ভূগোল

১। অন্য কোথাও প্রাণের সন্ধান পাওয়া গেছে কি?
অসীম মহাবিশ্বে কত নক্ষত্র এবং কত ব্রহ্মাণ্ড (Galaxy) রয়েছে তা গণনা করা এখনও সম্ভব হয়নি। আমরা যে নক্ষত্র জগতে বাস করি তার নাম ছায়াপথ (Milky way)। এরমধ্যে দশ হাজার কোটি নক্ষত্র অবস্থান করছে, এদের মধ্যে সূর্য একটি নক্ষত্র। আজ পর্যন্ত সৌরজগতের বাহিরে দেড়শতের বেশী গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। সৌর জগতের কোথাও প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেক একটি সমীকরণের দ্বারা বলতে চেয়েছেন, যে আমাদের ছায়াপথেই দশ হাজার সভ্যতা আছে। মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান তথা প্রাণের সন্ধানে বহু কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকটি হল ওজমা, সেটি (SETI), মেটা (META) এ এছাড়া NASA নিরন্তর গবেষণা করে চলেছে। কোন গ্রহে প্রাণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীগণ কতগুলি শর্ত রেখেছেন। সেগুলি যথাক্রমে গ্রহটি নক্ষত্র থেকে কত দূরে, কক্ষপথ জটিল নয়, গ্রহের ভর কতটা, সেখনে জলের উপস্থিতি, বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন, দিন ও রাতের তারতম্য বেশী নয়, গ্রহটির অভিকর্ষ ও চুম্বকক্ষেত্রের প্রভাব থাকবে। এই শর্তগুলি পৃথিবীরসাপেক্ষে। কিন্তু অন্য গ্রহে শুধু কার্বণ ঘটিত প্রাণ নাও থাকতে পারে সেখানে অ্যামোনিয়া, সিলিকন ঘটিত হলে সেক্ষেত্রে কি হবে? তবে যেখানে পৃথিবীর তুল্য প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে সেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটতে পারে। বহিঃ বিশ্বের সাথে যোগাযোগের জন্য 1972, 1973 সালে  পাওনিয়ার 10, 11 এবং 1977 সালে ভয়েজার 1,2 মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। এরা 2006 সালে সৌরজগৎ ছেড়ে মহাবিশ্বে পাড়ি দিয়েছে এর সাথে অন্য গ্রহ বা তারার সাক্ষাৎ হবে ৪০ হাজার বৎসর পরে। 2007 সালে Gliese 581C নামে একটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, যেখানে পৃথিবীর পরিবেশের সাথে এই গ্রহের অনেকটা মিল আছে, তবে সেই গ্রহের সাথে রেডিও যোগাযোগ করতে সময় লাগবে 41 বৎসর আর আমাদের পৃথিবীতে বর্তমানে যে মহাকাশ যান আছে তা সেখানে পৌঁছাতেই সময় লাগবে সাড়ে পাঁচ লক্ষ বৎসর। 2016 সালে NASA মঙ্গলে প্রাণের সন্ধানে মহাকাশ যান পাঠাবে। অতি সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়াতে 42 টি রেডিও টেলিস্কোপ এর সাহায্যে বহিঃ বিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণের সন্ধান শুরু করেছে। তবে বহু বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন মহাবিশ্বের প্রায় অধিকাংশ স্থানেই জীবনের পক্ষে অনুকুল পরিবেশ নেই তাই আমরা পৃথিবীর মানুষ মহাসৌভাগ্যবান এই মহাবিশ্বে। 
 


২। আকাশ নীল দেখায় কেন?
সূর্যরশ্মি যখন বায়ুমন্ডলের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও গ্যাসীয় বায়ুর উপর আপতিত হয় তখন ঐ রশ্মি বিক্ষিপ্ত হয়। যে আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কম বিক্ষেপ তাদের বেশী হয়। যেহেতু নীল বর্ণের আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কম তাই নীলবর্ণ বেশী চারিদিকে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে, আকাশের দিকে তাকালে নীল দেখায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশকে নীল রং দেখাত না। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ছেড়ে উপরে উঠলে আকাশটা ঘোর অন্ধকার মনে হবে।


