১। আপেলের পুষ্টি গুণ কতটা?
পাকা আপেল শ্বেতসার, সুগার, অ্যাসিড, প্রোটিন, প্রোটোপ্যাকটিন, দ্রবীভূত ক্যাকটিন, ভিটামিন A ও C ও নানা খনিজে সমৃদ্ধ। ইহাতে সেলুলোজ, হেমিসেলুলেজ থাকায় কোষ্টকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণ করে। পেকটিন, কোলোস্টরল কমানো ছাড়াও ডায়াবেটিস ও হৃদ রোগের সম্ভবনা কমায়। আপেলের টার্টারিক ও ম্যালিক অ্যাসিড শরীরে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ফুসফুসকে ধোঁয়া থেকে বাঁচাতেও কার্যকর। তবে টাটকা ও খোসাসহ আপেল খাওয়া অধিক উপকারী। দম্ভ চিকিৎসকদের মতে দাঁত সুস্থ রাখার শ্রেষ্ঠ উপায় খাবার পর আপেল খাওয়া ও সকলের রাত্রিতে দাঁত পরিস্কার করা। প্রচলিত একটি কথা প্রতিদিন একটি আপেল খাও আর ডাক্তার দূরে সরাও।
২। আমিষ না নিরামিষ কোনটি খাওয়া উচিৎ?
দেহের শক্তির জোগান পুষ্টি ও বিকাশ ও শরীর রক্ষার জন্য আমাদের খেতে হয় এবং যার মধ্যে থাকে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। ভিটামিন ও খনিজ পেয়ে থাকি সাধারণত শাকসবজি ও ফল থেকে। খাবারে মাছ, মাংস ডিম ইত্যাদির উপস্থিতিই আমিষ। এবার দেখা যাক এগুলিতে কি কি থাকে, একটি সাধারণ ধারণা এই সকল খাদ্যে উৎকৃষ্ট শ্রেণীর প্রোটিন থাকে এবং খাদ্য মূল্য তুলনামূলক বেশী এবং 9 প্রকার অতি প্রয়োজনীয় এবং 22 প্রকার সামান্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। এই প্রোটিনগুলির 95% দেহ গ্রহণ করতে পারে কিন্তু উদ্ভিদ প্রোটিন ৪০% গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া ভিটামিন বি 12, ডি এবং আরো কয়েকটি ভিটামিন কেবলমাত্র আমিষ খাদ্যেই থাকে। কিন্তু পুষ্টি বিজ্ঞানীগণ বলছেন আমিষ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনের সমতুল্য প্রোটিন উদ্ভিদ থেকেও পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত অধিক ও নানা প্রকার উদ্ভিদ প্রোটিন খেতে হবে। অর্থাৎ সমষ্টিগত খাদ্য (মুসুর, মটর, সোয়াবিন, পেস্তা, কাজু, সূর্যমুখী বীজ, দানাশস্য বিভিন্ন শাকসবজি ইত্যাদি) এছাড়া নিরামিষাশী দুধ ও দুগ্ধজাত পদার্থ থেকেও আমিষের প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে পারে। বিজ্ঞানীগণ আবার বলছেন আমিষ খাদ্য খেলে দেহে স্নেহ পদার্থ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ। নিরামিষভোজীগণ স্বাস্থ্যবান ও দীর্ঘায়ু হয়ে থাকেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় বিজ্ঞানীগণ জেনেছেন যে মাংস যারা কম খান তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন। পুষ্টি বিজ্ঞানীগণ বর্তমানে ব্যালান্স ডায়েট করতে বলছেন যার মধ্যে বেশিরভাগই থাকে শাকসবজি ও ফল। এতে রক্ত চাপ কমিয়ে স্টোকের আশঙ্কা কমাবে অবশ্য কম লবণ গ্রহণ করতে হবে।
৩। আলুর পুষ্টিগুণ কি কি?
শর্করা জাতীয় খাদ্যের মধ্যে অন্যতম আলু। আলুতে শতকরা 22.6 ভাগ শর্করা, 1.6 ভাগ প্রোটিন, লোহা, ফসফরাস, পটাসিয়াম, Kcal, 135 Kcal, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম এর মত প্রয়োজনীয় খনিজছাড়া ভিটামিন সি এবং দেহের প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ অ্যামিনো অ্যাসিড আলুতে পাওয়া যায়। প্রতি 100 গ্রাম আলু, চাল ও আটারুটি থেকে যথাক্রমে 72 300 Kcal শক্তি পাওয়া যায়। তরকারীর মধ্যে আলুতে সবচেয়ে বেশী ভিটামিন সি থাকে এর মাত্রা প্রতি 100gm, 20mg টাকা ও খোসা শুদ্ধু আলু খেলে উপকার বেশী। আলুর রস উচ্চ রক্তচাপ এবং ডিওডিনাল আলসারে প্রতিরোেধ সহায়ক। এতে থাকা লিগনিন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। আলুর চেয়ে বেশি পরিমাণে শর্করা সমপরিমাণ চাল, ডাল, গম, দুধ, কলা, কাঁঠালে থাকে তবুও ব্লাডসুগার, ডায়াবেটিস ও মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে আলুকে বেশী দোষ দেওয়া হয়। অথচ এই সকল ক্ষেত্রে আলুর তেমন ভূমিকা থাকে না।
৪। আলু সিদ্ধ করলে খোসা ছাড়ানো সহজ হয় কেন?
আলুর খোসা তৈরী হয় সেলুলোজ দ্বারা এবং ভিতরের মাংসাল অংশে জমা থাকে স্টার্চ। খোসা ও ভিতরের অংশের মধ্যে পেপটিন নামক আঠালো পদার্থ এবং কয়েক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা খোসাকে শক্তভাবে আটকে রাখে। সিদ্ধ করলে ঐ আঠালো ধর্ম নষ্ট হয়, খোসার প্রসারণ ও স্ফীতি এবং ভিতরের অংশ নরম হওয়ার ফলে খোসা ছাড়ানো সহজ হয়।
৫। এন্জাইম্ কি ?
ইহা জীবদেহের বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অনুঘটকের কাজ করে। এদের কার্যের ফলে খাদ্য পরিপাক ও আত্তীকরণ সম্ভব হয়। এযাবৎ প্রায় 700 এনজাইমের কথা জানা গিয়েছে। যাবতীয় এন্জাইম প্রোটিন জাতীয় পদার্থ। এনজাইম জীব কোষে উৎপন্ন হয়। কার্যের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে এনজাইমকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন, ডিহাইড্রোজেনেজ এরা হাইড্রোজেন বিযুক্ত করতে সাহায্য করে, অক্সিডেজ এরা জারণ ঘটায়, ট্রাস অ্যামাইনেজ এরা অ্যামাইনো কে এক অণু থেকে অন্য অণুতে স্থানান্তরিত করে। মুখের লালাতে টায়ালিন নামক এনজাইম সৃষ্টি হয়, যা শ্বেতসারকে শর্করায় রূপান্তরিত করে। পরিপাকের গোলযোগে পেপ্সিন, ট্রিপ্সিন জাতীয় খাদ্য পরিপাক করে।
৬। কচু খেলে গলা চুলকায় কিন্তু তখন তেঁতুল খেলে চুলকানি কমে যায় কেন?
কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সলেট থাকে তাদের কেলাসগুলি সূচাগ্র ও তারকার মত হয়ে থাকে। সূচাগ্রগুলির নাম র্যা ফাইড, যখন কচু খাওয়া হয় তখন ঐ র্যা ফাইড আমাদের অন্ননালীর গায়ে বিঁধে যায় ফলে চুলকানি শুরু হয়। তেঁতুলে টারটারিক অ্যাসিড ও লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে। যখন তেঁতুল বা লেবুর রস খাওয়া হয় তখন ঐ র্যা ফাইডগুলি ঐ অ্যাসিডে দ্রবীভূত হয় ফলে চুলকানি বন্ধ হয়ে যায়।
৭। কফি কতটা উপকারী?
আমরা কফিকে ক্লান্তি দূরকারী পানীয় হিসাবে ব্যবহার করে থাকি, ইহা মেজাজকে উদ্দীপিত করে, সেবনে তৎপরতা বৃদ্ধি পায়, হৃদযন্ত্রের স্পন্দন ও রক্ত চাপ বৃদ্ধি করে এবং মূত্রবর্ধক। কফিকে সাধারণত মন পরিবর্তনের (mind altering Drug) ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ইহাতে ক্যাফাইন নামক রাসায়নিক থাকে যা তিক্ত ও আম্লিক। রাসায়নিক নাম (methylxthine) দেহে কোষের নানা প্রকার বিপাকীয় কার্য করে, নার্ভ কোষের কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কের রক্ত নালিকে চেপে সংকুচিত করে ফলে পিটুইটারী গ্রন্থির নির্দেশক্রমে অ্যাভারিনানাইল গ্রন্থি থেকে হর্মোন নিঃসৃত হয় যার ফলে হৃদস্পন্ন বৃদ্ধি এবং যকৃৎ থেকে বেশী পরিমাণে শর্করা (Sugar) রক্তস্রোতে মিশিয়ে দেয় ফলে বেশী শক্তি পাওয়া যায়। বেশি কফি সেবনে নিদ্রা হ্রাস ও আহারে অরুচি আসতে পারে। কোলোস্টোরেল বৃদ্ধি, হৃদরোগ, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় তাই পরিমিত পরিমাণে সেক্স করা উচিৎ।
৮। কলার পুষ্টিগুণ কতটা?
কলা পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য ফল। এতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, সেলুলোজ, ক্যালসিয়াম, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি ছাড়াও ভিটামিন বি, সি, ই, সামান্য বি কমপ্লেক্স থাকে। দুধ কলা সমবেতভাবে শরীরের পুষ্টির পরিপূরক। যাদের হজম শক্তি কম, শরীর দুর্বল, কোষ্টকাঠিন্যে ভোগেন তাঁদের কলা খুবই উপকারী। কাঁচকলা আম্ব্রিকসহ নানা পেটের রোগে খুবই উপকারী। ফলের মধ্যে খাদ্যগুণের বিচারে কলার স্থান দ্বিতীয়।
৯। কার্বাইডে ফল পাকে কেন?
ফল পাকার সময়ে ফলের মধ্যে রাসায়নিক পরিবর্তন হয় যার ফলে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ফল মিষ্টি লাগে। একপ্রকার অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন নাম ইথিলিন উদ্ভিদ হর্মোন হিসাবে কাজ করে এবং ফল পাকতে সাহায্য করে। কার্বাইডে সংস্পর্শে কাঁচা ফল রেখে দিলে, কার্বাইড, বায়ুর জলীয় বাস্পের সাথে বিক্রিয়াতে অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন করে যার ফল পাকানোর গুণ আছে তবে ইহা ব্যবহারে ফলের স্বাভাবিক পাকার বর্ণ, স্বাদ সঠিক হয় না। সেজন্য আজকাল ঐ ত্রুটিগুলি দূর করার জন্য 2 ক্লোরোইথাইল ফসফরিক অ্যাসিড অনেকক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
১০। কিশমিশ কিভাবে তৈরী হয়? উপকারিতা কি?
আঙুর বিশেষ করে ছোট আঙুর থেকে তৈরী করা হয়। পাকা আঙুর সামান্য কস্টিক সোডা (1%-2%) দ্রবণে কিছুক্ষণ রেখে দেওয়া হয় তারপর দ্রবণ থেকে তুলে গন্ধকের (সালফার) ধোয়া দ্বারা শোধন করে, তারপর রোদে শুকানো হয়। এতে শর্করা থাকে রন্ধনে এবং মিষ্টান্নে এর ব্যবহার হয়। ইহা পিপাসা নিবারক ও শ্লেষ্মায় উপকারী।
১১। কোল্ড ড্রিংকস্ কতটা উপকারী?
কোল্ড ড্রিংকস্-এ সাধারণতঃ যে জিনিসগুলি থাকে তা হল ফসফরিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, চিনি বা স্যাকারিন ও কার্বন ডাই অক্সাইড। এতে চিনির পরিমাণ বেশী থাকায় তা যাতে খারাপ বা নষ্ট না হতে পারে তার জন্য পেষ্টিসাইড বা কীটনাশক মেশানো হয়। তার মধ্যে রয়েছে লিনডেন, ম্যালাথিয়ান, এইচ. সি. এইচ। প্রতিটি কেমিক্যালের সাইড এফেক্ট আছে। অনেকের ভুল ধারণা আছে, কোল্ড ড্রিংকস্ দারুণ হজম করায়, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত ড্রিংকস্ খেলে অ্যাসিডিটির সম্ভাবনাই বরং বৃদ্ধি পায়। কারণ এ থেকে দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয় তার ফলে স্টমাক মার্সেলের এক্সটেনশন ঘটে অ্যাসিড সিক্রেশন বেশী হয়। এছাড়া রং করা হয় তাতে মেটাল থাকে যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। এর ফলে শরীরের সিমপ্যাথেটিক নার্ভ অকেজো, এনজাইম অকেজো, গ্যাসটাইটিস্ থাইরয়েড সমস্যা, মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, এমনকি সাধারণ ভাবে খিদে নষ্ট করে দিতে পারে।
১২। খাবার শুরুতে তেতো এবং শেষে টক খাই কেন?
সর্বপ্রকার তেতো বা টকই প্রত্যক্ষ বা প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মাধ্যমে মুখের লালাগ্রন্থির ও পাকস্থলির জারক রস নিঃসরণে সাহায্য করে এবং খিদে বৃদ্ধি করে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে খাবারেরুচি কম থাকে। তখনই খাবার শুরুতে তেতো এবং শেষের দিকে টক খেয়ে থাকি। তবে টক জাতীয় পদার্থ জিভের স্বাদ কোষগুলিকে বেশি উত্তেজিত করে লালাগ্রন্থির রসক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় যা আমাদের খাদ্য হজমে সহায়তা করে।
১৩। ঘি-এর মধ্যে কি থাকে?
