউশন”। আমরা জানি, ফিউশন সাধারণ উষ্ণতাতে হয় না, কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানী এস পন্স ও ফ্লাইসম্যান গবেষণাগারে প্যালাডিয়াম ক্যাথোড দিয়ে ভারী জল বিশ্লেষণ করার সময় 10% বাড়তি উত্তাপের সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের মতে কোল্ড ফিউশনের জন্য ঐ উত্তাপের সৃষ্টি। এ নিয়ে পুরোদমে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। আগামী দিনে কোল্ড ফিউশন অর্থাৎ স্বাভাবিক উষ্ণতাতেই ফিউশন এবং তাতে উৎপন্ন তাপকে মানব কল্যাণে ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে যেমন বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হবে তেমনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেল তৈরী করে বিদ্যুৎসঙ্কট দূর করা সম্ভব হবে।


২৩। কোয়ার্টজ কি?
মাটির অন্যতম উপাদান হল সিলিকন ডাই অক্সাইড। ইহা স্ফটিকাকার ও অনিয়তকার উভয় প্রকার হয়ে থাকে। এর মধ্যে স্ফটিকাকার যে অংশটি তাকে কোয়ার্টজ বলা হয়। এদের গলনাঙ্ক খুব বেশী। পাথরহিসেবে প্রিজম, লেন্স এবং পালিসের কাজে ব্যবহৃত হয়।


২৪। কোয়ান্টাম থিওরী কাকে বলে?
আধুনিক পদার্থবিদ্যার একটি মূলস্তম্ভ হল কোয়ান্টাম তত্ত্ব। 1900 সালে জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্সপ্লাঙ্ক কৃষ্ণবস্তুর (Blackbody) বিকিরণ লক্ষ্য করে বলেন যে কৃষ্ণবস্তু কর্তৃক শক্তি বিকিরণ অথবা শোষণ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে হয় না, এটি বিচ্ছিন্ন ভাবে হয়। অর্থাৎ এক বস্তু থেকে অপর বস্তুতে শক্তির স্থানান্তর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে না হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে হয়। উচ্চশক্তির বস্তু প্যাকেট প্যাকেট শক্তি বিকিরণ করে ও অন্য বস্তু ঐ শক্তি একই প্রকারে গ্রহণ করে। শক্তির এই প্যাকেটকে বা শক্তিকণিকাকে তিনি নাম দেন কোয়ান্টাম। এই তত্ত্বানুসারে প্রতিটি কোয়ান্টামের শক্তি (E)-ই যার কম্পাঙ্কের (7) সমানুপাতিক হয়। E x y বা E = hy, (h = প্লাঙ্কের ধ্রুবক)। অর্থাৎ এই তত্ত্বের সহায়তায় বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তার ফটোইলেকট্রিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।


২৫। গাড়ীর টায়ারে বিভিন্ন রকমের নক্সা থাকে কেন?
গাড়ীর চাকাতে যে নক্সা করা হয় তার আসল উদ্দেশ্য অমসৃণ করা, রাস্তার সাথে ঘর্ষণ বৃদ্ধি করার জন্য। ঘর্ষণ খুবই কম হলে গাড়ীর চাকা ঘুরিবার সময় পিছলে যাবে। এতে চাকা ঘুরবে কিন্তু গাড়ী এগোবে না। চাকা অমসৃণ হলে ঘর্ষণ বেশী হবে এবং গাড়ী দ্রুত চলতে পারবে। এছাড়াও কোন বাঁক নেওয়ার সময় গাড়ী যাতে সোজা চলে না যায় তার জন্যও ঘর্ষণ বেশী হওয়া দরকার। 
 


২৬। ঘড়িতে জুয়েল থাকে কেন?
আমরা জানি, ঘড়িতে চাবি দিলে একটি স্প্রিং গুটিয়ে যায় এবং শক্তি জমা হয়। স্প্রিং আস্তে আস্তে খুলতে থাকে এবং ঘড়ি চলতে থাকে। ঘড়ি খুললে ওর ভিতরে প্রথমে ব্যালান্স হুইল এছাড়া বহু চাকা ঘুরতে দেখা যায়। ঘড়ির মেকারদের ভাষায় ঐ চাকাগুলির এক্সেল দাড়িয়ে থাকে পিভট-এর উপর। যখন চাকাগুলি ঘুরতে থাকে তখন ঐ এক্সেল ও পিভটের মধ্যে ঘর্ষণ হয় এবং তাতে ক্ষয় হতে থাকে। এই ক্ষয় রোধ করার জন্য যে কঠিন পদার্থ দ্বারাপিভট তৈরী করা হয় তাকে জুয়েল বলে। ঐ জুয়েল সাধারণত রুবি বা নীলকান্তমণি দ্বারা তৈরী করা হয়। এদের কাঠিন্য প্রায় হীরকের মত। তাই এর ক্ষয় কম হয়। ঘড়ির আয়ুবৃদ্ধি করে। 
 


২৭। চলন্ত গাড়ীর চাকা বা ঘূর্ণমান ফ্যান সিনেমা, টিভিতে উল্টোদিকে চলছে বলে মনে হয় কেন?
সিনেমা বা টিভিতে প্রতি সেকেণ্ডে 32টি ছবি দেখানো হয়ে থাকে। যদি গাড়ির গতি, ছবি যে দ্রুততায় দেখানো হয় তার চেয়ে কম বা বেশী হলে গাড়ী উল্টো দিকে বা সামনের দিকে চলছে বলে মনে হবে। আবার যদি গাড়ীর চাকা 32 বার ঘোরে প্রতি সেকেণ্ডে তবে গাড়ীর চাকা স্থির বলে মনে হবে। ফ্যান ঘূর্ণনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানের ভাষাতে স্ট্রোবোসস্কোপিক এফেক্ট বলে।


২৮। ছোট ও বড় সংখ্যার ব্যবহার কিরূপে করা হয়?
বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে ছোট ও বড় সংখ্যাকে পাওয়ার (Power) এর সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। পাওয়ার মানে কতবার সংখ্যাটি গুণ করা হয়েছে। সাধারণত 10" এই চিহ্ন ব্যবহার করে প্রকাশ করা হয়, যেখানে n একটি পূর্ণ ধণাত্মক বা ঋণাত্মক সংখ্যা। ছোট কিছু প্রকাশ করতে ন্যানো (10) মানে দশমিকের পর 8 টি শূন্য এবং 1(0.000000001), ফোমটো (10-15), অ্যাট্রো (10-18), ভেনডাকো (1033) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। -31 যেমন ইলেকট্রনের স্থির ভর 9.1 x 10) কিগ্রা, প্লাঙ্ক ধ্রুবকের মান 6.62 x 10-34) জুল সেকেন্ড =0.662 ভেনডেকো জুল সেকেন্ড।
বড় কিছু প্রকাশ করতে মেগা (10°) মানে 1 এর পর 6 টি শূণ্য, জাইগা (10°), টেরা (1012), পেটা (1015), এক্সসা (1018), ভেনডেকা (103) ব্যবহার করা হয়। যেমন পৃথিবীর ভর 6 x 1024 কিগ্রা, আর্থার এডিংটন কর্তৃক গণণায় মহাবিশ্বের মোট কণা (Particles) এর সংখ্যা 1080, বাস্তব ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান বড় সংখ্যাটির নাম গোগল (Googol) 10100, এর চেয়ে বড় সংখ্যাটি গোগল প্লেক্স (Googol plex) 10 googol  এখানেই শেষ নয় সবচেয়ে বড় সংখ্যাটি স্থির করা হয়েছে তার নাম গ্রাহাম সংখ্যা (Graham Number), যেসংখ্যাটি মহাবিশ্বকে কাগজ দিয়ে ঢেকে সেই কাগজে লিখলেও পুরো সংখ্যাটি লেখা শেষ হবে না!


২৯। জল বরফে পরিণত হলে আয়তন বৃদ্ধি পায় কেন?
একটি অক্সিজেন পরমাণু ও দুটি হাইড্রোনজেন পরমাণু মিলে জলের অণু তৈরীর জন্য দায়ী হাইড্রোজেন বন্ধন। হাইড্রোজেন বন্ধনের দৈর্ঘ্য জলে, বরফের চেয়ে কম সেজন্য জলের আয়তন বরফের চেয়ে কম। এক্সরে পরীক্ষা দ্বারা জানা গিয়েছে যে বরফের মধ্যে প্রত্যেকটি অক্সিজেন পরমাণুকে চতুস্তলকের মত পরিবেষ্টন করিয়া অপর চারটি অক্সিজেন পরমাণু অবস্থান করে সেজন্য বরফের আয়তন জলের চেয়ে বেশী হয়ে থাকে।


৩০। জলের উপর তেল পড়লে বিভিন্ন বর্ণ দেখায় কেন?
আমরা জানি আলো এক প্রকার তরঙ্গ এবং বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোই বর্ণ তৈরী করে। যখন আলো পাতলা তেলের স্তরের উপর পড়ে তখন ঐ স্তরের উপরিভাগ থেকে আংশিক আলো প্রতিফলিত হয় এবং বাকি অংশ ঐ স্তরের নীচের থেকে প্রতিফলিত হয় এবং বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো আমাদের চোখে এলে পরে, আমরা বিভিন্ন বর্ণের আলো দেখতে পাই। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষাতে এর কারণ হল ব্যতিচার, এই তেল স্তরের বেধ প্রায় এক সেমি-র, হাজার ভাগের এক ভাগ। 


৩১। জেট বিমান খুব উচুঁতে কিন্তু প্রপেলার বিমান নীচুতে উড়ে কেন?
জেট বিমানের পিছন দিকে নল দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়। তার প্রতিক্রিয়ার ফলে বিমান সামনের দিকে এগিয়ে যায়। অল্প উচ্চতায় বায়ুর বাধা বেশী থাকায়, ঘর্ষণের ফলে প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন হতে পারে। এই বিমানে উৎপন্ন বলের ব্যাপারে বায়ুর ঘণত্বের প্রভাব নেই। তাই এই বিমান উঁচুতে উড়ে। কিন্তু প্রপেলার বিমানে উহার ব্লেড বায়ুতে ঘুরে বিমানকে সামনের দিকে নিয়ে যায়। বায়ুর ঘণত্ব বেশী হলে প্রপেলারের ঘুর্ণণে উৎপন্ন বল বেশী হয়। কম উচ্চতায় বায়ুর ঘণত্ব বেশী তাই এর পক্ষে উড়া সহজ হয়।


৩২। জ্যোতিষ্ক গোলাকার কেন হয়?
বিজ্ঞানের সূত্রানুসারে প্রকৃতিতে প্রতিটি বস্তু সকল সময়ে এমন অবস্থায় থাকতে চায় যেখানে তার স্থিতিশক্তি সবচেয়ে কম হয়। একই আয়তনের বিভিন্ন আকারের বস্তুর মধ্যে গোলকেরই তলীয় ক্ষেত্রফল সবচেয়ে কম এরজন্য গোলাকার বস্তুর পৃষ্টীয় শক্তি সর্বনিম্ন হয়ে থাকে। সেজন্য শুধু জ্যোতিষ্ক নয় পাহাড় থেকে নেমে আসা নুড়ি পাথরগুলিও অনেকটা গোলাকার রূপ নিতে চেষ্টা করে বা হয়ে থাকে।


৩৩।টাকা গণনা করার সময় আঙ্গুল জলে ভিজিয়ে নিতে হয় কেন?
টাকা গণনার সময় আঙুল দ্বারা টাকার একপ্রান্তে সামান্য বল প্রয়োগ করা হয়। ওই বল টাকার উপরের তলকে হড়কাইয়া বা পিছলাইয়া গতিশীল করে কিন্তু টাকার উপরিতল মসৃণ থাকার জন্য ওই বল সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায় না, ফসকাইয়া যায়। যার ফলে টাকা উপরের দিকে উঠে না। তার অন্য কারণও আছে সেটা হল অনেকদিন টাকার বান্ডিল শক্তভাবে এটে থাকায় তাদের দুটি তলের মধ্যে জলীয় বাস্প জমা হয় এবং পৃষ্টটানের জন্য দুটি টাকা আটকে থাকে, পৃথক করা অসুবিধা হয়। এই অসুবিধা দূর করার জন্যই আঙুল ভিজিয়ে নিতে হয়। যাতে সামান্য কিছু বাড়তি বল প্রয়োগ করে টাকা তুলে আনা সহজ হয়।


৩৪। টাইমকে (Time) চতুর্থমাত্রা বলে কেন?
আমরা সাধারণত দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা এই তিনটি মাত্রা দ্বারা কোন বস্তুর আকার, আকৃতি, আয়তন পরিমাপ করে থাকি। এমনকি শূণ্যে কোন বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করে থাকি। কিন্তু কোন চলমান বা দোদুল্যমান বস্তুর সঠিক অবস্থা নির্ণয় করতে পারি না ঐ তিনটি মাত্রা দ্বারা। যেহেতু সময়ের পরিবর্তনে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, বস্তুটি কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন অবস্থানে আছে তা নির্ণয় করা যায়। এই কারণে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন সময় (time) কে চতুর্থ মাত্রা বা Forth dimension হিসাবে গণ্য করেছেন। 


