জীববিজ্ঞান

১। ইলেকট্রিক-রে উৎপন্ন করতে পারে এমন প্রাণী আছে কি?
প্রত্যেক প্রাণী খাদ্য সংগ্রহ এবং আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন রূপে শক্তির ব্যবহার করে। সমুদ্রে 36 প্রজাতির মাছ দেখা গেছে যাদের দেহে তড়িৎ উৎপাদক অঙ্গ থাকে, অঙ্গটি আসলে পরিবর্তিত মাংসপেশী। অন্য প্রাণীকে ধরার সময় ঐ রে ব্যবহার করে অতি সহজেই ধরে ফেলে। এইরূপ কয়েকটি মাছের নাম হল ইলেকট্রো ফোরাস, ম্যালাপিটারস, রাইনা, ইল, টর্পেডো ইত্যাদি। একটি বড় মাপের ইল 65 ভোল্ট সহ 1 অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন করতে পারে। যা দিয়ে বড় মাপের প্রাণীকে ঘায়েল করতে পারে অনায়াসেই।
 


২। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ কিরূপে কাজ করে?
সাধারণ আলোক মাইক্রোস্কোপে বস্তুকে আলোকিত করে, দুটি লেন্সের সাহায্যে প্রায় 2.5 হাজার গুণ বড় করে দেখা যায়, কিন্তু ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে দ্রুতগতিশীল ইলেকট্রন রশ্মিগুচ্ছকে বস্তুতে ফোকাস করা হয় এবং তড়িৎচুম্বকীয় লেন্স ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সাহায্যে বস্তুর এক বিবর্ধিত প্রতিবিম্ব প্রতিপ্রভা পর্দায় সৃষ্টি হয়, তখন প্রতিবিম্বের ছবি তোলা হয়। এক্ষেত্রে বস্তুকে 4.5 লক্ষ গুণ বড় করে দেখা যায়। এই যন্ত্রের সাহায্যে জীবাণু, ভাইরাস, টিসু, ব্যাকটেরিয়া, কোষের গঠন পর্যবেক্ষণ করা যায়। এই যন্ত্রের দুটি প্রকার ভেদ আছে। একটি স্ক্যানিং, অপরটি ট্রান্সমিশন। প্রথমটির সাহায্যে বস্তুর উপরিতলের তথ্য জানা যায় এবং দ্বিতীয়টির সাহায্যে পদার্থের ভিতরের কাঠামোর গঠন সংক্রান্ত তথ্য জানা যায়। বর্তমানে স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপ (STM) ও অ্যাটমিক ফোর্স মাইক্রোস্কোপ (AFM) তৈরী করা হয়েছে যার সাহায্যে কার্বণ পরমাণুর ষড়ভূজাকৃতি গঠন, পরমাণুর প্রতিবিম্ব দেখাসম্ভব হয়েছে, এমনকি ডি.এন.এ (DNA) এর দ্বিতন্ত্রী আকার দেখা সম্ভব হয়েছে। যার ফলস্বরূপ আমরা জেনেছি জেনোম ম্যাপ (জীবনে প্রথম পাঠ)। 


৩। কস্তুরী জিনিসটা কি?
এক প্রজাতির হরিণ আছে যাদের পুরুষদের তলপেটের চামড়ার নীচে থলিতে ছোট ছোট দানা তৈরী হয়, যা থেকে কস্তুরী পাওয়া যায়। দানার মধ্যে ঘন তরল পদার্থই কস্তুরী, শুকালে গুড়ো হয়ে যায়। এর সুমিষ্ট গন্ধ আছে। আজকাল রসায়নবিদ্গণ কৃত্রিম উপায়ে কস্তুরী উৎপাদন করছেন।


৪। কাঁদলে চোখে জল আসে কেন?
আমাদের চোখের কোণে অশ্রুগ্রন্থি থাকে যেখান থেকে সরু নালিপথে উপরের পাতায় চলে যায়। প্রতিবার যখন চোখে পলক পড়ে তখন ঐ নালির মুখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। যখন কাঁদা হয় তখন বেশী পরিমাণে বের হয় তখন তাকে চোখের জল বলা হয়। অনেক সময় বেশী হাসলেও চোখে জল বের হয়, তখন অবশ্য মাংশপেশী অশ্রু গ্রন্থিকে সংকুচিত করে সেটাও একটি কারণ বটে। 


৫। কাঁদা কি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক?
প্রোটন কণা দুটি up ও একটি down কণা দ্বারা গঠিত। নিউট্রন কণা একটি আপ ও দুটি ডাউন কণা দ্বারা গঠিত। কোয়ার্ক কণার বৈশিষ্ট্য হল এদের আধান ভগ্নাংশিক। যেমন : up কোয়ার্কের আধান 2/3, down -এর আধান – 1/3।


৬। কাঁদলে চোখে জল আসে কেন?
আমাদের চোখের কোণে অশ্রুগ্রন্থি থাকে যেখান থেকে সরু নালিপথে উপরের পাতায় চলে যায়। প্রতিবার যখন চোখে পলক পড়ে তখন ঐ নালির মুখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। যখন কাঁদা হয় তখন বেশী পরিমাণে বের হয় তখন তাকে চোখের জল বলা হয়। অনেক সময় বেশী হাসলেও চোখে জল বের হয়, তখন অবশ্য মাংশপেশী অশ্রু গ্রন্থিকে সংকুচিত করে সেটাও একটি কারণ বটে। 


৭। কাঁদা কি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক?
দুঃখ ও কষ্টের কারণে আমাদের কান্না পায়। কান্নার সময় চোখ দিয়ে জল বের হয়। বিজ্ঞানীগণ বহু গবেষণায় দেখেছেন চোখ দিয়ে জল বের হয়তিন প্রকারে। এক সাধারণ চোখের জল অক্ষিগোলকের লুব্রিকেটর হিসাবে কাজ করে। দ্বিতীয় রিফ্লেক্স অপ ইরিট্যান্ট যেমন পিয়াজ কাটার সময় বের হয়, তৃতীয়ত ইমোশনাল যা চোখ থেকে বের হয়, সুখে, দুঃখে শোকে কখনও কখনও আনন্দতেও। উত্তেজিত বা ইরিট্যান্ট হলে নানা প্রকার প্রোটীন জাতীয় পদার্থ সহ স্টেস হরমোন, প্রোল্যাকটিন হরমোন ও ম্যাঙ্গানিজ থাকে কিন্তু আবেগে কাঁদলে স্ট্রেসের জন্য দায়ী অ্যাডেনোকটি কোট্রনিক হরমোন পরিমাণ ও আবেগ তাড়িত কান্না অনেক কমিয়ে দেয়। তাই কান্না টেনশন কমাতে সাহায্য করে, আবেগ চেপে রাখলে হৃদরোগের সম্ভবনা থাকে। কান্নার সময় শরীর বৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। যেমন রক্ত চাপ বাড়ে, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায় এবং তাতে যিনি কাঁদেন তাঁর কষ্টের কারণ ও দূর করতে সাহায্য করে। তাই কান্না মানেই ক্ষতিকারক নয়। পরিসংখ্যান অনুসারে গড়ে একজন পুরুষ বৎসরে 17 বার এবং মহিলা 64 বার কাঁদেন।


৮। কীটপতঙ্গ কিরূপে একে অপরের সাথে ভাব বিনিময় করে?
কীটপতঙ্গেরা তাদের দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যার নাম ফোরমোন। দুটি শুঁয়া বা অ্যান্টিনার মাধ্যমে বিশেষ সংকেতে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। কর্মী পিপড়া যখন কোথাও খাবারে সন্ধান পায় সেখান থেকে তার বাসস্থানে দ্রুত চলে আসার সময় পথে রাসায়নিক পদার্থ (ফেরমোন) মাটিতে নিশানাহিসাবে ফেলতে ফেলতে আসে এবং সংবাদ দেয়, তখন অন্যরা ঐ নিশানা বরাবর খাবারের কাছে পৌঁছায়। তবে ভিন্ন ভিন্ন কাজে ভিন্ন ফেরমোন নির্গত করে যেমন খাবার সন্ধানে, বিপদ, আক্রমণ, লাইন দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি
মৌমাছিদের ক্ষেত্রে কর্মী মৌমাছি যখন খাবারের সন্ধান পায় দ্রুত তাদের বাসস্থানে এসে ফেরমোন নির্গত করে সাথে সাথে, মধু কত দূরে, কি পরিমাণ, কোনদিকে ইত্যাদি বুঝাতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে নাচ করে। বিজ্ঞানীগণ লক্ষ্য করেছেন যদি ঘুরে ঘুরে নাচে বুঝতে হবে মধু দূরে নয়, দূরে হলে বাংলা চার অক্ষরের মত ঘুরে নাচতে থাকে। আমাদের অবাক করে দেয় তাদের মনের ভাব প্রকাশের ভঙ্গি।


৯। কুকুর, বিড়াল ইত্যাদির চোখ রাতে জ্বলজ্বল করে কেন?
এদের চোখের ভিতরের দেওয়ালে আলো প্রতিফলক ট্যাপেটাম লুসিডাম নামক রঞ্জক আস্তরণ থাকে যা আলোকে প্রতিফলিত করে থাকে। এছাড়া এদের চোখের তারা লম্বাটে, অন্ধকারে আলোর সাহায্যে খুলে যায় বেশী বড় হয়ে, অর্থাৎ অ্যাপারচার বড় হয় বেশী আলো আসাতে বেশী প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের লেন্স তুলনামূলক ছোট এবং ঐ রূপ রঞ্জক পদার্থ আমাদের নেই।


১০। কেটে গেলে ক্ষতস্থানে বরফ চাপা দিলে রক্তপাত বন্ধ হয় কেন?
ঠান্ডা বরফ রক্তবাহি শিরা বা উপশিরার সংস্পর্শে এলে ঐগুলি সংকুচিত হয় ফলে রক্ত প্রবাহ কমে এছাড়া রক্তের সান্দ্রতা ঠান্ডাতে বেড়ে যায় ফলে রক্ত বেশী আঠালো হয়ে যায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে রক্ত জমাট বেধে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।