৩। আকাশে কত তারা (Star) ?
ঋতু ও স্থান ভেদে রাতের আকাশে খালিচোখে 5 হাজারের বেশী তারা দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু দূরবীন, রেডিও টেলিস্কোপ,  আলোকচিত্রের মাধ্যমে এবং পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাহিরে থেকে দেখলে এই সংখ্যা কয়েক কোটির বেশী হবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে জানা যায় তারারা মহাকাশে জোটবদ্ধ হয়ে (কয়েক হাজার) আছে। তাদের ব্রহ্মান্ড (Galaxy) বলা হয়। আমাদের ব্রহ্মান্ডের নাম ছায়াপথ (Milkyway Galaxy)। এটি দেখতে কুন্ডলাকৃতি, এতে তারার সংখ্যা 10 হাজার কোটি। এদের মধ্যে সূর্য একটি সাধারণ তারা, তার একটি গ্রহ আমাদের পৃথিবী। দূর আকাশে যত তারা দেখা যায় তার মধ্যে 3 টি বাদ দিলে বাকী সকল তারা আমাদের ছায়াপথের মধ্যে অবস্থিত। ঐ তিনটির প্রথমটি উত্তর গোলার্ধের আকাশে নাম তার অ্যান্ডোমিডা (M31) 20 লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে এইটি দূরতম বস্তু খালি চোখে দেখা যায়। দ্বিতীয়টির নাম (M32) একে খালি চোখে দেখা যায় না, আর তৃতীয় টি ক্ষুদ্র ও বৃহৎ মাগেলানীয় মেঘ। এখানেই শেষ নয়, ব্রহ্মান্ডে এরাও জোটবদ্ধ হয়ে আছে। আমাদের ব্রহ্মান্ডটি যে জোটে আছে তার নাম স্থানীয় জোট (Local Group) এর মধ্যে 200 টি ব্রহ্মান্ড (Galary) আছে। এই জোটটির কাছের জোটটির নাম কন্যা জোট এতে আছে আড়াই হাজার ব্রহ্মান্ড। সবচেয়ে বড় যে জোটটি আমাদের জোটের কাছে তার নাম কোমা জোট, এটির দূরত্ব 25 কোটি আলোকবর্ষ দূরে। 1400 কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ব্রহ্মান্ডের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। তাহলে শেষ পর্যন্ত বলা যায় এ পথের শেষ নেই, সংখ্যাহীন ব্রহ্মান্ড। তাহলে একটু ভেবে দেখুন তারার সংখ্যা কত? আমাদের পৃথিবী কোথায়? আমরা মহাবিশ্বের কতটুকু জেনেছি? উত্তর হবে খুব সামান্য। উত্তর সামান্য হলেও গত 50 বৎসরে যা জানা গিয়েছে তা কিন্তু তুচ্ছ করার মত নয়।


৪। আমরা যখন যাতায়াত করি তখন চাঁদ আমাদের সাথে সাথে চলে বলে মনে হয় কেন?
চাঁদ আমাদের চোখে যে কোণ উৎপন্ন করে, চলার সময় ঐ কোণের তেমন পরিবর্তন হয় না, এমন কি কয়েক কিমি চললেও নয়। কারণ চাঁদ পৃথিবী থেকে 384000 কিমি দূরে এবং ব্যাস 34761 কিমি তাই কোণের পরিবর্তন খুব কম হয়। কিন্তু নিকটের গাছপালা, বাড়ীঘর, পিছনে চলে যাচ্ছে বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে ঐ বস্তুগুলির ও চোখে যে কোণ উৎপন্ন হয় তা খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তীত হয়।


