চিকিৎসা বিজ্ঞান

১। অজ্ঞান হওয়া এবং কোমা অবস্থার পার্থক্য কি?
মানুষের মাথায় আঘাত, শক, ভয়, দুর্বলতা, বিষক্রিয়া, মৃগী, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি কারণে মানুষ জ্ঞান হারাতে পারে। তবে তা সাময়িক বা অস্থায়ী। যদি অজ্ঞান অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন তাকে ‘কোমা’বলা হয়। সাধারণত মাথায় আঘাতে, স্ট্রোক বা মেনেন্ জাইটিস হলে এমন কি বিষক্রিয়াতেও হতে পারে। এক কথায় কোমা হল গভীর অজ্ঞান অবস্থা। চিকিৎসকদের মতে এক্ষেত্রে রোগী প্রায়ই শেষ পর্যন্ত মারা যায়।


২। অন্ধকারে টি. ভি. দেখা কি ক্ষতিকারক?
অন্ধকার ঘরে টেলিভিশন দেখলে অতি উজ্জ্বল আলো চোখের পক্ষে সুখকর তো নয়ই বরং রেটিনার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এছাড়া পর্দার আলোর কম্পন (Flicker) তীব্র হয়ে চোখে পড়ে ফলে চোখ শ্ৰাক্ত বা অবসাদগ্রস্থ (fatigue) হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে ঘরে আলো জ্বালিয়ে, কমপক্ষে ৩ মিটার দূরত্ব থেকে টি.ভি. দেখতে হবে এবং পর্দা যেন দৃষ্টিরেখার সোজাসুজি থাকে।


৩। অসুস্থ রোগীকে ডাক্তারবাবু পাল্স (নাড়ি) পরীক্ষা করেন কেন?
কোন রোগী দেখতে এলে প্রথমেই ডাক্তারবাবু জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলি একে একে দেখে নেন সেগুলি হল, তাপ, শ্বাস, নাড়ি ও রক্তচাপ। পাল্স দেখা মানে হার্টের ধুকধুক মিনিটে কতবার হয় তা গুণে নেওয়া। একজন সাধারণ মানুষের সুস্থ অবস্থায় নাড়ী থাকে সমভাবে পূর্ণ ও ধীর অর্থাৎ মিনিটে ৬০ থেকে ৮০ বার। অবশ্য শিশুদের বেলায় মিনিটে ১০০ থেকে ১৪০ বার এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে স্পন্দন কমে। নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায় পরিশ্রমে, জ্বরে, ভয়ে, ঘাবড়ে গেলে, যন্ত্রণায়। বিশ্রামে নাড়ির গতি কমে যায়। নাড়ির গতির কোনরূপ বদল হচ্ছে কি তা দেখে অনেক রোগের লক্ষণ ধরা যায়।


৪। আকুপাংচার কি?
আকুপাংচার এক প্রকার চিকিৎসা ব্যবস্থা যাচীনদেশে প্রথম চালু হয়। এই পদ্ধতিতে মানবদেহের প্রায় আটশ বিন্দুতে সূঁচ ফুটিয়ে রোগ নিরাময় করা হয়। নির্দিষ্ট রোগের জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে সূঁচ ফোটানো হয় তবে এমনভাবে ফুটানো হয় যাতে প্রায় যন্ত্রণা হয় না। অনেকের ধারনা দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যাথা উপশমে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকারী। রোগ চিকিৎসায় এই ব্যবস্থা কিরূপ কাজ করে তার সঠিক ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।


৫। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কি? এর কাজ কি?
সারাজীবন মানবদেহে বিপাক ক্রিয়া, নানা উৎসেচক বিক্রিয়া ও জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় নানা প্রকার দূষিত পদার্থ জমা হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম ফ্রি-র্যা ডিক্যাল বা মুক্ত মূলক, যা শুধু দেহেই নয় বাইরের থেকেও যেমন ধূমপান, নানা ঔষধ, রাসায়নিক পদার্থ, কীটনাশক, তেজস্কিয়রশ্মি ইত্যাদির দেহে প্রবেশ করে। আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তার 98% ই কোষে জারণ ক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন করে বাকি প্রায় 2% কোষের ক্ষতি সাধন করে। বিজারিত হয়ে থাকলেও ক্ষতি কর অক্সিজেন অণু তৈরী করে যাতে এক বা একাধিক বিজোড় ইলেকট্রন থাকে এই অণুগুলি ঐ ফ্রি র্যা ডিক্যাল বা মুক্ত মূলক । শরীরে যেমন ফ্রি-র্যা ডিক্যাল অক্সিডেন্ট তৈরী হয় তেমনি এদের ঠেকানোর জন্য তেমন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট তৈরী হয় যা অক্সিডেন্টের ক্রিয়াতে বাধা দেয় বা নিজেরাই বিক্রিয়া করে ওদের ক্ষমতা নষ্ট করে। বয়স যখন কম থাকে তখন প্রতিরোধ ক্ষমতার দৌলতে মুক্ত মূলককে হারিয়ে দেওয়া সম্ভব হলেও বয়স হলে সম্ভব হয় না তার জন্য দেহে জরা আসে। অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মধ্যে রয়েছে, কিছু ভিটামিন (সি.ই. ও বিটা ক্যারোটিন) কিছু উৎসেচক (সুপার কাইন্ড, পারক্সিডেন, ক্যাটালেস) কিছু ধাতব লবণ বা ট্রেস এলিমেন্ট (তামা, দস্তা, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গ নিজ) প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর মধ্যে বেশি পাওয়া যায় অ্যালমন্ড বাদামে (Almond) বর্তমানে গবেষণায় জানা গিয়েছে গ্রীন টি-তে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট (catechins) থাকে। 


৬। অ্যান্টি পাইরেটিক ও অ্যানালজেসিক কি ?
যে সকল রাসায়নিক দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় তাদের অ্যান্টি পাইরেটিক বলে। ডাক্তারবাবুদের মতে খুব বেশী জ্বর (104°F) বিশেষ করে শিশুদের কমিয়ে না আনলে বিপজ্জনক হতে পারে। তাদের মতে এক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ব্যবহার নিরাপদ তবে ব্যবহারের মধ্যে 6 ঘন্টা ব্যবধান রাখা উচিত। যে সকল রাসায়নিক শরীরের ব্যাথা কমায় তাদের অ্যানলজেসিক বলে। ডাক্তারবাবুদের মতে মৃদু অ্যানালজেসিক হল অ্যাসপিরিন, ডিসপ্রিন তবে যাদের পেটে আলসার আছে তাদের অ্যাসপিরিন খাওয়া উচিৎ নয়। এ ধরনের ঔষধ মস্তিষ্কের করটেক্স, থ্যালামাস এর সক্রিয়তাকে সাময়িক নিস্তেজ করে দেয়। জ্বর ও ব্যাথা কমানোর জন্য যে ঔষধ খাওয়া হয় তার সামান্য হলেও পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া ঘটে।


৭। অ্যান্টিবায়োটিকস কি? কখন ব্যবহৃত হয়?
জীবাণুর দেহ থেকে সাধারণত ছত্রাক থেকে নিঃসৃত যে জৈব পদার্থ অন্য জীবাণু ধ্বংস করে বা তাদের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় তাদেরকে অ্যান্টিবায়োটিকস বলা হয়। বিজ্ঞানীগণ প্রায় পাঁচশ প্রকারের সন্ধান পেয়েছেন কিন্তু তার মধ্যে মাত্র কুড়িটি তৈরী করা হয়। যা মানব দেহের এবং পশুদের দেহে ক্ষতিকারক জীবাণুকে ধ্বংস করে।
ডাক্তারবাবুদের মতে অ্যান্টিবায়োটিক ঠিক তখন দেওয়া হয় যখন রোগীর জ্বর কিছুতেই পুরো নামছে না, অসম্ভব কাশি, হলুদ শ্লেমা বা বুকে ব্যাথা থাকে। কয়েকটি বিশেষ কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিকস পেনেসিলিন, স্টেপটোমাইসিন, ক্লোরোমাইসিন, স্টারমাইসিন ইত্যাদি। তবে পূর্ব্ব ব্যবহৃত আন্টিবায়েটিকসের বিরুদ্ধে রোগ জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই অ্যান্টিবায়োটিকসের ক্ষমতা ক্রমশঃ বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।


৮। অ্যান্টিসেপটিক?
ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর বৃদ্ধি রোধকারী বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক যৌগিক পদার্থকে অ্যান্টিসেপটিক বলা হয়। দেহের অভ্যন্তরীন বা বাহিরের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য কখনও খেতে দেওয়া হয়, কখনও ইনজেকশন করা হয়ে থাকে বা স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া অপারেশন কক্ষ ও যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য জিনিস জীবণুমুক্ত করার জন্যও ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিসেপটিকের কার্যকারীতা গাঢ়ত্ব, তাপ ও সময়ের উপর নির্ভর করে। যেমন 2% আয়োডিন এবং ইথাইল অ্যালকোহল সাধারণত চামড়ার উপর প্রয়োগ করা হয়। অ্যান্টিসেপটিককের আবার কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যেমন অম্লক্ষার, সাবান, ডিটারজেন্ট, পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, ক্লোরিন, আয়োডিন, সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি।


৯। আমাদের অস্ত্রে (বৃহৎ ও ক্ষুদ্র) গ্যাস তৈরী (পেট ফাঁপা) হয় কেন?
আমাদের পাকস্থলির পাচক রস আম্লিক এবং পিত্তরস ও অগ্নাশয় রস ক্ষারীয় এদের মিলনে জৈব ও অজৈব উভয় প্রকার গ্যাস উৎপন্ন হয়। এছাড়া অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটরীয়া কোহল সন্ধান প্রক্রিয়ায় অপাচ্য খাদ্য যেমন চিনি, পলিস্যাকারাইড থেকে হাইড্রেজেন, মিথেন ইত্যাদি গ্যাস উৎপন্ন করে। কখনও কখনও দুধ খেলে গ্যাস উৎপন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত গড়ে প্রতিদিন একজন পূর্ণবয়স্কের অস্ত্রে প্রায় দুই লিটার গ্যাস তৈরী হয় যা উর্দ্ধ ও নিম্নগামি হয়ে থাকে। 


১০। আমরা মনে রাখি কেমন করে?
মনে রাখা মানে হল আমরা প্রতিনিয়ত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যে বিভিন্ন প্রকার অভিজ্ঞতা অর্জন করি তা স্মরণ করা। প্রধান স্মৃতি ভান্ডারটি হল গুরুমস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের যে যে স্থানে যেরূপ অনুভূতি পাই সেখানে সেই ধরনের স্মৃতি জমা থাকে, যেমন টেম্পোরাল লোবে সুখ দুঃখ। অক্সিপেটাল লোবে দেখার স্মৃতি, লঘু মস্তিষ্কে প্রতিবর্ত ক্রিয়াকে সনাক্ত করার স্মৃতি, কিন্তু হিপো ক্যাম্পাস মস্তিষ্কের সকল অংশের মধ্যে সমন্বয় করে থাকে। জীব বিজ্ঞানীদের মতে মস্তিষ্কে ক্রমিক গতিশীল প্রক্রিয়া হল স্মৃতি। মস্তিষ্কের নিউরনে উপস্থিত রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) এর কাজ হল ক্রমিক অভিজ্ঞতা কে ধরে রাখা। আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন প্রকার অনুভূতি উদ্দেশ্য,নূতন স্নায়ু তৈরী, বারবার মনে করা বা আবৃত্তি করার মধ্যে দিয়ে এবং একাগ্রতা আর যত বেশী শেখার চেষ্টা করা যায় স্মৃতিশক্তি ততই সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। 


১১। আমরা যখন টক জাতীয় পদার্থ খাই তখন দাঁত আক্রান্ত হয় এবং অসুবিধা হয় কেন?
আমাদের দাঁতে নার্ভ থাকে যা টক বা মিষ্টি অনুভূতি জাগায়। যখন দাঁত টক বা অ্যাসিড জাতীয় পদার্থের সংস্পর্শে আসে তখন নার্ভ তথা আমরা অবাঞ্চিত অস্বস্থিকর অনুভূতি পাই এবং এই অনুভূতি কিছুটা সময় থাকে তাই আমাদের খেতে অসুবিধা হয় বা খেতে পারি না।


১২। অ্যালার্জি হয় কেন?
কিছু পদার্থ আছে যা দেহের সংস্পর্শে এলে বা দেহের ভিতরে প্রবেশ করলে দেহে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরূপ প্রতিক্রিয়া কে অ্যালার্জি বলা হয়। প্রতিক্রিয়াগুলি সাধারণত চুলকানো, র্যা শ, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। ডিম, কাঁকড়া, চিংড়ি খেলে ধূলো, ফুলের রেণু, নাইলনের পোষাক ব্যবহারে বা আবার কোন কোন ঔষধ, কসমেটিক্স থেকেও অ্যালার্জি হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন প্রায় 10% মানুষের কোনও না কোনও অ্যালার্জি আছে। আমাদের দেহে পাঁচ প্রকার অ্যান্টিবডি পাওয়া যায় তার মধ্যে IgE কে প্রধানত অ্যালার্জির জন্য দায়ী করা হয়। শরীরে খুব সামান্য IgE থাকে। কোন বাহ্যিক পদার্থের প্রভাবে লিম্পোসাইট-বি কোষ IgE তৈরী করে, এছাড়া মাষ্টকোষএরও অ্যালার্জি সৃষ্টিতে ভূমিকা আছে। অ্যালার্জির কারণ যেহেতু বিভিন্ন তাই চিকিৎসাও বিভিন্ন, তবে প্রথমত দেখতে হবে বা খেয়াল করতে হবেকি থেকে অ্যালার্জি হল এবং তা নির্ণয় করে তা থেকে দূরে থাকাই উচিৎ।