১১। কোলেস্টরল রক্তে বেশী থাকলে ক্ষতি কি?
কোলেস্টেরল মানব দেহে সৃষ্ট চর্বি প্রধান বস্তু।ইহা দেহের নানা হরমোন, বাইল জুস উৎপন্ন করে। কিন্তু এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ধমনী ওশিরা গাত্রে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা দান করে। সাধারণত রক্তে কোলোস্টেরলের মাত্রা হওয়া উচিৎ 150-200 মিগ্রা প্রতি 100 মি,লি, তে। এই মাত্রা বেড়ে গেলে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, জন্ডিস প্রভৃতি নির্দেশ করে আর কমে গেলে যকৃত পীড়া নির্দেশ করে। কোলেস্টেরলের প্রধান উৎস চর্বি প্রধান পদার্থ সমূহ যেমন ঘি, মাখন, ডিমের কুসুম। এদের আবার দুটি শ্রেণী আছে হাইডেনসিটি লাইপো প্রোটিন (HDL) ইহা উপকারী কিন্তু লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন (LDL) ইহা ক্ষতিকর। গবেষকগণ বলেছেন অ্যালমন্ডে (Almonds) এ প্রায় 67% মনো আনসেচুরেটড ফ্যাট থাকে যা HDL মাত্রা সঠিক রাখে এবং LDL এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।


১২। ক্লোনিং কি?
ক্লোন কথার অর্থ হুবহু এক রকম। পরিষ্কার ভাষায় জেরক্স কপি। যার ক্লোন করা হবে তার সাথে ক্লোনের জিনগত কোন পার্থক্য থাকবে না। ধরা যাক, একজন তার দেহের ক্লোন করতে চাইলে, তার দেহের যেকোন কোষ, ধরা যাক, চামড়া থেকেই কোষ আলাদা করে তার নিউক্লিয়াস বের করে নেওয়া হল। তারপর সেই নিউক্লিয়াসকে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে কোন নারীর নিউক্লিয়াসবিহীন ডিম্বানুতে। তারপর সেই সৃষ্টি হওয়া নতুন ডিম্বাণু যদি স্থাপন করা হয় সেই নারী বা অন্য কোন নারীর গর্ভে তাহলে ঠিক দশ মাস দশ দিন পর পৃথিবীতে জন্ম নেবে তার সন্তান বা “ক্লোন”। তার রকম সকম সব মিলে যাবে ক্লোনের সাথে। 1996 সালে বিজ্ঞানী ইয়ান উইলমার্ট ভেড়ার ক্লোন তৈরী করেন। নাম ডলি, পৃথিবীর প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণী। অবশ্য মানুষের ক্লোন করা এখনও সম্ভব হয়নি। সম্ভব হলেও তা প্রকাশিত হয় নি এমনও হতে পারে। 


১৩। ক্লোরোফিল কি?
গাছের পাতা তথা অন্য অঙ্গ সবুজ দেখায় কারণ ক্লোরোফিল নামক সবুজ পদার্থ থাকে। পাতার প্রত্যেক কোষে অসংখ্য ছোট গোলাকার বস্তু থাকে। তাদের ক্লোরোপাস্টিড বলে। ইলেকট্রন মাইক্রোসকোপে এদের দেখলে প্রথমে পর্দা তার ভিতরে বর্ণহীন অংশ স্টোমা। তাতে অতি ক্ষুদ্র কণা থাকে নাম গ্রানা, তার মধ্যে থাকে ক্লোরোফিল। সবুজ পাতাতে .05% থেকে .20% ক্লোরোফিল থাকে। দুই প্রকার এওবি ক্লোরোফিল অণুতে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। পরীক্ষাগারে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিল সংশ্লেষণ হয়েছে। ইহা ব্যাতিত উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ সম্ভব হয় না। ইহা সূর্যের আলোকে সংহত করে শর্করা উৎপাদনের উপযোগী শক্তি সৃষ্টি করে। ক্লোরোফিলকে অনেক বিজ্ঞানী “প্রকৃত জীবনশক্তি” বলে থাকেন। বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাকসবজি ও ফলে প্রচুর ফটোকেমিক্যাল থাকে যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।


১৪। খাবার খাওয়ার পরে ঘুম পায় কেন?
আমাদের দেহে প্রায় 5 লিটার রক্ত থাকে এবং হৃৎপিণ্ড থেকে বহিষ্কৃত রক্ত প্রয়োজন অনুসারে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ/ গ্রন্থিতে প্রবাহিত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় যকৃতে 28%, কিডনীতে 24%, মস্তিষ্কে 14% এবং বাকী অন্যান্য অংশে রক্ত প্রবাহিত হয়। খাবার পরে তা হজম করার জন্য পাকস্থলীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী রক্তের প্রয়োজন হয়। তাই সেখানে প্রয়োজন অনুসারে রক্ত চলে গেলে মস্তিষ্কে রক্তের ঘাটতি দেখা যায়। তাই মস্তিষ্কের কর্মতৎপরতা অনেকটা কমে যায় এবং আমাদের ঘুম ঘুম ভাবের সৃষ্টি হয়। হয়তো এই ভাবটাই আমাদেরকে বিশ্রাম নিতে নির্দেশ করে।


১৫। গরম জিনিস দেহের সংস্পর্শে এলে অস্বস্তি হয় কেন?
আমাদের দেহ লক্ষ কোটি কোষ দ্বারা গঠিত। কোষগুলি আবার অণু দ্বারা গঠিত। দেহের স্বাভাবিক উষ্ণতায় ঐ অণুগুলির স্বাভাবিক গতি থাকে কিন্তু দেহের কোন অংশ গরম জিনিসের স্পর্শে এলে ঐ গতি বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ ঝাঁকুনি খায় যখন ঝাঁকুনি সহ্য করতে পারে না তখন কোষ ভাঙতে থাকে। এই সময়ে আমরা একটি বিশেষ অনুভূতি পাই যার নাম পোড়া। দেহ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্রুত ঐ অংশে রক্ত চলাচল করার ফলে ঐ স্থান লাল হয়ে উঠে। হঠাৎ খুব গরমের স্পর্শে এলে ঐ ভেঙে পড়া কোষ কলার নীচে তাপের প্রভাবে জলীয় বাষ্প জমা হয়ে থাকে, একে ফোস্কা বলে।


১৬। গরমকালে ঘেমে যাই কেন?
পরিবেশের উষ্ণতার সাথে দেহকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ঘাম হওয়া। এটা চামড়াকে কোমল করে রোমকূপের ধূলো ময়লা দূর করে। একজন পূর্ণবয়স্কের দেহের চামড়াতে 3 মিলিয়ন ঘর্মগ্রন্থি থাকে।তা থেকে দিনে প্রায় 500 600 মিলিলিটার ঘাম নির্গত হয় এবং দেহের তাপমাত্রা সঠিক রাখে। ঐ ঘর্মগ্রন্থিগুলি নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস দ্বারা স্নায়ুর মাধ্যমে। যদি কোন কারণে মস্তিষ্ক মারফৎ এই সব স্নায়ু উদ্দীপিত হয়ে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ঘর্মগ্রন্থি চাপ খায় এবং জলীয় পদার্থ (ঘাম) বের হয়ে আসে এবং সেটা বাতাসে উবে যায়। ফলে দেহের তাপমাত্রা কমে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশী থাকলে শরীরের ঘাম উবে যেতে পারে না, গায়ে জমে যায়। গ্রীষ্মে ঘাম বেশী হয়। আসল কথা হল ঘামের মাধ্যমে শরীরের বর্জপদার্থ অর্থাৎ লবণ, ইউরিয়া, প্রোটিন, অ্যামোনিয়া বের হয়। দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রোগজীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। সর্বোপরি রক্তে অ্যাসিড ও ক্ষারের সমতা রক্ষা করে।


১৭। গ্রিন হাউস এফেক্ট কি?
শীতের দেশে উদ্ভিদ বাঁচাতে স্বচ্ছ কাঁচ বা প্লাস্টিকের ঘর তৈরী করা হয় যাতে সূর্যের আলো ওর ভিতরে প্রবেশ করে উষ্ণতা বৃদ্ধি করে এবং উদ্ভিদ সতেজ থাকে। কিন্তু ঐ আলোর কিছু অংশ অবলোহিত রশ্মিতে পরিণত হয় যা স্বচ্ছ দেওয়াল ভেদ করে বাইরে আসতে পারে না। এই ঘরকে গ্রিন হাউস এবং এর প্রভাবকে গ্রিন হাউস এফেক্ট বলে। পৃথিবীকেও কাঁচের ঘরের মত ঘিরে রেখেছে বায়ুমণ্ডল। পৃথিবীতে জ্বালানী দহনে এবং বিভিন্ন প্রকারে সৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড (50%), মিথেন ( 19%), ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (17%), নাইট্রাস অক্সাইড (4% ), সামান্য ফ্রিয়ন, হাইড্রোফ্লুরোকার্বন ইত্যাদি হল গ্রিন হাউস গ্যাস। এই গ্যাস পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দিচ্ছে, ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বৎসর 0.05°C করে বেড়ে চলেছে, এর ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তন, মেরু অঞ্চলের বরফ গলা শুরু, সমুদ্র জলের উষ্ণতা ও উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ সৃষ্ট CFC বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তর নষ্ট করে দিচ্ছে, যার ফলে মারাত্মক, সূর্য থেকে আসা অতিবেগুণী রশ্মি পৃথিবীতে এসে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। ধ্বংসের পথে চলছে উদ্ভিদ, জীব দেহে দেখা দিচ্ছে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ। ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলকে রক্ষা করার জন্য শীঘ্র উপযুক্ত ব্যবস্থা মানুষকেই নিতে হবে।


১৮। চুল কি রূপে তৈরী হয়?
চুল তৈরীর রহস্যটি নিহিত থাকে চুলের যে অংশটি চামড়ার নীচে সেখানে এক প্রকার থলি (ফলিকল) থাকে। ঐ থলিটির নীচে প্যাপিলা নামে একটি গুটি থাকে। প্যাপিলার চারপাশে যখন নতুনকোয তৈরী হয় তখন পুরাতন কোষ বাহিরে অর্থাৎ উপরের দিকে উঠতে থাকে। কোষগুলি মারা গিয়ে শক্ত হয়ে চুলে পরিণত হয়। প্রত্যেকটি মৃতকোষই চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটায়। সাধারণত আমাদের মাথায় 1 লক্ষ থেকে 1.5 লক্ষ চুল থাকে। প্রতিমাসে কম বেশী 1.25 সেমি চুল বৃদ্ধি পায়। কি আশ্চর্য ঘটনা মৃতকোষের সমষ্টিই চুল!