৫। উল্কা কি?
রাতের আকাশে হঠাৎ এক ধরনের উজ্জ্বল তারার মত বস্তু মন্থর বা দ্রুত বেগে প্রায় সরলরেখায় কিছুটা পথ অতিক্রম করে আবার তারাশূন্যে বিলীন হতে দেখা যায়। এদেরকে উল্কা বলে। প্রায় দেড়শো বৎসর ধরে নানা গবেষণাকরে বিজ্ঞানীগণ এই সিদ্ধান্ত করেছেন যে ঐ বস্তুগলি সৌর জগতের মধ্যে অবস্থিত গ্রহাণুপুঞ্জের ও ধূমকেতুদের ক্ষয়িত অংশ। এরা পৃথিবীর অভিকর্যের প্রভাবে ক্রমবর্ধমান বেগে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৪০ থেকে 110 কিমি উচুঁতে ভূপৃষ্ঠের দিকে নামার সময় বায়ুমন্ডলের সাথে ঘর্ষণের ফলে জ্বলে ওঠে এবং পুড়ে ভস্মীভূত হয়। কখনো কখনো অবশিষ্ট অংশ মাটিতে পৌছায়। উল্কা পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে কতগুলি খনিজ মিশ্রিত প্রস্তর এবং কতগুলি কেবল লোহা ও নিকেল মিশ্রিত ধাতব পদার্থে গঠিত। উল্কাপাত রাতেতো বটেই, দেখা না গেলেও দিনের বেলাতেও হয়ে থাকে। তবে বিজ্ঞানীগণ দীর্ঘকাল পর্যবেক্ষণ করে নির্ণয় করেছেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় জেমিনিড্স অবস্থানে ডিসেম্বরের 11 থেকে 24 তারিখ অতি প্রবল এবং পারসিডস অবস্থানে 10 থেকে 13 আগস্ট প্রবল উল্কা বৃষ্টি হয়ে থাকে। কেন? অজানা রহস্য! পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উল্কাপাত হয়েছিল 1920 সালে নামিবিয়াতে তার ওজন ছিল 60 টনের বেশী।


৬। গ্রহ ও গ্রহরত্নের প্রভাব মানব জীবনে কতটা?
জ্যোতিষী বা গ্রহাচার্যগণ সূর্য, চন্দ্র, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি এই সকল নক্ষত্র, উপগ্রহ ও গ্রহ এবং দুটি কাল্পনিক বস্তু রাহু ও কেতুর পারস্পরিক অবস্থান মানব জন্মের সময়ে কোথায় তা দেখে ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করে থাকেন। আগামী দিনে কি হবে জানি না তাই জানার প্রবল আগ্রহ এবং সকলেই সুখেশান্তিতে থাকতে চাই সেজন্য, এছাড়া যাদের প্রচুর সম্পদ আছে তা যাতে হাত ছাড়া না হয়, যাদের নেই তাদের যাতে প্রচুর সম্পদ হয়, শুধু তাই নয় মোকদ্দমায় জয়লাভ, চাকুরী, কর্মে সাফল্য, সংসারে শান্তি, রোগমুক্তি ইত্যাদির জন্য জ্যোতিষীদের কাছে যাওয়া। তারা হিসাব নিকেশ করে প্রতিকার হিসেবে গ্রহদের তুষ্ট করার জন্য রত্ন ধারণ করতে দেন (চূণী, মুক্তা, গোমেদ, প্রবাল, পান্না, পোখরাজ, হীরক, নীলা, ক্যাটস্আই) ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন ওজনের। বিজ্ঞানীগণ ঐ সকল রত্নের কেলাসের গঠন, আলোকসজ্জা, তাদের ধর্ম জেনেছেন এদের মধ্যে হীরক গ্রাফাইট থেকে, মুক্তা ক্যালসিয়াম কার্বনেট থেকে, অন্যান্য রত্নগুলির মূল উপাদান হল অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এবং এর সাথে অন্যান্য ধাতুর অক্সাইড মিশিত থাকলে বিভিন্ন বর্ণ ধারণ করে। আজকাল বিজ্ঞানীগণ সকল রত্নকেই কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করতে সক্ষম। এমনকি রত্নের অনিন্দিত বর্ণকে তেজস্ক্রিয়ের এবং সাইক্লোট্রোল যন্ত্রের সাহায্যে ইচ্ছেমতো বর্ণ ও বন্দিতবর্ণে রূপান্তর করতে পারেন।
গ্রহ-নক্ষত্ররা জড় পদার্থ এবং রত্নগুলিও তাই। এইগুলি মানুষের জীবনে সুখশাক্তি, রোগমুক্তি তথা জীবনপ্রণালীতে কোনরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা, অন্তত রসায়ন বিজ্ঞান তাই বলে। মানুষের দুঃখকষ্ট, দূরবস্থা যত বৃদ্ধি পাবে তত আশা নিয়ে ছুটতে হবে ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ করবে জ্যোতিষীদের কাছে, এর শেষ কোথায়?