গরু ও মহিষ দুগ্ধজাত মাখন থেকে ঘি তৈরী করা হয়। ইহাতে আছে অল্প পরিমাণে প্রোটিন, শর্করা এবং অজৈব লবণ। রাসায়নিক দিক থেকে এতে একাধিক গ্লিসারাইডের মিশ্রণ বলা যায়। ঘি বিশ্লেষণ করলে গ্লিসেরল এবং নানা প্রকার ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন বিউটিরিক, ক্যাপরিক, লরিক ইত্যাদি এছাড়া ভিটামিন A এবং D থাকে।
১৪। চা পান করা কতটা উপকারী?
বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষার মাধ্যমে জেনেছেন যে চায়ে যে সকল রাসায়নিক পদার্থ থাকে, তা আমাদের দেহকে বহুদিক দিয়ে রক্ষা করতে পারে। এতে থাকে ক্যারোটিন, ট্যানিন, সেলুলোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, প্যাকোটিন, ক্যাটিচিনস্, ক্যাফিন পলিফেনলিক যৌগ, ভিটামিন B, C, E এবং আরো অনেক কিছু। চায়ে ট্যানিন থাকে যা রক্তচাপ কমায়। অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। শিরা, ধমনী, দাঁত, হার্টকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। চা হল অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের উত্তম উৎস যা ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিক্যালসদের প্রতিহত করে। চা পানের সাথে মনের সজাগ, সতর্ক অবস্থা, স্মৃতিশক্তি, মন ও দেহের ইতিবাচক গুণাবলী বৃদ্ধির জোরালো সম্পর্ক আছে। গবেষণায় ধরা পড়েছে ডি. এন. এ-কে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে,জিনকে সুস্থ রেখেশরীর নিরোগ রাখতে সাহায্য করে। সংক্ষেপে বলা যায় অনেক খাদ্যবস্তুর গুণাগুণকে পিছনে ফেলে এগিয়ে আছে দুধহীন কালো চা।
১৫। চিনি, মিছরি, গুড় এদের কোন্টি খাদ্যগুণ বেশী?
চিনি ও মিছরির মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। মিছরির কেলাসের আকার বড় কারণ এর অণুতে জলের পরিমাণ বেশী থাকে। মিছরি মানেই চিনির বড় আকারের দানা। বিশুদ্ধ চিনিতে 100% শর্করা যার তুল্যশক্তির পরিমাণ 360 কিলোক্যালরি। আখের গুড়ে 95% শর্করা, 0.6% খনিজ, 0.4% প্রোটিন। এছাড়া চর্বি, ক্যালসিয়াম, লোহা, ফসফরাস থাকে, যার তুল্য শক্তির পরিমাণ 383 কিলোক্যালরি। তাই তুলনামূলক বিচারে গুড়ের খাদ্যগুণ বেশী।
১৬। চীনাবাদাম কতটা উপকারী?
এই বাদাম-এর খাদ্যগুণ পেস্তা, কাজু ইত্যাদি বাদাম থেকে কোন অংশে কম নয়, অথচ মূল্য কম। এই বাদাম 1 কিগ্রা থেকে প্রায় 6000 ক্যালরী শক্তি পাওয়া যায়। এতে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন ও উপকারী অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। এর মধ্যে উচ্চ স্তরের প্রোটিন থাকে এবং যা সহজেই হজম করা যায়। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশী থাকে অরথিনাইন (Orthinine) 13.6% ভিটামিনের মধ্যে রিকোফ্লাবিন, থায়ানিন, নিকোটনিক অ্যাসিড, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লোহা। চীনাবাদাম থেকে তৈরি তেল রান্নাতে, বনস্পতি ও প্রসাধন শিল্পে ও চর্মরোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
১৭। জল আমাদের দেহের পক্ষে কতটা উপকারী?
জল ছাড়া আমাদের জীবন অচল। জল তৃষ্ণা নিবারণ করে, দেহের তাপমাত্রা সঠিক রাখে, আর্দ্রতা বজায় রাখে, একটি অসাধারণ দ্রাবকরূপে কাজ করে, দেহের সকল প্রকার বিপাক ও পরিবহনের মাধ্যমের কাজে জলের প্রয়োজন। ইহা ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষান্তর গমন করতে পারে ফলে সবকোষের মধ্যে সামঞ্জস্য ও সমতা রক্ষা করে থাকে। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও কাঠামো বজায় রাখে। এছাড়া ঘাম ও মূত্র অর্থাৎ বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে এবং দেহের বিভিন্ন অসুবিধা দূর করতে জলের ব্যবহার করে থাকি। যেমন গরমজলে দেহের অংশ ডুবিয়ে রাখা, সেঁক দেওয়া, গরমজলে নুন মিশিয়ে কুলকুচি করা, গরমজলের ভাপেরশ্বাস নেওয়া, তাই জলের কোন বিকল্প নেই।
১৮। জল কতটা খাওয়া উচিৎ ?
জল মানবদেহের একটি দ্রাবক রূপে বিভিন্ন বস্তুর পরিবহনে, সহজেই ব্যাপন প্রক্রিয়ার কোষান্তরে গমন করে প্রতিটি কোষের মধ্যে সামঞ্জস্য ও সমতা রক্ষা করে অর্থাৎ শরীর বৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় পরিবহনের মাধ্যম হল জল।
দেহে কতটা জলের প্রয়োজন তা সাধারণত সঠিকভাবে তৃষ্ণা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রতিদিন ঘামের মাধ্যমে, মূত্ররূপে এবং ফুসফুস থেকে জলীয় বাস্পকারে দেহ থেকে জল বেড়িয়ে যায় কিন্তু তা পূরণ হয়ে থাকে শাকসবজী, ফল, দুধ, সুপ, পানীয় এবং জল পানের মাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবে গ্রীষ্মে ও পরিশ্রমের আমরা বেশী জল পান করে থাকি। আমাদের একটি বিশ্বাস খুব বেশী করে জলপান দেহের পক্ষে উপকারী কিন্তু চিকিৎসা গবেষণায় জানা গিয়েছে ঐ ধারনা ঠিক নয় আমরা যে খাদ্য খাই এবং তৃষ্ণার নির্দেশক্রমে যে পরিমাণ জল পান করি স্বাভাবিক অবস্থায় তাই দেহের জৈব বিষ, বজ্য পদার্থ কিডনীর মাধ্যমে দূর করতে সক্ষম হয়ে থাকে। কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে বেশী জল পান করা উচিৎ বা উচিৎ নয় তা চিকিৎসকগণ নির্দেশ দিয়ে থাকেন। কিডনীর পাথর হওয়ার প্রবণতা, কিডনীর সংক্রমণ, গেঁটেবাত হলে জল বেশি পান করা উচিৎ।
১৯। ডাবের জল খাওয়া কতটা উপকারী?