১৯। চুল শুকানোর যন্ত্র কিরূপে কাজ করে?
এই যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা পিতলের মতো, এই যন্ত্রে বিদ্যুৎশক্তি যান্ত্রিক ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এর মধ্যে একটি ছোট পাখা ও নাইক্রোমের কুণ্ডলীকৃত তার থাকে। বিদ্যুৎপ্রবাহের ফলে এই তার বা কয়েল উত্তপ্ত হয় এবং ফ্যানের হাওয়ার মাধ্যমে গরম হাওয়া নির্দিষ্ট পথ দিয়ে বেরিয়ে আসে এবং চুল শুষ্ক করে। 


২০। চুল, নখ কাটলে ব্যথা পাই না কেন?
আমরা ব্যথা, বেদনা, আনন্দ ইত্যাদি অনুভব করি স্নায়ুর সাহায্যে।  চুল ও নখ উভয়ই মৃত কোষের সমন্বয়ে গঠিত। এদের স্নায়ু থাকে না বা কোন স্নায়ুর সাথে যোগাযোগ নেই। তাই এদেরকে কাটলে ব্যথা অনুভব হয় না।


২১। চোখ দুটি কেন?
আমরা দুটি চোখ দিয়ে যে জিনিস দেখি মস্তিষ্ক তা একত্রিত করে একটি সোজা প্রতিবিম্ব তৈরী করে। এক চোখ দিয়ে দেখলে, দুটি চোখের চেয়ে কম জিনিস দৃষ্টি রেখার মধ্যে আসবে। এছাড়া এক চোখ দিয়ে দেখলে দ্বিমাত্রিক ছবি উপলব্ধিতে আসে। কিন্তু দু-চোখ দিয়ে দেখলে ত্রিমাত্রিক ছবি চোখে ধরা পড়ে। কাজেই সংক্ষেপে বলা যায় দুটি চোখ দিয়ে আমরা বস্তুর প্রকৃত অবস্থান, দূরত্ব ও গভীরতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করতে পারি।


২২। চোখের জলে শুধুই কি জল থাকে?
চোখের জল বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীগণ যে রাসায়নিক পদার্থ পেয়েছেন সেগুলি হল সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম অক্সাইড, ইউরিয়া, নাইট্রোজেন, গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড ও কিছু প্রোটিন যেমন ব্যাটেকোলামাইনস্ এছাড়াও প্রায় পঞ্চাশ রকমের প্রোটিন যৌগের সন্ধান পেয়েছেন। চোখের জল স্বাদে নোনতা। এতে লবণের মাত্রা রক্তের লবণের মাত্রার সমান।
চোখে অত্যন্ত পাতলা অশ্রুজলীয় স্তর থাকে যা চোখকে সিক্ত ও মসৃণ রাখে যা চোখের রক্ষক। এছাড়া প্রতি মিনিটে 18 থেকে 20 বার চোখের পলক পড়ে যা ধূলিকণা চোখের কোণে সরিয়ে দেয়।


২৩। চোখে পলক পড়ে কেন?
আমরা প্রতি মিনিটে গড়ে 6 বার পলক ফেলি। পলক ফেলার সময় চোখের উপরের পাতার নীচে অবস্থিত অশ্রুগ্রন্থি থেকে (লবণাক্ত) তরল সর্বদা বাহির হয়ে চোখকে সিক্ত রাখে। চোখে ধূলিকণা বা অস্বস্থিকর পদার্থ প্রবেশে বাধা দেয়, বা প্রবেশ করলে বেশী তরল বাহির হয়ে অবাঞ্ছিত পদার্থ ধুয়ে দূর করার চেষ্টা করে। এছাড়া তীব্র বা উজ্জ্বল আলো প্রবেশ করে চোখের ক্ষতি না করতে পারে তার জন্যও পলক পড়ে। তাই পলক পড়াকে চোখের স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলা যেতে পারে। 


২৪। চোখের উপর ভ্রু-র প্রয়োজনীয়তা কি?
আমাদের দেহের ঘাম বা কোন ধূলিকণা তরল কপালে পড়লে তা যাতে চোখের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য এটি একটি প্রাকৃতিক চোখের সুরক্ষা ব্যবস্থা। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি সূর্যালোক চোখে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।


২৫। চোখ বন্ধ অবস্থায় সোজা হাঁটা যায় না কেন?
মানুষের ভারসাম্য ও স্বেচ্ছায় চলাফেলার মধ্যে সমন্বয় করে থাকে সেরিবেলাম যার অবস্থান মাথার পিছনে নীচের দিকে। ভারসাম্যের ক্ষেত্রে মানুষের দেহের সামান্য অসামঞ্জস্য আছে, শরীরের বাম ও ডানদিকের ওজন সমান থাকে না। ডানদিকের হাত পা ইত্যাদি বাঁদিকের চেয়ে ভারী। চোখ বন্ধ করে সোজা হাঁটার চেষ্টা করলে হাঁটার ঝোকটাডানদিকে পড়ে। তার ফলে হাঁটা বেঁকে ডানদিকে চলে যেতে থাকে এবং অনেকক্ষণ ধরে হাঁটলে হয়তো বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকবো।


২৬। জিনের কাজ কি?
দুটি অক্ষরের ছোট শব্দ জিন যা মানুষের স্বকীয়তা বা মনুষ্যত্ব এর জন্য দায়ী। জিন থাকে ক্রোমোজোমের মধ্যে আর তৈরী হয় ডি. এন.এ দিয়ে। 6 ফুট লম্বা দুটি তন্ত্র ডি.এন.এ-র দৈর্ঘ্যের মাত্র 10% অংশের নাম জিন। অর্থাৎ ডি এন এর যে ক্ষুদ্রতম অংশ বংশ গতির সহায়ক। দুটি মানব দেহের জিনগত পার্থক্য মাত্র 0.1%। মানব দেহের কোযে জিনের সংখ্যা ত্রিশ হাজারের কিছু বেশী। A (অ্যাডিনিল), G (ওয়ানিন), C (সাইটোসিন) এবং T (থাইমিন) এই চার প্রকার ক্ষারের বিচিত্র (তিনশত কোটি)সমাহারই এক একটা জিনকে করে তুলেছে জীবনের ব্লুপ্রিন্ট হিসাবে। জিনে থাকে গোপন সংকেত। প্রতি মুহূর্তে যখন যেমন প্রয়োজন তেমনি তৈরী করছে সংকেত বহনকারী দূত নাম তার মেসেঞ্জার আর. এন. এ (mRNA)। এবার ঐ দূত নির্দেশ নিয়ে চলে যায় রাইবোজোমে যেখানে নির্দেশানুযায়ী কুড়িটি অ্যামিনো অ্যাসিড অণু তৈরী করে কয়েক লাখ প্রোটিন। এরূপে জিন দেহের যাবতীয় কাজকর্ম অর্থাৎ চলা, মনেরাখা, বুদ্ধি, চেহারা,রোগ ইত্যাদি সবই কোষের মধ্যে হাজার হাজার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। জিন গঠনের A,G,C, T সামান্য পরিবর্তনে বদলে যায় প্রোটিনের প্রকৃতি এর ফল স্বরূপ দেখা যায় নানা জিন গঠিত রোগ। বিজ্ঞানীগণ এ যাবৎ চার হাজার জিন ঘটিত রোগ চিহ্নিত করেছেন।


২৭। জিনোম মানচিত্র কি?
একজন পূর্ণবয়স্ক মানব দেহে 1014 টি কোষ থাকে এবং প্রতিকোষে থাকে একটি নিউক্লিয়াস আর এই নিউক্লিয়াসে জড়িয়ে আছে 6 ফুট লম্বা জীবনসূত্র ডি অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডি. এন. এ)। ডি. এন. এ-র দুটি সুতো একে অপরকে পেঁচিয়ে থাকে। একটি কোষের সমস্ত ডি. এন. এ-র ডাকনাম জিনোম। মানচিত্রে যেমন কোন দেশের পাহাড় পর্বত, নদী, রাজধানী, শহর ইত্যাদির অবস্থান দেখানো হয়ে থাকে তেমনি জিনোম মানচিত্রে থাকে দুটি ডি. এন. এ সুতোয় অবস্থিত সুগার ও ফসফোরিক অ্যাসিড এর এক একটি অনু জুড়ে তৈরী হয় এক একটি সুতো আবার প্রতিটি সুগার অনুর সাথে একটি করে ক্ষারের অনু জোড়া লাগানো থাকে। চার প্রকার ক্ষার অ্যাডিনিন A, থাইমিন (T), গুয়ানিন (G),সাইটোসিন (C)। দুটি সুগার লাগোয়া দুটি ক্ষার পরস্পর বন্ধনে আবদ্ধ। A-র সাথে T এবং C এর সাথে G পরস্পর বন্ধন হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। বিজ্ঞানীদের মতে মানব কোষে সম্পূর্ণ ডি.এন. এতে এইরূপ বন্ধন সংখ্যা তিনশ কোটি। ঐ চার প্রকার ক্ষারগুলি পরপর অবস্থানের ভিত্তিতে 6 ফুট লম্বা ছবি আঁকলেই তৈরী হয়ে যাবে জিনোম ম্যাপ। 2003 সালে বিজ্ঞানীগণ মানব জিনোম মানচিত্র (Book of life) অঙ্কন শেষ করেছেন।


২৮।জিন থেরাপি কি?
হিউম্যান জেনোম গবেষণা অনুযায়ী মানব দেহে জিনের সংখ্যা ত্রিশ হাজারের মত কিন্তু এই জিন থেকেই উৎপন্ন হয় কয়েক লক্ষ প্রকার প্রোটিন অর্থাৎ কোন কোন জিন অংশগ্রহণ করে একাধিক প্রোটিন (এনজাইম) তৈরীতে। বিজ্ঞানীগণ “বুক অফলাইফ” অর্থাৎ চার প্রকার ক্ষারের সুশৃঙ্খল তিনশত কোটি বিন্যাস পেয়ে গিয়েছেন কিন্তু কোন জিনের কার্যকারিতা কিংবা তার সাথে চার হাজার আবিষ্কৃত বংশগত জিনঘটিত রোগের সম্পর্ক নির্ণয় করা সম্ভব হয় নি। প্রত্যেক সুস্থ মানবদেহে রয়েছে বিভিন্ন রোগের জিন, কিন্তু তাদের দুটি অবস্থা আছে সক্রিয় (সুইচ তান) এবং নিষ্ক্রিয়(সুইচ অফ্)। এই সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তানির্ভর করে চার প্রকার ক্ষারের সঠিক বিন্যাসের কোন কারণে পরিবর্তন হলে। এছাড়া বিজ্ঞানীগণ বলছেন একটি জিনের দশ, বারোটি দশা বা ভেরিয়েশন (চলক) থাকতে পারে অর্থাৎ কখন জিনের সুইচ অফ বা অন হবে তা বলা কষ্ট। তবুও বিজ্ঞানীগণ জিনের কার্যকারীতা জানার জন্য গবেষণা করে চলেছেন এবং কিরূপে তা মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা যাবে তার ব্লুপ্রিন্ট তৈরী করে ফেলেছেন। প্রথমত ত্রুটিপূর্ণ জিনকে সনাক্ত করে তাকে বের করে এনে ঐ স্থানে ক্লোনিং করে ভাল জিন তৈরী করে প্রতিস্থাপন করা হবে। এছাড়া দায়ী জিন এর নির্দেশ অনুযায়ী খারাপ প্রোটিন তৈরী কোন প্রকার বন্ধ করার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। এছাড়া সন্তান সৃষ্টির প্রথমে এককোষী জাইগোটে সুস্থ জিন ঢুকিয়ে দিয়ে রোগ মুক্ত মানব শিশু জন্ম নিতে পারে, বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে গবেষণা করে চলেছেন, আশার কথা আগামী কুড়ি বৎসরের মধ্যেই জিনথেরাপী ব্যাপক প্রয়োগ সম্ভব হবে। 1990 খৃষ্টাব্দে আমেরিকাতে জিন থেরাপির সুফল প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর ফলে প্রাণ ফিরে পায় সিংহলী এক চার বৎসরের কন্যা।