৭। চাঁদের এক পিঠই দেখতে পাই কেন?
প্রাকৃতিক নিয়মে সকল গ্রহ উপগ্রহ গতিশীল। চাঁদও একই নিয়মে পৃথিবীর চারদিকে এবং নিজের অক্ষের উপরে ঘোরে। চাঁদের বার্ষিক গতি ও আহ্নিক গতি সমান। তার অর্থ হল এক মাসে চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে একবার পরিক্রমা করে, ঐ একই সময়ে সে নিজের অক্ষের উপর একবার পাক খায়। সেজন্য চাঁদের ঘূর্ণণ চোখে পড়ে না। তাই চাঁদের একটা পিঠই আমরা সকল সময় দেখি।


৮। চাঁদে উপনিবেশ গড়ে উঠবে কি?
মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন বায়ু (অক্সিজেন), খাদ্য ও জ্বল। কিন্তু ঐ তিনটিই চাঁদে অনুপস্থিত। এছাড়া সেখানে কম অভিকর্ষ, উষ্ণতা অধিক (−163°C থেকে +117°C)। চার্জ ধূলো (আহিত) আর সেখানে যাতায়াতের জন্য জ্বালানীর অভাব। চাঁদের মাটি বিশ্লেষণ করে কিছু সন্ধান অবশ্যই পেয়েছেন কিন্তু তা অপ্রকাশিত, তবে চাঁদের মেরু অঞ্চলে বরফ আছে তা কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইড বা জল যাই হোক তা থেকে কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন পাওয়া যেতেই পারে। হিলিয়ামের কথা শোনা যাচ্ছে, তাহলে শক্তির একটা উৎস হতে পারে। আজ পর্যন্ত 12 জন মানুষ চাঁদে পা রেখেছেন এবং মহাকাশচারী হ্যারিসন 75 ঘন্টা চাঁদে ছিলেন। চাঁদে উপনিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়েগিয়েছে। শুধু আমেরিকা নয়, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি, জাপান, চিন, আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই। আগামী এপ্রিল, মে -08 সালে চন্দ্রায়ন-1 নামে এক উপগ্রহ পাঠানো হবে, চন্দ্র সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে। আগামী 2011 সালের মধ্যে চাঁদে রোবট এবং 2018 তে চাঁদে মানুষের বাসযোগ্য করে তুলবেন এই আশা করছেন NASA। তারা গম্বুজ আকৃতি বাড়ি তৈরীর পরিকল্পনা করছেন যার মধ্যে পৃথিবীর আবহাওয়া বিরাজ করবে। ল্যারীক্লাক নামক একজন ইঞ্জিনিয়ার চাঁদের মাটি থেকে অক্সিজেন তৈরীর চেষ্টা করছেন। চাঁদে চার জন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন 9 পাউন্ড তরল অক্সিজেন। চাঁদে ইলমেনাইট নামক খনিজ পাওয়া গিয়েছে, যাতে টাইটেনিয়াম অক্সাইড আছে, তা থেকে অক্সিজেন তৈরী করা যেতে পারে। আরেকজন গবেষক চাঁদে প্রথম যে মানুষের বাসযোগ্য স্থান তৈরী করা হবে তার নাম দিয়েছেন জেমস্ টাউন (James town ) ।