ডাবের জল একটি প্রাকৃতিক জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানীয়। এই জ্বলে প্রোটিন, ভিটামিন, সুগার, খনিজ পদার্থ এমন ভাবে মিশ্রিত থাকে, যা আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। এই জ্বলে পটাশিয়াম থাকে যা মূত্রবর্ধক এবং মুত্রাশয়ের রোগ প্রতিরোধ করে। এতে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, ভিটামিন-বি এবং আরজিনাইল থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এর মধ্যে সুগার (গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ) এর মাত্রা 5 থেকে 5.5% থাকে যা দেহের পক্ষে সহজেই গ্রহণযোগ্য। আন্ত্রিক রোগীর পক্ষে এই জল খুবই উপকারী। এছাড়া এই জল দেহকে ঠান্ডা রাখে। কাজেই ডাবের জল কত না উপকারী। ডাবের জল আসলে তরল কলা ধীরে ধীরে ঘন আবরণে পরিণত হয় যাকে লেত্তা বলে উহা কালক্রমে শাঁসে পরিণত হয়। গাছের ভ্রুণকে সংরক্ষণ করার এটি একটি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা।
২০। ডিম খাওয়া কতটা উপকারী?
আমরা সাধারণত হাঁস ও মুরগীর ডিম খেয়ে থাকি। এই দুই প্রকারের খাদ্য মূল্যের যেমন পার্থক্য নেই। ডিমে প্রায় সকল প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। সাদা অংশে ওভ্যালবিউমিন ও ভোগ্লোবিউলিন এবং কুসুমে ওভোভিটেলিন নামক প্রোটিন থাকে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, ভিটামিন A ও D, B12 থিয়ামিন ইত্যাদিও যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। প্রায় সকলের পক্ষেই অতি উত্তম খাদ্য তবে কোলেস্টেরল ও অধিক পরিমাণে থাকে তাই পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মত যাদের উচ্চ রক্তচাপ তাদের ডিম থেকে দূরে থাকাই
উচিত। একটা মুরগীর ডিমে 12.8% প্রোটিন, 11.5% স্নেহ, লবণ, 1% জৈব .7% কার্বোহাইড্রেট, 24% জল থাকে। একটি ডিমের কুসুমে 210 মি. গ্রাম কোলোস্টেরল থাকে। ডিমের সাদা অংশে কোলেস্টরেল ও চর্বি থাকে না। পোল্ট্রি ডিমের পুষ্টিগুণ বেশী, কুসুম সাদাটে হলেও গুণ কম থাকে না। কুসুমে ক্যারোটিন ও জ্যাঙ্গোফিল বেশি থাকলে হলুদ হয়। পোলট্রির ডিম অনিষিক্ত হওয়ায় অনেকদিন ভাল থাকে।
২১। ডিম সিদ্ধ করলে শক্ত হয় কেন?
ডিমের দুটি অংশ। ভিতরে ডিমের কুসুম এরমধ্যে বেশী কারোটিন থাকলে হলুদ হয়। আর ভিটামিন এ বেশী থাকলে রং ফিকে হলুদ হয়। কুসুমের বাহিরের অংশে জল, অ্যালবুমিন, ও নানা চর্বি মিশে স্বচ্ছ থক থকে অবস্থায় থাকে। সাধারণ অবস্থায় প্রোটিন তন্তুগুলি পাকিয়ে ভাজ ভাজ অবস্থায় থাকে কিন্তু উত্তপ্ত করতে থাকলে ঐ প্রোটিনগুলির ভাজ খুলতে থাকে এবং সোজা হয়ে প্রাক্ত ভাগে একটি অন্যটির সাথে জুড়ে গিয়ে বিরাট বিরাট আকার ধারন করে ও শক্ত হয়ে কঠিন অবস্থায় আসে।
২২। দুধের পুষ্টিগুণ কি কি?
আমরা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট থেকে দুধ পেয়ে থাকি। দুধকে সম্পূর্ণ খাদ্য হিসাবে গণ্য করা হয়। গরুর দুধের ক্ষেত্রে প্রোটিন 3.4%, ফ্যাট 4.9%, শর্করা 5%, ভিটামিন ও বহুখনিজ লবণ, .75% ক্যালসিয়াম, জল ৪৪%, ফসফরাস ইত্যাদি থাকে। কিন্তু লৌহ, তামা, থাকে না ভিটামিন সি অল্প থাকে তাই বয়স্কদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ খাদ্য হিসাবে গণ্য করা হয় না। যেহেতু সব খাবারই এক খাবার জীবাণুদের সহজ বসতও দুধে। দুধে যে প্রোটিন থাকে তাদের নাম ক্যসিনোজেন, ল্যাক্ট অ্যালবুমিন, ল্যাক্টগ্লোবুলিন ইত্যাদি। তবে প্রোটিন থাকে সবচেয়ে বেশী মহিষের দুধে 4.39%, মাতৃ দুধে কম থাকে 0.91% ফ্যাট মহিষের দুধে বেশী 7.44% তারপর ছাগলের দুধে (6.00%) ল্যাকটোজ মাতৃ দুধে বেশী 6.29% মহিষের দুধে কম 4.81%।
২৩। দুধ থেকে দই কিরূপে তৈরী হয়?
দুধকে সামান্য উষ্ণ করে উহাতে দই এর বীজ বা অম্লজল মিশিয়ে কয়েক ঘন্টা রেখে দিলে দই-এ পরিণত হয়। দুধের ল্যাকটোজ ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত হয়, এবং কিছু প্রোটিন ভেঙে ছোট ছোট কণায় পরিণত হয়, অবশিষ্টাংশ পেপটোনে, অ্যামানো অ্যাসিডে পরিণত হয়ে সম্পূর্ণ দুধটা জমাট বেধে দই হয়। সুপাচ্য ও সহজ আত্তীকরণ উপযোগী হয়। সেজন্য দই দুধ অপেক্ষা সহজপাচ্য। সম্প্রতি গবেষণায় জানা গিয়েছে দই কোলোস্টেরেল এর মাত্রা কমায় এবং এর ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে।
২৪। দুধ অনেকের সহ্য হয় না কেন?
মানবশরীরেল্যাকটোজ এনজাইমের কম বেশি পরিমাণের উপর দুধ সহ্য হওয়া বা না হওয়া নির্ভর করে। এই ল্যাকটোজ দুধে থাকা ল্যাকটোজ কে হজমে সাহায্য করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে ল্যাকটেজ এনজাইম হ্রাস পায় তখন বদহজমের ভয়ে দুধ বর্জন করতে হয়। তবে দুধ বর্জন করলেও দুগ্ধজাত পদার্থ যেমন ছানা, দই, পনির ইত্যাদি খাদ্যে জীবাণুর সাহায্যে দুধের ল্যাকটোজ আগেই ভেঙে যায় তাই বয়স্কদের ঐ খাদ্যগুলি হজমে তেমন অসুবিধা হয় না।
গরুর দুধে ল্যাকটোজ 4-5% এবং গুড়ো বা জমানো দুধে 15-18% থাকে। তাই দুধ খাবার সময় বয়স্কদের একটু সাবধান হওয়া উচিৎ।
২৫। নিমপাতা কতটা উপকারী?