২৯। জোনাকী পোকার আলো কিরূপে সৃষ্টি হয়?
জোনাকী পোকার তলপেটের নীচের দিকে আলো দেখা যায়। বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষা করে দেখেছেন যে ঐ স্থানে লুসিফারেস ও লুসিফেরিন নামক দুটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা বায়ুর অক্সিজেনের সাথে মিলিত হয়ে তাপহীন আলো উৎপন্ন করে। শুধু জোনাকী পোকা নয়, কেঁচো, কেন্নো, অনেক কীট পতঙ্গ, চিংড়ি, ব্যাঙের ছাতায়, সমুদ্রে জলের জীবাণুর দেহে ও কিছু উদ্ভিদের দেহে আলোর সৃষ্টি হয়। 


৩০। টিকটিকির লেজ খসে পড়ে কেন?
এটি হল টিকটিকির শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যখন টিকটিকি আক্রান্ত হয় তখন লেজটি কেটে গিয়ে এদিক ওদিক নড়াচড়া করতে থাকে, তখন আক্রান্তকারীর মনোযোগ ওইদিকে নিয়ে দ্বন্ধে ফেলে দেয়। তাদের লেজের হাড়গুলি আলতো ভাবে যুক্ত থাকে তাই এদের ইচ্ছে মতো পৃথক করা সম্ভব হয় এবং অবশ্য কয়েকদিনের মধ্যেই আবার নূতন লেজ তৈরী হয়ে যায়।


৩১। ডেড সি (Dead Sea) কি?
ডেড সি কথাটির অর্থ মৃত সমুদ্র। আসলে এটি একটি প্রাণহীন হ্রদ, যার অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের প্যালেস্টাইন। এই হ্রদের জলে 25% বিভিন্ন প্রকার লবণ এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ আছে, যার জন্য ঐ জলে কোন প্রাণী জীবন ধারণ করতে পারে না এবং প্লবতা খুব বেশী হওয়ার জন্য ইচ্ছে করলেও কেহ ওই জলে ডুবে যাবে না। ঐ হ্রদের জ্বলে প্রায় 4 কোটি টন লবণ আছে তাই সাঁতার কাটাও সম্ভব নয়।


৩২। পতঙ্গভুক উদ্ভিদ কিরূপে হজম করে?
পতঙ্গভুক উদ্ভিদ (সূর্য শিশির, কলস উদ্ভিদ, ঝাঁঝি) প্রভৃতির পাতা বিভিন্ন প্রকারে পরিবর্তিত হয়ে পতঙ্গ ধরার ফাঁদ তৈরী করে। এদের স্বতন্ত্র পরিপাক তন্তু থাকে না। এদের গ্রন্থি কোষ থেকে পাচক রস বের হয় এবং পতঙ্গের দেহের প্রোটিন, শ্বেতসার, স্নেহ পদার্থ আদ্র বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া সরল যৌগে পরিণত হয় এবং উদ্ভিদ দেহে শোষিত হয়। এই সকল উদ্ভিদ পতঙ্গভুক হওয়ার প্রধান কারণ হল এরা মাটি থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পাওয়ায় তাদের এই রূপ বিবর্তন হয়েছে। কীটপতঙ্গদের থেকে বাঁচার জন্য তাদের দেহ বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও সুন্দর করে তৈরী করে।


৩৩। পতঙ্গরা আগুনের দিকে ছুটে যায় কেন?
আজকাল আমরা যেমন মোবাইল ফোনের সাহায্যে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করি, প্রকৃতিতে পতঙ্গ শ্রেণী নিজেদের মধ্যে তেমনি যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে এই সত্য বিজ্ঞানীগণ আবিস্কার করেছেন বহু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে।
তাদের মতে শুধু পুরুষ পতঙ্গরাই আগুন বা উজ্জ্বল বাতির দিকে ছুটে যায়। স্ত্রীমথ পুরুষ মথকে অকৃষ্ট করার জন্য তাদের দেহ থেকে ফোরোমেন নামে একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যা থেকে সংকেতযুক্ত অবলোহিত রশ্মি বিকিরিত হয় (Infrared radiation) এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পুরুষ মথের দেহে থাকে বিশেষ অ্যান্টিনা সিস্টেম যার সাহায্যে ঐ রশ্মি ধরা পড়ে এবং সংকেতের পাঠ উদ্ধার করে রশ্মির দিক ধরে এগিয়ে যায় স্ত্রী মথের কাছে। যেহেতু একই প্রকার অবলোহিত রশ্মি বাতি বা আগুন থেকে বিকিরিত হয় এবং তা পুরুষ মথের অ্যান্টিনাতে ধরা পড়ে ফলে রশ্মির দিকে এগিয়ে যায়। অর্থাৎ আগুন বা বাতির কাছে। পতঙ্গভেদে এবং বাতি বা আগুনের প্রকারভেদে বিকিরিত রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয়ে থাকে।


৩৪। পায়রা, চড়াই খাবারের সাথে পাথরের টুকরা যায় কেন?
সাধারণত যে সকল পাখী খাদ্য শস্যের দানা খায় তাদের প্রথমত দাঁত নেই সেজন্য শক্ত দানার আবরণ তথা দানা কে গুড়ো করা সম্ভব হয় না। এই অসুবিধা দুর করার জন্য তারা পাথরের ছোট ছোট কণা খাবারের সাথে খেয়ে থাকে যা তাদের পাকস্থলীর মাংসপেশী ও পাথরের টুকরোগুলি খাদ্য ব্যাকে গুড়ো করে দেয় (grinding) ফল হজম করা সহজ হয়।


৩৫। পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি কিরূপে হল?
পৃথিবী প্রাথমিক অবস্থা থেকে শীতল হয়ে যখন কঠিন হতে থাকে তখন পৃথিবীর বাহিরের স্তরে ছিল হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ইত্যাদি গ্যাস। পৃথিবী ক্রমশঃ শীতল হতে থাকলে তখন বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরী হয়েছিল কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাটি অ্যাসিড প্রোটিন এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড ইত্যাদি। এই প্রোটিন অণু সৃষ্টিকে জীব সৃষ্টির প্রাথমিক পদক্ষেপ বলা হয়। বিজ্ঞানী মিলার এবং স্টানলি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করেন যে অজৈব পদার্থ থেকে জৈব পদার্থ সৃষ্টি হয়েছে। 
এরপর প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের বৃহৎ অণু সৃষ্টি হয়। এই বৃহৎ অনূর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট শক্তির উৎস হিসাবে এবং প্রোটিন কোষের প্রোটোপ্লাজম গঠনে মূল ভূমিকা নেয়। 
কালক্রমে নিউক্লীয় বস্তু প্রোটিন অবরণীর মধ্যে আশ্রয় নেয় এবং পরে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের চারিদিকে কোষ প্রাচীর গঠিত হয়ে কোষ তৈরী হয়। মনে করা হয় প্রথমে তৈরি হয় ভাইরাস ক্রম বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয় ব্যাকটেরিয়া (1jum) আকারের এই সময় পৃথিবীতে অক্সিজেন না থাকায় সব জীবই অবাতশ্বাসী ছিল। তখন এককোষী জীবে উদ্ভিদ ও প্রণী উভয়ের বৈশিষ্ট দেখা যায়। কালক্রমে এককোষী জীবের দেহে ক্লোরোফিলের অবির্ভাব ঘটে এবং সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুত করে ও বায়ু মন্ডলে অক্সিজেন নির্গত করে। তখন পৃথিবীতে সবাতশ্বাসী জীবের আগমন হয় এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এককোষী জীবের মধ্যে যারা ক্লোরোফিল পেল তারা উদ্ভিদে এবং যাদের দেহে ক্লোরোফিলের অবির্ভাব ঘটালো তারা প্রাণী হিসাবে স্থান পেল। পরবর্তীকালে বহু কোষী উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ। সবচেয়ে ক্ষুদ্র কোষীয় জীব মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপটিকাম 0.1 মাইক্রোমিটার দীর্ঘ। এককোষী বৃহৎ উদ্ভিদ কোষ অ্যাসিটাবুলারিয়া (5-10 সেমি দীর্ঘ) কিন্তু কীভাবে কোষের মতো এক সজীব প্রাথমিক আকারের রূপ সৃষ্টি হল তার সঠিক উত্তর এখনও অজানা।


৩৬। পৃথিবীতে কত প্রকার প্রজাতি (Species) আছে?
বিজ্ঞানীগণ মনে করে পৃথিবী সৃষ্টির প্রায় এক মিলিয়ন (10°) বৎসর পরে অজৈব পদার্থ থেকে জৈব উপাদান এবং এককোষী থেকে বহু কোষী জীব বৈচিত্র সৃষ্টি হয়েছে। জীবের আধুনিক শ্রেণী বিন্যাসের প্রজাতি হল ক্ষুদ্রতম একক।
কত ধরনের প্রণী পৃথিবীতে রয়েছে তার সঠিক উত্তর আজও পাওয়া যায়নি তবে পৃথিবীর নানা দেশের ট্যাক্রোনমিক গবেষণার হিসাব থেকে এ পর্যন্ত 1.6 কোটি জীবের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এ সংখ্যা 10 থেকে 100 কোটি ও হতে পারে তবে অনাবিস্তৃত প্রজাতির মধ্যে অনুজীব ও পতঙ্গই বেশী।
পরিসংখ্যান অনুসারে পৃথিবীর প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা 1615100 এর মধ্যে আমেরুদন্ডী 1,57,700 এবং মেরুদন্ডী 38,100 এবং মোট উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা 4,26,275 এর মধ্যে নিম্নশ্রেণীর 1,26,075 এবং সপুষ্পক 300,650 আমাদের দেশে প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা প্রায় 81,000 এবং উদ্ভিদ 45,000 প্রজাতি, 850 প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া এবং 12,500 প্রজাতির ছত্রাকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।