১৩। আর্সেনিকযুক্ত জল ব্যবহার কতটা বিপজ্জনক?
আমাদের দেশে পানীয় জলে আর্সেনিকের উপস্থিতির নিরাপদ মাত্রা 0.02 গ্রাম প্রতি লিটারে। কিন্তু পঃ বঙ্গের 9 টি জেলায় ঐ মাত্রা কোথাও 20 গুণের বেশি। আর্সেনিক অতিধীর গতিতে শরীরে ক্রিয়া করে, ত্বকের জ্বলুনি, খসখসে হওয়া, ফুলে যাওয়া, পায়ের পাতাতে ক্ষত, হাতে চেটো ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে, তারপর ক্রমে লিভার, ফুসফুস, কিডনি আক্রান্ত হয় এবং শেষ পর্যায়ে ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দেয়। জল থেকে আর্সেনিক মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আছে, যেমন জলে ব্লিচিং পাউডারও অ্যালুমিনিয়াম সালফেট বা ব্লিচিং পাউডার ও ফেরিক সালফেট মিশ্রিত করে আর্সেনিক অধঃক্ষিপ্ত করা যায়। এছাড়া ফেরিক হাইড্রোক্সাইড, অ্যালুমিনা ও টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড, ফিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। গভীর 100 মিটার নল কূপের জল পান করা উচিৎ, অগভীর নলকূপে আর্সেনিক মুক্ত করার ফিল্টার ব্যবহার করা উচিৎ।


১৪। ই.ই.জি (E.E.G) কি?
পুরো কথাটি হল ইলেকট্রো এন সোফালোগ্রাফী। মানুষ এবং অন্য প্রাণীর মস্তিষ্কে অনবরত সূক্ষ্ম বা অতি সামান্য বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। ঐ বিদ্যুৎ প্রবাহ রেকর্ড করার জন্য একটি যন্ত্র ব্যবহৃত হয় যাতে 20 টি ইলেকট্রোড থাকে এবং সেগুলি মাথার খুলির বাহিরের দিকের সাথে যুক্ত করে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে চার্ট পেপারে গ্রাফ তৈরী হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় ঐ রেখা ছন্দ পূর্ণ হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির ঐ গ্রাফ আলাদা হয়। মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ পরীক্ষার জন্য ই.ই.জি খুবই প্রয়োজন। অর্থাৎ মস্তিষ্কে টিউমার, স্নায়ু সংক্রান্ত রোগ, মৃগী রোগ নির্ণয়ে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। 


১৫। ই. এস. আর (E.S.R) কি? 
ইহা এক প্রকাররক্ত পরীক্ষার বিষয়। পুরো কথাটি হল এরিথ্রোসাইট সোডিমেন্টেশান রেট, যার অর্থ হল লোহিত কণিকা অধঃক্ষেপণ হার। ওয়েস্টারগ্রেন নামক নলে 3.8% সোডিয়াম সাইট্রেট রক্তের সাথে মিশিয়ে নলটিকে খাড়াভাবে রেখে দিলে যে হারে লোহিত কণিকা অধঃক্ষেপ ঘটে তাকেই ই. এস. আর বলা হয়। এই রেট দেখে বিভিন্ন প্রকার রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। যেমন এই রেট বেড়ে গেলে বাত, ফুসফুসের রোগ, টিবি, টিউমার প্রভৃতি নির্দেশ করে আর কমে গেলে ডিহাইড্রেশন, হার্টফেলিওর, উদারাময়, হুপিং কফ ইত্যাদি রোগ হয়েছে ধরে নেওয়া হয়। সাধারণত পুরুষের এই রেট 3-5 মিমি ঘন্টায় এবং স্ত্রীলোকের 7-12 মিমি ঘন্টায়।


১৬। ই. সি. জি (ECG) কি?
পুরো কথাটি হল ইলেকট্রো কার্ডিওগ্রাফি। এই যন্ত্রটি হৃদপিন্ডের স্পন্দনের ফলে সৃষ্ট বিদ্যুৎ কম্পনের গ্রাফ তৈরী করে। শরীরের হাত, পা, এর 4 টি প্রধান শিরা এবং বক্ষস্থলে ইলেকট্রোড স্থাপন করে হৃদপিন্ডের দিকে ধাবিত সূক্ষ্ম বিদ্যুৎ তরঙ্গ যন্ত্রটিতে ধরা পরে এবং একটি বিশেষ কাগজে রেখায়িত বা গ্রাফ তৈরী হয়। এই রেখা বিশ্লেষণ করে হৃদযন্ত্রের রোগ নির্ণয় করা হয়। এমনকি হৃদযন্ত্রের কোথাও রক্ত প্রবাহ আটকে আছে কিনা তাও নির্ণয় করা সম্ভব।


১৭। ইউ. এস. জি (USG) কি?
পুরো কথাটি হল আলট্রা সোনোগ্রাফি। এই যন্ত্রে শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে দেহের অভ্যন্তরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পরীক্ষা করা হয়। এই তরঙ্গ দেহের অভ্যন্তরে পাঠানো হয় এবং ঐ শব্দ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে তারদ্বারা বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে ছবি তোলা হয়। এর সাহায্যে পিত্তের পাথর, টিউমার, ভ্রুণের অবস্থা, শিরা, ও ধর্মনির রক্ত প্রবাহের ত্রুটি নির্ণয় করা যায়। শুধু রোগ নির্ণয় নয় রোগ নিরাময়েও এর ব্যবহার করা হয়। যেমন কিডনির পাথর ভেঙে ফেলার জন্য।
 


১৮। উপবাস বা অনাহারে দেহের কি প্রতিক্রিয়া হয়?
আমরা যে খাবার খাই তার বড় অংশই শর্করা বা গ্লুকোজ, দেহ গ্লুকোজ শোষণ করে তা থেকে গ্লাইকোজেন উৎপন্ন হয় পেশী ও যকৃতে জমা হয়। দেহের কাজ স্বাভাবিক রাখার জন্য রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণের নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকা দরকার, উপবাস অবস্থায় ঐ মাত্রার অভাব ঘেেট এবং তা পূরণ করে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন, এর পর বৃক্ক ও যকৃৎ থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড, গ্লিসারল, পাইরুভিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড ইত্যাদি যৌগ থেকে গ্লুকোজ তৈরী করে দেহ অনাহারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যায়। যখন অ্যামাইনো অ্যাসিড আর গ্লুকোজ সরবরাহ করতে পারে না তখন দেহে অতিরিক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড জারিত হতে শুরু করে, এগুলি শেষ হলে দেহ গঠনকারী প্রোটিন ভাঙতে শুরু করে এবং দেহের শারীরিক কার্যক্ষমতা ক্রমে ক্রমে কমতে থাকে এবং জৈবিক ছন্দে নির্দিষ্ট সময়ে হর্মোন হজমের ইনজাইম নিঃসৃত হয়, হজম করার খাবার না পেলে নালীর গায়ে আলসার তৈরী করে। ব্লাডসুগার কমে যায় দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয়। গ্যাস বেশী হয়ে ডায়াফ্রামে চাপ দেওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায়।


১৯। এইডস্ রোগটা কি?
এই রোগের জীবানু শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। এইডস (AIDS) এর পুরো কথাটি অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়ানসি সিনড্রম। এই রোগের বীজাণু HIV পুরো কথাটি হিউম্যান ইমিউনো ডিফিসিয়েনসি ভাইরাস। যখন বীজাণু দেহে প্রবেশ করে তখন ঐ ব্যক্তিকে HIV পজিটিভ বলা হয়। বীজাণু দেহে প্রবেশ করে টি লিম্ফোসাইট ধ্বংস করে তখন এই রোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে কোষীয় অনাক্রমন্যতা নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগ চারটি পদ্ধতিতে সংক্রামিত হয়, যৌন সংযোগ, অন্যের সংক্রমিত রক্ত দেহে প্রবেশের ফলে, ইঞ্জেকশানের ছুঁচের মাধ্যমে, রোগাক্রান্ত মায়ের থেকে তার সন্তানে। কয়েকটি পরীক্ষার দ্বারা এই রোগ সনাক্ত করা হয় যেমন টি-হেলপার সেল কাউন্ট, এলিজা, ওয়েস্টার্ন টেস্ট।
এই রোগের ঔষধ এখনও আবিস্কৃত হয়নি। পরিসংখ্যানে আমাদের দেশে পঁচিশ লক্ষের বেশী রোগাক্রান্ত ব্যক্তি আছেন। শুধু রেডিও, টিভিতে প্রচারের মাধ্যমে নয়। সর্বতোভাবে সমস্ত মানুষকে এই রোগের ভয়াবহতাও ব্যাপকতা সম্বন্ধে সঠিকভাবে লজ্জা সংকোচ ত্যাগ করে সচেতন করতে হবে।


২০। এন্ডোস্কোপি কি?
ইহা দেহের ভিতরের অঙ্গের রোগ নির্ণয়ের উৎকৃষ্ট পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দেহের ভিতরে ফাঁপা অঙ্গগুলির মধ্যে একগুচ্ছ নমনীয় অপটিকাল ফাইবার প্রবেশ করিয়ে তার দ্বারা উঁকি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ঐ ফাইবার এর এক প্রান্তে দেখার জন্য লেন্স ও প্রয়োজনীয় ক্ষুদ্র নিয়ন্ত্রক যন্ত্র থাকে। এর সাহায্যে অঙ্গগুলির ভিতরের অবস্থা সারাসরি দেখে ক্ষতিগ্রন্থ স্থানটি সনাক্ত করা হয়। এই ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী, পাকস্থলী, গলব্লাডার, ইউট্রাস ইত্যাদি নিরক্ষণ করা সুবিধাজনক।


২১। এপেনডিসাইটিস কি?
আমাদের দেহে অনেক অঙ্গ বর্তমানে অপ্রয়োজনীয় যেমন এপেনডিকস, আক্কেল দাঁত, পুরুষের স্তন ইত্যাদি। আমাদের পেটের নিচে ডানদিকে বৃহদন্তের সঙ্গে লাগানো আঙ্গুলের আকারের থলি থাকে যার ডানদিক বন্ধ অন্য দিক সিলমের সাথে যুক্ত। একে এপেনডিক্স বলে। এই অঙ্গটি কাজে লাগে না, ইহাকে ভেস্টিজিয়েল অর্গান বলা হয়। সাধারণত কোষ্ঠবদ্ধতা, কৃমি, জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, ইহাকে এপেনডিসাইটিস বলে। তখন পেটে একটানা ব্যাথা, বমিভাব, ডায়রিয়া, জ্বর হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে সাথে সাথে তার অপারেশন করা আবশ্যক। সংক্রামিত এপেনডিক্স কখনো কখনো ফেটে গিয়ে ডাক্তারী ভাষাতে পেরিটোনাইটিস হয়ে যায়। 


২২। এম. আর. আই কি? (MRI)
পুরো কথাটি ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং। ইহা সর্বাধুনিক রোগ নির্ণয় করার যন্ত্র। এই যন্ত্রে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ম্যাগনেটিক মোমেন্ট এর ধর্মকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার, বেতার যন্ত্র এবং চুম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে শরীরের যে কোন তলেত্রিমাত্রিক ছবি তোলা হয়ে থাকে এবং সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এই যন্ত্রের সাহায্যে দেহের সমস্ত অংশেরই অঙ্গের পরীক্ষা করা সম্ভব। মার্সেল, হাড়, ধমনী, শিরা, এমনকি হাড়ের মজ্জার ত্রুটি, মস্তিষ্কের টিউমার, রক্তজমাট বাধা, রক্ত চলাচলে কোথায় বাধা ইত্যাদি এবং কিডনি, হার্টের ত্রুটি ফুসফুসের সামান্যতম ক্ষুদ্র কণার উপস্থিতিও ধরা সম্ভব।


২৩। ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারি কি?
ওপেন হার্ট সার্জারি হল হার্টকে (হৃদযন্ত্র) সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে তার মেরামত করা বা ত্রুটি দূর করার ব্যবস্থা করা। এই কার্য করার সময় হার্টের কাজ করানো হয় অন্য যন্ত্রের মাধ্যমে যার নাম হার্টলাং। বাইপাস সার্জারীর ক্ষেত্রে শরীরের অন্য অংশ থেকে ধর্মনী তুলে এনে হৃদযন্ত্রে প্রতিস্থাপন করা হয়। বাস্তব ক্ষেত্রে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে অন্য রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে পৌছানোর মত। অবশ্য দুটি ক্ষেত্রেই অপারেশনের সময় দেহাভত্তরে প্রবেশ করতে হবেই।