৩৫। টিউব লাইট কিরূপে আলো বিকিরণ করে?
সাধারণত একমিটার লম্বা কাঁচের তৈরী টিউব এর দুইপ্রাক্তে আবরণ যুক্ত ফিলামেন্ট তড়িৎ দ্বার থাকে এবং টিউবটির মধ্যে কম চাপে আর্গন,নাইট্রোজেন ও সামান্য পারদ বাস্প থাকে। এক্ষেত্রে নিম্নচাপে গ্যাসের মধ্যে তড়িৎ মোক্ষণের নীতি প্রয়োগ করা হয়। এই বাতি জ্বালানের জন্য উচ্চ বিভব প্রয়োজন, সেই কাজটি করা হয় চোক ও স্টাটার নামক যন্ত্রাংশের সাহায্যে। সুইচ অন করলে প্রথমে ফিলামেন্ট গরম হয়, আর তখনই স্টাটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ বন্ধ করে। এবার শুরু হয় আর্গন তড়িৎ মোক্ষণ এবং তড়িৎ দ্বারের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ইলেকট্রনের প্রবাহ। আর্গন, পারদ পরমাণুর সাথে ইলেকট্রনের সংঘর্ষ ঘটে তখন তা অতিবেগুনী রশ্মি ও দৃশ্যমান আলো উৎপন্ন করে। নির্গত বিকিরণ টিউবের ভিতরের দিকে লাগানো ফ্লুরোসেন্ট পদার্থের উপর পরে জ্বলে উঠে (জিঙ্ক সালফাইড, বেরিয়ামপ্লাটিনোসায়ানাইড প্রভৃতি) এবং ক্ষতিকর অদৃশ্য অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে সাদা স্নিগ্ধ আলো বিকিরণ করে। এই বাতি কম উষ্ণ হয় এবং পরমায়ুও বেশী। সাধারণ বাতির চেয়ে 2-5 গুণ বেশি আলো দেয় কিন্তু বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।


৩৬। টিউব লাইট বেশীদিন ব্যবহারে দুইপ্রান্ত কালো হয় কেন?
টিউব লাইটের দুইপ্রান্তে ফিলামেন্ট তড়িৎদ্বার এবং টিউবের ভিতরের দিকে দেওয়ালে ফসফার পদার্থ যেমন বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড,জিঙ্ক সালফাইড ইত্যাদির আস্তরণ দেওয়া থাকে। বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু করলে তড়িৎদ্বারের মধ্যে ইলেকট্রনের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ শুরু হয় দৈর্ঘ্যের দিকে কিন্তু কিছু সংখ্যক তড়িৎদ্বারের চারিদিকেও যেতে থাকে এবং সরাসরি আবরণের উপর পড়ে এবং ধীরে ধীরে আবরণের ক্ষতি সাধন করে ফলে দুই প্রান্ত কালো হয়ে যায়।


৩৭। টিউবওয়েলের জল কিছু সময় পড়ে বাদামী বা ঘোলাটে হয় কেন?
মাটির নীচ থেকে যে জল উঠে আসে তাতে দ্রবীভূত অবস্থায় ফেরাস লবণ মিশ্রিত থাকে। ঐ ফেরাস লণ বায়ুতে উপস্থিত অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ফ্লোরিক লবণে পরিণত হয় অল্প কিছু সময়ের মধ্যে ঐ ফ্লোরিক লবণ জ্বলে আদ্র বিশ্লেষিত হয় এবং বাদামী বর্ণের ফেরিক হাইড্রোক্সাইডএ পরিণত হয়। তাই ঐ জল কিছু সময় পর বাদামী বর্ণ দেখা যায়।


৩৮। টি-ভিতে সম্প্রচারিত দৃশ্য কিরূপে দেখা যায়?
যে দৃশ্যটি প্রচার করা হবে তার উপর ক্যামেরার লেন্স ফোকাস করে। ক্যামেরার মধ্যে অবস্থিত অথিকোন টিউবের আলোক সংবেদনশীল একটি প্লেটের উপর দৃশ্যটির প্রতিবিম্ব ফেলা হয়। প্লেটটি লক্ষ লক্ষ ফটোটিউব-এর সমষ্টি, ওদের উপর আলো পড়ার সাথে সাথে প্রত্যেকটি বিন্দু থেকে ইলেকট্রন নির্গত হতে থাকে ফলে প্লেটের উপর পজিটিভ চার্জের একটি নক্সায় পরিণত হয়। এবারে ইলেকট্রন গান থেকে নির্গত একটি ইলেকট্রনের স্রোত দিয়ে প্লেটটিকে 625 লাইনে স্ক্যান করে বিদ্যুৎ তরঙ্গের সৃষ্টি করে যাকে ভিডিও সিগন্যাল বলে। স্ক্যান করতে 1/30 সেকেন্ড সময় নেয়। ছবিগুলি উপস্থাপনের দ্রুততা বৃদ্ধির জন্য সেকেন্ডে 20 থেকে 30 টি ছবিস্ক্যান করা হয় এবং প্রতিটি ছবিকে স্ক্যানিং এর সময় দুটি অংশে ভেঙে পরপর দুটি দেখানো হয়। ভিডিও সিগনালের সাথে শব্দ ও কণ্ঠস্বর কে মাইক্রোফোনের সাহায্যে বিদ্যুৎ প্রবাহে অর্থাৎ অডিও সিগনালে রূপান্তরিত করে তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের সাথে মিশিয়ে অ্যান্টিনার সাহায্যে প্রেরণ করা হয়।
রঙিন ছবির ক্ষেত্রে রঙিন টিভি ক্যামেরা দৃশ্য থেকে বিক্ষিপ্ত আলোকে তিনটি আয়না ও ফিল্টারের সাহায্যেতিনটি প্রাথমিক বর্ণের (লাল, নীল, সবুজ) আলোক তরঙ্গকে বেতার তরঙ্গে রূপান্তরিত করে প্রেরণ করা হয়। এর সাথে সাদা রং উৎপন্ন করার জন্য তিনটি বর্ণের ভিডিও সিগনালকে 30:11:5 অনুপাতে মিশিয়ে একটি সিগনালে রূপান্তরিত করে পূর্বের সিগনালের সাথে একত্রে প্রেরণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য হল রঙিন ছবি ছাড়াও যাদের সাদা কালো টিভি আছে তারা যাতে দেখতে পায়। 1936 সালে B.B.C প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করে। গ্রাহক যন্ত্রে রঙিন ও সাদাকালো উভয়েরই একটি ক্যাথোডরে টিউব থাকে কিন্তু রঙিন টিভির ক্ষেত্রে এটির বদলে তিনটি রং এর জন্য পৃথক তিনটি ইলেট্রনগান থাকে। পিকচার টিউবের পর্দাটি ফসফার এর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র 12 লক্ষ বিন্দুর দ্বারা প্রলেপ থাকে। সম্মিলিত সিগন্যাল গ্রাহক যন্ত্রের অ্যান্টিনাতে গ্রহণ করে এবং সংকেত অ্যামপ্লিফাই করা হয় এবং গ্রাহক যন্ত্রের ইলেকট্রন গান তিনটিতে প্রেরণ করে। প্রত্যেকটি থেকে নির্গত ইলেকট্রন স্রোত স্ক্যান করে প্রচার কেন্দ্র থেকে যে ক্রমে পাঠিয়ে ছিল ঠিক একইক্রমে পর্দার (লাল, নীল, সবুজ) ফসফার বিন্দুর উপর পর্দাটি সেকেন্ডে 30 বার ভরে উঠে, সেজন্য সেকেন্ডে 30 টি ছবি পর্দার উপর ফুটে উঠে এবং প্রচন্ড দ্রুততার জন্য আমাদের মনে হয় সম্পূর্ণ ছবিটিকে একসাথে দেখছি। অর্থাৎ প্রচার কেন্দ্রের অনুরূপ দৃশ্য পর্দাতে ফুটে ওঠে।


৩৯। টিভি দেখার কুফল কি?
টিভি দেখা মানুষকে নেশাগ্রস্থ করে তুলতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমীক্ষায় দেখা গেছে বেশি টিভি দেখে ও ঘুমায় কম এমন শিশুরাই স্থূলতা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়। বয়স্করা দিনে টিভি দেখে সময় কাটান, বিশেষ কোনও শারীরিক পরিশ্রম করেন না, ফলে মোটা হয়েগিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা অনুভব করেন এমনকি রাতে ঘুম কম হয়। এছাড়া একটানা দেখলে চোখের অবসাদ আসে, এমনকি মাথা ধরে। বিশেষজ্ঞদের মতে অন্ধকার ঘরে টিভি দেখা উচিৎ নয়। ব্রাইটনেস কম রাখা উচিত, চ্যানেল দ্রুত পরিবর্তন করা ঠিক নয় তাতে চোখে স্ট্রেন পরে। তাদের মতে একটানা না দেখে মাঝে মাঝে নিজেদেরও বিজ্ঞাপন বিরতির মতো বিরতি দিতে হবে।


৪০। টেপ রেকর্ডার শব্দ কিরূপে ধরে রাখে ?
এই যন্ত্রে প্লাস্টিকের ফিতার উপর শব্দকে রেকর্ড করা হয়। এই ফিতাতে লোহা বা ক্রোমিয়াম অক্সাইডের প্রলেপ থাকে। মাইক্রোফোনের সামনে শব্দ করলে ঐ শব্দ কে বিদ্যুতে পরিণত করে ও বিবর্ধিত করে একটি তড়িৎ চুম্বকের মধ্যে প্রবাহিত করা হয় যাকে রেকডিং হেড বলে। ঐ হেডে যে তড়িৎ আসে তা পরিবর্তী চুম্বক ক্ষেত্র ফিতার উপর এক চুম্বক প্যাটার্ন সৃষ্টি করে, যা নির্ভর করে শব্দের তীব্রতার উপর। এই রকমে ফিতাতে শব্দ ধরে রাখে। 


৪১। ডিটোনেটর কি?
যে সকল পদার্থের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি বিস্ফোরণ ঘটানো যায় তাদের কে ডিটোনেটর বলে। এমনই একটি বহুল ব্যবহৃত পদার্থ মার্কারি ফালমিনেট। এই পদার্থ আঘাত করলে বা ঘর্ষণে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে।পিস্তল, বন্দুক, রাইফেল প্রভৃতি কাতুর্জের অগ্রভাগে এই জাতীয় পদার্থ দেওয়া হয় যাতে এদের বিস্ফোরণেই কাতুর্জের বারুদ সহজেই বিস্ফোরিত হয়।


৪২। ডিনামাইট কি?
সুইজারল্যাণ্ডের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল কাইজেনগার নামক ছিদ্র বহুল একপ্রকার বালিমাটির সাথে নাইট্রোগ্লিসারিন মিশিয়ে ডিনামাইট তৈরী করেন, এর পর নিরাপদে ব্যবহারের জন্য চেষ্টা করে তৈরী করেন জিলোটিন ডিনামাইট। এই ডিনামাইট জ্বলে নষ্ট হয় না। মাটির নীচে বিস্ফোরণ ঘটানো যায়, বহন করাও নিরাপদ। তিনি নানা প্রকার ডিনামাইট তৈরী করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন। তার সঞ্চিত অর্থের মোটা অংশ দান করে গিয়েছেন, সেই অর্থ থেকেই প্রতিবৎসর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। 
 


৪৩। তেজষ্ক্রিয় দূষণ কি?
পৃথিবীর ভূত্বকে ও সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরোনিয়াম, রেডিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি থেকে জীবদেহে কার্বণ 14, পটাসিয়াম 40 এবং মহাজাগতিক রশ্মি ও তা থেকে উৎপন্ন তেজস্ক্রিয় মৌল তেজস্ক্রিয় দূষণের প্রধান উৎস। এছাড়া পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত জ্বালানির নিষ্কাশন, শোষণ এবং তা থেকে উৎপন্ন বর্জ্য থেকে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, চিকিৎসা, কৃষিতে ও শিল্পে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থ ট্রেসার হিসাবে ব্যবহার থেকেও দূষণ হয়ে থাকে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বলতে এক্স রশ্মি, আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি বুঝায়। এই দূষণ রক্ত সংবহন পরিপাকতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে এছাড়া, ডি.এন.এ ক্রোমজোম ও কোষে কলার উপর প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীদের মতে জননকোষের উপর বেশী প্রভাব ফেলতে পারে এবং তা বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হয়ে থাকে। তবে প্রভাব বিকিরণের মাত্রা ও কত সময় ধরে বিকিরণ গ্রহণ করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষেত্রে তা পরিমাপের এক হল র্যা ড (Rad) এবং যে পরিমাণ মানব দেহের ক্ষতি করে তা মাপা হয় রেম (Rem) এককে। মানুষের উপর প্রতি বৎসরে তেজস্ক্রিয়া বিকিরণের সর্ব্বোচ মাত্রা 5 রেম।


৪৫৷ তেজষ্ক্রিয়তা কি?
প্রকৃতিতে এমন কতগুলি মৌল আছে যাদের পরমাণুর নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরাম ভেঙে গিয়ে অন্য নূতন পরমাণু সৃষ্টি করে এবং অদৃশ্য রশ্মি বিকিরণ করে, এই ঘটনাকে তেজস্ক্রিয়তা বলা হয়। যে তেজ রশ্মি হিলিয়াম আয়েলরূপে তা হল আলফা কণা, ইলেকট্রন রূপে বিটা কণা এবং ক্ষুদ্রতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য, উচ্চ শক্তি সম্পন্ন রশ্মি গামা রশ্মি। এই প্রকার নিঃসারণ কোন প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয় না, জীবন্ত কোষের পক্ষে ক্ষতিকারক। এরূপ কয়েকটি মৌল রেডিয়াম, পোলোনিয়াম, থেরিয়াম ইত্যাদি। তবে যিনি প্রথম এই ঘটনা আবিস্কার করেন তিনি হচ্ছেন বিজ্ঞানী হেনরী বেকারেল।