৩৭। প্রাণ (জীবন) আসলে কি?
প্রাচীন মুনি ঋষিদের মতে প্রাণ ঈশ্বরের এক অনন্য সৃষ্টি। জীব বিজ্ঞানীগণ সজীব বস্তুর বহিঃ প্রকাশিত কতগুলি বৈশিষ্ট্যকে “জীবন রূপে” অবিহিত করেন যেমন, প্রজনন, উত্তেজিতা, পুষ্টি ও বৃদ্ধি। জীবনের সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া এখনও সম্ভব হয়নি তবুও ডি. এন. এর দ্বি-তন্ত্রী আণবিক গঠনের আবিষ্কারের ফলে অনেকটাই পরিস্কার, প্রেটিন প্রাণ রাসায়নিক ক্রিয়াকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার সংকেত পায় ডি. এন.এ র কাছ থেকে, মাঝে মেসেঞ্জার আর. এন. এ এবং ট্রান্সফার (Transfer RNA) ভুমিকা থাকে বিচারকর মতো। সহজ কথায় বলা যায় ডি. এন. এ এবং আর. এন. এ প্রোটিন যে সকল রাসায়নিক অণু পরমাণু দ্বারা গঠিত তাদের দ্বন্দ্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে গঠনগত তথ্য (Structinal Information) থেকে জেনেটিক তথ্য এবং (Jenetic information) গুণগত পরিবর্তনই যে “প্রাণ” এরূপ ধারণা করছেন অনেক জীব বিজ্ঞানী। ডি এন এর বিভিন্ন উপাদানগুলির সজ্জা বিন্যাস বংশ পরম্পরায় অক্ষুন্ন থাকে। মানব শরীরে ত্রিশ হাজার জিন আবিষ্কার তথা জিন মানচিত্র আবিস্কার থেকে বিজ্ঞানীগণ আরও ধারনা করছেন যে জিনই মানব দেহের চালিকা শক্তি। তবে পরিবেশেরও কিছুটা প্রভাব আছে। এক কথায় বলা যায় প্রাণ হল (রসায়ন ও তথ্যের) সমষ্টি।


৩৮। ফসফরাস কতটা প্রয়োজনীয়?
প্রাণীর স্বাভাবিক কাজের জন্য 12 টি খনিজ পদার্থের প্রয়োজন। ফসফরাস এর একটি। অস্তি কণার এবং দাঁতের মূল উপকরণ ক্যালসিয়াম ফসফেট। শ্বাস প্রশ্বাস সচল রাখতে, পেশীতে শক্তি সঞ্চয়ে, ফসফেট আয়ন শক্তিধর যৌগ (ATP) তৈরীতে লাগে এছাড়া রক্ত গঠনে, উৎসেচক তৈরীতে, স্নেহ বিপাকে, শক্তি পরিবহনে এর প্রয়োজন আছে। বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে জেনেছেন যে আমাদের গুরুমস্তিষ্কের কোষকলাতে বহু ফসফরাসের যৌগ বর্তমান।


৩৯। ফসফরাস উজ্জ্বল (ভাম্বর) কেন?
ফসফরাস একটি গ্রীক শব্দ যার অর্থ আলোবাহী। সাদা ফসফরাসের উপরে সর্বদা সফাসের বাষ্পের একটি আবরণ থাকে এবং ঐ বাষ্প জারিত হয়ে প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়, যে শক্তি ফসফরাস পরমাণুকে উত্তেজিত করে তার ফলে ফসফরাসের গায়ে আলোর ঝলকানি দেখা যায়।


৪০। ফুল নানা বর্ণের হয় কেন?
ফুলের পাপড়ির কোষে বিভিন্ন প্রকার রঞ্জক পদার্থ থাকে সেজন্য ফুলের বর্ণ বিভিন্ন হয়। কোষরস যদি ক্ষারীয় হয় তবে বর্ণ নীল, আম্লিক হলে লাল বর্ণ, প্রশম হলে গোলাপী ও বেগুনী বর্ণ ধারন করে।


৪১। ফুলে গন্ধ থাকে কেন?
প্রকৃতি ফুলকে বিভিন্ন বর্ণ, অর্থাৎ সৌন্দর্য, গন্ধ ও মধু দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছে। প্রকৃতির অকৃপণ দান কিন্তু ফুলের প্রয়োজনে। ফুল থেকে ফল, ফল থেকে বীজ, বীজ থেকে ফুলের বংশ বিস্তার। ফুলের বিচিত্র বর্ণ, গন্ধ ও সৌন্দর্য আমাদের আকৃষ্ট করে কিন্তু ফুলের আকৃষ্ট করা প্রয়োজন মৌমাহি, প্রজাপতি, কীটপতঙ্গদের। যারা মধুর লোভে ফুলে বসবে এবং পরাগ সংযোগে সাহায্য করবে। তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্যই ফুলের বিচিত্র রঙ এবং গন্ধ সৃষ্টি করেছে প্রকৃতি। 


৪২। বনচাঁড়াল উদ্ভিদের পাতা ওঠানামা করে কেন?
এই উদ্ভিদের পাতা ত্রিফলক যুক্ত হয়। এই পাতার পাশের দুটি পত্রকের পত্রমুল স্ফীত থাকে। এই অংশের কোষের রসস্ফীতি চাপের হ্রাস বৃদ্ধির অর্থাৎ তারতম্যের ফলে পত্রক দুটি পর্যায়ক্রমে উঠানামা করে। 


৪৩। বাদুর বা নিশাচর পাখী বিনা বাধায় চলাচল করে কিরূপে? 
বিজ্ঞানীগণ নানা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা সিদ্ধান্তে আসেন যে ঐ সকল প্রাণী মুখের দ্বারা উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ উৎপন্ন করে। ঐ তরঙ্গ সম্মুখের বস্তু দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে তাদের কানে ফিরে আসে এবং বাধাকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়, তখন নিজেদের গতিপথ পরিবর্তন করে নেয়। মানুষ কিন্তু ঐ শব্দ তরঙ্গ শুনতে পায়
না কারণ প্রাণীদের উৎপন্ন শব্দের কম্পাঙ্ক প্রায় লক্ষ হাটস্।


৪৪। বাদুর মাথা নীচু করে ঝুলে থাকে কেন?
বাদুর মাথা নীচু করে ঝুলে থাকে তার কারণ হল তাদের পায়ের গঠন এরাপ বাঁকানো যে তাদের ঐ অবস্থাতে থাকা স্বাভাবিক ও সুবিধাজনক হয়। এছাড়া তাদের পায়ের মাসেল উপর কোন প্রতিক্রিয়া হয় না নিরাপদে ঝুলতে পারে। আরও সুবিধা হয় যদি কেহ আক্রমণ করে তবে তৎক্ষণাৎ নীচের দিকে পড়তে শুরু করে এবং পালিয়ে যেতে সুবিধা হয়।


৪৫। বায়ুতে জলের চেয়ে অক্সিজেন বেশী তবু মাছ বায়ুতে বেশী ক্ষণ বাঁচতে পারে না কেন?
অধিকাংশ মাছ ফুলকার (Gill) মাধ্যমে শ্বাসকার্য করে থাকে। এই ফুলকা প্লেটের মত দেখতে এদের ভেতরে রক্তজালক থাকে। ফুলকার উপর দিয়ে জল প্রবাহের সময় বিপরীত দিক থেকে ধীরে ধীরে রক্ত প্রবাহিত হয় এবং মাছ জালে দ্রবীভূত 5%-9% অক্সিজেন গ্রহণ করে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। অর্থাৎ রক্ত ও জালের মধ্যে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময় ঘটে থাকে। ফুলকা এই ভাবে বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করার মতো উপযোগী নয়। তবে কিছু মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র, ফুলকার নিকটে থাকে তাই তারা বায়ুতে অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। অনেক মাছ আছে যাদের ফুলকা এবং বায়ুস্থলী দুইই থাকে, তাদের বায়ুস্থলী (পটকা) ফুসফুসের কাজ করে।


৪৬। বায়ো ইনফরমেটিক্স কি?
মলিকুলার বায়োলজি, রসায়ন, ফলিত গণিত ও কম্পিউটারের মেলবন্ধনে জীব বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পর্যালোচনা এবং লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতিটি হল। বায়োইনফরমেটিক্স। বিভিন্ন রোগ কোন পথে বৃদ্ধি পায় ও তার নিরাময়ের গাণিতিক সুত্র হাজির করে কম্পিউটারের সাহায্যে তাকে বোঝার চেষ্টা এবং জিন ভিত্তিক ঔষধ উদ্ভাবন, রোগ উপশমে তার প্রয়োগ এবং মানুষের জন্য যথেষ্ট খাদ্য উৎপন্ন করার চেষ্টাই এর উদ্দেশ্য।


৪৭। বায়োটেকনোলজি কি?
বায়ো শব্দের অর্থ জীব এবং টেকনোলজির অর্থ প্রযুক্তি অতএব পুরো কথাটির অর্থ জীবপ্রযুক্তি বা জৈব প্রযুক্তি। মানবদেহ বা জীবদেহ থেকে উৎপন্ন জিনিস কে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া হল বায়োটেকনোলজি। মানুষ যেদিন থেকে দুধ থেকে দই, সোমরস বা মদ তৈরী করতে শিখেছিলেন সেইদিন থেকেই জীব প্রযুক্তির শুরু আর তা বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, জিন থেরাপি, হিউম্যান জেনোম, টেস্টটিউব বেবী, এমনকি মানুষের ক্লোনে!