২৪। কনটাক্ট লেন্স কি?
চোখের কিছু দোষ ত্রুটি দূর করতে এবং দৃষ্টি শক্তিকে সাহায্যের জন্য আমরা সাধারণ চশমা ব্যবহার করি কিন্তু সকল ত্রুটি দূর করা সম্ভব না হলে বা ব্যবহারের অসুবিধা দূর করতে কনটাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে। এই লেন্স চোখের কর্ণিয়ার উপর লাগানো হয়। চোখ থেকে না সরিয়ে সারাদিন ব্যবহার করা যায়। এই লেন্স 0.1 মিমি থেকে 1 মিমি পুরু হয়। এই লেন্স অদৃশ্য অবস্থায় থাকে, ভাঙে না, সহজে হারায় না তাই খুবই উপকারী। আজকাল কসমেটিক ও চোখের রং পরিবর্তন করার জন্য বহুল ব্যবহার হচ্ছে। লেন্স তৈরী হয় হাইড্রোজিথাইল মেথাক্রাইলেট দ্বারা। চশমার এক বিকল্প ব্যবস্থা, যাঁরা বেশী পাওয়ার লেন্স ব্যবহার করেন তাদের এই লেন্স দৃষ্টি আরও পরিস্কার করে।


২৫। কাশি হয় কেন?
কাশি হল শরীরের নিজেকে রক্ষা করার একটি ব্যবস্থা। এটি একটি সাধারণ ঘটনা। যদি শ্বাসের সাথে ধূলিকণা, ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া, নানা আঁশ, রাসায়নিক, ভাইরাস কর্তৃক নাকের শৈল্পিক ঝিল্লি ও গলা আক্রমণ করে, খুব ঠান্ডা বা খুব গরম বায়ু প্রবেশ করলে বা শ্বাস নালি এবং ফুসফুসে সংক্রমণ হলে কাশি আসে। ঐ সকল পদার্থ ফুসফুসে প্রবেশ করলে ফুসফুসের ঝিল্লির গায়ে আটকে যায়, বায়ু প্রবেশ বাধা পায়। ঝিল্লির কোষে সিলিয়ার আলোরণে ঐ ময়লা শ্লেমায় মিশ্রিত হয়ে গলবিলে উঠে আসে তখন ঐ সংবাদ মস্তিষ্কে পৌঁছায়, মস্তিষ্কের নির্দেশক্রমে কাশির সূচনা হয়। সাধারণভাবে কাশির চিকিৎসা হল জল বেশী খাওয়া এবং গরম ভাপে শ্বাস নেওয়া।


২৬। কিডনি, গলব্লাডারে পাথর তৈরী হয় কিভাবে?
দেহের বিপাকীয় গোলমালে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি জমে পাথরে পরিণত হয়। এক কথায় ইহাকে ক্যালসিয়াম অক্সালেট বলা যেতে পারে। এছাড়া প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থেকে বেশি হর্মোন ক্ষারিত হলেও পাথর তৈরী হতে পারে। রক্ত থেকে কিডনির দ্বারা ছাঁকা ঐ পদার্থ প্রথমে ছোট ছোট কণা আকারে কিডনিতে জমা হয়, ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। যদি কোন কারণে পিত্ত জমা হয়ে থাকে তবে বাইল স্যান্ড অধঃক্ষেপ পড়ে কালক্রমে গলব্লাডার স্টোন হতে পারে, এছাড়া পিত্তের মধ্যে শক্ত হয়ে জমে যাওয়া কোলোস্টোরেল গলব্লাডারে আটকে পাথর তৈরী হতে পারে।


২৭। কৃত্রিম পেসমেকার কিরূপে কাজ করে?
আমাদের হৃদযন্ত্র একটি মাসকুলার পাম্প যা মিনিটে 70-80 বার স্পন্দিত হয়। যদি কোন কারণে হার্ট ব্লক হয় বা স্পন্দন কমে 30-40 অথবা বেড়ে 100 হয়, ঔষধ দিয়েও যখন স্বাভাবিক স্পন্দন সম্ভব হয়না, তখন কৃত্রিমভাবে তৈরী পেসমেকার যন্ত্র বুকের চামড়ার তলায় বসানো হয়। এই যন্ত্র নির্দিষ্ট ছন্দে আবেগ উৎপন্ন (Electric Impulse) করে। যন্ত্রে শক্তির উৎস লিথিয়াম আয়োডাইড কোষ যার তড়িৎ চালক বল 2.8 ভোল্ট থাকে, এছাড়া তড়িৎ ইলেকট্রনিক বর্তনী (Circuit) ও সেন্সর (sensor) থাকে যা পালসের হারনিয়ন্ত্রণ করে। কোষের ইলেকট্রোড দুটি, ঊর্দ্ধ মহাশিরা দিয়ে একটি ডান অলিন্দে ও অপরটি ডান নিলয়ে স্থাপন করা হয়। যন্ত্রটি হৃদপিন্ডের স্পন্দনকে নিয়ন্ত্রিত করে অন্য কোন অসুবিধা দূর করে না।


২৮। ক্যান্সার রোগ কি এবং মারাত্মক কেন?
একজন পূর্ণবয়স্ক মানবদেহে প্রায় 1014 টি কোষ থাকে। আর এই কোষ অস্বাভাবিক বিভাজিত হয়ে যদি এক জায়গায় জমা হয়, (গ্রোথ, যাকে টিউমার বলে) এবং তা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে, তবে তা ক্ষতিকর বা ম্যালিগন্যান্ট। এই ম্যালিগন্যান্ট টিউমার থেকেই ক্যানসার কোষ তৈরী হয় এবং রক্ত ও লসিকা প্রবাহের মাধ্যমে দেহের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ মারাত্মক, কারণ এখন পর্যন্ত এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় নি। আর এ রোগটি ধরা পড়ে সাধারণত তৃতীয় পর্যায়ে এবং যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা হয়ে থাকে তাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। পরিসংখ্যান বলছে পৃথিবীতে বর্তমানে ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যা সর্বাধিক। সাধারণত খাদ্যনালী, ফুসফুস, পাকস্থলি, মলদ্বার, রক্তে, জরায়ু ও স্তনের ক্যানসার হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা যায় শুধু সিগারেট নয় যেকোন প্রকার তামাক শরীরে গেলে ক্যানসারের সম্ভাবনা দেখা যায়। কারণ হিসেবে তামাকে যে রাসায়নিক পদার্থ আছে তারা ক্যান্সারের বীজ বহন করে। প্রায় 45% তামাকজনিত রোগী। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন বা মেদবৃদ্ধি, উচ্চ বিকিরণ ইত্যাদি এই রোগের কিছু কারণ। সাধারণতঃ তিনটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা হয়ে থাকে। সার্জারি, রেডিওথেরাপী ও কেমোথেরাপী। আজকাল বিজ্ঞানীগণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকটা কমিয়ে এনেছেন কম্পিউটার টমোগ্রাফি এবং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং ব্যবস্থা যৌথভাবে কাজে লাগিয়ে। গবেষকগণ পরিশ্রম করে চলেছেন এর প্রতিষেধক তৈরী করতে ইতিমধ্যে কোন কোন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঔষধ তৈরী করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীগণ। বিজ্ঞানীগণ আবিষ্কার করেছেন PS3 জিন যা বেশীর ভাগ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। আগামীতে জিন থেরাপীর সাহায্যে ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব হবে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর ক্যানসার আক্রান্তদের 25% আমাদের দেশের বাসিন্দা। 


২৯। ঘাম ও ঘামাচিতে পাউডার দেওয়া কতটা উপকারী?
আমাদের দেহের ত্বকের প্রায় ত্রিশ লক্ষ ঘর্মগ্রন্থি থেকে ঘাম নির্গত হয়। এই ঘাম হওয়া দেহের নানা উপকার করে থাকে। প্রথমত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। দ্বিতীয়ত রক্তের অ্যাসিড ও ক্ষারের সমতা রক্ষা করে। তৃতীয়ত রোগজীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।সর্বোপরিনানা বর্জ্যপদার্থ যেমন ইউরিয়া, লবণ,অ্যামোনিয়া, অ্যাসিড বের করে দেয়। যদি কোন কারণে ত্বকের ঐ গ্রন্থিগুলি বন্ধ হয়ে যায় তবে ঐ সকল কাজগুলি সঠিক হয় না। ঘাম ত্বক ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে না। ত্বকের নীচে জমা হয় যাকে আমরা ফুসকুড়ি বা ঘামাচি বলি। এবার যদি আমরা পাউডার মানে জিঙ্ক অক্সাইড, ম্যাগনেসিয়াম সিলিকেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেটের গুড়ো, রং, সুগন্ধি ইত্যাদি ব্যবহার করি তবে তা ঘর্মগ্রন্থিগুলি বন্ধ করে দেবে। তাতে ঘামাচি কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পাবে। তবে উপায়? বিশেষজ্ঞদের মতে বারে বারে অনেকটা ঘাম জমতে না দেওয়া, ঘামাচি হলে বরফ ঘষলে আরাম পাওয়া যেতে পারে। কৃত্রিম সুতার জামা কাপড় না পড়া ইত্যাদি।


৩০। ঘুমের প্রয়োজন কি?
দেহকে সুস্থ ও স্নায়ুতন্ত্রকে স্বাভাবিক এবং ইমিউন সিস্টেমকে সতেজ রাখার জন্য প্রয়োজন ঘুমের। ছোট শিশু 18 থেকে 20 ঘন্টা এবং পূর্ণবয়স্কদের প্রতিদিন 7 থেকে 8 ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমের সময় গ্রোথ হর্মোন ক্ষরিত হয়, প্রোটিন বেশী তৈরী হয়। পাকস্থলীর লাইনিং মেরামত হয়। অল্প কথায় ঘুমকে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত এক প্রকার প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলা যেতে পারে।
চোখে আলো কম পড়লে বা কম অনুভব হলে রেটিনা থেকে এক প্রকার সংকেত স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে পৌঁছায়। সেখান থেকে ঐ সংকেত পিনিয়াল গ্রন্থিতে যায়। সেখানে মেলাটোনিন হর্মোন তৈরী হয়। দেহের তাপ মাত্রা কমে, ক্লান্ত, শ্রান্ত ভাব আসে ধীরে ধীরে ঘুম আসতে থাকে। হাইপোথ্যালামাস ঘুমের স্যুইচ-এর মত কাজ করে। সম্প্রতি ব্রিটিশ গবেষক বলেছেন হৃৎরোগের ঝুঁকি কমাতে রাতে সাত ঘন্টা ঘুমানো দরকার। এর থেকে কম হলে হৃৎরোগের ঝুঁকি বাড়ে, বাড়ে ওজন, ব্লাডপ্রেসার, এমনকি টাইপ টু ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শরীরে জৈব ঘড়ির নির্দেশ ক্রমে 16 ঘন্টা সজাগের পর সাত-আট ঘন্টা ঘুমাই। ঐ নির্দেশ উপেক্ষা করলে মাঝে মাঝেই ঝিমুনি বা মাইক্রো ঘুম ঘটে থাকে।


৩১। ঘুমের সময় চোখ বন্ধ হয় কেন?
আমাদের চোখ দুটি খোলা রাখার জন্য চোখের পাতাতে যে সকল পেশীসমূহ থাকে তা সকল সময়ই কার্যকরী থাকে। গড়ে প্রতি 6 সেকেন্ডে একবার পলক পড়ে। পাতার পেশীসমূহের একমাত্র বিশ্রাম নেওয়ার সময় হল আমাদের ঘুমের সময়। এছাড়া চোখ বন্ধ থাকলে দর্শনে যে সকল উত্তেজক বা উদ্দীপক সংকেত মস্তিষ্ক স্নায়ুর মাধ্যমে পৌঁছায় তখন ঐ কাজটি বন্ধ থাকে ফলে মস্তিষ্কও অনেকটা বিশ্রাম পেয়ে থাকে। গবেষণায় জানা গেছে, ঘুমের 7.5 ঘন্টার মধ্যে 20% স্বপ্ন দেখা, 18% গভীর ঘুম এবং 60% সাধারণ ঘুম হয়ে থাকে।


৩২। চিন্তাশীল ব্যক্তির ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেশী কেন?
অতিরিক্ত চিন্তা বা উদ্বেগের কারণে স্বতন্ত্র স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে থাকে। এর ফলে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে অধিক হর্মোন ক্ষরিত হয়ে থাকে। ঐ গ্রন্থি থেকে অ্যাড্রিনালিন ও অ্যাড্রেনালিন হর্মোন নির্গত হয় তা আইলেট অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্সের আলফা গ্রাহক কোষকে উদ্দীপিত করলে বিটাকোষ থেকে ইনসুলিন ক্ষরণ কম হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ডাটাবিটিসের সম্ভাবনা দেখা দেয়।


৩৩। জলবসন্ত হলে পরিবারের সকলে নিরামিষ আহার করেন এর যুক্তি আছে কি?
জলবসন্তু একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ, এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহের ক্ষয় সাধন ঘটে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পরে নির্দিষ্ট সময় পরে সেরেও যায়। এজন্য কিন্তু তার প্রয়োজন পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার অর্থাৎ প্রয়োজন যথেষ্ট ক্যালরি ও প্রোটিন তা মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ষ্টু ইত্যাদিতে বেশী পাওয়া যায় তবে রান্না গুরুপাক না হওয়া উচিৎ। কারণ এই সময় শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সাময়িক দুর্বল হয়ে পড়ে তাই রোগী এবং তার পরিবারের সকলে নিরামিষ খাওয়া বিজ্ঞান সম্মত নয়।


৩৪। জ্বর হয় কেন?
দেহের স্বাভাবিক উষ্ণতা 98.4° F বা 36.4° C এর চেয়ে বেশী উষ্ণতা মানেই জ্বর। জ্বর হলো কোন রোগের বাহিরের চেহারা। আর এর প্রধান কাজ হল দেহের বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য স্বয়ংক্রিয় চেষ্টা আর তা করা হয় শরীরের হরমোন, এনজাইম ও রক্ত কণিকাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। জ্বর যখন খুব বেশী (40°C বা 104°C) এর উপরে উঠলে সাথে সাথে কমিয়ে ফেলা উচিৎ, প্রয়োজনে গায়ে জল ঢেলে দিয়ে।