৪৬। তুষার সাদা হয় কেন?
কোন বস্তুকে কি বর্ণের দেখতে তা নির্ভর করে আলো ঐ বস্তুর উপর পরে তা থেকে যে আলো প্রতিফলিত হবে তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের উপর। তুষার কণা হল জল জমা ষড়ভূজাকার অসংখ্য স্ফটিক। ঐ স্ফটিকের উপর সূর্যের আলো পতিত হলে তাবিভিন্ন তলে প্রতিফলিত হয় এবং দর্শক চোখে সকল বর্ণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সমান অনুপাতে পৌছায় তাই সাদা দেখায়।


৪৭।তড়িৎ চুম্বকীয় বোমা কি?
আমরা জানি যে কোন বেতার তরঙ্গ বিদ্যুতের অপরিবাহী সমস্ত বাধা অতিক্রম করে যেতে পারে। বেতার তরঙ্গের ব্যবহার বেতার, টেলিভিসন, রাডার, মোবাইল ফোন, রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমে ব্যবহার হচ্ছে। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে “হাইপাওয়ার্ড মাইক্রোওয়েভ” বা HPM কে কাজে লাগিয়ে অতি ক্ষুদ্র স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, বোমা বিস্ফোরণে সূক্ষ্মতম নিয়ন্ত্রক অকেজো করে দেওয়া সম্ভব। এছাড়া HPM ব্যবহার করে বিমানকে ভূপাতিত করা যেতে পারে এছাড়া পরিসংখ্যানে বলেছে এই HPM ব্যবহার করে 750 মিটার দূর থেকে একজন মানুষের উষ্ণতা 55° পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে অর্থাৎ দূর থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি মস্তিষ্কের ক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানো এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো সক্ষম। বর্তমানে HPM প্রয়োগের জন্য যে যন্ত্রটি তৈরী করেছেন তার নাম সেলফ ডিনায়াল Self Denial (S.D) এর আরো উত্তরোত্তর উন্নতি হবে এবং এই যন্ত্রপ্রস্তুত কারক মার্কিন বিজ্ঞানীগণ। যাকে আধুনিক পৃথিবীর আধুনিক অস্ত্র বলা যেতে পারে।


৪৮। নিয়ন লাইট ও বাহারী রং-এর আলো সৃষ্টি হয় কিরূপে? 
বিজ্ঞাপনের অক্ষর বা ছবি অনুযায়ী কাঁচের সরু নল কে বাঁকিয়ে নেওয়া হয় এবং ঐ সরু নলের মধ্যে চাপ 10 মিলি এর কাছাকাছি রেখে ওর মধ্যে গ্যাস প্রবেশ করানো হয় এবং নলের দুই প্রান্তে উচ্চ বিভব সৃষ্টি করা হয়। এর ফলে ঐ গ্যাসের পরমাণুতে পরিক্রমারত ইলেকট্রন তড়িৎ শক্তি থেকে অতিরিক্ত শক্তি গ্রহণ করে ফলে ঐ ইলেকট্রনের কক্ষ চ্যুতি ঘটে এবং মূহুর্তের মধ্যে ঐ ইলেকট্রন অতিরিক্ত শক্তির একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোতে পরিণত হয় এবং সে জন্যই বাহারী রং সৃষ্টি হয়। গ্যাসের ধর্মানুযায়ী বিভিন্ন বর্ণের উৎপত্তি হয়ে থাকে। যেমন নিয়ন গ্যাসের জন্য লাল কমলা, হাইড্রোজেনের জন্য নীল, হিলিয়ামের জন্য হলুদ ইত্যাদি।


৪৯। পাখাতে অন্যান্য জিনিসের চেয়ে ময়লা বেশী জমে কেন?
পাখার সুইচ অন করলে পাখা ঘুরতে শুরু করে, সাথে সাথে ফ্যানের ব্লেডে স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয় এবং বায়ুতে ভাসমান ধুলিকণা আকৃষ্ট করে ফলে ওর সাথে লেগে যায় বা আটকে থাকে। ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে ব্লেডের ধারগুলিতে তুলনামূলক বেশী জমা হয়। এর কারণ হল স্থির তড়িতের ধর্ম কোন বস্তু তড়িৎ বাহিত হলে ঐ আধান তার উপরি পিষ্ঠে অবস্থান করে। 
 


৫০। পারমানবিক বোমা কি?
ভারী পরমাণু ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়াকে বলে ফিসন (Fission) এবং একাধিক হালকা পরমাণু সংযোজিত হয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী নূতন পরমাণু সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া হল ফিউসন (Fussion)। উভয় প্রক্রিয়াতেই প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। প্রথম ক্ষেত্রটি হল পরমাণু বোমা ও দ্বিতীয়টি হল হাইড্রোজেন বোমার মূল তত্ত্ব। প্রথম ক্ষেত্রে বোমা তৈরীর উপকরণ ইউরেনিয়াম 235 বা প্লুটনিয়াম এবং নিউট্রন কণা। উপযুক্ত শক্তি সম্পন্ন নিউট্রন বগা দ্বারা উপরোক্ত পদার্থকে আঘাত করলে পরমাণু ভেঙে দুটি নুতন পরমাণু তৈরী হয় এবং অনিয়ন্ত্রিত চেইন রিয়্যাকসন হতে থাকে। এই বোমা আমেরিকান বিজ্ঞানী ওপেন হাইমার প্রথম তৈরী করেন। তিনটি তৈরী করেন, প্রথমটি টেস্ট বা পরীক্ষার জন্য এবং ২য় ও ৩য়টি ফেলা হয় হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে। এই বোমাটির নাম লিট্ল বয়। প্রথম হাইড্রোজেন বোমাটি আমেরিকা কর্তৃক পরীক্ষা করা হয় প্রশান্ত মহাসাগরে। এটির ক্ষমতা হিরোসীমা তে ফেলা পরমাণু বোমার সাতশ গুণ। সবচেয়ে সরল ফিউসান বিক্রিয়াটি হল দুটি ডয়টরিয়াম পরমাণু একত্রিত হয়ে একটি হিলিয়াম পরমাণু তৈরী হয়। এক্ষেত্রে 3.22 এম ইভি শক্তি নির্গত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর ৪ টি দেশের আণবিক বোমা আছে এবং তার সংখ্যা প্রায় আঠাশ হাজার। 


৫১। পারমাণবিক কণা বা রশ্মি কিরূপে সনাক্ত করা হয়?
পারমাণবিক কণা বা তেজস্ক্রিয় রশ্মি সনাক্ত করার জন্য বহু যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রবাহিত আহিত কণা তার আশেপাশের পরমাণুর কস্থিত এক বা একাধিক ইলেকট্রন কণা পরমাণু থেকে বিচ্ছিন্ন করে অর্থাৎ আয়ন উৎপন্ন করে এই ধর্ম কে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীগণ কণা সন্ধানী যন্ত্র তৈরী করেছেন। এছাড়া যে সকল কণা সরাসরি আয়ন উৎপন্ন করতে পারে না ( x-ray, y-ray) তাদের পরোক্ষভাবে আলো তড়িৎ ও কম্পন প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন বা ইলেকট্রন পাজট্রন যুগল তৈরী করে। এইরূপে তাদের সনাক্ত করা হয়।
যে যন্ত্র বহুল ব্যবহৃত হয় তাদের নাম গাইগার মূলার কাউন্টার ও উইলসন মেঘ প্রকোষ্ঠ। এছাড়া সিন্টিলেসান কাউন্টার দ্বারা ( 7, xray), বুদবুদ প্রকোষ্ঠ দ্বারা মেসন, হাইপেরণ এবং ফোটোগ্রাফিক ইমালসন এর সাহায্যে মহাজাগতিক রশ্মি অণু সন্ধানে ব্যবহৃত হচ্ছে।


৫২। পারমাণবিক শক্তি কি কি কাজে ব্যবহৃত হয়?
পারমাণবিক শক্তির সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। আমাদের দেশে 16 টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। পারমাণবিক শক্তি চালিত যুদ্ধ জাহাজ ও ডুবো জাহাজ তৈরী হচ্ছে। কৃত্রিম উপগ্রহে শক্তির উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া পরমাণু চুল্লিতে উৎপন্ন রেডিও আইসোটোপ চিকিৎসা, গবেষণা, কৃষি, শিল্প ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন ক্যানসার চিকিৎসাতে কোবাল্ট 60 রোগ নির্ণয়ে আইওডিন 131, ফসফরাস 32, ব্রোমিন 82 ইত্যাদি, কৃষি গবেষণাতে পটাশিয়াম 42, সালফার 35, শিল্প ধাতব পাতের গুরুত্ব মাপতে থেলিয়াম 204, ঝালাই এর ত্রুটি ধরতে ইরিডিয়াম 192, পুরাতন জিনিসের বয়স নির্ধারণ কার্বন 14, মরু অঞ্চলে ডালের সন্ধান কাজে ট্রাইটিয়াম আইসোটোপ ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া ফসলের বীজ প্রজননগত পরিবর্তন ঘটিয়ে অধিক ফলনশীল বীজ তৈরীতে, ভূতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্মিক গবেষণাতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
 


৫৩। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কি?
পরমাণু বোমার বিভাজনের হারকে নিয়ন্ত্রিত করে উহাতে উৎপন্ন শক্তিকে মানব কল্যাণে ব্যবহারের যে ব্যবস্থা তাকেই পারমাণবিক চুল্লী বলে। এই চুল্লীতে উৎপন্ন তাপ শক্তিকে জল বা তরল বাষ্পীভূত করে তার দ্বারা টারবাইন ঘুরিয়ে বিদুৎ উৎপন্ন করা হয়। পৃথিবীর প্রথম এরূপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরী হয়েছে ইংল্যান্ডের কালডার হলে। বর্তমান পৃথিবীতে পঁচশোটির বেশী এরূপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু আছে। সবচেয়ে বেশী ফ্রান্সে, ওখানে বিদ্যুৎ চাহিদার 78% এই প্রকার তৈরী বিদ্যুৎ। আমাদের দেশে 15 টি কেন্দ্র চালু আছে, 7 টি তৈরী হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে তৈরী হচ্ছে 3260 Mwe 2020 সাল নাগাদ 20 হাজার Mwe তৈরীর চেষ্টা হচ্ছে।


৫৪। প্লাগের তৃতীয় পিন থাকে কেন?
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কখনও কখনও ত্রুটির ফলে যন্ত্রটির আধার (body) বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে থাকে, তখন কেহ ঐ যন্ত্র স্পর্শ করলে শক্ (shock) লাগবে। যাতে শক্ না লাগে তারজন্য তৃতীয় পিনটি ব্যবহার করা হয়। ঐ পিনের সাথে একটি তারের এক প্রাক্ত যুক্ত করা হয় এবং অন্য প্রান্ত মাটির সাথে যুক্ত করা থাকে। ঐ তারটিকে আর্থ ওয়ার (earth wire) বলা হয়।
 


৫৫। প্লাজমা কি?
গ্যাস ডিসচার্য নল তড়িৎ প্রবাহিত করে আমেরিকান বিজ্ঞানী ল্যাংমুর ও টঙ্ক তার মধ্যে আয়নিত অণুর সৃষ্টি করেন। এই আয়নিত গ্যাসের ধর্মের সাথে জীবকোষের প্রোটোপ্লাজমের সাদৃশ্য লক্ষ করে ইহার নামকরণ করেন প্লাজমা। প্লাজমা তড়িৎ নিরপেক্ষ, বিদ্যুৎ পরিবহনে সক্ষম, সাধারণত প্লাজমা বিরল কিন্তু ফ্লুরোসেন্ট বাতি যখন জ্বলে তখন তার মধ্যে বেশিরভাগ অংশই প্লাজমা অবস্থায় থাকে, বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োগে প্লাজমা সৃষ্টি হয়। সব নক্ষত্রেই প্লাজমা অবস্থায় আছে, পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে উপরিস্তবে প্লাজমা সৃষ্টি হয়। ধাতু কাটতে ও অল্পসময়ে ওয়েল্ডিং এর কাজে প্লাজমা আর্ক ব্যবহার হয়ে থাকে। মহাকাশে অক্সিজেনের কক্ষপথ পরিবর্তনে প্লাজমা চালিত কোষ বিশেষ উপযোগী।
এছাড়া তাপ থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ তৈরীতে, পারমাণবিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন প্রকার দর্শনীয় বিষয় অলোর মাধ্যমে দেখানোর ক্ষেত্রে এবং বিভাজন গবেষণায় ব্যবহার হচ্ছে।


৫৬। পেট্রোকেমিক্যালস্ কারখানাতে কি তৈরী হয়?
আগেকার দিনে পেট্রলিয়াম থেকে পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন সংগৃহীত হওয়া পরে যা অবশিষ্ট থাকতো তা বাজে পদার্থ হিসাবে ফেলে দেওয়া হত। কিন্তু আজকাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ঐ ফেলে দেওয়া বর্জ পদার্থ থেকে নানা প্রকার প্রয়োজনীয় জিনিস যে কারখানতে তৈরী হয় তার নাম পেট্রোকেমিক্যালস। আজকাল আমাদের দেশে পেট্রো কেমিক্যালসএ পেট্রোলিয়াম আংশিক পাতনের দ্বারা অ্যালকোহল, অ্যাসেটিক অ্যাসিড, ইথিলিন, আমোনিয়া, কৃত্রিম রাবার, নানা প্রকার প্লাস্টিক, কৃত্রিম তত্ত্ব, কার্বনব্লাক, ভেসলিন, সার, লুব্রিকেটিং তৈল, মোম, পিচ আরো বহু জিনিস প্রস্তুত হয়ে থাকে। 