৪৮। মানুষের মধ্যে কেহ কেহ বাঁহাতি (Lefthanded) হয় কেন?
সাধারণত মানুষ ডানহাতি কিন্তু মাঝে মধ্যে দুই একজন দেখা যায় যারা বাঁ হাতে কাজ করে থাকে। এর কারণ আমাদের শরীর বাম ও ডান উভয় পার্শ্বপ্রতিসম (Symmertical) হয় না। এমনকি মস্তিষ্কের ও দুটি অংশ বাম ও ডান অংশে বিভক্ত। যাদের মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ু নেমে ঘাড়ের বামদিক থেকে ডান পাশে শরীরের ডান দিকে চলে আসে তারাই ডানহাতি হয়। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বাম অংশ ডান অংশের উপর কর্তৃত্ব করে। আর যাদের এই ব্যাপারটি উল্টো হয় অর্থাৎ যাদের মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ু ডান দিক থেকে এসে বা-দিকে চলে আসে তারা বাঁ-হাতি হয়ে থাকে। । জীববিজ্ঞানীদের মতে সমগ্র মানুষের মধ্যে প্রায় 4% বাঁ-হাতি। 


৪৯। ময়ূরের পালক বাহারী রং এর হয় কেন?
ময়ুরের পালকে সুক্ষ্মাতি সুক্ষ্ম আনুবীক্ষণিক দ্বিতন্ত্রী কেলাস (Two diamontional crystal) থাকে, যাদের নাম ফটোনিক ক্রিস্টাল। দুটি কৃষ্টালের মধ্যে ফাঁকা স্থান থাকে কিন্তু ঐ ফাঁকা স্থানগুলি ঈষৎ প্রভেদ যুক্ত হওয়ায় ওদের উপর আলো পড়লে বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো প্ররিত ও প্রতিফলিত করে। যার ফলে রামধনুর ন্যায় বিভিন্ন বর্ণের আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে আর আমরা সুন্দর বাহারী আলো উপভোগ করি।


৫০। মশা অড়ানো গ্রুপ কি ক্ষতিকর?
মশা তাড়ানোর জন্য যে কয়েল, ম্যাট, লিক্যুইড বা ক্রীম ইত্যাদি আমরা ব্যবহার করি এদের প্রধান উপাদান অ্যালেথ্রিন, পাইরেথ্রয়েড, ডি.ডি.টি বা লিন্ডেল এর মত ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্কা। কয়েল, ম্যাট ইত্যাদি থেকে নির্গত ধোঁয়া মশাদের স্নায়ুতন্ত্রকে অবশ করে দেয় তাতে মশশ পালায় বা মারা যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের চিন্তার কারণ ঐ বিষাক্ত ধোঁয়া মানব শরীরেরও প্রতিক্রিয়া ঘটায়। দিনের পর দিন ব্যবহরে চোখে আলার্জি, গলায়, শ্বাসনালীতে, ফুসফুসে নানা উপসর্গ, হাঁপানি, কাশি ও শ্বাস কষ্ট দেখা দিতে পারে। শিশুদের ধোঁয়ার সুক্ষ্মবণা বিপদজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া ম্যাটে ব্যবহৃত পেপার পোড়ালে তা থেকে ডায়ফ্রিন তৈরী হয় যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। কাজেই মশারীর কোন বিকল্প নেই।


৫১। মশা রাতের অন্ধকারে আমাদের দেখে কিরূপে?
মশার দৃষ্টি শক্তি ভালই তবুও তারা দেখে আমাদের অথবা প্রাণীদের খুঁজে নেয় না। তাদের মুখের সম্মুখে সুরের মত (ম্যাকজিলি) অ্যাটেনা থাকে তার সাহায্যে আমাদের সন্ধান পায়। প্রত্যেক মানুষ ও প্রাণীর একটি বিশেষ গন্ধ থাকে, বায়ু দ্বারা প্রবাহিত সেই গন্ধ অ্যান্টেনার মাধ্যমে রাসায়নিক সংকেত গ্রহণ করে থাকে এবং মশশ অতি সহজেই আমাদের সনাক্ত করতে পারে। এছাড়া দেহের উষ্ণতা, আর্দ্রতা ও কালো রং মশাদের আকৃষ্ট করে থাকে।


৫২। মশা কামড়ালে ঐ স্থান ফুলে উঠে কেন?
স্ত্রী মশাদের সুঁচের মত রক্ত শোষণ করার অঙ্গটি চামড়ার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় এবং রক্ত শোষা করার পূর্বে তাদের মুখের একপ্রকার লালা প্রবেশ করিয়ে দেয় যাতে শোষণ করা রক্ত জমাট বেঁধে না যায়। ওই লালা অধিকাংশের কাছে অ্যালার্জির কারণ। ওই লালা স্থানটিকে সামান্য স্ফীত করে এবং জ্বালা করে কারণ যে কোষগুলি ওই লালা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেই কোষগুলি হিষ্টামিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ওই স্থানে নির্গত করে। অর্থাৎ ওই স্থানে রক্তের কোষ ওই লালাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টায় ওই স্থানে একত্রিত হয় এবং ফুলে ওঠে।


৫৩। মসৃণ মেঝের উপর দিয়ে হাঁটতে অসুবিধা হয় কেন?
আমরা হাঁটার সময় পা দিয়ে বল প্রয়োগ করলে মসৃত তল থেকে সঠিক প্রতিক্রিয়া বল প্রতিহত হয় না এছাড়া ঘর্ষণ বলকে কাজে লাগিয়ে আমরা হাঁটাচলা করি কিন্তু এক্ষেত্রে ঘর্ষণ বল খুবই কম থাকে। পা পিছলে যায়, তাই আমাদের হাঁটতে অসুবিধা হয়।


৫৪। মানুষের মত কথা বলতে পারে এমন প্রাণী আছে কি?
হ্যাঁ, শুশুক জাতীয় প্রণীর মধ্যে ডলফিন, তিমি এবং পরপয়েস নামক প্রণী অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান, স্তন্যপায়ী। তবে পরপয়েস বেশী বুদ্ধিমান, এরা মানুষের কন্ঠস্বর নকলও করতে পারে। এমনকি বিভিন্ন প্রকার হাসির শব্দ নকল করতে পারে। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে এদের বাস। এই প্রকারের পরপয়েস ফ্লোরিডার সামুদ্রিক অ্যাকোরিয়ামে আছে। এছাড়া ময়না, টিয়া ইত্যাদি কয়েক প্রকার পাখী মানুষের কণ্ঠস্বর নকল করতে পারে।


৫৫। মৃতদেহ ভাসে কেন?
কেহ যখন জলে পড়ে কিছু সময়ের মধ্যে ডুবে যায় যদি সাঁতার না জানে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ভেসে উঠে। কারণ আর্কিমিডিসের সুত্রানুযায়ী বন্ধু তখনই ভাসে যখন বস্তুর ওজন তার সম আয়তন জলের ওজনের চেয়ে কম হয়। এক্ষেত্রে যখন প্রথমে জালে পরে তখন নাক, মুখ দিয়ে জল দেহে প্রবেশ করে তাতে দেহের ওজন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কিছু সময় পরে অর্থাৎ মারা গেলে দেহের কোষকলাগুলি ফুলে যায় অর্থাৎ দেহের আয়তন বেড়ে যায়। ফলে শরীরের ওজন অপসারিত জলের ওজনের চেয়ে কম হয়। তাই মৃতদেহ ভেসে উঠে।


৫৬। মৌচাকের কুঠুরিগুলি ষড়ভূজাকৃতি হয় কেন?
ষড়ভুজাকৃতি বস্তুর একদিকে আয়তন অন্যান্য আকৃতির বস্তুর চেয়ে বেশী হয় এবং কাঠামো অধিক দৃঢ় বা অনমনীয় হয়ে থাকে। ফলে এরাপ আকৃতির কুঠুরীর মধ্যে অধিক পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। প্রশ্ন আসে এরূপ জ্যামিতিক ধর্ম মৌমাছি জানলো কি রূপে?


৫৭। যাযাবর পাখীরা কিরূপে পথ চিনে গন্তব্যে পৌঁছায়?
বিভিন্ন দেশে এ বিষয়ে বহু পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ হয়েছে তা থেকে যে সকল বিষয়ের উপর বিজ্ঞানীগণ গুরুত্ব দিয়েছেন তা'হল এই সকল পাখীদের মস্তিষ্কে লোহার যৌগ থাকে যা কম্পাসের মতো আচরণ করে এবং পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড সম্পর্কে ধারণা করতে পারে। এছাড়াও চন্দ্র ও সূর্যাকে চিহ্নিত করে চলাফেরা করতে পারে। বিজ্ঞানীগণ আরও বলছেন এই সকল পাখিদের সহজাত প্রবৃত্তি সাধারণ পাখীদের চেয়ে বেশী।


৫৮। রক্ত ব্লাডব্যাঙ্কে কিরূপে সংরক্ষণ করে?
রক্ত দেহের বাহিরে এলে কিছু সময়ের মধ্যে জমাট বেধে যায়, এর কারণ হল রক্তে ক্যালসিয়াম অয়নের উপস্থিতি। যদি রক্তের ঐ অয়ন দুর করা যায় বা নষ্ট করা যায় তবে রক্ত জমাট বাধে না, এই কাজটি করা হয় রক্তের সাথে সোডিয়াম সাইট্রেট নামক পদার্থ মিশিয়ে। ব্লাড ব্যাঙ্কে জীবাণুমুক্ত প্লাস্টিকের প্যাকেটে 450 মিলি লিটার রক্ত থাকে যার মধ্যে ডিস্টিল ওয়াটার, সোডিয়াম সাইটেন্ট, সাইট্রিক অ্যাসিড, সোডিয়াম বাই সালফেট, ডেন্সেজ ও চিনি মিশিয়ে ফ্রিজে প্রায় 0° সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় রাখা হয়। এই অবস্থায় প্রায় একমাস রক্ত ভাল থাকে।


৫৯। রক্ত পরীক্ষাতে T.C ও D.C কথার মানে কি?
টিসি (T.C) পুরো কথাটি টোট্যাল কাউন্ট অর্থাৎ এক ঘন মিলিলিটার রক্তে শ্বেত কণিকার সঠিক সংখ্যা গণনা। এটি সাধারণত 4500-7500 প্রতি ঘন মিলি থাকে।
ডি.সি (D.C) পুরো কথাটি ডিফারেনসিয়াল কাউণ্ট অর্থাৎ এক ঘন মিলি লিটারে রক্তে শ্বেত কণিকাগুলির পৃথক ভাবে সংখ্যা গণনা। কণিকাগুলি নিউট্রোফিলস 55% 70%, লিমকোসাইটস 20-38% মনোসাইটস 4-8% ইওসিনোফিলস 2-4%, বেসোলিস 0-5% প্রতি ঘন মিমি।