৩৫। জ্বর হলে বা ব্লাড সুগার বেশী হলে ভাত না রুটি কোনটি খাওয়া উচিৎ ?
অসুখের সময় আমরা আমাদের প্রতিদিনের রুটিন পরিবর্তন করে স্নান বন্ধ, ভাত বন্ধ উল্টে রুটি, গরম জামা কাপড় পড়া, পাখা বন্ধ করা ইত্যাদি ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কিন্তু ডাক্তারবাবুদের মতামত হল মুখে যা ভালো লাগে অর্থাৎ রুচি অনুসারে তাই খেতে পারেন। সর্দি জ্বরের সাথে ভাত বা রুটি খাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তবে ব্লাড সুগার বেশি হলে ডাক্তারবাবুগণ রুটি খেতে বলেন। আসল ঘটনা হল ভাত ও রুটি উভয়ই কার্বোহাইড্রেট যুক্ত, ভাতের পরিমাণ নিয়ন্তরণে রাখা সম্ভব হয় না কিন্তু রুটি তো গুণে খাওয়া যায়। অবশ্য রুটি খেতে হবে ভূষি অর্থাৎ রাফেজ যুক্ত আটার। তবে জ্বরের সময় এমনিতে রুচি থাকে না যেকোন খাবারই খাওয়া যেতে পারে তবে তা সহজপাচ্য হওয়া বাঞ্চনীয়।


৩৬। জণ্ডিস হলে চোখ, নখ, চামড়া, মূত্র ইত্যাদি হলুদ হয় কেন?
লিভারের কোষ থেকে উৎপন্ন পিত্তরস ঠিকমত বেরিয়ে ক্ষুদ্রান্তে না এসে যদি তা রক্তে মিশে যায় এবং রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণে জমে তা রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে দেহের চামড়া, চোখ, নখ ইত্যাদি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে তাই ঐগুলি হলদে দেখায়। পিত্তরসে বিলিরুবিন নামক এক প্রকার পদার্থ থাকে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে প্রতি 100 মিলি-এ 0.1 থেকে 0.8 মিলিগ্রাম থাকে কিন্তু ঐ বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে 2-3 মিলিগ্রাম হয় তখন জন্ডিস ধরা পড়ে।


৩৭।টুথপেষ্ট বা পাউডার দাঁতের পক্ষে কত উপকারী?
দাঁতে প্রথমে মাড়ির রোগ শুরু হয়, দাঁতের উপর গড়ে ওঠা জীবাণুদের আস্তানাতে। একে বলা হয় ডেন্টাল প্লেক্, এই প্লেক্ জমে ধীরে ধীরে শক্ত পাথরে পরিণত হয়। আর খাদ্য কণা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকে এগুলিই প্লেক্ তৈরীর উৎস। প্লেএর জীবাণু খাদ্য কণা থেকে তৈরী করে অ্যাসিড, যা দাঁতে ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং ধীরে ধীরে গর্ত তৈরী করে, যার নাম কেরিজ, একে পোকায় খাওয়া দাঁত বলা হয়। আমাদের প্রথম কাজ হল ঘষে মেজে প্লেক্ কে তুলে দেওয়া আর এটাই দাঁত পরিচর্যার মূল কথা এবং পরিচর্যার হাতিয়ার হল ব্রাশ। পেস্ট বা পাউডারে পরিস্কার করার দ্রব্য এবং পরিস্কারে আসল ব্যাপারটি কিন্তু ব্রাশ করার মধ্যেই তা নিমডাল বা শেওড়া ডাল হলেও ক্ষতি নেই। ব্রাশের নিয়ম হলনিচের দাঁত নিচের থেকে উপরে আর উপরের দাঁতগুলি উপর থেকে নিচে। পেস্ট ও পাউডারে যে সকল রাসায়নিক থাকে তা মুখের মধ্যে অবস্থিত অনেক উপকারী জীবাণু নষ্ট করে দেয়। অনেক পেস্টে ফ্লোরাইড থাকে এটি ব্যবহারে সাবধান হওয়া উচিৎ কারণ এর মাত্রা প্রয়োজনের কম বা বেশী উভয়ই ক্ষতিকর। পেস্ট বা পাউডারে দাঁতের রোগ সারে এ ধারনা সঠিক নয়, এর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন।


৩৮। টেস্ট টিউব বেবী (Test tube baby) কি? 
সন্তান সৃষ্টির জন্য চাই পুরুষের একটি শুক্রাণু কোষ ও নারীর একটি ডিম্বকোষের মিলন। টেস্ট টিউবে শুক্রাণুর ও ডিম্বাণুর মিলনে সৃষ্ট হয় ‘জাইগোট’। সেই (ভ্রুণ) কে নারীর গর্ভে স্থাপন করে মানব শিশুতে পরিণত হলে সেই শিশুকে টেস্ট টিউব বেবী বলা হয়। 1978 সালে ইংল্যান্ডে প্রথম টেস্টটিউব বেবীর জন্ম হয়েছিল, তার নাম লইস ব্রাউন। বেবীটি ছিল একটি মেয়ে।


৩৯। ডাক্তারবাবু (চিকিৎসকগণ) অ্যান্টিবায়োটিকস্-এর সাথে ভিটামিন খেতে দেন কেন?
অ্যান্টিবায়োটিকস্ খুব শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থ যা ক্ষুদ্র জীবাণুদের ধ্বংস করে অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া যা রোগের কারণ। সাথে সাথে আমাদের দেহের ক্ষুদ্রান্তে যে সকল উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে যা ভিটামিন তৈরী করে তাদেরও ধ্বংস করে ওই অ্যান্টিবায়োটিকস। কাজেই দেহের ঐ উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ঘাটতি কে পূরণ করার জন্য প্রয়োজনমত ভিটামিন খাওয়ার নির্দেশ দেন। 


৪০। ডায়ালিসিস কি?
আমাদের দেহকোষে যে অবাঞ্চিত পদার্থ তৈরী হয় তা কিডনীর 2 মিলিয়ন ফিল্টার ইউনিট দিয়ে 24 ঘন্টায় 1700 লিটারের বেশী রক্ত পরিশোধন করে 100 লিটার প্রাথমিক মূত্র তৈরী করে কিন্তু দেহ থেকে বের হয় মাত্র দেড় লিটার। রক্তকে পরিস্কার করার পদ্ধতিকে বা প্রক্রিয়াকে বলে ডায়ালিসিস। রক্ত পরিস্কার করার জন্য যে যন্ত্র তৈরী হয়েছে তার নাম ডায়ালাইজার।


৪১। ডায়বেটিস্ কি?
আমাদের খাবারের কার্বোহাইড্রেট হজম হয়ে গ্লুকোজে (চিনি) পরিণত হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং শক্তি উৎপন্ন করে। অগ্নাশয় থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন রক্তে মিশে গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশের সহায়তা করে। কিন্তু যদি কোন কারণে ইনসুলিন কম নিঃসৃত হয় বা ঠিকমত তৈরী না হয় তখন গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করতে পারে না। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধিকে ডায়াবেটিস বলে। স্বাভাবিক মাত্রা 70 থেকে 120 মি গ্রাম প্রতি 100 মিলিতে। এই মাত্রা বেশী হলে ডায়াবেটিস এবং কমে গেলে অগ্ন্যাশয়ের রোগ সন্দেহ করা হয়। এই রোগের কয়েকটি লক্ষণ হল তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রসাব, বারবার খিদে, ক্ষতস্থান শুকায় না ইত্যাদি। এই রোগ হলে সাধারণত হার্টের, কিডনির, চোখের এবং স্নায়ুর সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে পিতা মাতার ডায়াবেটিস থাকলে তাদের সন্তানের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা 60%। এই রোগ আটকাতে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশগুলি হল চর্বি কম, কম ক্যালরীর খাবার প্রচুর শাকসবজি ও ফল খাওয়া, পাতে নুন ও নোনতা খাবার বর্জন, ধূমপান নিষেধ, ওজন কম রাখা, এছাড়া চল্লিশের বেশী বয়স্কদের নিয়মিত সুগার পরীক্ষা করা।


৪২। ডোপিং কি?
অলিম্পিকের আসরে, এশিয়াডের আসরে বা আজকাল যে কোন প্রতিযোগিতা তা সাইকেল চালনা, দৌড় অর্থাৎ অ্যাথলেটিকস ক্রীড়া প্রতিযোগীতা বা জিমন্যাস্টিক যাই হোক না কেন সেখানে রাতারাতি বিখ্যাত হওয়া বা রেকর্ড গড়া চেষ্টায় বাইরে থেকে রাসায়নিক গ্রহণ করে নিজের ক্রীড়াদক্ষতার মান উন্নত করার চেষ্টার অপর নাম ডোপিং Doping। রক্তে এরিথ্রোপয়টিন বাড়াতে পারলে দেহে আসে শক্তি। শরীরে লোহিত কণিকা উৎপাদনের জন্য দায়ী এরিথ্রোপয়টিন। বায়োটেকনোলজির দৌলতে বিশ্ব জুড়ে এরিথ্রোপয়টিন ইঞ্জেকশন বা এর চেয়ে বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন ডার্বাপয়টিন তৈরী হয়েছে।


৪৩। ঢেকুর তুলি কেন?
আমাদের পাকস্থলির উপরের দিকে একটি ফোল্ডিং দরজা থাকে। খাওয়ার সময় খাবারের সাথে কিছুটা বায়ু পাকস্থলিতে ঢুকে পরে এবং খাদ্য পরিপাকের সময় নানা রাসায়নিক বিক্রিয়াতেও বিভিন্ন গ্যাস তৈরী হয়। যখন গ্যাসের আধিক্য দেখা দেয় তখন মস্তিষ্কের নির্দেশক্রমে পাকস্থলির পেশীগুলি আলোরিত হয় এবং ফোল্ডিং দরজা খুলে যায় বায়ু ও গ্যাসের কম্পনের জন্য শব্দ সৃষ্টি হয় এবং বায়ু ও গ্যাসের মিশ্রণ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। কোল্ডড্রিংকস খেলে ঢেকুর বেশি হতে পারে কারণ কোল্ডড্রিংকসে উচ্চচাপে কার্বনডাই অক্সাইড দ্রবীভূত থাকে এবং তা পাকস্থলিতে পৌছালে সেখানকার বায়ু ও গ্যাসের সঙ্গে মিশে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।


৪৪। থ্যালাসেমিয়ার পরীক্ষা বিবাহের পূর্বে করতে বলা হয় কেন?
এই রোগটি একটি বংশগত রোগ এই রোগের উপসর্গ হল রক্ত শূণ্যতা, দুর্বলতা, বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি। এই প্রকার রোগে লোহিত কণিকা আকৃতিগতভাবে ছোট হয় এবং 60 দিন বেঁচে থাকে। রোগের মূল চিকিৎসা রোগীকে নতুন রক্ত যোগান দেওয়া যাতে হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক থাকে। এই রোগের জিন বহন করা ও এই রোগে আক্রান্ত হওয়া কিন্তু এক নয়, বাবা ও মা উভয়েই যদি থ্যালাসিমিয়ার জিন বহন করেন তাহলে সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হয়। তাই বিবাহের আগে ঠিকুজী কোষ্ঠি ইত্যাদি পরীক্ষা করার পূর্বে এই রোগের পরীক্ষা করাতে বলেছেন ডাক্তারবাবুরা যাতে সর্বনাশকে আগে বাড়িয়ে ডেকে না আনেন।


৪৫। দেহের কোন্ অংশে অতি উত্তাপের সংস্পর্শে ফোস্কা পড়ে কেন?
আমাদের দেহের যে স্থানটুকু বেশী উত্তাপেরসংস্পর্শে আসে, ঐ স্থানের কোষগুলি দ্রুত তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং কোষগুলি যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় উত্তাপ কমানোর জন্য ত্বকীয় কোষে কলারস জমা হয় ফলে ঐ স্থানটি ফুলে উঠে আর তাকেই ফোস্কা পড়া বলা হয়। এটি উত্তাপ কমানোর দেহের একটি নিজস্ব প্রচেষ্টা মাত্র। 


৪৬। দৈহিক পরিশ্রম বেশী করলে ব্যথা ও ক্লান্তিবোধ হয় কেন?
দৈহিক পরিশ্রম বেশী করতে বেশী পরিমাণে শক্তির দরকার আর তা জোগাতে মাংস পেশীতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। যা পেশীর কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ব্যাথার একটি কারণ এছাড়া পেশীর কাজের ফলে ফ্যাটি টক্সিন নামক একপ্রকার জৈব বিষ তৈরী হয়। রক্তের মাধ্যমে ঐ অ্যাসিড ও বিষ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ফলে শরীরে ক্লান্তি আসে। ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রামের প্রয়োজন। বিশ্রামের সময় শ্বাস প্রশ্বাসে উপযুক্ত পরিমাণে অক্সিজেন শরীরে প্রবেশের ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিড পুনরায় গ্লাইকোজেনে পরিণত হয় ফলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।