৫৭। পৃথিবীর ভাঁড়ারে কোন মৌল কতটা আছে?
বিজ্ঞানী ক্লার্ক ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফল স্বরূপ জানা গেল পৃথিবীর ভুত্বকটি পর্যায় সারনীর 1 থেকে 26 নম্বরে মৌল অর্থাৎ হাইড্রোজেন থেকে লোহা দিয়ে তৈরী এবং পৃথিবীর ভরের 99.7% বাকী 0.3% 66 টি মৌল দিয়ে তৈরী, সবচেয়ে বেশী যে মৌলটি পৃথিবীতে আছে তার নাম অক্সিজেন এর পরে সিলিকনের স্থান। এরপরে অ্যালুমিনিয়াম 7.4% লোহা 4.2% ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম 2.35% ইত্যাদি এবং হাইড্রোজেন মাত্র 1%। কিন্তু মহাবিশ্বে সবচেয়ে বেশী যে মৌলটি আছে সেটি হল হাইড্রোজেন কারণ নক্ষত্র, নীহারিকা ইত্যাদির মূল উপাদান হাইড্রোজেন। সবচেয়ে কম যে মৌলটি পৃথিবীতে আছে তার নাম অ্যাস্টেটাইন মাত্র 70 মিলিগ্রাম। মানব শরীরের 70 টি মৌল পাওয়া গিয়েছে। মৌলদের মধ্যে ঘণত্ব সবচেয়ে বেশী আস্মিয়ামের ঘণত্ব 22.59 গ্রাম প্রতিঘন সিসি।


৫৮। পৃথিবীতে মৌল ও যৌগের সংখ্যা কত?
মুক্ত বা যৌগের মধ্যে 92 টি মৌলিক পদার্থ পাওয়া গিয়েছে এবং বিজ্ঞানীগণ কৃত্রিম উপায়ে আরও 23 টি মৌল প্রস্তুত করতে পেরেছেন যার সর্বশেষ মৌলটির পরমাণু ক্রমাঙ্ক 118 যার আধুনিক নিয়মে নাম (ইউ ইউ ও)। কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত মৌলগুলি অস্থায়ী বা তেজস্ক্রিয় এবং আয়ু মিনিট বা সেকেন্ডে মাপতে হয়। অর্থাৎ অয়ু খুবই কম। এরূপ আর কত মৌল তৈরী করা সম্ভব যেখানে প্রকৃতিতে ভৌত নিয়মাবলীর কঠোরতা আছে অর্থাৎ মৌলে নিউট্রন ও প্রোটিনের অনুপাত 1.5 এর বেশী হলে মৌলটি অস্থায়ী হবে। বিজ্ঞানীরা বহু শক্তিশালী ত্বরণ যন্ত্র আবিষ্কার করে নুতন নুতন মৌল তৈরীর চেষ্টা করে চলেছেন। বর্তমানে কম্পিউটারে এর মাধ্যমে গণনা করে দেখেছেন যে পর্যায় সারণীর অষ্টম পর্যায়ে 50 টির মত মৌল থাকতে পারে এবং নবম পর্যায়ে থাকবে ৪ টি অর্থাৎ ভবিষ্যৎই বলে দেবে প্রকৃতিতে শেষে মৌল সংখ্যা কতটি। তবে যদি কোনদিন 200 তম মৌলটি আবিষ্কার হয় তবে তার আধুনিক নামটি রাখা হবে বিনিনিব্রিয়াম (Bnn)।
প্রকৃতিতে যে প্রাকৃতিক কাঁচামাল অর্থাৎ 92 টি প্রাকৃতিক মৌল এবং কৃত্রিম মৌল থেকে পৃথকীকৃত যৌগের সংখ্যা প্রায় 30 লক্ষ তার মধ্যে 20 লক্ষ যৌগই কার্বনের। 
 


৫৯। পোষাক ইস্ত্রি করার সময় জল ছিটিয়ে এবং ইস্ত্রিটি গরম করা হয় কেন?
কাপড় জামাতে জল ছিটিয়ে গরম ইস্ত্রি ঘষে নিতে সহজ হয় কারণ তাপে জলীয় বাষ্প সৃষ্টি হয় এবং কাপড় ও ইস্ত্রির মধ্যে একটি পাতলা জলীয় বাষ্পের স্তরের সৃষ্টি হয়। আর গরম ইস্ত্রি জামা কাপড়ের ভাঁজ দুর করে মসৃণ করে তোলে। এছাড়া ইস্ত্রি গরম থাকায় অ্যাডেসিভ ফোর্সও অনেকটা কমে যায়। 


৬০। ফটোক্রমেটিক চশমার রং পরিবর্তন হয় কেন?
আমরা সাধারণত যে সানগ্লাস ব্যবহার করি তার যে বর্ণ থাকে সূর্যালোকে তার কোন পরিবর্তন হয় না, কিন্তু ফটোক্রমোটিক গ্লাস যে কাঁচ দ্বারা তৈরী তার সাথে সিলভার আয়োড্রাইড এবং ব্রোমাইড মিশ্রিত থাকে আর সূর্যের আলো যখন ঐ কাঁচের উপর পরে তখন সিলভার কাঁচের মধ্যে ক্ষুদ্রকণা আকারে পৃথক হয়ে পড়ে যার জন্য কালো হতে থাকে। যখন আলো পড়ে ততক্ষণ অর্থাৎ সাময়িকভাবে রঙ কালো হয়ে থাকে আবার আলো থেকে সরিয়ে আনলে ঐ সিলভার পুনরায় যুক্ত হয়ে বর্ণহীন হ্যালাইডে পরিণত হয়।
 


৬১। ফিউসনকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে কি?
বিজ্ঞানীগণ আগামী দিনে সমুদ্র জালে যে অফুরক্ত হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম আছে তা থেকে থামোনিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার দ্বারা উৎপন্ন তাপকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করার জন্য গবেষণা করে চলেছেন বহুদিন থেকে।
সংযোজন ক্রিয়ার সাহায্যে ফিউসন রিয়াক্টর থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনও সম্ভব হয়নি তবে পরীক্ষামুলক বেশ কয়েকটি তৈরী করা হয়েছে, তবে উৎপাদনের স্থয়িত্ব ও তীব্রতা সীমাবদ্ধ। এরূপ কয়েকটির নাম জিটা (ZETA) অ্যালিস (Alice ) টোকাম্যাক (Tokamak), স্টেলারেটর (Stellarator)। তবে অগামী দশ বৎসরের মধ্যে (ITER) ইন্টার ন্যাসনাল থার্মাল এনার্জি এক্সপ্রিমেন্টাল রিয়াক্টর নামে উত্তর জাপানে রোক্কাসোতে (Rokkasho) ভারতসহ সাতটি দেশ মিলে তৈরী করছেন পৃথিবীর সূর্য। যা থেকে নির্মল, নিরাপদ, সস্তাতে অফুরন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এছাড়া কয়েক বৎসর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোল্ড ফিউসন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, আগামীদিনে ঐ প্রক্রিয়াকে মানুষের কল্যাণে লাগানো সম্ভব হবে।
 


৬২। বল পয়েন্ট পেনে কিরূপে লেখা ফুটে ওঠে?
বল পয়েন্ট পেনের মধ্যে একটি প্লাস্টিক বা ধাতব টিউবে ঘনকালি ভর্তি থাকে। টিউবটির একপ্রান্ত ফাঁকা অন্য প্রান্তে একটি ধাতব কোটর এর মধ্যে সাধারণত এক মিলিমিটার বা তার কম ব্যাস বিশিষ্ট ক্ষুদ্র স্টীলের বল এমনভাবে রাখা হয় যাতে বলটি বাধাহীন ভাবে ঘুরতে পারে। যখন বলটি কাগজের উপর চেপে সরানো হয় তখনই কর্নিক আকর্ষণ কালিকে ঠেলে নামতে থাকে এবং কাগজের উপর ছাপ পড়ে। এখানে বলটি ভালভের কাজ করে, বেশী কালি নামতে বাধাও দেয় এবং উহা ঘোরার ফলে নিষ্কাসন পাম্পের মত কাজ করে। বলও কালির মধ্যে শূণ্যতা সংযোগ যাতে বিচ্ছিন্ন না হয় সেজন্য ঐ টিউবটির শেষ প্রান্তে একটি ছিদ্র করা থাকে, যাতে বায়ু প্রবেশ করতে পারে।


৬৩। বিমান বায়ুতে ভেসে চলে কিরূপে?
বিমানে ডানার সামনের দিক মোটা এবং পিছনের দিকটা অপেক্ষাকৃত পাতলা করা হয়। বিমান যখন দ্রুত গতিতে চলে তখন বিজ্ঞানী বার্নোলী নীতি অনুযায়ী ডানার উপরের বায়ুর চাপ ডানার নিচের বায়ুর চাপের চেয়ে কম হয়। তার ফলে ডানাকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়, এই ঊর্দ্ধমুখী বল বিমানের ওজনের সমান হলে বিমান শূণ্যে ভেসে থাকে। বিমান লম্বা রায়ওয়েতে দ্রুত গতিতে চালানো হয়, যখন বেগ বৃদ্ধি পেয়ে এমন অবস্থায় আসে যখন বিমানের উপর বায়ুর উর্দ্ধমুখী বল ওজনের চেয়ে বেশি হয় তখন বিমান আকাশে উঠে যায় এবং প্রপেলার যুক্ত বিমান হলে প্রপেলারের ঘুর্নালে সামনের বায়ু টোন পিছনে ঠেলে দিয়ে বিমানকে এগিয়ে নিয়ে যায় আর প্রপেলার না থাকলে বিমানের জ্বালানী দহনে যে গ্যাস উৎপন্ন হয় তা পিছনের দিকে বেগে বের হতে থাকে তার ফলে বিমানটি সম্মুখের দিকে যেতে থাকে। 
৬৪। বিমান বহু উঁচু দিয়ে চলে গেলে সাদা ট্রাকের সৃষ্টি হয় কেন?
যখন উঁচু দিয়ে প্রচন্ড গতিতে চলতে থাকে তখন বায়ুও পিছনদিকে প্রচন্ড গতিতে ছোট তার ফলে বিমানের পিছনের দিকে বায়ুর চাপ কমে যায়। বিমান থেকে জ্বালানির দহনের ফলে উৎপন্ন ধোঁয়া, গ্যাস, গরম বায়ু, জলীয় বাষ্প জমে ছোট ছোট বলায় বা বিন্দুতে পরিণত হয় যার উপর আলো পড়ে প্রতিফলিত হয় তাই সাদা দেখায়। যেহেতু উঁচুতে বায়ু প্রবাহ কম থাকে তাই বেশ কিছুক্ষণ সাদা আলোর রেখার মতো দেখায়। 


৬৫। বিমানে ব্ল্যাক বক্স থাকে কেন?
বিমানে দুর্ঘটনা ঘটলে তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য প্রথমে যে জিনিসটি খুঁজে বের করা হয় তা হল ব্ল্যাক বক্স। এটি আসলে দুটি যন্ত্র, একটি ককপিট ভয়েস রেকর্ডার যা বিমান চালকের রুমে থাকে এবং অপরটি ডিজিটাল ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার যেটি থাকে বিমানের পিছন দিকে। প্রথমটিতে চালকের কথাবার্তা, কোন শব্দ, রেকর্ড করে এবং দ্বিতীয়টি বিমানের বেগ, বায়ুর বেগ, উষ্ণতা, গতিপথ ইত্যাদি। যন্ত্রদুটি এমন আধারে রাখা হয় যাতে 1000°C উষ্ণতা সহ্য করতে পারে, এমনকি সমুদ্রে ডুবে গেলেও যাতে নষ্ট না হয়। আজকাল কম্পিউটার ব্যবহারে এই ব্যবস্থা আরো উন্নত হয়েছে। 


৬৬। বিদ্যুৎ কিরূপে উৎপন্ন ও সরবরাহ করা হয়?
আমরা বিদ্যুৎ ছাড়া 1 ঘণ্টাও চলতে পারি না। বিদ্যুৎ যে যন্ত্রে উৎপন্ন হয় সে যন্ত্রটির নাম জেনারেটর বা ডায়নামো। একটি চুম্বকের দুই মেরুর মধ্যে তামার আয়তকার একটি কুন্ডলী ঘুরানো হয় তখন তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের ফলে কুন্ডলীর মধ্যে বিদ্যুতের সৃষ্টি হয় এবং ঐ কুন্ডলীর প্রাক্ত দ্বয় দুটি ধাতব রিং এর সাথে যুক্ত করা হয় যা দুটি কার্বন ব্রাশের সাথে স্পর্শ করানো থাকে এবং ঐ কার্বন ব্রাশের সাথে তার যুক্ত করে ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয়।
সাধারণত দুটি উপায়ে ওই কুণ্ডলীকে ঘুরানো হয়। প্রথমত নদীতে বাঁধ দিয়ে জলের প্রবাহের দ্বারা টারবাইনের ব্লেড ঘুরিয়ে এবং কয়লা, তেল, পারমাণবিক চুল্লী প্রতিক্ষেত্রেই তাপশক্তি দ্বারা জল বা তরলকে বাষ্পীভূত করে ঐ বাষ্পের দ্বারা ব্লেড ঘুরানো হয়।
দুই সমান্তরাল তারের সাহায্যে বিদ্যুৎ প্রেরণ করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপন্ন বিদ্যুৎ শক্তি যাতে ক্ষয় না হয় সেজন্য বিদ্যুৎ শক্তিকে ট্রান্সফরমারের সাহায্যে নিম্ন বিভব থেকে উচ্চ বিভবে রূপান্তর করে তারের (Coil) মাধ্যমে পাঠানো হয়। তার বিরাট এলাকাজুড়ে ছড়ানো হয় যাকে গ্রিড (Grid) বলে অতপর ঐ গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সাবস্টেশনে উচ্চ বিভব কে অনেকটা নিম্ন বিভবে রূপান্তরিত করা হয় পরে আরও কমিয়ে বাড়ী বাড়ী সরবরাহ করা হয়। সাধারণত একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্রে 6600 ভোল্ট হিসাবে 100KW বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে পাঠানোর সময় 33000 ভোল্টে পরিণত করে সাবস্টেশনে 6600 ভোল্টে নামানো হয় পরে গ্রাহকদের কে সরবরাহ করা হয় 230 ভোল্টে নামিয়ে।