৬০। রাতে যে ফুল ফোটে তা সাদা বর্ণের হয় কেন?
বিভিন্ন বর্ণের বাহারী ফুল যেমন আমাদের আকৃষ্ট করে তেমনি পোকা, কিট পতঙ্গ মৌমাছি, প্রজাপতি ইত্যাদিও আকৃষ্ট হয় এবং মধু সংগ্রহ করে আর তার ফলে পরাগ মিলন ঘটে থাকে। কিন্তু রাতে বিভিন্ন বর্ণের ফুল যদি ফুটতো রাতের অন্ধকারে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা থাকতো না। প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে অকৃষ্ট করার জন্য সুগন্ধযুক্ত এবং সাদা বর্ণই রাত্রের অন্ধকারে বেশী কার্যকারী হয় এবং মথ, পোকা ইত্যাদিকে আকৃষ্ট করে। এছাড়া দেখা যায় যে সকল ফুল রাতে ফোটে তারা উচ্চতাপমাত্রা ও দিনের তীব্র আলো সহ্য করতে পারে না। তাই রাতের ফুল সাধারণত বেশী সাদা হয়।


৬১। লজ্জাবতী পাতা স্পর্শ বা আঘাতে মুড়ে যায় কেন?
এই পাতা স্পর্শ বা আঘাত করলে পাতার পালভিলাসে রস স্ফীতিজ পরিবর্তন ঘটে। কোষ থেকে ক্রমশঃ জল কান্ডে চলে যেতে থাকে ফলে কোষ ঢলঢলে বা তুলতুলে হয়ে পড়ে এবং পাতা মুড়ে যায় বা কুঞ্চিত হয়। আবার জল ধীরে ধীরে পাতায় চলে এলে, পাতা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে, এতে প্রায় ত্রিশ মিনিট সময় লাগে।


৬২। শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর কেঁদে ওঠে কেন?
মাতৃগর্ভে থাকাকালীন শিশু তার মায়ের রক্ত থেকে প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে অক্সিজেন পেয়ে থাকে। ঐ অবস্থায় তার ফুসফুস চুপসে থাকে এবং ফুসফুসের কার্য শুরু হয় না। ভুমিষ্ট হওয়ার পর মায়ের থেকে অক্সিজেন পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই শিশু কাঁদে । তখন বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে স্ফীত করে এবং তখনই প্রথম শ্বাসকার্য শুরু হয়। অনেক শিশু কাঁদে না তখন ডাক্তারবাবু যান্ত্রিক উপায় অবলম্বন করে থাকেন। প্রকৃতির কি আশ্চর্য নিয়ম!


৬৩। শীতের সকালে পুকুর থেকে ধোঁয়া বের হয় কেন?
দিনের বেলা পৃথিবী সূর্যের তাপে উত্তপ্ত হতে থাকে এবং রাত্রিতে ধীরে ধীরে ঐ তাপ বর্জন করে। কিন্তু রাত্রি শেষে ভূপৃষ্ট যে উষ্ণতায় থাকে তার চেয়ে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা অনেকটা কম। সকালে জালের উষ্ণতাতেই জল বাষ্পীভূত হয়ে যখন উপরে উঠে তখন তুলনামূলক ঠাণ্ডা বায়ুর সংস্পর্শে ঘনিভূত হয়ে বায়ুতে ভাসতে থাকে। তাই পুকুর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়।


৬৪। শীত বেশী পড়লে দেহ কম্পিত হয় কেন?
শীত যখন বেশী পড়ে তখন দেহের তাপ বেশী পরিমাণে দেহের বাহিরে বেড়িয়ে যায়। ফলে দেহে প্রয়োজনীয় তাপের ঘাটতি দেখা দেয়। তার জন্য বেশী ঠাণ্ডা বোধ হয়ে থাকে। দেহ তখন অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় তাপ উৎপাদনে সচেষ্ট হয় এবং দেহের মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণ হতে থাকে। তখন আমরা দেহে ঝাঁকুনি বা কাঁপুনি অনুভব করে থাকি। কাঁপুনি হল দেহের একপ্রকার স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ব্যবস্থা যা দ্বারা শরীরকে গরম রাখা হয়, এই ব্যবস্থায় মাংসপেশী পরিশ্রম করে দেহকে গরম রাখে।


৬৫। শীতকালে সরিষার তেল জমে না, নারকেল তেল জমে কেন?
তেল স্বাভাবিক অবস্থায় তরল, জমে গেলে ক্যাট বলে। তেল বা ক্যাট বিভিন্ন ক্যাটি অ্যাসিডের গ্লিসারাইডের সংমিশ্রণ। নারকেল তেলে যে ফ্যাটি অ্যাসিডের গ্লিসারাইড থাকে তাদের প্রায় 22°C থেকে 25°C তাপমাত্রার মধ্যে ফ্রিজিং পয়েন্ট। শীতকাল সাধারণত তাপমাত্রা বা থাকায় নারকেল তেল জমে সাদা কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। কিন্তু সর্ষের তেলের ফ্রিজিৎ পয়েন্ট আরো নীচে। সর্ষের তেলও ঠাণ্ডাতে জমে কঠিনে পরিণত হয় তবে তার জন্যে যে ঠাণ্ডার প্রয়োজন সে তাপমাত্রা আমাদের অভিজ্ঞতায় আসে না তাই জমতে দেখি না।


৬৬। শীতের সকালে মুখ থেকে সাদা ধোঁয়া বের হয় কেন?
শীতকালের সকালে আমাদের চারপাশের বায়ুর উষ্ণতা কম থাকে। দেহের উষ্ণতা স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু তা পরিবেশের চেয়ে অনেকটাই বেশী। আমরা কথা বললে বা হাঁ করলে মুখ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড-এর সাথে কিছু জলীয় বাষ্পও বের হয় এবং ঠাণ্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে জমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়। তাই ঘন এবং বড় হলে সাদা ধোঁয়ার মত মনে হয়। 


৬৭। ওঁয়োপোকা আমাদের দেহকের সংস্পর্শে এলে জ্বালা অনুভব হয় কেন?
ওঁয়োপোকা আমাদের দেহের ত্বকের সংস্পর্শে এলে বহু ওঁয়ো বা লোম চামড়ায় ঢুকে পড়ে। ঐ ওঁয়োতে থাকে হিস্টামিন, সেরোটোনিন, লিউরো ট্রাইন নামক অটাকয়েড যা প্রবেশ করলে স্থানটির চামড়ায় চাকা চাকা হয়ে ফুলে উঠে। ফলে চামড়ার মধ্যে রক্তনালীর জালিকা থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্তরস বেরিয়ে আসে। এছাড়া জায়গাটিতে চুলকানি ও জ্বালা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।


৬৮। স্টেমকোষ কি? 
আমাদের জীবন শুরু একটি মাত্র কোষ (নিষিক্ত ডিম্বাণু) বা ভ্রুণ থেকে। এই কোষটি বিভাজিত হয়ে ক্রমে ক্রমে গড়ে উঠে আমাদের দেহ। তবে প্রাথমিক স্তরের কিছু কোষের নির্দিষ্ট অঙ্গ তৈরীর ক্ষমতা থাকে যেমন, রক্ত, মেরুদণ্ড, ত্বক, হার্ট ইত্যাদি। এই কোষগুলিকে ষ্টেমক্লোষ বলে। ভ্রুণ, ষ্টেমকোরের প্রধান উৎস। এছাড়া হাড়ের মজ্জায়, মস্তিষ্কে রক্তনালীতে কমবেশী থাকে এই স্টেম কোষ।
বিজ্ঞানীগণ নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ কোষগুলিকে চিহ্নিত ও তাদের পৃথক করতে সক্ষম হয়েছেন। এবার ধরা যাক যদি কোন ব্যক্তির ফুসফুস নষ্ট হয়ে থাকে তখন যে ষ্টেমকোষ ফুসফুস তৈরীতে দক্ষ সেই কোষ রোগীর দেহে প্রবেশ করিয়ে রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব হতে পারে। যদি রোগী ওই কোষ গ্রহণ না করে তবে রোগীর ডি. এন. এ-এর সাথে মিল আছে এমন ষ্টেমকোষ প্রবেশ করানো যেতে পারে। আজকাল এর প্রধান ব্যবহার হড়ের মজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসায়। কিছু কিছু ক্যান্সার নিরাময়েও ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামী দিনে আরও কার্যকরী ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। তবে ষ্টেমকোষ ব্যবহার নিয়ে বিশ্বের নানা দিকে বিতর্ক চলছে। 2004 সালে ইংল্যান্ডে প্রথম ষ্টোকোষ ব্যাঙ্ক খোলা হয়েছে।


৬৯। ষ্টেরয়েড কি?
ষ্টেরয়েড হল এক প্রকার হরমোন। আমাদের দেহের অ্যাডরেনাল গ্রন্থি থেকে তিন প্রকার হরমোন নির্গত হয়। ঐ গুলির মধ্যে একটির ডাক্তারী নাম কটিজল। স্বাভাবিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু রোগের জন্য ঐ জল কম নির্গত হয় বা একেবারেই হয় না বা কারোর ঐ গ্ল্যাগুটি বাদ দেওয়া হয়ে থাকলে সেইসকল ক্ষেত্রে স্টেরয়েড দিতে হয়। এই ধরনের স্টেরয়েড দেওয়াকে রিপ্লেসমেন্ট বলে। এছাড়া কখনও কখনও স্বাভাবিক কর্টিজল নির্গত হলেও নানা বিশেষ রোগের জন্য অতিরিক্ত ষ্টেরয়েড দিয়ে থাকেন ডাক্তারবাবুগণ একে বলে থেরাপিউটিক।
স্টেরয়েড ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে যেমন ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি, হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, ডায়বেটিস হয়ে যায়, মুখের আকৃতির পরিবর্তন ইত্যাদি। তাই এই বিশেষ ধরনের চিকিৎসা না হলে রোগীকে সুস্থ করা যাচ্ছে না সেই সকল ক্ষেত্রেই ষ্টেরয়েড ব্যবহার হয়ে থাকে। এমন একটি অসুখ হল হঁপানি, আজকাল ইনহেলারের মাধ্যমে ওই ঔষধ সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে বেশি কাজ করে থাকে।