নিমপাতা খুবই তিক্ত, আর এই তিক্ততার জন্য দায়ী নিম্বিডিন, নিমাবিনিন নামক যৌগ এছাড়া নিম পাতায় শতকরা শর্করা 23, প্রেটিন 12 লকা 3.5 ক্যাট 3 এবং সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা ইত্যাদি থাকে। এই পাতা বহু গুণ সম্পন্ন। অ্যান্টিসেপটিক, ব্লাড সুগার, জন্ডিস, কৃমি, অচি নাশক, নিমবেণ্ডন হাম, বসন্ত প্রতিশেধক আয়ুবেদ মতে। পাতা ও বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়, যা ক্ষতে উপকারী, কীটনাশক এবং চর্মরোগ নিরাময় করে। বার্নিস ও প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হয়। মশা তাড়ানোর জন্যও এই পাতার ধোঁয়া উপকারী, তবে শুধু পাতাই নয় নিম গাছের সকল অংশই আমাদের উপকারে আসে।
২৬। নুন বেশী খাওয়া কি ক্ষতিকর?
আমাদের শরীরে নুনের প্রয়োজন আছে তবে তার পরিমাণ নির্ভর করে বয়স ও কি পরিমাণ লবণ দেহ থেকে বের হয় তার উপর। কিন্তু বেশি নূন ক্ষতিকর। প্রতিদিন গড়ে 6 গ্রাম অর্থাৎ এক চা চামচের সমান পরিমাণ। কিন্তু আমাদের দেহে বেশি পরিমানে নূন প্রবেশ করে যেমন সস্, পাঁপর, আচার, সিঙ্গারা, কচুরি, নিমকি, চিজ, পনির এমনকি মিষ্টি খাবার কালোজাম, গজা, পানতুয়াতে যথেষ্ট নুন থাকে। গবেষকগণ এ বিষয়ে নিশ্চিত বাড়তি নুন শরীরে সামগ্রিক তরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করায়। কিডনিতে রক্ত সরবরাহ কমিয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে নুন বেরিয়ে যেতে দেয় না। শরীর ভারী করে তোলে, ধমনী সরু বা সংকুচিত করে ফলে রক্ত সরবরাহ সঠিক রাখার জন্য হার্টকে বেশী কাজ করতে হয়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, এছাড়া কিডনির রোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া দেহের ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে হাড়ের বিপত্তি ঘটাতে পারে। গবেষকদের মতে থাইরয়েড গ্লান্ড এর সঠিক কাজ করার জন্য আয়োডিনযুক্ত নন খাওয়া জরুরি।
২৭। পান খাওয়া কতটা উপকারী?
প্রাচীনকাল থেকেই পান খাওয়ার রীতি প্রচলিত। প্রথমেই দেখা যাক পান পাতাতে কি কি পদার্থ আছে। পাতার রসে জলীয় পদার্থ 85% শর্করা 6.9% প্রোটিন 3.1 চর্বি 0.8%, খনিজ লবণ 2.3% তত্ত্ব 2.3% ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, ক্যারোটিন, থায়ামিন ইত্যাদি অল্প পরিমাণে থাকে। এছাড়া উদ্বায়ী তেল। এই উদ্বায়ী তেল সুপারির সাথে ক্রিয়ায় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে এবং আমেজ এনে দেয় এবং এই তেল অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি ফানগাল, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই পাতার রস মুত্র কারক, সর্দি কাশিতে উপকারী, উত্তেজক ও স্বাদযুক্ত। বিভিন্ন পদার্থ মিশিয়ে পান খেয়ে থাকেন তবে খয়ের জদা সহ পান খেলে মুখের বিভিন্ন প্রকার রোগের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত পান খেলে বদহজম, দাঁতের ক্ষয় রোগ হতে পারে।
২৮। পান খেলে মুখ লাল হয় কেন?
পানপাতা, চুন, খয়ের ও অন্যান্য মশলা সহযোগে পান খেলে মুখ লাল হয়, কিন্তু যারা সাদা পান অর্থাৎ চুন, সুপারী, এলাচ দিয়ে খেয়ে থাকেন তাদের কিন্তু লাল হয় না। লাল তখনই হয় যখন সাদা পানের সাথে খয়ের মিশ্রিত করা হয়। খয়ের এর একটা নিজস্ব রং আছে, এছাড়া চুনের সাথে খয়ের এর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় লাল রং এর সৃষ্টি হয় যা খয়ের এর রংকে আরো উজ্জ্বল করে এবং মুখ বিশেষ করে ঠোঁট লাল হতে দেখা যায়।
২৯। পাঁপড় তেলে ভাজলে আকার বৃদ্ধি পায় কেন?
ব্যাসন, খাবার সোডা ও লবণের মিশ্রণ জলে মেখে, পাতলা পাতে পরিণত করে রোদে শুকিয়ে তৈরী করা হয়পাঁপড়। তবুও খাবার সোডার মধ্যে কেলাস আকারে কিছু জলের অনু থাক। তেল গরম করে ওর মধ্যে পাঁপড় ছেড়ে দিলে ঐ কেলাস জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়ার সময় পাঁপড়ের আকার বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
৩০। প্যাস্ট্যারাইজ দুধ কি?
আজকাল বিভিন্ন ব্রান্ডের প্যাকেট দুধ পাওয়া যায়, ঐ দুধ পাস্তুরাইড, এছাড়া মাখন, পনির ইত্যাদি ও পাওয়া যায়। দুধ যেমন মানুষের খুবই উপকারী তেমনি ব্যাকটেরিয়া, জীবাণুদের পক্ষেও উপকারী। দুধে কয়েক রকমের ব্যাকটেরিয়া থাকে, বায়ুর সংস্পর্শে এলে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বেড়ে যায় এবং দুধকে নষ্ট করে। দুধকে 72°C তাপমাত্রায় 20 সেকেন্ড উত্তপ্ত করে তারপর ঠান্ডার মধ্যে রাখা হয় তাতে ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু নষ্ট হয়। এই পদ্ধতির সাথে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রায়োগ করে ও ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুকে ধ্বংস করা হয়। এই দুধকে গরম না করেও অনেকক্ষণ রাখা যায় খারাপ বা নষ্ট হয়ে যায় না।
৩১। পাউরুটির ভিতরে ছোট ছোট ফাঁকা থাকে কেন?