৯। তারা বা নক্ষত্র (Star) কিসের তৈরী?
মহাবিশ্বে অসংখ্য নক্ষত্র আছে। সাধারণত নক্ষত্র 80% হাইড্রোজেন এবং দ্বিতীয় স্থানে আছে হিলিয়াম এছাড়া অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা ইত্যাদি। বিজ্ঞানী ফ্রাউন হোফ নক্ষত্রের আলোর বর্ণালী বিন্যাস করে 70 টি মৌলের সন্ধান পেয়েছেন। নক্ষত্ররা বিরামহীন ভাবে জ্বলছে এবং তাদের শক্তির উৎস হল তাপ নিউক্লিয় সংযোজন (Thermo nuclar fussion) অর্থাৎ (হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ), 4 টি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম পরমাণু তৈরী হয় এবং প্রতি চক্রে 26.7 Mev শক্তি মুক্ত হয়। রাতের আকাশে উজ্জ্বলতর তারা হল লুব্ধক বা সিরিয়াস, সবচেয়ে বড় তারা হল আলফা অরিওনিস (Alfa orionis)। পৃথিবীর কাছের নক্ষত্রটি হল সূর্য, তার পরেরটি প্রক্সিমা সেন্টরী (4.22 আলোক বর্ষ দূরে) অবস্থিত। আমাদের বর্তমান প্রচলিত মহাকাশযান ঐ নক্ষত্রে পাঠালে প্রায় 1.2 লক্ষ বৎসর সময় লাগবে পৌছাতে। আমাদের আমাদের পৃথিবীর শক্তির উৎস হল সূর্য। সূর্যে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 45 লক্ষ টন পদার্থ (ভর) শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ঐ শক্তি আলো ও তাপ রূপে 200 কোটি ভাগের এক ভাগ মাত্র পৃথিবীতে পৌছায়। সূর্য 500 কোটি বৎসর ধরে শক্তি বিকিরণ করছে আরও 1000 কোটি বৎসর বিকিরণ করবে। বিজ্ঞানীগণ হিসাব করে দেখেছেন পৃথিবী পৃষ্ঠের 320 বর্গ কিমি স্থানে যে পরিমাণ আলো এসে পড়ে তাকে পুরোপুরি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করতে পারলে পৃথিবীর এক বৎসরের বিদ্যুৎ চাহিদা মিটতে পারে। কিন্তু, আমাদের হাতে এখনও পর্যন্ত মাত্র কোন কোন ক্ষেত্রে 36% পর্যন্ত বিদ্যুৎ তৈরী সম্ভব হয়েছে কাজেই আমাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা আরো বৃদ্ধি প্রয়োজন।


১০। পৃথিবীর নিরক্ষরেখা বরাবর স্ফীত কিন্তু মেরু চাপা কেন?
সৃষ্টির প্রথমদিকে পৃথিবীর সকল পদার্থ গলিত অবস্থায় ছিল, তখন পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরতে থাকে ফলে অপকেন্দ্র বলের সৃষ্টি হয়। এই বলের ফলে নিরক্ষরেখাতে সবচেয়ে বেশী এবং যতই মেরুর দিকে যাওয়া যাবে ততই কমতে থাকে। মেরুতে ঐ বলের মান শূণ্য হয় সেজন্যই পৃথিবীর আকার পেয়ারার মতো দেখতে। যার নিরক্ষীয় ব্যাস ও মেরু ব্যাসের পার্থক্য প্রায় 42 কিমি।


১১। পৃথিবীর অভ্যন্তরে কি আছে?
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষ চাঁদে পা দিয়েছে অন্য গ্রহে পা রাখার চেষ্টা করছে, মহাকাশযানকে সৌরজগতের বাহিরে অন্য জগতের দিকে পাঠিয়েছে কিন্তু আমরা পৃথিবীর অভ্যন্তর সম্পর্কে তেমন খোজখবর নিতে পারিনি। কারণ মাটি ভেদ করে যাওয়ার মত যান তৈরী হয়নি, খনিজ তেল অনুসন্ধানে মাত্র 7.5 কিমি পর্যন্ত কুপ খনন করা হয়েছে, অগ্ন্যুৎপাতের সময় যে লাভা উঠে আসে তা মাত্র 64 কিমি গভীর থেকে তাই প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞান, তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয় তাই বিজ্ঞানীগণ পরোক্ষভাবে ভূমিকম্পের সিসমিক ওয়েভ (scismic wave) এবং অভিকর্ষ পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ করে জেনেছেন পৃথিবীর তিনটি স্তর ভুত্বক (crust), খোলস (memtle), এবং শাঁস (Core)। শাঁস 1300 কিমি পুরু, একে ঘিরে গলিত বাহিরের শাঁস (outer core), একে ঘিরে রয়েছে 2000 কিমি পুরু খোলস এখানে লোহা, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি ধাতু। এর উপরে কঠিন আবরণ যা 12 থেকে 60 কিমি পর্যন্ত পুরু। গর্ত করে যত নীচে যাওয়া যাবে চাপ তত বৃদ্ধি পাবে হিসাব অনুসারে 48 কিমি গভীরতায় চাপ বায়ুমন্ডলের চারশ গুণ। এবং প্রতি 35 মিটারে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় 1°C করে। বিজ্ঞানীদের অনুমান পৃথিবীর কেন্দ্রে তাপমাত্রা 5000°C এর বেশী। মানুষ জীবনকে বিপন্ন না করে 9 কিমি পর্যন্ত নীচে যেতে পারবে। কিন্তু মানুষ মাত্র 3.3 কিমি নীচে নেমেছে। ফরাসী বিজ্ঞানী ফ্লামারিয়ন কল্পনায় একটি প্রকল্প করেছিলেন। পৃথিবীর এক মেরু থেকে অন্য মেরু পর্যন্ত টানেল করে তার মধ্যে পড়ে যাওয়ার সুযোগ কেউ নিলে, সে ঘড়ির পেণ্ডুলামের মত দুলতে থাকবে এবং যাতায়াতে 84 মিনিট 24 সেকেন্ড সময় লাগবে। পৃথিবীর বিষুব রেখার ঐরাপ টানেল করলে অবশ্য পৃথিবীর ঘূর্ণনের জন্য যে অসুবিধা হবে তা দূর করতে টানেল প্রশস্ত বা টানেলকে নত করতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই কিন্তু বাতাসের টান বা বাধা গ্রাহ্য করা চলবে না, গ্রাহ্য করলে দোলন ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং পৃথিবীর কেন্দ্রে থেমে যাবে।