৭০। সাপের বিষে মৃত্যু হয় কেন?
পৃথিবীতে প্রায় চব্বিশশো প্রজাতির সাপ পাওয়া যার তার মধ্যে মাত্র আশিটি বিষধর। বিষধর সাপগুলির মধ্যে কেউটে, গোখরো, শঙ্খচূড়, কালাজ, চন্দ্রবোড়া ইত্যাদি প্রথম সারির। সাপের বিষ বিশ্লেষণ করে শুখনো অবস্থায় প্রায় 90% প্রোটিন থাকে, এছাড়া অ্যামাইনো অ্যাসিড, নিউক্লিওটাইডস্, লাইপিড, লেসিথিন ইত্যাদি এবং প্রায় কুড়িটি এনজাইম পাওয়া গিয়েছে। এই বিষ রক্তের লোহিত কণিকা নষ্ট করে দেয়ে ফলে রক্ত জমাট বেধে যায়, পেশীর পক্ষাঘাত ঘটিয়ে থাকে, হৃদযন্ত্রকে আক্রমণ করে। তবে দেহে বিষ ক্রিয়ার চেয়ে মানসিক আঘাত ও ভয়ের জন্য বেশী লোকের মৃত্যু হয়। প্রজাতি অনুসারে বিষের উপাদানের পরিমাণ এবং ঘণত্ব বিভিন্ন হয়। কালাজ সাপের বিষ এক মিগ্রা রক্তে মিশে গেলে মানুষ মারা যেতে পারে। সাপের বিষ থেকে পলিহ্বালট অ্যান্টিভেনিল সিরাম ও নানা প্রকার ঔষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। সাপের কামড়ের বিষ কোন ওঝার পক্ষে নষ্ট করা সম্ভব নয়। একমাত্র সুচিকিৎসা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ। এই বিষ রক্তে না মিশলে বিষক্রিয়া হয় না এমনকি খেলেও তা হজম হয়ে যায়।


৭১। সাপ জিভ বের করে নাড়তে থাকে কেন?
সাপ তাদের নাক দ্বারা দ্রুত বাতাস টেনে নিয়ে শিকারের গন্ধ শুঁকে সনাক্ত বা কোন দিকে শিকারের অবস্থান তা সনাক্ত করতে অসুবিধা হয়। এই কাজটি করার জন্য সে তার জিভ দ্রুত বারবার বাহির ভিতর করে। ওর দ্বারা গন্ধ নিয়ে ওর মুখের তালুতে একটি অঙ্গ থাকে সেই অঙ্গ দ্বারা গম্ব সনাক্ত করে ও সাথে সাথে গন্ধের অবস্থান স্থুল নির্ণয় করে। ঐ অঙ্গটির নাম জেকব সেন্স অর্গান। অন্যান্য প্রাণীদের মতো এদের শ্রবণ ইন্দ্রিয় নেই তার পরিবর্তে কলু মিলারে রড নামে একটি লম্বা দন্ড বা বড় দ্বারা ভুমির স্পন্দন ধরতে সক্ষম হয়।


৭২। স্ত্রীমশা রোগ ছড়ায় পুরুষ মশা নয় এটা কতটা সত্য? 
স্ত্রী মশার সুচের মত লম্বা রক্ত চোষণ করার অঙ্গ থাকে যার নাম ম্যান্ডিবেলস্। যখন মশা কামড়ায় অর্থাৎ ওই সুচালো ওড়টিকে ম্যান্সইলি নামক লম্বা শুড় দ্বারা চাপ দিয়ে চামড়া ভেদ করে রক্ত শোষণ করে ল্যাবরিয়াম ও হাইপোকেরিৎস্ নামক টিউবে রক্ত জমা করে। পুরুষ মশার ঐ রূপ সুচালো চামড়া ভেদ করার অঙ্গ নেই তাই কামড়ায় না আর রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে না। স্ত্রী মশা নিজের পুষ্টির জন্য নয়, তাদের ডিমের পুষ্টির জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি মশা 0.3 থেকে 0.8 মিলি গ্রাম রক্ত শোষণ করে। মশা কিন্তু শাক সবজীর রস খেয়েও বেঁচে থাকে।


৭৩। হরমোন কিভাবে দেহে কার্য করে থাকে?
প্রাণীদেহে যেমন স্নায়ুতন্ত্র বিভিন্ন অঙ্গের সমন্বয় সাধন করে জীবকে নিয়ন্ত্রিত করে তেমনি হরমোন জীব দেহে রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। স্নায়ুর প্রভাব ক্ষণস্থায়ী কিন্তু হরমোনের প্রভাব বহুদিন ধরে চলে। সাত শ্রেণীর প্রায় চল্লিশ প্রকার হরমোন সাধারণত অঙ্গ সংস্থানিক, বিপাকীয়, মানসিক ও ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন আনে।
নির্দিষ্ট গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে লক্ষ্য কোষে পৌছায়। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ না করে কোষ পর্নর বাহিরে একটি নির্দিষ্ট গ্রাহক অংশের সাথে যুক্ত হয়ে কোষ পর্দার ভিতরের একটি উৎসেচক অ্যাডেনাইল সাইক্লোজকে সক্রিয় করে তোলে, তখন সেই উৎসেচক ভিতরে ATP কে CAMP তে পরিণত করে। এই CAMP নির্দিষ্ট উৎসেচককে বা নির্দিষ্ট জিনকে প্রভাবিত করে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট কাজ করে করে থাকে। অধিকাংশ হরমোন এইরূপে কাজ করে কিন্তু স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন কোষ পর্দা ভেদ করে সাইটোপ্লাজমে উপস্থিত গ্রাহক প্রোটিনের সাথে আবদ্ধ হয়ে জটিল যৌগে পরিণত হয় এবং নিউক্লিয়াসের মধ্যে নির্দিষ্ট জিনকে প্রভাবিত করে, নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কাজ করে থাকে।


৭৪। হাস কি শরীরের পক্ষে উপকারী?
আমরা স্বাভাবিকের মধ্যে অস্বাভাবিকের কিছু দেখলেই বা অবাস্তব মনে হলেই মনের নানা ভাবের বাহ্যিক প্রকাশ থেকে ও হাসি আসতে পারে। বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ বলছেন মানুষ যখন হাসে তখন তার মুখের 17 টি পেশি ফুলে রক্ত চলাচল বেশী হয় পেশী সচল হয় আর দেহের মোট ৪০ টি পেশী আন্দোলিত হয়, নাসারন্ধ্র স্ফীত হয়, ফুসফুস থেকে প্রচন্ড গতিতে বায়ু বের হয়। তাঁরা আরও বলেছেন হাসি অবসাদ দূর করে, রক্ত চাপ কমায়, প্রাথমিক পেইন কিলার, দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরালো করে তুলতে পারে, এমনকি হার্ট অ্যাটাকের হুমকিকে কমিয়ে দিতে পারে। কাজেই নির্মল আনন্দের হাসি ঠাট্টা মসকরায় মেতে থাকাই উচিৎ। ইদানিং লাফিং ক্লাবের প্রচলন হয়েছে যেখানে শুধু হাসা হাসিই হয় না তার সাথে থাকে যোগ ব্যায়াম। অতএব প্রাণ ভরে হাসুন অন্যকে হাসান, এতে শরীর মন ভাল থাকবে। তাই হাসির উপযোগীতা কত আনন্দের তাই আমরা হাসি। 


৭৫। হিমোগ্লোবিন কি দিয়ে তৈরী?
রক্তে লোহিত কণিকার রং লাল হয় যার উপস্থিতির জন্য তার নাম হিমোগ্লোবিন। হিম হলো এক জটিল জৈব যার উপাদান কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও লোহা আর গ্লোবিন হল এক প্রকার প্রেটিনের নাম। অমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তা রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে মিশে অন্মিহিমোগ্লোবিনের আকারে সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। আমাদের দেহে রক্তে প্রতি 100 মিলিতে 12 থেকে 18 গ্রাম হিমোগ্লোবিন (Hb) থাকে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে অ্যানিমিয়া নির্দেশ করে।


৭৬। হিমোফিলিয়া কি?
আমাদের দেহে রক্তে এমন কতগুলি পদার্থ থাকে যেমন ফাইব্রিনোজেল, ফাইজিন, প্লেটলেট, ক্যালসিয়াম এবং ডাক্তারী ভাষাতে ফ্যাক্টর এইট, নাইন ও ইলেভেন নামক উপাদান এরা কোন স্থান কেটে গেলে বা ক্ষত মুখে রক্ত জমাট বেধে রক্তপাত বন্ধ করে। যাদের রক্তে এই উপাদান গুলির অভাব থাকে তাদের রক্ত পড়া সহজে বন্ধ হয় না অর্থাৎ জমাট বাধে না এই রোগের নাম হিমোফিলিয়া। এই রোগের জিন বহন করে মেয়েরা কিন্তু রোগ হয় পুরুষদের।


৭৭। ক্ষুধা পায় কেন?
আমাদের মস্তিষ্কে ক্ষুধা কেন্দ্র' নামে একটি স্থান আছে, যেখানে ক্ষুধা উদ্দীপক ও নিরোধক উভয় প্রকার স্নায়ু কোষ থাকে। দেহের কাজের জন্য শক্তি ব্যয়িত হওয়ার ফলে রক্তে পুষ্টি সাধক পদার্থের যখন অভাব ঘটে তখন ওই কেন্দ্রটির নির্দেশ ক্রমে পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্তের সক্রিয় হয়ে উঠে তখন আমাদের খিদে পায়। এছাড়া খাদ্য দর্শন, গন্ধ, স্বাদ বহির থেকে সংকেত কেন্দ্রিয় নার্ভ তন্ত্রকেও উত্তেজিত করে ক্ষুধার উদ্রেক করতে পারে। তখন পেটে অস্বস্থি, জ্বালা বা গুড়গুড়, শব্দও হতে পারে। এক কথায় রক্তে পুষ্টি সাধক পদার্থের অভাবই ক্ষুধার প্রধান কারণ।


৭৮। ক্ষুধা কিরূপে নিয়ন্ত্রিত হয়?
ইংরেজ বিজ্ঞানী স্টিভ ব্লম এবং তার সহযোগীদের মতে কয়েক প্রকার হরমোন আমাদের ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রিত করে। আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের নিচের দিকে প্যারাভেন্টিকুলার নিউক্লিয়াস আমরা কতটা খাব তা নিয়ন্ত্রণ করে।
পাকস্থলী থেকে থ্রেলিন নামক হরমোন এবং ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদাত্ত থেকেও আরেকটি হরমোন নির্গত হয়। এই হরমোন মস্তিষ্কের আর্কুয়েট নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ক্ষুধা উদ্দীপক স্নায়ুকে সক্রিয় করে এবং সেখান থেকে প্যারাভেন্ট্রিকিউলার নিউক্লিয়াসে সংকেত চলে যায়। পেট ভরে গেলে ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত থেকে পি ওয়াই ওয়াই (PYY) হরমোন নিঃসরণ মাত্রা বেড়ে যায় ফলে খাবার ইচ্ছে থাকে না। এছাড়া মেদ কোষ থেকে উৎপন্ন হয় পেপটিন নামক হরমোন যা ক্ষুধা উদ্দীপক ও ক্ষুধা নিরোধক উভয় প্রকার স্নায়ুকে যথাক্রমে নিরস্ত ও উদ্দীপ্ত করে ফলে ক্ষুধার উদ্রেক বন্ধ হয়ে যায়।