৪৭। ধূমপান কতটা ক্ষতিকর?
ধূমপানের ধোঁয়াতে সাধারণত নিকোটিন, বেঞ্জিন, নিকেল, অ্যামাইনোবাই-ফেনাইল, অ্যাসাইন ইত্যাদি শরীরে প্রবেশ করে যার ফলস্বরূপ হাঁপানি, ফুসফুসের, মুখ ও গলার ক্যান্সার হতে পারে। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপান হার্ট অ্যার্টাকের আশঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়। তবে যারা ধূমপান করেন না অথচ নিয়মিত ধোঁয়ার মধ্যে থাকতে হয়, বা পরের ধোঁয়া গ্রহণ করতে হয় তা কিন্তু অনেক সময় ধূমপায়ীদের চেয়েও ক্ষতিকারক হতে পারে। তবে উপকারের দিক দেখলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে উত্তেজনা তৈরী হয়। আর ধূমপানের সাথে জড়িয়ে আছে একটা মানসিক পরিতৃপ্তির ব্যাপার। ইটালীর এক সমীক্ষক দল পরীক্ষা করে দেখেছেন ডিজেল ইঞ্জিন থেকে বায়ু যে পরিমাণে দূষণ হয় তার দশগুণ দূষণ হয় সিগারেটের ধোঁয়া থেকে। 


৪৮। ধূমপায়ীদের ঠোঁট কালো হয় কেন?
আমরা সকলেই জানি ধূমপান শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর তবে ঠেটে কালো হওয়াকে ধূমপানের প্রাথমিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলাচলে। তামাক জাতীয় ধুঁয়ো টান দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিকোটিন নামক পদার্থ মস্তিষ্কে ও রক্ত প্রবাহের প্রবেশ করে যা ত্বকে মেলানিন নামক পদার্থ জমা ত্বরাণিত করে এবং ঠোঁটে জলীয় বাষ্প কমে, স্থিতিস্থাপকতা কমে, রক্ত প্রবাহ কম হয়, ফলে ধূসর কালো বর্ণের হয়। অন্যান্য কারণেও ঠোঁট কালো হতে পারে যেমন সূর্যালোকে বা হর্মোনের প্রতিক্রিয়াতে।


৪৯। ‘নাক ডাকা’ কি?
আমরা নাক দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস করি। কখনও কখনও সর্দিতে নাক আটকে যায় বা নাকের গঠনে কোন ত্রুটি থাকলে মুখ দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস করতে হয়। অনেকের ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাস প্রশ্বাসের সময় নমনীয় নরম তালু আন্দোলিত হয় অর্থাৎ শ্বাস প্রশ্বাসে বায়ু চলাচলে বাধার সৃষ্টির ফলে শব্দ উৎপন্ন হয়। অনেক সময় গাল, ঠোট ইত্যাদি কেঁপে উঠে ফলে আরো জোরালো শব্দ সৃষ্টি হয়ে থাকে একেই নাক ডাকা বলে।


৫০। পাকস্থলী নিজে হজম হয় না কেন?
আমাদের পাকস্থলীর পাইলোরিক শ্লেষ্মাস্তর থেকে গ্যাস্ট্রিন হর্মোনের উদ্দীপনায়, পাকস্থলী গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসে মিউসিন, জল, খনিজ লবণ, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (2%), লাইসোজাইম, পেপসিন, লাইপেজ থাকে। প্রতিদিন 2-3 লিটার রস নিঃসৃত হয়। হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড খ্যাদের জটিল প্রোটিন, সরল প্রোটিনে, সুক্রোজকে ভেঙে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজে পরিণত করে এবং দুষিত জীবাণু বিনাশ করে। কোরসিভ জুস (Corrosive juice) পাকস্থলীর ভিতরে দিকের দেওয়ালের ক্ষতি করে তবে তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক ভৌত রাসায়নিক প্রতিবন্ধক তৈরী হয়। প্রতিবন্ধক তৈরী হয় শ্লেষাকোষ, প্যারাইটাল কোষ ও পেপটিক কোষ দিয়ে শক্ত আবরণ যার উপরে থাকে শ্লেষা প্রতিদিন প্রতিবন্ধকের বহু কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আবার নতুন করে তৈরী হয়ে থাকে। গবেষকদের মতে প্রতি মিনিটে প্রায় 5 লক্ষ কোষ stom ach lining প্রতিস্থাপিত হয়। যেহেতু নিত্য নতুন কোষ তৈরী হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিবন্ধকে সঠিক রাখে এই জন্য পাকস্থলী নিজে হজম হয় না। 


৫১। পূঁজ কিরূপে তৈরী হয়?
আমাদের দেহে রোগ জীবাণু প্রবেশ করলে রক্তে উপস্থিত এন্টিবডি রোগ জীবাণুকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে সেই সময় শ্বেত কণিকারাও ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জীবাণুকে ধ্বংস করে এই যুদ্ধে শ্বেত কণিকাও মারা পড়ে। রোগ জীবাণুও শ্বেত কণিকার মৃতদেহের মিশ্রণই পুঁজ। এছাড়া দেহের কোন অংশে কেটে গেলে, ফোঁড়া পেকে গেলেও পুঁজ তৈরী হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দেহের রক্তে উপস্থিত শ্বেতকণিকার মধ্যে লিউকোসাইট শ্রেণীর ঐ কাটা বা ফোঁড়ার চারদিকে ভীড় করে এবং রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। যুদ্ধে উভয় পক্ষের সৈন্য যারা মারা যায় তাদের মৃতদেহ এক্ষেত্রে একত্রে পুঁজের রূপ ধারণ করে।


৫২। প্লাস্টিক সার্জারী কি?
অস্ত্রোপাচার করে বিনষ্ট, পঙ্গু বা বিকলাঙ্গ অথবা দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য একপ্রকার চিকিৎসা। আইভারসন একজন শল্য চিকিৎসক গবেষণায় জেনেছেন চামড়ায় কয়েকটা স্তর আছে। তার মতে ক্ষত যদি চামড়ার দ্বিতীয় স্তর অবধি যায় তাহলে তাকে পরিষ্কার করে দিলেই স্বাভাবিক ভাবে নূতন চামড়া উৎপন্ন হয় এবং ক্ষত স্থানকে মসৃণ করে দেয়, তিনিই প্রথম প্লাস্টিক সার্জারীর প্রচলন করেন। এই পদ্ধতিতে দেহের যে অংশের মেরামত করা দরকার সেই স্থানের আকারের চামড়া দেহের অন্য অংশ থেকে তুলে এনে ঐ স্থানে বসিয়ে দেওয়া হয় মাত্র।


৫৩। পেট (PET) কি?
পুরো কথাটি পজিসন ইমিশন টোমগ্রাফি। ইহা একটি সর্বাধুনিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি যার সাহায্যে সাধাণত মস্তিষ্কের সকল প্রকার গঠনগত ও ক্রিয়াগত ত্রুটি সঠিক সনাক্ত করা, ব্যান্সার কোষ সনাক্ত করা, ইপিলিপসি, এমনটি মানসিক রোগ সনাক্ত করা সম্ভব। এই ব্যবস্থাতে তেজস্ক্রিয়া আইসোটোপের সাহায্যে রোগ নির্ণয় করা হয়। বিশেষজ্ঞগণ কার্যক্ষমতা অনুসারে এক এক প্রকার তেজস্ক্রিয় পদার্থ ঔষধের মতো খেতে বা ইনজেকসনের মাধ্যমে দেহের ভিতর প্রবেশ করলে তাতে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করতে থাকে। ঐ রশ্মি ডিরেক্টরের মাধ্যমে সংগ্রহ করে, বিকীর্ণ রশ্মির মাত্রা, সময় কিভাবে হচ্ছে ইত্যাদি কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিস্কার ছবি দেখে রোগ ও ক্ষতিগ্রস্থ অংশের সঠিক অবস্থান ও অবস্থা নির্ণয় করে থাকেন। এক্ষেত্রে বিভিন্নক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন আইসোটপ ব্যবহৃত হয়, তবে সচারচর বিটা বা গামারশ্মি বিকীর্ণ করে এবং স্বল্প আয়ু এমন আইসোটোপ বেশী ব্যবহৃত হয়। কারণ এই রশ্মি দেহের হাড় ও ত্বক ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে এবং দেহের ক্ষতি কম হবে। ফুসফুসের ত্রুটিতে জেনন 133, হাড়ের মধ্যে টিউমার সনাক্তকরণে ফ্লুওরিন 18, অগ্নাশয়ের রোগ নির্ণয়ে সেলেনিয়াম 75, এছাড়া আইডি 125 ও 131, টেলুরিয়াম 132, আয়রন 59 ব্যবহার করা হয়।


৫৪। বৃদ্ধ বয়সে চুল পাকে কেন?
আমাদের দেহের চামড়ার নীচে অনেক প্রকার গ্রন্থি থাকে যেমন ঘর্মগ্রন্থি, তেল গ্রন্থি কেশ গ্রন্থি, চুলের মুলে এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ থাকে যার জন্য চুলের বর্ণ কালো হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ঐ রঞ্জক পদার্থ তৈরী কম হতে থাকে তার জন্য চুল প্রথমে ধুসর পরে সাদা হয়ে যায়।


৫৫। বৃদ্ধ বয়সে হাড় ভাঙলে চিন্তার কারণ এটা কি ঠিক?
কোন হাড় ভেঙে গেল ঐ ভাঙা হুড়ের প্রস্ত থেকে রক্তপাত হয় সেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই জমাট বেরে যায়। হুড়ে কোলোজেন নামক সুক্ষ্মসুতোর জালের মধ্যে অস্টিওব্লাস্ট নামক কোষ রক্ত থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস নিয়ে এক বিশেষ লবণ তৈরী করে ঐ লবণ কোলোজেনের জালের মধ্যে জমে হাড়ে পরিণত হয় এবং ভাঙা হাড় জুড়ে যায়।
তবে এই জোড়া লাগা প্রধানত নড়াচড়া এ বয়সের উপর নির্ভর করে কারণ নড়াচড়া করলে বা পুরো বিশ্রাম না নিলে আর বেশী বয়সে কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধি খুব কম হয় তাই হাড় জোড়া লাগতে সময় বেশী লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জোড়া নাও লাগতে পারে তাই চিন্তার কারণ হতে পারে।


৫৬। বার্ধক্য কেন আসে?
মানবদেহ অতুলনীয়, সবচেয়ে আশ্চর্য  ‘এ’গ্রেড যন্ত্র সমাহার। জীবন শুরু একটি মাত্র কোষ থেকে। মানব শিশু যখন জন্ম গ্রহণ করে তখন তার দেহে প্রায় 26 x 1012 টি কোষ থাকে। পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দেহে 1014 টি। মানবদেহ 9 টি তন্ত্র বা সিস্টেম ও 10 টি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির সম্মিলিত ও সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেহ যন্ত্ৰ পরিচালনা করেন তার প্রধান মন্ত্রি মস্তিষ্ক। জন্মের পর থেকে ক্রমাগত বিক্রিয়ার (মেটাবলিজ্ম) কার্যকলাপ সারাদেহে সারা জীবন ধরে চলে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ভিতর দিয়ে জীবনবৃত্ত রচিত হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অঙ্গ ও তন্ত্রগুলির বিপাকীয় শক্তি কমতে থাকে ফলে কোষ, কলা তৈরী হ্রাস পেতে থাকে সেজন্য দেহের ওজন কমে, কোন কোন অঙ্গ সঠিক কার্য করতে পারে না, ধীরে ধীরে বার্ধক্য আসে।
বিজ্ঞানীগণ বার্ধক্যের কারণ হিসাবে বহু তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে প্রথমত ৪ দেহে নানা কাজের ফলে নানা ধরনের দুষিত পদার্থ, (ফ্রিরেডিকালস, পারঅক্সাইডস্) তৈরী হয় সেগুলি অল্প বয়সে প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য নষ্ট হয়, কিন্তু বয়স হলে তা দেহে জমা হয়। এছাড়া প্রয়োজনীয় পদার্থ নিঃশেষিত হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত : - বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কলা বা টিসুর আণবিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটে থাকে। এই পরিবর্তনগুলি প্রোটিন অণু ও পলি স্যাকারাইড অণুর এনজাইমে মধ্যে ঘটে থাকে। তৃতীয়ত : বয়স বেশী হলে ডি. এন. এ সংকেত বহনকারী মেসেঞ্জার আর. এন. এ (mRNA) রাইবোফ্লোমে সঠিক তথ্য পৌছাতে পারে না। কারণ হিসাবে mRNA এর অণুর ত্রুটি দেখা দেয় যার ফলে সঠিক প্রোটিন তৈরী হয় না এবং বিপাকক্রিয়ার হ্রাস ঘটে। বিজ্ঞানীগণ এ সম্পর্কে বহু পরীক্ষা নিরিক্ষা করে চলেছেন যার নাম জারন্টোলজিস। এব্যাপারে এখনও সকল বিষয় স্পষ্ট নয়। তবে আশার কথা মানব জীন ম্যাপ এখন বিজ্ঞানীদের হাতের মুঠোয়। কোন্ জিন বার্ধক্য নিয়ে আসে আগামীদিনে সঠিক ভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে বিজ্ঞানী মাইরুল ওয়েস্ট মানুষের M ও M2 নামে দুটি জিন আবিষ্কার করেছেন তার মতে ওই দুটি জিন নিয়ন্ত্রণ করে বার্ধক্য হ্রাস বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
এছাড়া অতি সম্প্রতি লণ্ডনের বিজ্ঞানী উইদার্স মানুষের জীবনচক্র এবং আয়ুর মেয়াদ নিয়ন্ত্রক ‘‘আই আর এস ওয়ান” (IRS1) জিনটি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এই আবিষ্কারের ফলে একদিন হয়ত মানুষ জরা জয় করতে পারবে। শুধু তাই নয় বয়সের ভারে যে সমস্ত রোগ হয় তারও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। 