পাউরুটি তৈরীর সময় ময়দার সাথে ইস্ট (এক প্রকার ছত্রাক) মেশানো হয়। উষ্ণ ও আর্দ্রতার প্রভাবে হত্রাক দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এক প্রকার গ্যাস তৈরী করে। এছাড়া ইস্টের পরিবর্তে বেকিং পাউডার মেশানো হয় যা টারটারিক অ্যাসিড ও সোডিয়াম বাই কার্বনেটের মিশ্রণ, ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় যখন রুটি সেঁকা হয় তখন ঐ গ্যাস বেরিয়ে আসে পরে থাকে ছোট ছোট ফাঁকা স্থান, এবং সাথে সাথে রুটি ফুলে উঠে।
৩২। পিপাসা পেলে ঠাণ্ডা জল পান করি, গরম জল নয় কেন?
আমাদের দেহে রক্তে জলের পরিমাণ কমে গেলে নার্ভকোষ সেই সংকেত বহন করে মস্তিষ্কে তৃষ্ণা কেন্দ্রে পৌছে দেয়, তখন আমরা তৃষ্ণা বোধ করি এছাড়া আমাদের গলার ভিতর দিকে আবরণী যখন জলের অভাবে শুষ্ক হয় ঐ অবরণীতে অবস্থিত নার্ভ কোষ উত্তেজিত হয় যা ঠান্ডা জল বা ঠান্ডা পানীয় খেলে প্রশমিত কিন্তু গরম জলে প্রশমিত হয় না কিন্তু কেন তা সঠিক জানা যায়নি।
৩৩। পিঁয়াজ কাটার সময় চোখে জল আসে কেন?
পিঁয়াজ একপ্রকার উদ্বায়ী ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত যৌগ থাকে যার নাম অ্যালিল প্রোপাইল ডাই সালফাইড। যখন পিঁয়াজ কাটা হয় তখন ঐ যৌগটি উবে গিয়ে নাকের বা চোখের সংস্পর্শে এলে সেখানকার স্নায়ুগুলিকে উত্তেজিত করে এবং শরীরিক প্রতিক্রিয়ায় নাক, চোখের অশ্রু গ্রন্থি থেকে জল বেরিয়ে আসে।
৩৪। পেঁপে কতটা উপকারী?
পেঁপে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সব্জি। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, লোহা, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, সোডিয়াম থাকে। পেঁপের আঠা বা লেটেন্স শোধন করে পাওয়া যায় প্যাপেইন নামে এনজাইম যা প্রোটিন পরিপাকে দারুণ সাহায্য করে। এই প্যাপেইন থেকে অজীর্ন, অম্লতা, কৃমি অন্যান্য উদরপীড়া, একজিমা প্রভৃতি রোগের ঔষধ তৈরী হয়। এছাড়া অশোধিত লেটেন্স চর্মপরিস্কার, বীয়ার, পনির, চুয়িংগাম তৈরীতে রেশম শিল্পে প্রচুর ব্যবহার করা হয়। পেঁপের দুধের মত সাদা আঠালো পদার্থ ও আদার রসের মিশ্রণে মাংস সুসিদ্ধ হয়।
৩৫। প্রোটিনস কি?
উদ্ভিদ ও জীব দেহের নাইট্রোজেন ঘটিত প্রধান উপাদান হল প্রোটিন। প্রোটিন শরীর গঠনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ। জীবের দেহে বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিডের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রোটিন সৃষ্টি হয়। এদেরকে আমিনো অ্যাসিডের জটিল পলিমার বলা যেতে পারে। এদের আণবিক গুরুত্ব 12,000 থেকে 10,00,000 পর্যন্ত হতে পারে। দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয় পুরণ, উৎসেচক গঠন, হর্মোন সংশ্লেষ ও আংশিক জ্বালানী হিসাবে এর ভূমিকা আছে। উদ্ভিদ কোষে 4% এবং প্রাণী কোষে 17.8% প্রোটিন থাকে। প্রোটিনের প্রধান উপাদান হল কার্বন 50%, অক্সিজেন 25%, নাইট্রোজেন 15% এবং হাইড্রোজেন 7%। মাছ, মাংস, ডিম, হানা প্রেটিন ইত্যাদিতে থাকে তবে দুধে সবচেয়ে বেশী থাকে। উদ্ভিদ প্রোটিনের প্রধান উৎস ডাল।
৩৬। ফ্রীজের ভিতরটা ঠাণ্ডা হয় কি করে এবং খাদ্য বস্তু ভিতরে নষ্ট হয় না কেন?
ফ্রীজে থাকে কম্প্রেসার, ধাতব নল ও ছোট পাত্রে ফ্রিয়ন গ্যাস। যন্ত্রটি চালু করলে উচ্চচাপে তরল ফ্রিয়ল চলে আসে ধাতব নলে। ঐ তরল ব্রীজের ভিতরে বায়ু এবং বস্তু সামগ্রী থেকে তাপ শোষণ করে বাষ্পীভূত হয় এবং ফ্রীজের তাপমাত্রা কমতে থাকে। ঐ গ্যাস কমপ্রেসারের সাহায্যে আবার তরলে পরিণত হয়, এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে অবশ্য তাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য থার্মোস্ট্যাট নামক যন্ত্র থাকে।
সাধারণ উষ্ণতায় খাদ্য দ্রব্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় ফলে খাদ্যবস্তুতে পচন ধরে কিন্তু নিম্ন উষ্ণতায় ওই ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি হতে পারে না তাই খাদ্য বস্তু অনেকক্ষণ সংরক্ষিত রাখা যায়।
৩৭। মদ খাওয়া কতটা উপকারী?
মদের প্রধান উপাদান হল ইথাইল অ্যালকোহল। এছাড়া মিথাইল অ্যালকোহল, অ্যান্টিফ্রিজ, পেন্টথিনার নামক রাসায়নিক ও মিশ্রিত থাকে। অনেকের ধারণা মদ উত্তেজক এবং চিন্তা শক্তি কমিয়ে ঘুম আসতে সহায়তা করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে মদ কখনই উত্তেজক পদার্থ বা ঘুমের সহায়ক নয় বরং মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ নিস্তেজ করে দেয়। যার মদ খান তাদের শরীরে নানা অসুবিধা ও জীবনে নানা সমস্যা দেখা দেয়। মদে উপস্থিত অ্যালকোহল খাদ্য বস্তুকে বিপাকে বাধা দেয়, ক্ষুদামন্দা, পাকস্থলীতে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। সাময়িক স্মৃতি নষ্ট হতে পারে। স্বাভাবিক পেশী সঞ্চালন ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকে না তাই অসংলগ্ন কথা বলে, বিচার ক্ষমতা লোপ পায় হাঁটা চলায় অসুবিধা এমন কি দাঁড়িয়ে থাকতেও অসুবিধা হয়। উচ্চরক্তচাপ দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা 0.5% প্রতি 100 মি. লিতে হলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়। WHO এর তথ্য থেকে জানা যায় প্রতি বছর গড়ে পচাত্তর হাজার নেশা গ্রন্থের দুর্ঘটনাতে মৃত্যু ঘটে। এছাড়া নেশাজনিত অপরাধ, হিংস্রতা ও অসুখ এর সংখ্যাও খুব একটা কম নয়।
তবে ওয়াইন নামক এক প্রকার মদ আছে যার মধ্যে পলিফেনল নামক রাসায়নিক থাকে যা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এবং সংকুচিত ধমনী প্রসারিত করতে সাহায্য করে এবং এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ আছে। ফরাসী দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশী মদ খেতে অভ্যস্ত। আমাদের দেশে বিলাতি মদ ৪ কোটির বেশী বোতল এবং দেশী মদ 21 কোটি বোতল বিক্রি হয়। অতিরিক্ত মদ্য পানে পদ্মাঘাত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে রক্তে 0.4% অ্যালকোহল হলে কোমা হতে পারে। হৃদযন্ত্রের স্পন্দন ক্ষমতা কমতে থাকে।
৩৮। মধুর পুষ্টিগুণ কি কি?