৬৭। বৈদ্যুতিক টেস্টার কিরূপে কাজ করে?
স্প্রিংটি কোন বর্তনীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ হচ্ছে কিনা বা ত্রুটি সনাক্ত করতে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রটি দেখতে স্ক্রুড্রাইভারের মতো, ইহার এক প্রান্তে ধাতব দন্ড থাকে অন্য দিকটা স্বচ্ছ প্লাস্টিক দ্বারা অবৃত এর মধ্যে একটি ছোট বাল্বের মধ্যে নিয়ন গ্যাস থাকে। ওই বাল্বটি একটি বেশী রোধ যুক্ত থাকে তার সাথে যুক্ত করা হয় একটি ধাতব স্প্রিং। বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা স্পর্শ করলে উহা পরিবাহির কাজ করে। যখন বিদ্যুৎ ঐ গ্যাসের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন ঐ গ্যাস আয়নিত হয় এবং নিয়ন পরমাণু উত্তেজিত হয়ে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে। খুব সামান্য বিদ্যুৎ দেহের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় কিন্তু তাতে কোন বিপদ হয় না।


৬৮। ৰেলমেটাল বা কাঁস কি দিয়ে তৈরী?
তামা ও টিনের একপ্রকার সংকর ধাতু। এতে তামা 80% ও টিন 20% থাকে। এই ধাতুতে সামান্য অঘাতে অত্যন্ত বেশী কম্পন হয় এবং তীব্র কম্পাঙ্কের শব্দ উৎপন্ন হয় তাই এই ধাতু দ্বারা কাঁসর, ঘণ্টা তৈরী হয়। এছাড়া বাসনপত্র এবং মূর্তিও এই ধাতুতে তৈরী করা হয়।


৬৯। বেতার তরঙ্গ (Radiowave) কি?
তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের একটি বিশেষ অংশ, যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 10-1 মিটার থেকে 105 মিটার এবং কম্পাঙ্ক 103 হার্জ থেকে 10° হার্জ। ইলেকট্রিক অসিলেটরে বা স্পন্দনশীল ইলেকট্রনিক বর্তনী দ্বারা এই তরঙ্গ উৎপন্ন করা হয়। এই তরঙ্গ রেডিও, টেলিভিসন, কৃত্রিম উপগ্রহ সমুদ্রগামী জাহাজে ব্যবহৃত হয়। এই তরঙ্গ মাটির নীচে ও জলের মধ্যেও কয়েক মিটার পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে। এই তরঙ্গ দূরদেশে পাঠানোর জন্য পৃথিবীর আয়ন মন্ডলকে প্রতিফলক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।


৭০। বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আমরা কিরূপে শুনতে পাই?
বেতার কেন্দ্র কোন ব্যক্তির কথা বা গান মাইক্রোফোনের সাহায্যে প্রথমে বিদ্যুৎ তরঙ্গে রূপান্তরিত করা হয়। এই বিদ্যুৎ তরঙ্গকে অসিলেটর নামক যন্ত্রে উৎপন্ন হাই ফ্রিকোয়েন্সি তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গে সাথে মেশানো হয়। এই মিশ্রিত তরঙ্গের নাম মড্যুলেটেড ওয়েভ বা তরঙ্গ যার কম্পাঙ্ক (ফ্রিকোয়েন্সি) নির্দিষ্ট রাখা হয় এবং অ্যাপ্টেনার সাহায্যে চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আজকাল অন্য এক ব্যবস্থার সাহায্যে প্রচার করা হয় তাকে বলা হয় এক. এম (ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন)। এক্ষেত্রে তরঙ্গের অ্যামপ্লিচূজ নির্দিষ্ট রাখা হয় কিন্তু ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তিত হয়।
আমাদের গ্রাহক যন্ত্রে ঠিক এই পদ্ধতির বিপরীত ব্যবস্থা থাকে। গ্রাহক যন্ত্রের অ্যাটেনাতে বহু কেন্দ্রের প্রেরিত তরঙ্গ ধরা পড়ে তা ক্যাপাসিটর নাম যন্ত্রের দ্বারা ইচ্ছে অনুসারে বেছে নেওয়া হয়। তারপর ঐ তরঙ্গ থেকে অসিলেটর ও ইনটার মিডিয়েট আম্পপিয়ারের যন্ত্র দ্বারা মূল বেতার তরঙ্গকে পৃথক করে ডিরেক্টর নামক যন্ত্রে পাঠানো হয়। ডিরেক্টর থেকে যে শব্দ বের হয় তাকে অ্যাম্পিপ্লিয়ারের দ্বারা বর্ধিত করে লাউড স্পীকারের সাহায্যে শব্দের মূল রূপ দান করে এবং আমরা তা শুনতে পাই। 1906 সালে প্রথম বেতার প্রচার হয় আমেরিকাতে।


৭১। মাইক্রো তরঙ্গ কি?
তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের মধ্যে যে সকল তরঙ্গের দৈর্ঘ্য 30 সেমি থেকে এক মিলি মিটার পর্যন্ত এবং কম্পাঙ্ক 109 হার্ড থেকে 3 x 1011 হার্ৎজপর্যন্ত তাই মাইক্রো তরঙ্গ। এই তরঙ্গের সাহায্যে রাডার, টেলিভিসন, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, অণু পরমাণুর গঠন বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ তরঙ্গের জন্মদাতা আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। যেহেতু এই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বেশী তাই এই তরঙ্গ আয়ণ মন্ডলে প্রতিফলিত হয় না, সেজন্য তরঙ্গ দূরে পাঠাতে রিপিটার স্টেশন ও কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্য নেওয়া হয়। একটি মাত্র মাইক্রোতরঙ্গ ব্যবহার করে কয়েক হাজার টেলিফোনের সংকেত এক সঙ্গে পাঠানো যায়। ভু-সমালয় কলে অবস্থিত মাত্র তিনটি উপগ্রহের সাহায্যে পৃথিবীর সকল স্থানের সাথে এই তরঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরী হয়েছে। 


৭২। মাইক্রোফোন কিরূপে কাজ করে?
মাইক্রোফোন এমন একটি যন্ত্র যা শব্দ শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই যন্ত্রে একটি ধাতব পাতলা পাত বা ডায়াফ্রাম থাকে যা বিদ্যুৎ বর্তনীর অংশ। শব্দ তরঙ্গ ডায়াফ্রামের উপর পড়লে তাতে কম্পনের সৃষ্টি হয়, ঐ কম্পন থেকেই বিদ্যুৎ স্পন্দন বা বিদ্যুৎ সংকেত উৎপন্ন হয়। এইরূপ কম্পন বিভিন্ন উপায়ে সৃষ্টি করা যায় যেমন চাপ প্রয়োগ (কার্বন চূর্ণের উপর), বিদ্যুৎ চুম্বক প্রক্রিয়াতে তড়িৎ ধারকত্ব, পিজো ইলেকট্রিকের প্রভাবে আজকাল ছোট ছোট মাইক্রোফোনের বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে, এক্ষেত্রে পিজো ইলেকট্রিক ক্রিস্টাল (কোয়ার্টজ জাতীয় ক্রিস্টাল) ব্যবহৃত হয়। এই যন্ত্রে ক্রিস্টালের এক অংশ আটকানো থাকে অপর অংশ ডায়াফ্রামের সাথে যুক্ত করা হয়। যখন ডায়াফ্রামে শব্দ তরঙ্গের প্রভাবে কম্পন হয় তখন ক্রিস্টালের উপর চাপের হ্রাস বৃদ্ধি হয় ফলে তড়িৎ চালক বলের তারতম্য ঘটে এবং উহাতে বিদ্যুৎ স্পন্দন পাওয়া যায়। জনসভায় ভাষা, রেডিও, টিভি ফোনে মাউথপিস, যেকোন ধরনের রেকডিং-এ এই যন্ত্রের ব্যবহার হয়ে থাকে।


৭৩। মেসন (Meson) কি?
পরমাণু নিউক্লিয় বলের উৎস আলোচনা করতে গিয়ে জাপানী বিজ্ঞানী ইউকাওয়া প্রথম মেসন কণিকার ধারণা দেন। কিন্তু বিজ্ঞানী অ্যান্ডারস্ ও নোডারমিয়ার কসমিক বিকিরণের মধ্যে মেসন কণার সন্ধান পেয়েছেন। এই কণার ভর ইলেকট্রন ও প্রোটনের ভরের মাঝামাঝি। নিউক্লিয়াসদের নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে এই কণার বিনিময়ের ফলেই নিউক্লিয় বলের সৃষ্টি হয়। চার প্রকারের মেসন কণা আছে। মিউ (+, −), পাই (+, -, 0), কে (+, –) এবং কেজিরো ও অ্যাটিকেজিরো, এই কশাদের ভর ইলেকট্রনের ভরের 206.8 থেকে 974.5 গুণ এবং তাদের গড় আয়ু 2.2 x 10-5 সেকেণ্ড থেকে 1.8 x 10-16 সেকেণ্ড।


৭৪। মেসার (MASER) কি?
ইংরাজীতে পুরো কথাটি হ'ল মাইক্রোওয়েভ অ্যামপ্লিফিকেশন বাই স্টিমিউলেটেড ইমিশন অফ রেডিয়েশন। এক কথায় বলা যায়, মেসার এক প্রকার বিবর্ধক যা একই কম্পাঙ্কের মাইক্রোওয়েভ তৈরী করতে পারে। লেসার যেখানে দুর্বল প্রকৃতির আলোকে তীব্র আলোকে রূপান্তরিত করে সেখানে মেসার খুব সুক্ষ্ম বেতার তরঙ্গকে শক্তিশালী বিদ্যুৎপ্রবাহে রূপান্তরিত করে। মেসারকে বেতার দুরবীনে (Radio telescope) এ ব্যবহার করে বহু বহু দুরের নক্ষত্র লোকের সামান্যতম সংকেত (Signals) এবং কৃত্রিম উপগ্রহের সংকেতকে বর্ধিত করে পাওয়া যায়। ওই সংকেত লিপিবদ্ধ করতে পারে (Recording)। মেসার ব্যবহার করে অ্যাটোমিক (Atomic clock) ঘড়ি তৈরী সম্ভব হয়েছে।


৭৫। মোটর সাইকেল চলে কিরূপে?
মোটর সাইক্লেল ঘূর্ণায়মান ওয়াক্কুল ইঞ্জিন বা দুই অথবা চার আঘাতের (Stroke) পেট্রোলের ইঞ্জিন, যা অভ্যন্তরীণ দহনশীল ইঞ্জিন। এতে একটি সিলিন্ডারের মধ্যে ফুয়েলের সাথে বায়ুমিশ্রিত থাকে। একটি স্পার্কগ্লাগের সাহায্যে কুয়েলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তাতে প্রচুর উত্তপ্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়। ঐ গ্যাস সিলিণ্ডারের পাশে অবস্থিত পিষ্টনকে ধাক্কা দেয়। যার ফলে গাড়ীর চাকাগুলিতে বল প্রযুক্ত হয় এবং গাড়ী চলতে শুরু করে। চালক বিভিন্ন লিভারের সাহায্যে চালনা, বন্ধ করা, ব্রেক করা, বেগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি করে থাকেন।


৭৬। মোবাইল ফোন কিরূপে কাজ করে?
এই যন্ত্রে যে সকল যন্ত্রাংশ থাকে সেগুলি হল বিভিন্ন আই সি সমৃদ্ধ সার্কিট, স্ক্রিন, অ্যান্টেনা, কীবোর্ড, মাইক্রোফোন, স্পীকার, ব্যাটারী ইত্যাদি। এই ফোনে বেতার প্রেরক ও গ্রাহকযন্ত্র থাকে। এই যন্ত্রটিতে নির্দিষ্ট নম্বর ডায়াল করলে একটি সংকেত নিকটবর্তী ট্রান্স মিশন পয়েন্টে যায় (cell), সেখানে কম্পিউটার নির্দিষ্ট নম্বরের অবস্থান নির্ণয় করে। যদি নম্বরটি নিজেদের পরিষেবার অন্তর্গত হয় তবে ওই নম্বরের নিকটবর্তী ট্রান্সমিশন পয়েন্টে যোগাযোগ করে দেয় তখন সেখান থেকে নির্দিষ্ট নম্বরের ফোনে রিং টোন তৈরী করে। যদি নম্বরটি অন্য পরিষেবার অন্তর্গত হয় তবে মোবাইল সুইচিং কেন্দ্রের (MSC) মাধ্যমে নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কে পাঠিয়ে দেয়। প্রতিটি ট্রান্সমিশন পয়েন্ট (cell) থেকে মাইক্রো তরঙ্গের মাধ্যমে কয়েক হাজার টেলিফোনে সংকেত পাঠানো যেতে পারে। তবে দুরবর্তীস্থানে সংকেত পাঠাতে হলে নির্দিষ্ট দুরত্ব অ্যামপ্লিফাই বা পরিবর্ধন করে পাঠানো হয় পরবর্তী পয়েন্টে। অন্যদেশে পাঠানোর জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ বা সমুদ্রের নীচে স্থাপিত কেবলের মাধ্যমে পাঠানো হয়। তবে এতে সময় লাগে কয়েক মাইক্রো সেকেণ্ড থেকে কয়েক সেকেণ্ড। কোন ব্যবস্থা চালু রাখতে অ্যান্টেনা থেকে 23 জিগাহার্জস কম্পাঙ্কের তরঙ্গ বের হয় তা শুধু মোবাইল সেট-এ ঘনিভূত হয়। বার্তা প্রেরণে মোবাইল থেকে 890925 মেগাহর্জস এবং গ্রহণে 935960 মেগাহার্জস কম্পাঙ্ক ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে মোট প্রায় 250 কোটি মোবাইল চালু আছে। সবচেয়ে বেশী চীনদেশে 40 কোটি, সেখানে ভারতে 10 কোটির কিছু বেশী।