৫৭। বাস, ট্রেন বা সমুদ্র যাত্রার সময় বমনইচ্ছা বা বমন হয় কেন?
যানবাহনে চলাকালীন দেহের ভারসাম্যের সমতা থাকে না। তখন মস্তিষ্ক দেহের বিভিন্ন সংস্থা থেকে পরস্পর বিরুদ্ধ সংবাদ পেতে থাকে এবং সেই তথ্য বোঝার জন্য (ভেস্টিবুলার সিস্টেম) কঠোরভাবে চেষ্টা করে। ফলস্বরূপ বমন ইচ্ছা, মাথা ঝিমঝিম ইত্যাদি শারিরীক অসুবিধা অনুভব করেন।


৫৮। বার্ধক্যে সাধারণত কি কি সমস্যা দেখা দেয়?
বার্ধক্য আসবেই। বয়স বৃদ্ধির ( 40 উর্দ্ধে ) সাথে সাথে স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। এর ফলে প্রথমত যে যে বিষয়গুলি চোখে পড়ে তা হচ্ছে চুল ও দাঁত পড়তে শুরু করে, চোখ ও কানের কর্ম ক্ষমতা কমে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়, হজমশক্তি দুর্বল হয়। এবার আসা যাক বিশেষজ্ঞদের কথায়। দেহের মাংসের পরিমাণ (মার্সল মাস) কমতে থাকে এবং চর্বি বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাত বা অস্টিও আর্থ্রাইটিসর সমস্যা, ভুলে যাওয়া, রক্তচাপ সমস্যা, কোষ্ঠ কাঠিন্য, ঘুম কম, পুরুষদের প্রোস্টেট বৃদ্ধি, মহিলাদের মেনোজের পরবর্তী সমস্যা ইত্যাদি। এছাড়া হার্টের নানা সমস্যা ও ডাইবিটিস এবং মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। 


৬০। বার্ধক্যজনিত সমস্যার মোকাবিলা কিরূপে করা যেতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে যা যা করা উচিৎ তা হল খাওয়া দাওয়া নিয়মিত ও হালকা রাখতে হবে, টাটকা শাক, সবজি ফল খেতে হবে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার যেমন ভিটামিন এ (দুধ, মাছের তেল, গাজর, পেপে, টাটকা সবজি ইত্যাদি) ভিটামিন সি (লেবু, কমলা, পেয়ারা, আঙুর, আপেল ইত্যাদি) ভিটামিন ই (অঙ্কুরিত ছোলা, গম, ভেজিটেবিল অয়েল, চাল ইত্যাদি) হালকা ব্যায়াম বা বঁটা চলার অভ্যাস রাখতে হবে। সামান্য উপসর্গ হলে অবহেলা না করে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে আর নিয়মিত ওজন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। সম্প্রতি দুইজন মার্কিন এবং একজন জার্মান বিজ্ঞানী আমাদের দেহের পাইনিয়াল নিঃসৃত মেলাটোনিন হরমোনের বার্ধক্য প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে এই সত্যটি আবিস্কার করেন। ভবিষ্যতে এই আবিষ্কারে বার্ধক্য রোধে কার্যকরী ভূমিকা ব্যবহৃত হবে।


৬১। ব্যায়াম করার সময় আমরা জোরে শ্বাসকার্য করি কেন? 
আমরা যখন ব্যায়াম করি তখন অক্সিজেনের ঘাটতি হয় তাতে পেশীতে সন্ধান প্রক্রিয়ায় ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে রক্ত আম্লিক হয়ে আমাদের মস্তিষ্কের শ্বাস কেন্দ্রটিকে উদ্দীপিত করে সেজন্য আমাদের শ্বাসের হার বৃদ্ধি পায় এবং জোরে শ্বাসকার্য করতে থাকি।


৬২। ব্যাথা আসলে কি?
শরীরের কোন জায়গায় আঘাত, ক্ষতস্থান বা কোন ব্যাধি বা কোন অঙ্গের অসুস্থতার সংকেত এর এক বিশেষ অনুভুতি হল ব্যাথা। আমাদের দেহের চামড়ার মধ্যে কয়েক লক্ষ বিন্দু আছে যেখানে ব্যাথা সৃষ্টি হতে পারে। শরীরের মধ্যে স্নায়ুর উন্মুক্ত প্রাক্তদেশে আঘাতের ফলে ব্যাথার সৃষ্টি হয় এবং তা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌছায়। ব্যাথার ঔষধ খেলে যে স্নায়ু মস্তিষ্কে ব্যাথার সংকেত নিয়ে যায় সে পথ বন্ধ করে দেয়। মস্তিষ্কের সোমাটোসেন্সারি কর্টেক্স, ইনসুলার কর্টেক্স, এই অংশের উদ্দীপনা ব্যাথা ও কষ্টকে নিয়ন্ত্রিত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু ঔষধ নয় ব্যাথা কমাতে চাই ইতিবাচক ভাবনা অর্থাৎ মানসিক চাপ।


৬৩। ব্রণ হয় কেন?
নানা কারণে ব্রণ হয়। সাধারণত দেহের চামড়াকে নরম রাখার জন্য চামড়ার নীচে ছোট ছোট তেলের গ্লান্ড আছে। ওই গ্লান্ড গুলির ছোট ছিদ্র দিয়ে তেল চামড়ার বাহিরে আসে। ধুলোবালি, কোষের বর্জ্য পদার্থ কখনও কখন ওই ছিদ্র পথ বন্ধ করে দেয় ফলে তেল বেরোতে পারে না। তখন স্থানটি ফুলে ওঠে এবং যাতে রোগ জীবাণু ঐ জায়গায় আক্রমণ না করতে পারে সেজন্য শ্বেত কণিকারা ঐ জায়গায় জমা হয় এবং পুঁজে পরিণত হয় ও ব্রণের সৃষ্টি করে।


৬৪। ভিটামিন টনিক খাওয়া কতটা উপকারী?
টনিক খাওয়ার বাতিক অনেকের আছে। টনিক হচ্ছে প্রধানত কয়েক প্রকার ভিটামিন, কিছু মিনারেল এবং এমন কিছু পদার্থ যে গুলির মানুষের দেহে কখনও অভাব থাকে না, এর সাথে অ্যালকোহল মিশ্রিত করে তৈরী। ভিটামিন হল কতগুলি জৈব বস্তু যা অল্প পরিমাণে প্রাণীর দেহের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় কিন্তু এ থেকে কোন শক্তি পাওয়া যায় না। এরা উৎসেচকের সহ উৎসেচক এর কাজ করে। ভিটামিন ডি ছাড়া অন্যান্য ভিটামিন দেহে তৈরী হয় না। ফল, তরিতরকারি, শাকপাতা সমৃদ্ধ খাবার খেলে ভিটামিনের অভাব হয় না। আমাদের দেহে ভিটামিনের প্রয়োজন আছে। ভিটামিনের অভাবে 36 টি রোগ হতে পারে কিন্তু টনিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিশ ত্রিশ গুণ ভিটামিন বি গ্রুপের থাকে। অপ্রয়োজনীয় ভিটামিন প্রসাব ও মলের সাথে বের হয়। কিন্তু ক্যাট দ্রবীভূত বেশী ভিটামিন শরীরের নানা প্রকার ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে লিভারের। টনিক সেবনে সামান্য খিদে বৃদ্ধি এবং চনমনে ভাব আসে একথা সত্যি কিন্তু তার কারণ হল অ্যালকোহল। ঔষধের দোকানের শোকেসগুলির দিকে তাকালে দেখা যাবে শতকরা 70 থেকে ৪০ ভাগ টনিক। টনিকের ঔষধি মূল্য বেশী না থাকলেও এটি আমাদের মানসিক রোগ সারাতে সক্ষম একথা বলা যেতে পারে। 


৬৫। ভূতে ধরা, ভর করা ইত্যাদির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি?
সাধারণ ধারণা ভুত বা অশরীরী শক্তি মানুষের ঘাড়ে চেপে বিভিন্ন রকম সব কাজকর্ম করায়, অস্বাভাবিক আচরণ করে, যা খুশি তাই করে। আসলে ভূতে ধরাটা ডাক্তারী ভাষায় একটি মানসিক ব্যাধি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হিস্টিরিয়া। ভয়, সংস্কার, বিশ্বাস, অবদমিত দুঃখকষ্ট, দারিদ্র ইত্যাদি থেকে জন্মানো একটা রোগের লক্ষণ। এই সকল রোগী ভাবে অলৌকিক শক্তি ভর করেছে তার শরীরে, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়, নানা প্রকার ফিট অবস্থা, অদ্ভুত কথাবার্তা ইত্যাদির প্রকাশ ঘটে। এই রোগ সারানো ঝাড়ফুক্বা ওঝা দ্বারা সম্ভব নয়, মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সুপরামর্শই এই রোগ সারাতে পারে। 


৬৬। মাথায় টাক পড়ে কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে বংশগত, থাইরয়েড-এর গোলযোগ, পুরুষদের যৌন হরমোনের ক্ষরণ, বিকিরণ ইত্যাদি প্রধান কারণ। এছাড়া চর্মরোগ, রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া গৌণ কারণ হতে পারে। অনেক সময় শারীরিক দুর্বলতা, টাইফয়েড, কক জাতীয় রোগ হলেও স্বল্পস্থায়ী টাক হতে পারে। তবে পুরুষদের যৌন হরমোন অ্যানড্রোজেন বেশী ক্ষরণ হলে টাক বড় ও চকচকে হয়ে থাকে। মেয়েদের বেলায় ঐ হরমোন নিঃসরণ হয় না, তবে কখনও কঠিন রোগের জন্য চুল উঠে যেতে পারে। ঔষধ প্রয়োগে টাকে চুল হয় না। 


৬৮। মাথা ধরে কেন?
আমাদের মস্তিষ্কের চারিদিকে অতিসংবেদনশীল শিরা, ধমনী বা গ্রন্থি থাকে। এগুলি কোন কারণে আঘাত পেলে মাথা ধরা অনুভব করে থাকি। মাথা ধরা আসলে কোন রোগ নয়। এটি শরীরের কোন রকমের গোলযোগের সংকেত। ঐ আঘাত দাঁত, নাক, চোখ, কান, পেশী, ক্ষুধা, দৃষ্টির গোলযোগ, জ্বর, কোষ্টকাঠিন্য, পেটে গ্যাস, ব্রেনটিউমার, মানসিক চাপ, সাইনাসে সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি থেকে আসতে পারে।


৬৯। মানবদেহে ত্বকের প্রয়োজন কতটা?
ত্বক মানবদেহের সবচেয়ে বড় তন্ত্র (Organ)। গড়ে পুর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় 1.7 বর্গমিটার ত্বক থাকে। শরীরকে জীবাণু, উত্তাপ, ঠাণ্ডা, আঘাত থেকে রক্ষা করে, স্পর্শানুভুতি দান করে। ঘাম নিঃসরণের মাধ্যমে ত্বক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি তৈরী করে। তিন প্রকার রঞ্জকের উপস্থিতিতে ত্বকের বর্ণ নির্ধারিত হয়। প্রধানত মেলানিন রঞ্জক বেশী পরিমাণ থাকলে ত্বকের রং কালো হয়। ক্যারোটিনের পরিমাণ বেশী হলে রং হলুদ হয়। ত্বকের পুণর্নবীকরণ ক্ষমতা অসীম। ইহা দেহের ও মনের অবস্থা অনেকটা প্রতিফলিত করে থাকে। ৩১৯। মানুষ কত বেশী উষ্ণতা সহ্য করতে পারে?
মানুষ কতটা উষ্ণতা সহ্য করতে পারে তা নির্ণয়ের জন্য বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীগণ। তাতে দেখা গেছে যদি আমরা শুষ্ক বাতাসে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠি তবে প্রায় 150°C উষ্ণতা সহ্য করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দুটি শর্ত মানতে হবে। এক বাতাস সম্পুর্ণ শুষ্ক এবং উত্তাপের উৎস দেহের প্রত্যক্ষ সংযোগ না থাকে। কারণ আমাদের দেহ স্বাভাবিক রাখার জন্য ক্রমাগত উষ্ণতা ত্যাগ করতে থাকবে, দেহে ঘাম হবে, বায়ু উষ্ণতা শোষণ করবে।


৭০। মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে কি?
বিভিন্ন প্রকার গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীগণ আবিষ্কার করেছেন যে দীর্ঘায়ু প্রধানত কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সুষম পরিমিত খাদ্য, পরিমিত পরিশ্রম, সুস্থ পরিবেশ, মানসিক স্থিতি এবং কিছুটা জিন নির্ভর। বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে স্যানিটেশন, পাবলিক হেলথের যত্ন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে টিকা, অ্যান্টিবায়োটিক, আধুনিক রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি ও ঔষধের ব্যবহার মানুষের গড় আয়ু অনেকটা বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে জিনের মানচিত্র বিজ্ঞানীদের হাতের মুঠোয়। এখন শুধু জিনের কার্যকারিতা নির্ণয়ের পালা অর্থাৎ কোন রোগের জন্য কোন জিন দায়ী তা সনাক্তকরা। সম্প্রতি টেক্সসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মাইকেল ওয়েস্ট M1 এবং M2 নামে দুটি জিন সনাক্ত করেছেন যারা বার্ধক্যের জন্য দায়ী, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীগণ আশা করছেন আগামী দশ বৎসরের মধ্যে প্রত্যেক মানুষ তার নিজের জেনোম সিকোয়েন্স জানতে পারবে এবং তার ভবিষ্যতে কি ধরনের রোগ হতে পারে তা সঠিক জেনে আগাম সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আগামী বিশ বৎসরের মধ্যে বায়োচিপের সাহায্যে রোগ নির্ণয়, টেলি মেডিসিনের প্রয়োগ অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রোবট ব্যবহার করে রক্তপ্রবাহে যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। এছাড়া জিনথেরাপী ব্যাপক চালু হবে এবং ক্লোনিং-এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক ছাড়া প্রায় সব অঙ্গ তৈরী করে তা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে।
বিজ্ঞানীগণ আরও আশা করছেন আজ যারা শিশু তাদের গড় আয়ু দেড়শ বৎসরেরও বেশী হতে পারে।