ফুলের সুধাগ্রন্থি নিঃসৃত মিষ্টি মৌমাছিরা বিন্দু বিন্দু সংগ্রহ করে মৌচাকে মধু হিসাবে জমা করে। রাশিয়ান বিজ্ঞানী ইভান কবলুকভের মতে ফুলের সুধা মৌমাহির পাকস্থলির কোষ দ্বারা জলীয় অংশ শোষিত হয়ে লসিকা দ্বারা বৃদ্ধ নীত হয় ও পরিশেষে বর্জ্য পদার্থরূপে দেহ থেকে নিঃসৃত হয় এবং মৌচাকে জমা করে। মধুতে শর্করা (গ্লুকোজ, ফ্রাকটোজ), বহু খনিজ পদার্থ, এনজাইম, ভিটামিন, বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড ইত্যাদি উৎস অনুযায়ী পরিমাণ আলাদা থাকে। মধুতে রয়েছে আশিটিরও বেশি পদার্থ যা দেহের স্বাভাবিক বিকাশ ও কর্মতৎপরতার জন্য কার্যকারী। মধু জীবাণু নাশক। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিজ্ঞানী ফন ফ্রিশ-এর মতে এক বিশ্বা মধু তৈরীতে 360-450 হাজার কোটি কি.মি. কর্মী মৌমাহিদের পথ অতিক্রম করতে হয়।
৩৯। মুসুর ডাল কতটা উপকারী?
ডাল আমাদের খাদ্য তালিকার অঙ্গ। ডালের কদর প্রোটিনের জন্য। মসুর ডালে যে সকল পদার্থগুলি পাওয়া যায় তা হল শর্করা 60%, প্রোটিন 25%, ধাতব লবণ 2%, স্নেহ পদার্থ প্রায় 1%, এছাড়া ক্যারটিন, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি, কে ইত্যাদি। মুসুর ও মুগ ডালে প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় সমান। এই ডাল বলবর্ধক তাই বিধবাদের খেতে নেই, এরূপ প্রচলন আছে।
৪০। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না কি ক্ষতিকারক?
এই যন্ত্রের মাধ্যমে কম সময়ে খাবার গরম করা এবং সহজে রান্না করা যায়। এতে ম্যাগনেট্রল নামক যন্ত্র থেকে মাইক্রোওয়েভ এনার্জি খাদ্যবস্তুতে উপস্থিত জলের অণুগুলিকে খুব দ্রুত বাঁপিয়ে তোলে তাতে তাপ শক্তির সৃষ্টি হয়। মাইক্রোওয়েভ খাদ্যবস্তুর রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে বিষাক্ত করে তুলতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে এই রেডিয়েশনের যেহেতু গন্ধ নেই, চোখে দেখা যায় না তাই সকলের অজান্তে শরীরের ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম। স্নায়ু, চোখ, ভ্রুণ, চুলপড়া, ক্যান্সারের মতো রোগের আশঙ্কা থাকে। এমনকি যিনি ঐ যন্ত্রের কাছে থাকেন ও যন্ত্রটি চালান তিনিও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তাই যতটা সম্ভব এই যন্ত্র ব্যবহার কম করা যায় ততই ভাল।
৪১। মাখনে কি কি পদার্থ থাকে?
দুধ থেকে মাখন তৈরী করা হয়। মাখনে চর্বি পরিমাণে বেশী থাকে। ইহাতে কিছু পরিমাণ প্রোটিন, ল্যাকটোজ, লবণ, কিছু পাউডার অবশিষ্ট (ash) থাকে। শতকরা হিসাবে 83.75% ফ্যাট, 13.03% জল, 2.09% লবণ, 64% প্রোটিন, . 35% মিল্ক সুগার ও 14% অ্যাশ।
৪২। মাছ খাওয়া কতটা উপকারী?
মাছে প্রোটিন, কমবেশী ফ্যাট এবং খনিজ লবণ থাকে। প্রতি 100 গ্রাম মাহ থেকে 50 থেকে 150 ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। বড় মাছের চেয়ে ছোট মাছে পুষ্টি বেশী মেলে। কারণ ছোট মাছ কাঁটাসহ চিবিয়ে খাওয়া যায় বলে খনিজ লবণগুলো বেশী শরীরে প্রবেশ করে। তবে মাহ টাটকা হওয়া উচিত। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা গিয়েছে মাছের তেল লিনোলনিক অ্যাসিড নামক এক প্রকার পলি অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। অবশ্য যেকোন আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডই হার্টের পক্ষে উপকারী। এছাড়া ডেকোসাহেন্সাওনিক, ইক্লোসাপেটায়োনিক অ্যাসিড সহ নানা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়।
৪৩। মাছ, মাংস লবণ মাখিয়ে রাখলে নষ্ট হয় না কেন?
মাছ এবং মাংসে লবণ মাখিয়ে রাখলে উহার গাত্র অত্যাধিক লবণাক্ত হয়। আয়ন ঘনত্ব বেশী হওয়ায় ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এছাড়া ঠাণ্ডাস্থানে বা ফ্রিজের মধ্যে রাখলেও ঠাণ্ডাতে জীবাণু, ছত্রাক ইত্যাদির বৃদ্ধি হতে পারে না।
৪৪। মাতৃদুগ্ধের পুষ্টিগুণ কি কি?
বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে কিন্তু মাতৃদুগ্ধের কোনও বিকল্প এখনও অনাবিষ্কৃত। মায়ের দুধ বাচ্চার পুষ্টির জন্য একটি প্রাকৃতিক ও সবচেয়ে ভাল খাবার। জীবনের প্রথম চার মাস শিশুদের সব থেকে ভাল আর খাঁটি খাবার হল মায়ের দুধ। সাধারণত এই দুধ দুষিত হয় না, ব্যাকটেরিয়া মুক্ত। গবেষণায় দেখা গেছে এই দুধে শতাধিক প্রযোজনীয় উপাদান থাকে। এই দুধে 40% ম্যাক্রোফেজ কোষ থাকে যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। যে পরিমাণ ল্যাকটেজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, জল থাকে তাতে শিশুর হজম শক্তিবৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধি হয়ে থাকে। শিশু জন্মানোর প্রথমদিকে যে তরল হলুদ বর্ণের দুধ নিঃসৃত হয় তা প্রোটিন ও ফ্যাট সমৃদ্ধ। ঐ তরল শিশুর রোগ প্রতিরোধ করে। এই দুধ খেলে শিশুর ডাইরিয়া, অ্যালার্জি, কানের সমস্যা, হাঁপানি ইত্যাদি কম হয়।
৪৫। রং দেওয়া খাবার কি ক্ষতিকারক?