৭৭। মোবাইল ফোন কি শরীরের ক্ষতি করে?
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির তথা মানুষের প্রয়োজনীয় সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত একটি ক্ষুদ্র ব্যস্ত যন্ত্র। মোবাইল ফোনে বার্তা প্রেরণ ও বার্তাগ্রহণের সময় যে তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ হয়, তার কম্পাঙ্ক 890 থেকে 960 মেগাহার্টস কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট তরঙ্গ বের হয়। বিজ্ঞানীদের নানা পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে এই তরঙ্গ মস্তিষ্কের উত্তাপ বৃদ্ধি করে, মস্তিষ্কের কোষপর্দার ক্ষতি করে, কলায় ক্রিরেডিক্যালার এর উপাদান বৃদ্ধি করে। ছোটদের ক্ষেত্রে ক্ষতির মাত্রাটা বেশী কারণ তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ তাদের মস্তিষ্কের অনেকটা গভীরে প্রবেশ করে, নানা জটিলতার সৃষ্টি করছে। এমনকি জৈবরাসায়নিক পদার্থগুলির পরমাণুদের গঠন বিন্যাসে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। সম্প্রতি সুইডেনের বিজ্ঞানী বিভিন্ন অণবিক পদ্ধতির সাহায্যে সমীক্ষা করে বলেছেন রক্ত কণিকার অভ্যন্তরস্থ জার উপর ভ্যাণ্ডারওয়াল বলের রুন, রক্তকণিকাগুলি বহু জায়গায় জড় হয়ে যায় বা রক্তপ্রবাহের সংকোচন ঘটাতে পারে। এই তথ্যটি আরও বিশেষভাবে প্রমাণ হলে মোবাইল ব্যবহারে সাবধানতা অবশ্যই নিতে হবে। তবে ক্ষতির পরিমাণ মোবাইলের শক্তি, কত সময় ব্যবহার করেছে এবং কত দুর থেকে ফোন ব্যবহার করছে তার উপর অনেকটাই নির্ভর করে।


৭৮। মৌলিক কণা কি? কি দিয়ে সমস্ত কিছু তৈরী?
স্থূলভাবে বলা যায় মহাবিশ্ব মাত্র তিনটি কশা দ্বারা গঠিত। ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। বেশ কিছুকাল এরাই ছিল পদার্থের মৌলিক কণা। কিন্তু 1964 সালে বিজ্ঞানী গেলম্যান ও জোয়াইগ বলেন নিউক্লিয়াস (প্রোটন, নিউট্রন), হাইপারস (জাইকা (0, – 1 ) 2টি, সিগমা (+, 0, – 1 ) 3টি, ল্যাম্ডা, চামড, ওমেগা) প্রত্যেকেই তিন প্রকার কলা দ্বারা গঠিত তাদের নাম কোয়ার্ক (Quark)। হয় প্রকার কোয়ার্ক বলা আছে নামগুলি আপ (u) ডাউন (d) স্ট্রেইঞ্জ (s) চার্ম (C), বটম (b), টপ (t) এবং এদের প্রত্যেকের ওটি প্রকার ভেদ আছে।
কোয়ার্ক কশা হাড়াও মৌলিক কণা আছে তারা হল মিউন (4) তিন প্রকার নিউট্রিনো, ওটাউ (7) কণা এদের সাথে ইলেকট্রনকে নিলে একত্রে এদের নাম লেপটন আর ফোটনও মৌলিক কণা। এবার তাহলে খাঁটি মৌলিক কণা হল “কোয়ার্ক” ও ‘‘লেপটন”।
বিজ্ঞানীগণ বলেছেন সৃষ্টির প্রথম থেকে চার প্রকার বল আছে এবং তাদের বহন করার জন্য কতগুলি ক্ষুদ্রকণা আছে। তাদের নাম দেন গ্লুওন (gluon)। প্রথমত মহাকর্ষবল, এই বল বহনকারী কণার নাম গ্রাভিটন (graviton) দ্বিতীয়ত বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বল বহন করে ফোটন কণা। তৃতীয় প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে তীব্র কেন্দ্রীয় বল, বহন করে কালার্ড গ্লুওন (Cgluon), চতুর্থ দুর্বলকে কেন্দ্রীয় বল (তেজস্ক্রীয়তার কারণ) এই বল বহন করে ভেক্টর কণা (w+, w-, w°)।
বিজ্ঞানী ডিরাকের তত্ত্বানুসারে প্রত্যেক চেনা কলার বিপরীত কণা অর্থাৎ Anti particle আছে। তাহলে মৌলিক কণার সংখ্যা হল কার্ক 18 + বিপরীত কার্ক 18+ লেপটন 8 + কালার্ড গ্লুওন 8 + ফোটন 1 + গ্রাডিট্রন। 1+ ভেক্টর কণা 3 = 571 এদের মধ্যে স্থায়ী কণা মাত্র 9টি ফোটন, 4টি নিউট্রিনো (2 নিউট্রিনো + 2 অ্যান্টি নিউট্রিনা) 2 ইলেকট্রনস্ (ইলেকট্রন ও পজিট্রন) এবং 2টি নিউক্লিয়নস্ (প্রোটন ও অ্যান্টিপ্রোটন) নিউট্রনের মিন লাইক 1013 সেকেণ্ড।
বর্তমানে ক্রমবর্ধমান ত্বরণ যন্ত্র (Tevatron), Large Hedron Collider তৈরী করে 250 টিরও বেশী বলার সন্ধান পেয়েছেন আর তাদের আয়ু 106 থেকে 10-22 সেকেণ্ড। বিজ্ঞানীরা আরও ক্ষুদ্রকণা খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। যতই জানা যাচ্ছে প্রকৃতি আরও অজানা পথে ঠেলে দিচ্ছে। এ পথের শেষ হয়তো নেই তবুও চলা ও জানার শেষ নেই কিন্তু প্রশ্ন আসে লাভ কি? হয়তো এখনই লাভ পাওয়া যাচ্ছে না, তবে আগামী পৃথিবীর মানুষের অবশ্যই উপকারে লাগবে।


৭৯। মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র আছে কি?
1-এর থেকে বড় যে সংখ্যা এক (1) ও বর্ণিত সংখ্যা ব্যতীত অন্য সংখ্যা দ্বারা অবিভাজ্য সেই সংখ্যা হল মৌলিক। গণিতবিদ ইউক্লিড প্রমাণ করেন মৌলিক সংখ্যার সংখ্যা অসীম। পরবর্তীকালে ফার্মা, অয়লার, গোল্ডবাক, রামানুজ প্রভৃতি গণিতবিদ্গণ মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত পূর্ণসুত্র আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে আংশিক সুত্র হিসাবে ফার্মার সূত্রটি Fr = 22n + 20 1 যেখানে ৷ ধনাত্মক পুর্ণসংখ্যা ও শুন্য কিন্তু n = 5 হলে মৌলিক সংখ্যা পাওয়া যাবে না। তেমনি অয়লারের সূত্র n2 + n + 41 এবং n2 – n + 41, n2 - 79n + 60, n এর মান যথাক্রমে 40, 41,80 হলে মৌলিক সংখ্যা পাওয়া যাবে না। 1 থেকে 1000 এর মধ্যে 168 টি মৌলিক সংখ্যা আছে।  তবে 2005-এর ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যে মৌলিক সংখ্যাটি আবিষ্কৃত হয়েছে সেটি হল (22596491 1) সংখ্যাটি সম্পূর্ণ লিখতে খবরের কাগজের 235 পৃষ্ঠার প্রয়োজন হবে যেখানে সংখ্যা (digits) 7816230টি।


৮০। রকেট কি?
আমাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে যেমন বাহক থাকে তেমনি মহাকাশযানকে উৎক্ষিপ্ত করতে যে বাহনটি ব্যবহৃত হয় তার নাম রকেট। ভি-টু রকেট তৈরীর মাধ্যমে জার্মানীই এর উন্নতি সাধন করে। কিন্তু এই রকেটের উন্নততর সংস্ককরণ হল ইন্টার কন্টিনেন্ট্যাল ব্যালিস্টিক মিশাইল। রকেটে কঠিন তরল, জ্বালানী ব্যবহৃত হয়। উহাতে অগ্নিসংযোগ করলে দহনে উৎপন্ন গ্যাস ছোট ছিদ্র দিয়ে রকেটের পিছন দিয়ে বের হয় তখন বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়ার জন্য রকেট ছুটে চলে উপর দিকে। পৃথিবীর আকর্ষণ বলকে কাটাতে হলে বেশ কয়েকটি রকেটের প্রয়োজন হয়। মহাকাশ ভ্রমণের জন্য একমাত্র বাহন রকেটই। সবচেয়ে শক্তিধর স্যার্টান-ভি রকেট যা অ্যাপোলো মহাকাশযানের বাহক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।


৮১। রকেট উৎক্ষেপণের পূর্বে কাউন্ট ডাউন করা হয় কেন?
রকেট নিক্ষিপ্ত হওয়ার পূর্বে ধাপে ধাপে নিক্ষেপ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয় এবং নিক্ষেপ করার পূর্ব মুহূর্তে রকেটের বিভিন্ন সিস্টেমগুলি নিখুঁতভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয় কাউন্ট ডাউনের মাধ্যমে। অর্থাৎ সংখ্যাকে উল্টো দিক থেকে গুণে যখন শুণ্যতে পৌছায় তখন রকেট নিক্ষিপ্ত হয়। যদি নিক্ষেপের পূর্বে কোনপ্রকার ত্রুটি ধরা পড়ে তবে কাউন্ট ডাউন বন্ধ হয়ে যায়, ত্রুটি দূর করা হলে আবার কাউন্ট ডাউন শুরু হয়। রকেট নিক্ষেপের ক্ষেত্রে সামান্যতম ত্রুটিতেও বিরাট বিপদ ঘটতে পারে। 


৮২। রমন এফেক্ট কি?
একবর্ণী আলো স্বচ্ছ মাধ্যমের অণুর সঙ্গাতে বিচ্ছুরিত হয় এবং বিচ্ছুরিত আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটে (বিবর্ধিত) এই ঘটনাটিকে রমন এফেক্ট বলে। বিজ্ঞানীর নামানুসারে এই ঘটনার নামকরণ হয়েছে। বিজ্ঞানী ভারতীয়, নাম তার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরামন। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তিনি তার নিজের তৈরী যন্ত্রের সাহায্যে এই ধরনের অলোক ধরতে সক্ষম হয়েছেন। পদার্থের অণু সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষাতে এই তত্ত্বটি অতি প্রয়োজনীয়।


৮৩। রাতে আলোকিত ঘরে কাঁচের জানালা থেকে বাহিরে জিনিস ভাল দেখা যায় না কিন্তু আলো নিভিয়ে দিলে ভাল দেখা যায় কেন?
আলোকিত অবস্থায় ঘরের আলোকরশ্মি কাঁচের জানালায় প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এসে আমাদের চোখে পড়ে এবং এই আলোর তীব্রতা বাহিরের বস্তু থেকে আসা আলোক রশ্মির চেয়ে বেশী থাকে তাই বাহিরের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পাই না। কিন্তু আলো নিভিয়ে দিলে কেবল বাহিরের আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে এবং স্পষ্ট দেখা যায়।
 