৭১। মানুষ দুজন একই রকমের হয় না কেন?
যময বা একই জাইগোট (Zygote) থেকে উৎপন্ন মানুষ ব্যতীত কোন দুজন মানুষ জেনেটিক্যালি (Genetically) একই রকম হবে না। মানব দেহের প্রত্যেক কোষে 46 টি ক্রোমজোম থাকে। 23 টি পায় তার পিতার থেকে ও 23 টি পায় মায়ের কাছ থেকে। মানুষের ক্ষেত্রে হেটারোজাইগোসিটি 6.7%। মানব জেনোম থেকে জানা যায়, মানুষের প্রতিটি কোষে 32000 জিন থাকে আর একজন মানুষের সাথে অন্য মানুষের জিনগত পার্থক্য মাত্র 0.1%। মানুষের স্বকীয়তা নির্ধারণে দায়ী মাত্র 0.1% জিন। তাহলে 46 টি ক্রোমজোম 32000 জিনের মাত্র 6.7% অর্থাৎ 2144 হেটারোজিনিয়াস অকুস্থলে তাদের 22144 টি বিন্যাস ঘটতে পারে যে সংখ্যাটি হয়ে দাঁড়াবে মহাবিশ্বের জাগতিক পদার্থ সমূহের পরমাণুর সংখ্যার (1030) চেয়ে বেশী। কাজেই একই রকমের অপর একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, একই নিয়ম প্রাণীদের ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে।


৭২। মানুষ অজ্ঞান হয় কেন?
মানুষ সাধারণত ভয় বা খারাপ সংবাদ পেলে, শক, হার্ট অ্যাটাক হলে, এছাড়া নানা কারণে অজ্ঞান হতে পারে। মস্তিষ্ক যদি তার প্রয়োজন মত রক্তের যোগান পায় তবেই পুরোদমে কাজ করতে পারে মানে হল জ্ঞান থাকা। আর যদি কোন কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে গোলমাল ঘটে তবে তার ফল হল অজ্ঞান। তবে কেহ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে শোয়ানোর সময় মাথা একটু নীচু করে পায়ের দিকটা উঁচু করে রাখা উচিৎ। তাতে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বেশী হতে পারে।


৭৩। মেয়েদের গোঁফ, দাঁড়ি হয় না কেন?
বয়ঃসন্ধিকালে উভয়ের দেহে বিভিন্ন প্রকারের হরমোন তৈরী হয়ে শরীরে ছড়াতে থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অগ্নাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন, যার প্রধান কাজ হল মহিলাসুলভ বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটানো। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ ও অন্যান্য গ্রন্থি থেকে অ্যান্ড্রোজেন নিঃসরণ হয়, যার প্রধান কাজ পুরুষোচিত বৈশিষ্ট্যের বিকাশ। যেহেতু মেয়েদের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রোজেন নিঃসরণ হয় না তাই তাদের পুরুষোচিত গোঁফ, দাড়ি হয় না।


৭৪। রক্তচাপ কি?
মানবদেহের 5 লিটার রক্ত প্রায় এক লক্ষ কিমি রক্তবাহি নালিকার মধ্য দিয়ে সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। হৃদপিন্ড থেকে সজোরে প্রক্ষিপ্ত হয়ে ওই নলিকা বাহে যে চাপ দেয় তার ফলে রক্ত প্রবাহিত হয়। ধমনীর প্রাচীরে (গাত্রে) রক্ত যে চাপ সৃষ্টি করে তাকে রক্তচাপ বলে। হৃদপিণ্ডের সংকোচনে ঐ চাপ বৃদ্ধি (সিসটলিক) এবং প্রসারণে কমে যায় (ডায়াস্টলিক)। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ 115-125 এবং 80-90 মিমি পারদ, তবে বয়সের সাথে রক্তচাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। সাধারণভাবে 90 + বয়স সামান সাধারণ সিসটলিক চাপ। এই চাপ 150 এর বেশী এবং 90 এর কম হলে সতর্কতা অবলম্বন দরকার। যে যন্ত্রটির দ্বারা রক্তচাপ মাপা হয় তার নাম স্ফিগমো ম্যানোমিটার। রক্তচাপ বেশী হলে সেরিব্রাল স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলওর, দৃষ্টি শক্তির অসুবিধা হতে পারে।


৭৫। রক্তচাপ বেশী হলে লকা খাওয়া নিষেধ কেন?
সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের সাধারণত ডায়াস্টোলিক প্রেসার 80-90 মিমি। সাধারণ লবণ হল সোডিয়াম ক্লোরাইড অর্থাৎ লবণ খেলে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ফলে প্রেসারও বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া টিস্যুর ভিতর ও বাহিরে তরল বিনিময় অসমেটিক প্রেসারের উপর নির্ভর করে। আর্টারী বা শিরাতে বেশী জল বেরিয়ে এলে বেশী তরল তাই বেশী চাপ সৃষ্টি করে।


৭৮। রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া কাকে বলে?
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে অ্যানিমিয়া নির্দেশ করে। এই রোগে আর বি. সি (R.B.C) কমে যায়। সাধারণত পুরুষের HB 15 গ্রাম এবং স্ত্রীলোকের 13.5 গ্রাম প্রতি ডেসিলিটারে থাকা উচিৎ। এই রোগের কারণ বহু তবে রক্তপাত, খাবারে সবুজ শাকসবজি, মাংস বা লৌহ যুক্ত না থাকা, হুক ওয়ার্মের আক্রমণ, মাসিকের সময় বেশি আাব ইত্যাদি। লক্ষণের মধ্যে চামড়া ও চোখের ভিতরটা ফ্যাকাসে, সাদাটে নখ। রক্তাল্পতা বেশী হলে রোগীর মুখ, হাত পা ফুলে যেতে পারে, চলাফেরায় হাঁক ধরে যেতে পারে সেইসঙ্গে দুর্বলতা আর ক্লান্তির উপস্থিতি।


৭৯। রেডিও থেরাপী কি?
রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সাহায্যে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার একটি বিশেষ পদ্ধতি। তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে তিন প্রকার রশ্মি বের হয় যাদের নাম অলকা, বিটা ও গামা এছাড়া এক্স রশ্মি আছে। রেডিয়াম থেকে নির্গত গামা রশ্মিকে ক্যান্সার রোগ নিরাময়ে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। রেডিও আইসোটোপের সাহায্যে রোগ নির্ণয় এখন রুটিন ব্যবস্থার মত। তবে গামা রশ্মি বেশী ব্যবহৃত হয় কারণ এই রশ্মি দেহের অস্থি এবং চামড়া ভেদ করে বাহিরে বেরিয়ে আসতে পারে। ফুসফুসের কাজ স্বাভাবিক চলছে কিনা তা জেনন 133, হাড়ে টিউমারের খবর জানার জন্য ফ্লওরিন 18, কোথাও টিউমার গড়ে উঠছে কিনা তা জানার জন্য আইওডিন 131 ব্যবহার করা হয় কারণ এরা স্বল্পজীবী। ইতিমধ্যে ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে চিকিৎসা ও গবেষণার জন্য প্রায় 60 টির বেশী ঔষধ তৈরী হয়েছে। 0221 রেসাস ফ্যাক্টর (Rh factor) মানুষের রক্তে আন্টিবডি ও অ্যান্টিজেন থাকার ভিত্তিতে রক্তের বহু শ্রেণী বিভাগ করা হয়েছে। তবে ABO এবং Rh এই দুপ্রকার রক্ত সঞ্চালন বা রক্তদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজন। এক পরীক্ষায় রেসাস বানরের রক্ত খরগোসের রক্তে প্রবেশ করিয়ে খরগোসের রক্তে এক প্রকার অ্যান্টি বড়ি উৎপাদনে সক্ষম হয়ে ছিলেন বিজ্ঞানীগণ। রক্তেও ওই প্রকার অ্যান্টিজেন থাকে। ওই বানরের নামানুসারে ওই অ্যান্টিজেন কে Rh ফ্যাক্টরে জমা দেওয়া হল। Rh ফ্যাক্টর দুপ্রকার Rh+ ও Rh-1
যখন কোন Rh+ ব্যক্তির রক্ত Rh ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করানো হয় তবে দ্বিতীয় ব্যক্তি দেহে রক্তের রোগ দেখা দেবে যদি সে পুনঃরায় Rh+ রক্ত গ্রহণ করে। একইরূপে একজন Rh- যুক্ত পিতা ও Rh- মাতা রক্তের রোগগ্রস্থ শিশুর জন্ম দেবে। কাছাকাছি দ্বিতীয় সন্তান এলে রক্তে লোহিত কণিকার ধ্বংস হয়ে মৃত্যু ঘটাবে। তবে আজকাল মৃত্যু রোধ করার চিকিৎসা ব্যবস্থাও আবিষ্কৃত হয়েছে।


৮০। ল্যাপ্রোঋেপিক কি?
ইহা একটি অপারেশনের জন্য আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পেটের যাবতীয় (গলব্লাডার, কিডনি, কোলন, হার্নিয়া ইত্যাদি) অপারেশনের জন্য উপযোগী। এই পদ্ধতিতে পেটের ভিতর দশ মিলিমিটার মত ক্ষুদ্র ছিদ্র করে প্রথমে কার্বন ডাই অক্সাইড ঢুকিয়ে পেট ফুলিয়ে নেওয়া হয়। অতঃপর বিশেষ যন্ত্র ক্যামেরা ঢুকিয়ে অপারেশনের নির্দিষ্ট স্থান নিরীক্ষণ (কম্পিউটার সিস্টেম এর মাধ্যমে) করে অপারেশন করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির সুবিধা পেট পুরো কাটতে হয় না, রক্তপাত কম, ব্যাথা কম, দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক হয়ে ওঠা যায়।


৮১। লিউকোমিয়া কি?
মানবদেহের রক্তে সাধারণত শ্বেত কণিকার সংখ্যা প্রতি ঘন মিলিতে 5 থেকে 11 হাজার। এর প্রধান কাজ রোগ প্রতিরোধ করা। যদি কোন্সারের কারণে, সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেল্লা সেই অবস্থাকে লিউকোমিয়া বলা হয়। সাধারত রোগটিকে শ্বেত কণিকার এক প্রকার ক্যান্সার বলে ধরা হয়। এই রোগ নির্ণয়ে অস্তিমর্জ্জা পরীক্ষা করা হয়। আজকাল এই রোগের ভাল ঔষধ এবং অস্তিমর্জ্জা ট্রান্সপ্লান্ট করার মাধ্যমে রোগ নিরাময় হচ্ছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের একদল বিজ্ঞানীর গবেষণাতে ধরা পড়েছে যে সকল শিশু পেট্রল পাম্প বা অটোমোবাইল বা গ্যারেজের কাছাকাছি বসবাস করে তাদের লিউকোমিয়া হওয়ার প্রবণতা অন্য স্থানে বসবাসকারীদের চেয়ে সাতগুণ বেশী।


৮২। শরীরের কোন জায়গা কেটে গেলে চিনি লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয় কেন?
ক্ষতস্থানে চিনি দিলে রক্তের সাথে মিশ্রিত হয়ে যে দ্রবণ তৈরী করে তা ছোট ছোট শিরা, উপশিরাকে সংকুচিত করে এবং ঐ স্থানের রক্তের সাম্রতা (viscosity) বাড়িয়ে দেয়। ফলে ঐ স্থানে রক্তের প্রবাহ কমে। তাছাড়া চিনিটাকে ক্ষতস্থানে চেপে ধরলে স্বাভাবিক ভাবে রক্তপড়া কমে, কিছু সময়ের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।


৮৩। শরীরের কোথাও আঘাত লাগলে ফুলে উঠে কেন?
ফুলে ওঠাটাকে আমাদের দেহের একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা বলা হয়। আঘাত লাগার সাথে সাথে রক্তনালিকাগুলি সংকুচিত হয় পরক্ষণেই প্রসারিত হয় বা ফুলে উঠতে শুরু করে। এতে নালিকার মধ্যে রক্তের প্রবাহ কমে, রক্তের সান্দ্রতা অর্থাৎ আঠালো ভাব বেড়ে যায়। এরপর শ্বেতকণিকা দেওয়ালের গায়ে এসে জমতে শুরু করে। তাতে গতি আরও বাধা পায়। এরপর রক্তবাহী নালিকা দিয়ে রক্তের প্রোটিন ও জলীয় অংশ (exudate) বাইরে বেরিয়ে এসে জমা হয়। দুটি কোষের মধ্যবর্তী স্থান এবং জায়গাটা ক্রমশ ফুলতে থাকে।