রং এর প্রতি আমাদের একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ আছে। খাবারে রং মিশানোর নির্দিষ্ট কটি রং এর তাদের অনুমোদিত মাত্রা নির্দিষ্ট করা আছে (PFA) আইন অনুযায়ী। কিন্তু পরিসংখানে দেখা যায় বাজারের প্রায় 70% খাবারই কমবেশী রাসায়নিক রং মোশানো হচ্ছে। সবচেয়ে বেশী মেটালিন ইওলো যা জিলিপি, বেসন, গুড়োমশলা, বোঁদে, ঘি, মিহিদানা ইত্যাদিতে, এছাড়া রোডামিন বি, অরেঞ্জ 1, অরেঞ্জ 2 কাঙ্গারেড, লেড ক্রোমেট, ব্যবহৃত হয়। গরমের সময় রাস্তার পাশে রঙীন সরবৎ বেশ আকর্ষণীয়। ঠান্ডা পানীয়তে, এছাড়া মেয়েদের প্রসাধনী প্রস্তুত করতে রং ব্যবহার করা হয়। আস্তে আস্তে এই সকল রাসায়নিক রং আমাদের মস্তিষ্ক, প্লীহা, বৃক্কের ক্ষতি করছে ফলে হজমের গন্ডগোল, রক্তাল্পতা, চোখে এবং চামড়া ইত্যাদির কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
৪৬। রসুনের পুষ্টিগুণ কি কি?
রসুনে পটাসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, সি এবং নানা প্রকার সালফার যৌগ, বহু অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। তাই রসুনকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি বলা যেতে পারে। বিভিন্ন পরীক্ষার দ্বারা গবেষকগণ প্রমাণ করেছেন ইহা দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ক্যান্সার প্রতিরোধ ও সংক্রমণ রোধে রসুন ভাল কাজ করে। তরে রসুনের মধ্যে ডাই অ্যালাইল ডাই সালফাইড নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে যার জন্য রসুনের উগ্র গম্ব আর এই তীব্র গন্ধের জন্য বায়োপেস্টিসাইড হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪৭। রান্নায় কি তেল ব্যবহার করা উচিৎ?
সাধারণত তিন প্রকার তেল রান্নায় ব্যবহার করা হয় মনো স্যাচুরেটেড, পলি অ্যানস্যাটুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত এবং স্যাটুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত তেল। যেকোন ভেজিটেবল তেলে পলি অ্যানস্যাটুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বেশী পরিমাণে থাকে। সানফ্লাওয়ার, সয়াবিন, রাইস অয়েল ইত্যাদি। ভুট্টা, মাছের তেল তবে রিফাইন্ড সরিষা তেল মনো অ্যানস্যাটুরেটেড ফ্যাট যা হৃদরোগের পক্ষে উপকারী। কারণ এই ফ্যাট এইচ ডি এলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। স্যাটুরেটেড ফ্যাট রক্তে এইচ ডি এলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। HDL হাইডেনসিটি লাইপো প্রোটিন, LDL লো ডেনসিটি লাইপ্রো প্রোটিন। তাই পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মত হল ওই তিন প্রকার তেল 1:1.1 অনুপারে অর্থাৎ সমান ভাগে খাওয়া উচিত।
৪৮। লঙ্কা বাওয়া কতটা উপকারী?
বিভিন্ন প্রকারের বিভিন্ন আকারের লঙ্কা পাওয়া যায় যেমন লাল মরিচ, গাছ মরিচ, ধানী, আকাশী, বোম্বাই ইত্যাদি। বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষা করে লঙ্কাতে প্রতি একশগ্রামে 3 গ্রাম শর্করা, খনিজ পদার্থ 0.7 গ্রাম, প্রোটিন 0.2 গ্রাম, ক্যালসিয়াম 30 মিগ্রা, ফসফরাস 80 মিগ্রা, লোহা 1.2 মিগ্রা, ভিটামিন A 292 ইউনিট। লঙ্কা ঝাল হওয়ার কারণ হল হ্যাপসাইসিন ও সোলামাইসিন নামক রাসায়নিক। ঝাল লালা ঝরায় যা হজমের সহায়ক। এছাড়া ব্যাথা সহ্য করার ক্ষমতা দেয়, পেপটিক আলসারে উপকারী। সর্দিতে বাধা, রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্টও আছে। শুকনো লাল লঙ্কার চেয়ে কাঁচা লঙ্কা বেশী উপকারী। তাহলে প্রবাদ অনুযায়ী শাকসবজি, ঘি ভাতে লঙ্কা, পাত্তাভাতে লঙ্কা, আলুভাতেতে লঙ্কা ইত্যাদির কথা অনেকটাই সত্যি।
৪৯। শশা কাটার সময় বোঁটার দিক ঘরে কেটে ফেলে দেওয়া হয় কেন?
শশা আমরা কাঁচা অবস্থায় খেয়ে থাকি তখন উহাকে কিউবারবিসিটিন নামক উপক্ষার থাকে যার স্বাদ তেতো আর ঐ তেতো স্বাদ দূর করার জন্য ঐরূপ কেটে ঘসলে সাদা বর্ণের আঠালো পদার্থ ফেলে দেওয়া হয়।
৫০। শিশুদের গরুর দুধ খাওয়ানোর সময় জল মিশিয়ে খাওয়ানো হয় কেন?
গরুর দুধে মাতৃদুগ্ধের চেয়ে প্রোটিন বেশী থাকে। মাতৃদুগ্ধে প্রোটিন 2% কিন্তু গরুর দুধে প্রোটিন 3.5%। শিশুদের পক্ষে বাড়তি প্রেটিন গুরুপাক হয়। তাই গরুর দুধের সাথে সমপরিমাণে জল, কখনো কখনো ল্যাকটোজ, ভিটামিন A, খনিজ লবণ মিশ্রিত করে মাতৃদুধের সমতুল্য পরিণত করার চেষ্টা করা হয়।
৫১। সয়াবীন কতটা উপকারী?
সয়াবীন শরীরের পক্ষে উপকারী। এতে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন থাকে, যে প্রোটিনগুলি কম ঘণত্বের লিপিড অর্থাৎ ক্ষতিকর কোলস্টোরেল কমিয়ে উচ্চ ঘণত্বের লিলিড অর্থাৎ উপকারী কোলস্টোরেল বৃদ্ধি করে, ফলে ব্লাড প্রেসার কমিয়ে আনে এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। প্রোষ্টট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ও হাড়ের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ এতে প্রচুর পরিমাণে থাকে।