৮৪। রিঅ্যাক্টর (Reactor) কি?
যে যন্ত্রের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিতভাবে নিউক্লিয় বিভাজন প্রক্রিয়া চালানো যায় তার নাম নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর। নিউট্রন কলার আঘাতে জ্বালানী পরমাণু বিভাজিত হয়ে সৃষ্টি করে আইসোটোপ, উত্তাপ শক্তি, ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ এবং কিছু নিউট্রন। এই যন্ত্রের মধ্যে যে জিনিসগুলি থাকে তা হল জ্বালানি, নিয়ন্ত্রক দণ্ড, মন্দক (মডারেটর) এবং শীতল কারক। জ্বালানি হিসাবে ইউরোনিয়াম 235, থোরিয়াম 232, প্লুটোনিয়াম 39 41 ব্যবহৃত হয়। নিয়ন্ত্রক দণ্ড বিভাজন ক্রিয়ায় উৎপন্ন নিউট্রন শোষণ করে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত করে, দণ্ডগুলি ক্যাডমিয়াম, রূপা, কাডামিয়াম ও ইন্ডিয়ামের মিশ্রণ দ্বারা তৈরী করা হয়। আর দ্রুতগতি সম্পন্ন নিউট্রনের গতি মন্দীভূত করতে জল, ভারীজল, গ্রাফাইট, বেরিলিয়াম, মডারেটর হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আর উৎপন্ন তাপশক্তি শক্তিকে সংহত করা হয় জল, ভারীজল, তরলধাতু, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি প্রবাহিত করে। কার্য প্রণালী ও ব্যবহারের দিক থেকে বিভিন্ন প্রকারের রি-অ্যাক্টর তৈরী করা হচ্ছে, যেমন তাপীয় রি-অ্যাক্টর, ফাস্ট বা দ্রুত রি‍্যাক্টর। ফাস্ট ব্রীডার রিঅ্যাক্টর, যে রি-আকটরে জ্বালানী শেষ হবে না। এতে যত জ্বালানী ব্যবহৃত হবে তার চেয়ে বেশী জ্বালানী তৈরী হবে। এছাড়া ব্যবহারের দিক থেকে গবেষণা, প্লুটোনিয়াম, শক্তি উৎপাদক রি-অ্যাক্টর আছে। পদার্থবিদ এরিকো ফার্মি শিকাগোতে প্রথম রি-অ্যাক্টর তৈরী করেন। ভারত তথা এশিয়াতে প্রথম তৈরী রি-অ্যাক্টর টি তৈরী হয় ভারতে নাম তার 'অপ্সরা'। এছাড়া 1985 সালে ভারতে প্রথম ব্রীডার রি-অ্যাক্টর কালপক্কমে চালু হয়েছে।


৮৫। রিমোট কন্ট্রোল কিরূপে কাজ করে?
বেতার তরঙ্গ দ্বারা দূর থেকে কোন ইলেকট্রনিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এই যন্ত্র ব্যবহার করে। এই যন্ত্রে দুটি অংশ থাকে একটি প্রেরক অপরটি গ্রাহক। এক্ষেত্রে অবলোহিত রশ্মি (Infrared) ব্যবহার করা হয়। গ্রাহক যন্ত্রটি থাকে যে জিনিস টাকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে তাতে এবং প্রেরক যন্ত্রটিতে পুশ সুইচ এ চাপ দিয়ে এর নীচে রাখা ইলেকট্রনিক সার্কিট (I.C) চিপের ভিতরে থাকে এনকোডার অর্থাৎ কি করতে বলা হচ্ছে তা বুঝতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোড ওয়ার্ড তৈরী হয়ে তার সাথে একটি 30 KHz কম্পন বা পালস মিশ্রিত হয়ে চিপসের আউটপুট অংশ দিয়ে সম্মুখ অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং গ্রাহক যন্ত্রে ঐ রশ্মি বা মিশ্র পালস্ ধরা পড়ে কোড ওয়ার্ডে এবং একটি রিসিভার নির্দিষ্ট কাজ করার নির্দেশ দিয়ে থাকে। আজকাল এই যন্ত্রের বহুল ব্যবহার হচ্ছে খেলনা, টিভি, ভিসিপি, কম্পিউটার, রোবট, নিরাপদ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ। 


৮৬। রিলেটিভিটি (Relativity) তত্ত্ব কি?
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এই তত্ত্বটি উদ্ভাবন করেন। এই তত্ত্বে তিনি বলেছেন
(ক) বিজ্ঞানের নিয়মগুলি প্রতিটি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে অভিন্ন থাকবে। এই তত্ত্বের সিদ্ধান্ত হল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড অসীম কিন্তু সসীম, এই বিশ্বে কোন সরলরেখা নেই সব রেখাই বাঁকা কারণ বিশ্বই বাঁকা। ভরের উপস্থিতির ফলে স্থান (space) বক্র হয়ে যায়।
(খ) আলোর গতিবেগ ধ্রুব এবং অপরিবর্তনীয়, এই তত্ত্ব থেকে তিনি দেখালেন বস্তু ও শক্তি একই এবং অভিন্ন; তিনি তা সরলতম সমীকরণে প্রকাশ করলেন E=mc2 যেখানে E= শক্তি, m= ভর, C= আলোর বেগ।
এই তত্ত্ব থেকে তিনি আরও দেখালেন বস্তুর ভর, দৈর্ঘ্য, সময়, পরিবর্তিত হয়। বেগের পরিবর্তনের সাথে সাথে। কিন্তু বস্তু যখন সাধারণ গতিতে চলে তখন এই পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না।
 


৮৭। রেডার (Rader) কি?
রেডার পুরো কথাটি হল রেডিও ডিটেকসন অ্যান্ড র্যা ঙ্গইং। এটি কয়েকটি যন্ত্রের সমাহার বলা চলে। এতে বেতার প্রেরক, অ্যাটেনা, অসিলোস্কোপ ও বেতার গ্রাহক যন্ত্র থাকে। বেতার প্রেরক যন্ত্র থেকে বেতার তরঙ্গ (1 GHz থেকে 10 GH, যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ছোট কিন্তু কম্পাঙ্ক বেশী) পাঠানো হয় অ্যান্টেনার মাধ্যমে। অ্যান্টেনা অবতল আকারের এবং স্বয়ংক্রিয় যা এদিক ওদিক ঘুরতে পারে। অ্যান্টেনা থেকে প্রেরিত তরঙ্গ প্রতিফলকে বাধা পেলে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় গ্রাহক যন্ত্রে ধরা পড়ে এবং স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক যন্ত্র অসিলোস্লোপ প্রতিফলিত তরঙ্গের সাহায্যে প্রতিফলকের দুরত্ব ও সময় পরিমাপ করে। এই যন্ত্রের পর্দাতে আলোর রেখা ফুটে উঠে, প্রতিফলকটি গতিশীল হলে তার বেগও নির্দেশ করে। দেশ রক্ষার কাজে, আকাশযানের অবস্থান নির্ণয়ে, সমুদ্রগামী জাহাজে, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদির দুরত্ব নির্ণয়ে, কৃত্রিম উপগ্রহ পরিচালনার ক্ষেত্রে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কাজে রেডারের ব্যবহার হয়ে থাকে।


৮৮। লাই ডিটেক্টর কিভাবে মিথ্যা কথা ধরতে পারে?
এ যন্ত্রে যাকে পরীক্ষা করা হবে, তার দেহের বিভিন্ন স্থানে ইলেকট্রোড লাগিয়ে যন্ত্রের সাথে যুক্ত করা হয়। পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তার দেহের শরীরবৃত্তীয় যেসব পরিবর্তন সাধিত হয় যেমন আবেগ, হৃদস্পন্দন, ঘাম, মনের চঞ্চলতা তা লিপিবদ্ধ করা হয় এবং পরে ঐগুলি বিশ্লেষণ করে, উত্তরদাতা মিথ্যা বলেছিল কিনা তা প্রায় 80% সঠিকভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। যন্ত্রটির নাম পলিগ্রাফ।
 


৮৯। লালবর্ণের আলো বিপদ সংকেত হিসবে ব্যবহৃত হয় কেন? 
দর্শন যোগ্য আলোর মধ্যে লালবর্ণের আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বড় তাই এই বর্ণের আলোর বিচ্ছুরণ চ্যুতি (Dispension) কম হয়। সুতরাং লাল বর্ণের আলো অন্যান্য বর্ণের চেয়ে কম চ্যুতিতে বহু দুর পর্যন্ত যেতে পারে।
 


৯০। লিক্যুইড কৃষ্টাল ডিসপ্লে কিরূপে কাজ করে?
আজকাল ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, টিভি প্রেসার মাপার যন্ত্র এবং বিভিন্ন ডিজিটাল ডিসপ্লেতে লিকুইড কৃষ্টাল ব্যবহৃত হচ্ছে। এই যন্ত্রের পর্দাতে দুটি স্বচ্ছ কাঁচের প্লেটের মধ্যবর্তী স্থানে লিকুইড কৃস্টাল সীল করা থাকে। সংখ্যা প্রদর্শনের জন্য প্লেটদ্বয়ে ইন্ডিয়াম অক্সাইড দ্বারা প্রলেপের উপর সাতটি সমান্তরাল ও উলম্ব ভাবে নক্সা করা থাকে। যার সাথে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা থাকে। ঐ নক্সাতে বিদ্যুৎ সংযোগ হলে পোলোরাইজিং ফিলারের মাধ্যমে আলোর রেখায় ফুটে ওঠে। লিকুইড হিসাবে পি এন অক্টিলক্সি বেনজইক অ্যাসিড, সোডিয়াম স্টিয়ারেট, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। আগামীদিনে এর ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে।


৯১। লিভার (LIDAR) কি?
পুরো কথাটি হল লাইট ডিটেক্টশন এন্ড রেজিং। এই যন্ত্রকে উন্নততর রাডার বলা যায়। এই যন্ত্রে রাডারের মত তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার না করে এর পরিবর্তে লেসার রশ্মি ব্যবহার করা হয়। ফলে রাডারের চেয়ে লক্ষ্য বস্তু সম্পর্কে বেশী তথ্য পাওয়া যায়। এই যন্ত্রে জলের নীচের বস্তুর এবং গভীর খনির সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।


৯২। লেসার (LASER) কি?
ইংরেজীতে পুরো কথাটি লাইট অ্যামপ্লিফিকেশন বাই স্টিমিউলেটেড ইমিসন অফ রেডিয়েশন। এই রশ্মিগুচ্ছ খুব উজ্বল, এক্স রশ্মির বর্ণ এবং তরঙ্গ দৈর্ঘ্য একই (CO herent) এবং সকল তরঙ্গ একদিকে (Directional) গমন করে। এই রশ্মিগুচ্ছকে খুব ছোট স্থানে সংহত করা যায় এবং তীব্র হতে পারে।
প্রথম লেসার তৈরী হয়েছিল, চুনি (Ruby) সাথে অল্প ক্রোমিয়াম মিশ্রিত দণ্ড দিয়ে। বিদ্যুতের সাহায্যে ঝলক আলো (flash light) ওই দণ্ডের উপর ফেলা হয় তাতে রুবির মধ্যস্থ ক্রোমিয়াম পরমাণুগুলি উত্তেজিত হয়ে উচ্চস্তরের শক্তি সৃষ্টি করে, ক্রোমিয়ামের ইলেকট্রনগুলি ধাপে ধাপে শক্তির নিম্নস্তরে ফিরে আসে তখনই লেসার রশ্মি নির্গত হয়। আজকাল অবশ্য বিভিন্ন ধরনের লেসার তৈরী করা হচ্ছে বিভিন্ন কাজের জন্য। লেসার প্রযুক্তিতে সাত প্রকার লেসার ব্যবহৃত হচ্ছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে চোখ, হৃদযন্ত্র, টিউমার, দাঁত এমনকি ক্যান্সার চিকিৎসাতে, রক্তপাত সেলাইহীন, ছুরি, কাঁচিহীন শল্য চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। কঠিন ধাতু ছিদ্র, কাঁটা, মহাকাশের বিভিন্ন বস্তুর সঠিক দূরত্ব নির্ণয়, ত্রিমাত্রিক চিত্র, প্রিটারে, রাডারে, কম্প্যাক্ট ডিস্ক তৈরী ও পঠান এবং পরমাণু সংযোজন বিক্রিয়ায় গবেষণাতেও লেসার ব্যবহার হচ্ছে। সম্প্রতি এক প্রকার অত্যাধুনিক লেসার অস্ত্র তৈরী করা হয়েছে যা থেকে সবুজ লেসার রশ্মি বেরিয়ে 50 থেকে 500 মিটারের মধ্যে থাকা শত্রুর চোখে ঐ আলো পড়লে কয়েক মুহূর্তের জন্য সে চারপাশ অন্ধকার দেখবে, রাতে বা ঘন কুয়াশার মধ্যে শত্রুকে তাক করার জন্য লাল রং-এর লেসার রশ্মি বের হয়ে আসবে।
 


৯৩। শক্তি সংরক্ষণের উপায় কি?
আমরা শক্তির উৎস হিসাবে কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক পদার্থকে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু ঐ শক্তির উৎসগুলি অফুরন্ত নয়, প্রতিদিনই তা কমে যাচ্ছে তাই শক্তির সংরক্ষণ করা প্রয়োজন এবং তা প্রকৃতপক্ষে শক্তির অপচয় রোধের মাধ্যমে এবং স্বল্প শক্তিতে আশানুরূপ কাজ করার মাধ্যমেই সম্ভব।
যেমন প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা, বিদ্যুৎ পরিবহনের সময় যে অপচয় (প্রয় 20%) হয় তা রোধ করার জন্য ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরী করা যেতে পারে। সমান আলো পাওয়ার জন্য কম ওয়াটারে ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে প্রায় 25% অপচয় রোধ হবে। এছাড়া উন্নত প্রযুক্তি শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে, বাড়ী তৈরীর সময় আলো, তাপ উভয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে এবং গাড়ী হালকা তৈরী করে, রান্নার সময় প্রেসার কুকার ব্যবহারে জ্বালানি খরচ কমানো সম্ভব।


৯৪। শূন্য কলসীর আওয়াজ বেশী কেন?
কলসী মাটি বা ধাতব পদার্থের তৈরী হয়। যখন কলসী শুন্য থাকে তখন পাত্রটির সমগ্র তলের কম্পন হয় এবং পাত্র সংলগ্ন ভিতর ও বাইরের বায়ু কম্পন হয় যাতে জোরালো শব্দ উৎপন্ন করে। কিন্তু যখন ওর সবটা কোন পদার্থ ভর্তি থাকলে কম্পনের তলের মাত্রা কমতে থাকে এবং সাথে সাথে বায়ুরও কম্পন কম হয় ফলে শব্দ ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হতে থাকে অর্থাৎ শব্দের তীব্রতা কমে।
 