৮৪। শ্বাস বন্ধ করে বেশী ক্ষণ থাকা যায় না কেন?
শ্বাসবদ্ধ করে রাখলে রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে তা মস্তিষ্কে সুযুদ্ধা তরলের আম্লিকতা বৃদ্ধি করে। এই আম্লিকতা সুষুম্না মস্তিষ্কের অঙ্কীয় তলে অবস্থিত রসায়ন সংবেদী কোষকে উদ্দীপিত করে। সেই উদ্দীপনা পৃষ্ঠীয় তল অবস্থিত প্রশ্বাস ক্ষেত্রকে সক্রিয় করে তখন প্রশ্বাস ক্ষেত্রের নির্দেশে প্রশ্বাস পেশীর চলন ঘটে অর্থাৎ ফুসফুস প্রসারিত হয়। বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে অর্থাৎ শ্বাস প্রশ্বাস চলতে শুরু করে। বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন 4050 সেকেণ্ড পরে রক্তের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের আংশিক চাপ সমান হয়ে থাকে অর্থাৎ 50 মিমি পারদস্তম্ভ হয়। তাই 4050 সেকেণ্ড পর্যন্ত শ্বাস বন্ধ রাখা যায়।


৮৫। শক্ খেলে মৃত্যু ঘটে কেন?
বৈদ্যুতিক শক্ লাগা মানে হল দেহের মধ্যে বিদ্যুৎপ্রবাহ প্রবেশ করা অর্থাৎ ইলেকট্রনের প্রবাহ রক্তপ্রবাহের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং বিদ্যুৎশক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই তাপ রক্তকোষের বহিঃআবরণ নষ্ট করে। ফলে রক্ত তথা কোষের জলীয় অংশ বাষ্পীভূত হতে শুরু করে। একটি মাত্র ইলেকট্রন প্রায় লক্ষ কোষকে নষ্ট করতে সক্ষম। এরাপ লক্ষ লক্ষ ইলেকট্রন দেহে প্রবেশ করে অল্প সময়ের মধ্যে রক্তের জলীয় অংশ কমে গিয়ে রক্তপ্রবাহে বাধা দিতে থাকে, ফলে মৃত্যু ঘটাও অসম্ভব নয়।


৮৬। স্ট্রোক কি?
সারাদেহে যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন তার 20% -ই মস্তিষ্কে প্রয়োজন হয়ে থাকে। যদি কয়েক মিনিটের জন্যও অক্সিজেন সরবরাহ কম হয় বা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ব্রেনের টিস্যুর মৃত্যু ঘটে থাকে।
বয়স্ক লোকের সাধারণজ্ঞঃ মস্তিষ্কে রক্তপাতের ফলে স্ট্রোক হয়। স্ট্রোক মানে অঘাত কথাটি ব্যবহৃত হওয়ার কারণ হয়তো কোনরূপ জানান না দিয়েই অঘাত করে। রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, মুখ লালচে, শ্বাস কৰ্ব্বশ হয়। অজ্ঞান অবস্থায় অনেকক্ষণ থাকতে পারে। তার মুখ বা শরীরের কোন অংশ অসাড় হয়ে যেতে পারে। কথা বলতে, চিত্তা করতে অসুবিধা হতে পারে। অল্পমাত্রায় স্ট্রোক হলে অজ্ঞান নাও হতে পারে, তবে সমস্যাগুলি হতে পারে। স্ট্রোকের প্রধান দুটি কারণ হল উচ্চরক্ত চাপ আর ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত রোজ ফল, সবুজ শাকসবজি খাদ্য তালিকাতে থাকলে তাদের হার্ট আটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে সবুজপাতা, বাঁধাকপি পরিবারের ভেজিটেবল ও লেবু জাতীয় ফল স্ট্রোকের হাত থেকে রেহাই পাবার মোক্ষম অস্ত্র।
সম্পৃক্ত চর্বি, লবণ কম খাওয়া, ওজম কম রাখা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধুমপান ও মাদকদ্রব্য বর্জন করতে হবে।


৮৭। সি.টি. বা সি.এ.টি স্ক্যান কি?
পুরো কথাটি কম্পিউটারাইজ টমোগ্রাফী/ কম্পিউটাররাইজ অ্যাকসিয়াল টমোগ্রাফি। ইহা একটি আধুনিক রোগ নির্ণয় যন্ত্র। এই যন্ত্রে একটি এক্সরে উৎস থাকে যা থেকে রোগীর শরীরের চারিদিকে বৃত্তাকার পথে ঘুরিয়ে যে কোন অংশে ঐ রশ্মি ফেলা যায় এবং এক্সরের উল্টোদিকে তিনশ ডিটেক্টরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সংক্ষেতের মাধ্যমে কম্পিউটারে পাঠানো হয়। কম্পিউটার ওই সংকেত থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে টিভি পর্দাতে শরীরে ভিতরের অঙ্গের ছবি ফুটিয়ে তোলে এবং পরে স্থায়ী ছবি তোলা হয়। ওই ছবি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞগণ রোগ নির্ণয় করেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে মস্তিস্ক, যকৃত, পাকস্থলী, বুক, কিডনির রোগ নির্ণয় বা ক্ষতস্থান সনাক্ত করা সম্ভব হয়। 


৮৮। সূর্যরশ্মি আমাদের দেহের পক্ষে কতটা উপকারী?
সুর্যরশ্মি অমাদের দেহের ত্বকে যে সকল জীবাণু থাকে তা ধ্বংস করে মাংসপেশীকে দৃঢ়তা দান করে, শ্বেতকণিকাদের সক্রিয় করে তোলে। এছাড়া ত্বকে ইগোস্টোল নামক পদার্থ সূর্যের আল্ল্টাভায়োলেট রশ্মি দ্বারা ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে। তবে বেশী রৌদ্র সেবন করা উচিৎ নয় কারণ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। এছাড়া কিছু রোগের জন্য রোদ ক্ষতিকারক।


৮৯। স্বপ্ন দেখি কেন?
মনো বিজ্ঞানীগণ বলেন স্বপ্ন হল আমাদের সেইসব ইচ্ছা বা আকাঙ্খার প্রকাশ, যেগুলি বাস্তবে রূপ পায়নি। বিজ্ঞানীগণ স্বপ্নের কয়েকটি কারণের কথা বলেন তার মধ্যে প্রথমত আমাদের দেহে বিভিন্ন উত্তেজনার কারণে যেমন শব্দ, বা তুলনামুলক ঠান্ডা হলে, বায়ু প্রবাহ বেশী হলে, ভয়, আনন্দ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত পূর্বের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং যে সকল বিষয়ে কৌতূহল, প্রবল ইচ্ছা তার প্রতিফলন। তৃতীয়ত কখনও পূর্বের ঘটনার পুনঃরাবৃত্তি ঠিক যে ভাবে ঘটেছিল ঠিক সেইরূপ দেখা তবে প্রধান কারণ বিগত অভিজ্ঞতাকেই বিজ্ঞানীগণ ঘুমের সময় বিভিন্ন পরীক্ষা ও নিরিক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন। প্রতি রাতেই আমরা স্বপ্ন দেখি অনেক সময় তা মনে রাখতে পারি না। সাধারণত রাতের শেষ ভাগে প্রায় 20 থেকে 30 মিনিট ধরে আমরা স্বপ্ন দেখে থাকি। অনেকের ধারণা ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা স্বপ্নে ধরা দেয়। বিজ্ঞানীগণ তা মানতে নারাজ তাবে তাদের নিকটও ব্যাপারটা পুরো পরিষ্কার নয়।


৯০। হাঁচি কেন হয়?
সাধারণত ঠান্ডা লাগলে, নাকের মধ্যে কোন পদার্থ ঢুকলে, অ্যালার্জিতে অর্থাৎ নাকের মধ্যে যে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি থাকে সেগুলি উত্তেজিত হলে হাঁচি আসে। এটাকে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলা যায়, শরীরের অস্বস্থিকর পদার্থকে এর মাধ্যমে বের করে শরীর সুস্থ করার এক প্রকার প্রতিবর্তী ক্রিয়া।


৯১। হার্ট অ্যাটাক কি?
হার্ট স্বয়ংক্রিয় স্পন্দনের মাধ্যমে সারা জীবন সারা দেহ রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। হার্ট প্রতিদিনে সারা দেহে 13640 লিটার রক্ত পাম্প করে থাকে। কোনও কারণে হার্টের মাসেলে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হলে তার স্বাভাবিক কর্ম বন্ধ হয়ে যাবে। যে সকল ধমনীগুলি হার্টের রক্ত সরবরাহ করে তা আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে। ডাক্তারি ভাষাতে বলে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। হার্ট যে কারণে ব্যাধিগ্রস্থ হয়ে থাকে তার কারণগুলি হ’ল হার্টের জন্মগত ত্রুটি, হার্টের দুষণ, হার্টের অত্যাধিক পরিশ্রম, হার্টের রক্ত সরবরাহ ঘাটতি ইত্যাদি। হাটে রক্ত সরবরাহ ঘাটতি মানে হার্টের মাসেলের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া। রক্তের লিপিড অংশের একটি উপাদান হল কোলেস্টরল, এই কোলস্টরল, ফ্যাট জমে রক্তনালী সরু হয়ে গেল হার্টে রক্তের অক্সিজেনের জোগান কমে যায়, তখন অতিরিক্ত অক্সিজেন জোগানের জন্য হার্টকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় তার জন্য বুকে ব্যাথা, চাপ অনুভব হয়। অক্সিজেন হার্টে আসে তিনটি করোনারি ধমনীর মাধ্যমে। যদি কোন কারণে এই পথ বন্ধ হয় তখনই অন্যান্য ধমনীগুলি যাতে আক্রান্ত স্থানে রক্ত সরবরাহ করতে পারে তার জন্য দেহ একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যাপিলারী নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে তাতে ওই জায়গায় মাসেলকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু এই কাজ বন্ধ হয়ে গেলে, দেহের বাইরে থেকে ঔষধ বা বা ইঞ্জেকসনের সাহায্যে প্রয়োজন হয়। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় প্রতি বৎসর পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী মানুষ মারা যায় হার্ট এর রোগে, আর এই সংখ্যাটি হল প্রায় 1.7 কোটি।


৯২। হার্ট অ্যাটাক দূরে রাখতে কি কি করা উচিৎ? 
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে যাদের রিস্ক ফ্যাক্টর আছে তাদের কতকগুলি নিয়ম বেধে দেন তার মধ্যে কয়েকটি হল ওজন কমানো, ব্যায়াম করা সম্ভব হলে হাঁটা, টাটকা শাকসবজি খাওয়া, ধুমপান নিষেধ, রেডমিট, ঘি, মাখন, ডিমের কুসুম, অতিরিক্ত তেল মশালার খাবার বর্জন, টেনসন মুক্ত থাকা, নিয়মিত ব্লাড সুগার, কোলেস্টরল এবং প্রেসার চেক করানো।


৯৩। হার্ট লাং মেশিন কোন কাজে ব্যবহৃত হয়? 
হৃদপিণ্ডের প্রতিস্থাপনা বা ওপেন হার্ট সার্জারির সময় রোগীর সংবহন ও শ্বসন ব্যবস্থা চালু রাখতে এই যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়। এই ব্যবস্থায় বহু যন্ত্রাংশের মধ্যে যে দুটি প্রধান কাজ করে তারা হল, হৃদপিন্ডের ক্রিয়া চালু রাখার জন্য 'রোলার পাম্প” এবং শ্বসনক্রিয়া চালু রাখার জন্য অক্সিজেনেটর, যা ফুসফুসের কাজ করে।


৯৪। হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথির পার্থক্য কি?
হেমিওপ্যাথির প্রবর্তন জার্মানীর ডাঃ হ্যানিম্যান। এই পদ্ধতির সুত্রটি ল্যাতিন ভাষাতে "Similia Similibus Curanta ইংরেজীতে like cures like, বাংলাতে বিষে বিষক্ষয়। যার অর্থ এমন ঔষধ প্রয়োগ করা হবে যা রোগের উপসর্গের অনুরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটাবে। এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য অসুস্থতার মূল কারণ, প্রকাতা, প্রবৃত্তির নিষ্পত্তি অর্থাৎ স্থায়ী ফল, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিশেষ থাকে না, একসাথে একাধিক ঔষধ প্রযোগ হয় না, কিছু নিয়ম কানুন অবশ্য প্রয়োজনীয়, যেমন ডিম, পিয়াজ, টক, ধুমপান, গুরুপাক নিষেধ এই পদ্ধতিতে ঔষধের সংখ্যা প্রায় ৩৩শ। আর এ্যালোপ্যাথি যে সুত্রটি মানে তা হয় opposites cure opposites অর্থাৎ বিরোধ দিয়ে বিরোধীদের উপসম। এই ক্ষেত্রে স্থায়ী ও অস্থায়ী ফল লাভ হয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বেশী। কোন কোন রোগে অবশ্যই পালনীয় বিষয় থাকে। আমাদের দেশে প্রায় 150 টি ঔষধে চিকিৎসা করা সম্ভব, কিন্তু বাজার জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রায় 50 হাজার ঔষধ।
তবে কোন ভয়াবহ রোগের প্রারম্ভিক অবস্থাতে, কোন আকস্মিক দুর্ঘটনায় কাটা ভাঙা, ক্ষত শক, পড়ে যাওয়া, সাপ বা কুকুরে কামড়ালে, বিষ খেলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে এ্যালোপ্যাথি ঔষধ ব্যবহার করা উচিৎ।