৯৫। শব্দ দূষণ মানুষের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে?
শব্দ দূষণের প্রধান কারণ হল বিভিন্ন যানবাহন, রেলওয়ে, বিমান থেকে নির্গত প্রবল শব্দ, তবে ডিজেল চালিত ভারী গাড়ী থেকে বেশী শব্দ দুষণ ঘটে। এছাড়া বিভিন্ন কলকারখানা চলাকালীন শব্দ, বিমান নামবার ও উড়ে যাওয়ার সময়ের শব্দ, গাড়ী ইলেকট্রিক হর্ণ এবং অনিয়ন্ত্রিত লাউড স্পিকারের ব্যবহার এবং গৃহে ব্যবহৃত জেনারেটর, ক্লিনার, গ্রাইণ্ডার, অনিয়ন্ত্রিত সাউণ্ড বক্স থেকেও দূষণ হয়ে থাকে।
এই দুষণ মানুষের দৈহিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করে থাকে। নিরাপদ শব্দের প্রাবল্যমাত্রা 65 ডেসিবেল। মেট্রোরেল ও বিমানে চলার সময় শব্দের মাত্রা যথাক্রমে 80 db ও 110 db এর বেশী হতে পারে। 150 160 db শব্দ মানুষকে বধির করে দিতে পারে। তবে ক্ষতির মাত্রা শব্দের তীব্রতা ও স্থিতিকালের উপর নির্ভর করে। স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদযন্ত্রের গোলযোগ, মনোযোগ নষ্ট, মেজাজ খিটখিটে বা ক্রুদ্ধ করে তুলতে পারে, মাথা ধরতে পারে, শ্বাসকষ্টও হতে পারে।


৯৬। স্ট্রিং থিউরি (String Theory) কি?
এই তত্ত্বানুসারে পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ অর্থাৎ মৌলিক কণাগুলিকে বস্তু না ভেবে একটি একক মাত্রার স্ট্রিং হিসাবে কল্পনা করা হয়েছে। যাদের দৈর্ঘ্য 10-33 সেমি হতে পারে। বোলার তারে কম্পনে যেমন নানা সুর উপসুরের সৃষ্টি হয়, তেমনি স্ট্রিং অর্থাৎ অতি অতিক্ষুদ্র তারের কম্পনে নানা মৌলিক কণার সৃষ্টি হয়। আমরা যাদেরকে বলা বলি তা আসলে ওই স্ট্রিং-এর ক্ষুদ্রতম দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ। ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে ওই দৈর্ঘ্য 10-33 সেমি, নিউক্লিয়াসের ক্ষেত্রে 10-13 সেমি, প্রোটনের ক্ষেত্রে 10-8 সেমি। এই তত্ত্বের প্রথম বক্তা Edward Witten পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তাদের ভাষাতে “Ultimate constituents of matter are some extremely tiny strings".
বিজ্ঞানীদের আশা এই তত্ত্ব দ্বারা পদার্থ ও চার প্রকার শক্তির সমন্বয় তত্ত্ব Theory of Everything" TOE এর সমাধান সম্ভব হবে। 


৯৭। ষ্টেইনলেস ষ্টীলের জিনিস চুম্বক আকর্ষণ করে না কেন?
ষ্টেইনলেস স্টীল তৈরী করা হয় লোহা (8886 ) % ও ক্রোমিয়াম (14.12) % মিশিয়ে। এই দুটি ধাতু মিশ্রণের ফলে বিজ্ঞানী ওয়েবারের তত্ত্বানুসারে ঐ মিশ্রণের অণুগুলি এমন ভাবে সজ্জিত হয় যাতে লোহার অণু চুম্বকগুলির চুম্বক ধর্মলোপ পায়। ফলে চুম্বক আকর্ষণ করে না।
 


৯৮। সময় (Time) আসলে কি?
দুটি ঘটনার মধ্যবর্তী বিরতি নির্দেশ করে সময়। ঘটনাটি কখন ঘটেছে, তার স্থায়িত্ব, পরিবর্তন ও গতি সম্পর্কে ধারনা জন্মে। কতকগুলি নৈসর্গিক ঘটনা দেখে আমাদের সময় জ্ঞান জন্মে যেমন দিন ও রাত্রি, চন্দ্র কলার হ্রাস বৃদ্ধি ও ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদি। কাল আছে কিন্তু আদি বা অন্ত নেই তবে আইস্টাইনের ব্যপক অপেক্ষবাদ অনুসারে অতীতে মহাবিশ্বের এক অসীম ঘণত্বের অবস্থা ছিল এবং ছিল বৃহৎ বিস্ফোরণ ( Big Bang) সেটাই সময়ের আদি, আবার ভবিষ্যতে মহাবিশ্ব চুপসে গিয়ে আর একটি অসীম ঘণত্বের অবস্থায় আসবে সেটা হবে বৃহৎ সংকোচন (Big crunch) সেটাই হবে সময়ের অস্ত।
আইনস্টানের বিশেষ অপেক্ষবাদ অনুসারে সময় ধীরে ধীরে চলে যদি বস্তুর গতি খুব বেশী হয়। অর্থাৎ জীবন দীর্ঘ হবে যদি গতি বেশী হয়। এ ঘটনা পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এই নিয়ম অনুসারে যদি কল্পনা করা যায় যে দুজন জমজ ভাই, তাদের বয়স ২০ বৎসর, একজন মহাকাশ ভ্রমণে গেলেন মহাকাশযানে যার গতি আলোর গতির কাছাকাছি। দুই বৎসর পর ফিরে এল পৃথিবীতে এসে তার মহাকাশযানের ঘড়ি ও ক্যালেন্ডার থেকে তার বয়স হবে বাইশ বৎসর কিন্তু পৃথিবীতে যে ভাই রয়েছে তার বয়স পৃথিবীর ঘড়ি ও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রায় 60 বৎসর!
যিশু খৃষ্টের জন্মের 1500 বৎসর পূর্বে মিশর দেশে সূর্য ঘড়ির সাহায্যে সময় পরিমাপ শুরু, 1800 খৃষ্টাব্দে হাত ঘড়ি তৈরী হয় জার্মানিতে এবং ওই সালেই গ্রীণিসমিন time প্রচলন হয়, 1970 এ ডিজিটাল ঘড়ি বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে 40 টি রেডিও ঘড়ির সংকেতের মাধ্যমে ঘড়ির সঠিক সময় নির্ধারিত হয়। সূর্য ও চন্দ্র থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে যথাক্রমে 497 এবং 1.2 সেকেন্ড।
 


৯৯। সুপার কনডাকটিভিটি বা অতি পরিবাহিতা কি?
আমরা জানি যে কোন পরিবাহির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় ওই পরিবাহী বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধা দেয়, কিন্তু বিজ্ঞানীগণ আবিষ্কার করেছেন কোন কোন পদার্থের উষ্ণতা পরম শূন্য (-273°C) তাপমাত্রার কাছাকাছি গেলে পরিবাহির বাধা বা রোধ একেবারেই থাকে না অর্থাৎ ওই পদার্থকে সুপার পরিবাহী বলা হয়। তবে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে যাতে স্বাভাবিক উষ্ণতাতে ওই রকম পদার্থ পাওয়া যায়। প্রথম সুপার পরিবহীর যাত্রা শুরু পারদ দিয়ে যা 4.2K এ অতি পরিবাহী ধর্ম দেখা যায়। তারপর গবেষণা আর গবেষণা নায়োবিয়াম ও জামেনিয়ামোর সংকর 23K, ইট্রিয়াম বেরিয়াম ও কপারে সংকর ধাতু 52K তাপমাত্রায় ওই ধর্ম দেখায়। ইতিমধ্যে বহু নূতন অতি পরিবাহী পদার্থ আবিস্কৃত হয়েছে তবে তা অপ্রকাশিত (Secret)। আগামীদিনে হয়তো স্বাভাবিক উষ্ণতাতেই অতিপরিবাহী পাওয়া যাবে এবং এই অতিপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তির প্রবাহে অপচয় হবে না, রোধ শূন্য তার দিয়ে তড়িৎ চুম্বক তৈরী হবে, কম্পিউটারের চিপসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাবে, অতিপরিবাহী বিশেষ ধর্ম চুম্বককে বিকর্ষণ করে এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে আগামীদিনে শুন্যে গাড়ী বা ভাসমান অতিদ্রুতগামী এমনকি 500Km বেগের রেলগাড়ী তৈরী করা সম্ভব হবে এছাড়া ছোট আকারের জেনারেটর, ট্রান্সফর্মার, বৈদ্যুতিক চুম্বক তৈরী করা সম্ভব হবে।


১০০। সূর্যরশ্মি থেকে কিরূপে বিদ্যুৎ তৈরী করা যায়?
সূর্যের আলো থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ তৈরী হয় যে যন্ত্রে তার নাম সৌরকোষ বা সোলার সিস্টেম। এই কোষে সোলেনিয়াম, ইন্ডিয়াম, সিলিকশ, ক্যাডমিয়াম সালফাইড ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই কোষে সূর্যরশ্মি পতিত হলে তা বিদ্যুতে পরিণত হয়, তবে এক্ষেত্রে মাত্র রশ্মির 16% থেকে 35% পর্যন্ত বিদ্যুতে রূপান্তর সম্ভব হয়েছে। একটি ছোট কোষে 0.5 ভোল্ট তড়িৎ বিভব উৎপন্ন হয়, কাজেই বহু কোষ একত্র করে তড়িতের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। আজকাল রাস্তায় অলো, বাড়ীতে বিদ্যুৎ এমন কি মহাকাশযানে এই কোষ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামীদিনে প্রযুক্তির আরও উন্নতি করে অফুরন্ত সূর্যের রশ্মি থেকে, বিদ্যুৎ তৈরী সম্ভব হবে।
 


১০১। স্পার্ক প্লাগ (মোটর, স্কুটারে) কিরূপে কাজ করে?
পেট্রোল ইঞ্জিনে ফুলে (জ্বালানি) ও বায়ুর মিশ্রণে অগ্নি সংযোগের জন্য এই যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়। এই যন্ত্রে দুটি ইলেকট্রোড থাকে, একটি তার ওই যন্ত্রের মধ্য দিয়ে গিয়ে সিলিন্ডারের দেওয়ালের সাথে আটকানো থাকে এবং ওই তারের চতুর্দিক চীনা মাটির আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। অপর ইলেকট্রোডটি ওই আবরণের নিচের দিক থেকে প্লাগের মধ্য পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। ইলেকট্রোডে দুটির মধ্যে একটু ফাঁকা থাকে। স্টোরেজ ব্যাটারির বিভব প্রভেদ 12 ভোল্টকে প্রায় ত্রিশ হাজার ভোল্টে রূপান্তরিত করে এবং ঐ ছোট ফাঁকা স্থানে বৈদ্যুতিক ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয় তাতে সিলিন্ডারে ফুয়েল ও বায়ুর মিশ্রণে আগুন জ্বলে উঠে এবং যে তাপ উৎপন্ন হয় তাতে ইঞ্জিন চালনার শক্তি প্রদান করে।
 


১০২। স্পেসস্টেশন কি?
আমরা জানি ট্রেনের যাত্রাপথে স্টেশন থাকে কিন্তু মহাকাশেও বিজ্ঞানীগণ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার শ কিমি উপরে ঘুর্ণায়মান স্পেস স্টেশন তৈরী করেছেন। যার মধ্যে গবেষণাগারে কারখানা, বিশ্রামকক্ষ, খাদ্য ঔষধ পানীয়, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ব্যবহৃ থাকে। পৃথিবী থেকে ওই স্টেশনে সার্টেল রকেটে গিয়ে ভারশূন্য অবস্থায় নুতন কারিগরী কুশলতা বিকাশে সুযোগ পান মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এবং নির্দিষ্ট কার্যশেষে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসেন। এ ধরনের স্টেশন প্রথম মহাকাশে পাঠায় রাশিয়া নাম তার স্যালিউট, এরপরে স্কাইল্যাব, সয়ুজ, মীর এবং সর্বশেষ 1998 সালে হটি দেশ (আমেরিকা, রাশিয়া, কানাডা, জাপান, ব্রাজিল এবং ইরোপীয় মহাকাশ সংস্থা) একত্রে একটি স্টেশন তৈরী করেছেন নাম তার ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন। আগামীদিনে ওই স্টেশন থেকে অন্য গ্রহে বা নক্ষত্রে পাড়ি দেওয়া অনেক সহজ হবে এবং মহাকাশ ভ্রমণকারীদের ওই স্টেশনে কয়েকদিনের জন্য বেড়ানোর ব্যবস্থা কয়েক বৎসরের মধ্যেই চালু হতে চলেছে।
 


১০৩। স্বততালি দিলে শব্দ উৎপন্ন হয় কেন?
হাততালি দেওয়া মানে হল হাতের তালু দুটিকে সজোরে চাপ দেওয়া। চাপ দেওয়ার ফলে কিছুটা বায়ু সংকোচন হয় এবং দুই তালুর থেকে বায়ু বেরিয়ে প্রসারিত হয় এর ফলে বায়ুর কম্পনে শব্দ উৎপন্ন হয়। এছাড়া হাত দুটির যান্ত্রিক শক্তি ও শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।