১২। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কি সত্যই রহস্যময়?
আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে ফ্লোরিডার মায়ামি, পেয়ের্তোরিকা ও বারমুড়া এই তিনটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি কাল্পনিক ত্রিভুজ। ত্রিভুজটিকে কেন্দ্র করে বহুদিন ধরে বহু বিস্ময় আর আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ঐ অঞ্চলটির রহস্য অনুসন্ধানের জন্য আমেরিকা ও রাশিয়া যৌথভাবে পলিমোড প্রোগ্রাম নামে অভিযান চালায়। ঐ অঞ্চলের দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বহু তথ্য সংগ্রহ করে এবং বহু পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসেন। ঐ অঞ্চলটিতে অন্যান্য অঞ্চল অপেক্ষা বেশী জাহাজ চলাচল করে, সমুদ্র অধিকাংশ সময় অশান্ত থাকে, হঠাৎ প্রবল ঝড় বৃষ্টি বেশী হয়, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য অনেকটাই কাল্পনিক, অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা ঘটনা। অনেকক্ষেত্রে জলদস্যু, জাহাজ কোম্পানি, অন্য চক্রান্ত, সংবাদ মাধ্যমের যোগসাজস ছিল।


১৩। বড় জলাশয়ে বা লেকে জোয়ার ভাঁটা হয় না কেন?
প্রধানত চন্দ্রের আকর্ষণের জন্যই জোয়ার ভাঁটা হয়ে থাকে। চাঁদের আকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর জল, স্থল, উভয় অংশের উপরই পড়ে কিন্তু স্থলভাগ জল ভাগ অপেক্ষা বহু গুণ দৃঢ়, ও অনমনীয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের উপরিতলের 70% সমুদ্র কম দৃঢ়, নমনীয়, তাই চাঁদের আকর্ষণে বিশাল জলরাশিকে কিছুটা উপরে তুলে এক দিক থেকে অন্য দিকে সরিয়ে দিতে পারে কিন্তু জলাশয় বা হ্রদের জালে পরিমাণ মহাসমুদ্রের জলের পরিমাণের তুলনায় খুবই সামান্য তাই আকর্ষণ বল কম হওয়ার জন্য এক্ষেত্রে জোয়ার ভাঁটা হয় না।


১৪। বজ্রপাত কিরূপে ঘটে?
মহাকাশ থেকে আগত মহাজাগতিক রশ্মি, সূর্য থেকে আগত অতি বেগুনী রশ্মি এবং পৃথিবীর তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত রশ্মি বায়ুর বলা এবং মেঘে অবস্থিত ক্ষুদ্র জলবিন্দুকে তড়িতাহিত করে।
আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর ঘটনা বিপরীত তড়িতাধানে আহিত মেঘের মধ্যে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ বা ঝলকানি। ওই ঝলকানির দৈর্ঘ্য 40-45Km বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে। আকাশের মেঘ বেশি পরিমান তড়িতাধান পায় তখন ভু-পৃষ্ঠের উপর তড়িতাবেশের সৃষ্টি করে এবং যখন মেঘ ও পৃথিবীর মধ্যে তড়িৎ মোক্ষণ হয়। একে বজ্রপাত বলা হয়। তখন পৃথিবী ও মেঘের মধ্যে ভোল্টেজের পরিমাণ প্রায় 10° ভোল্ট পর্যন্ত হতে পারে এবং তড়িৎপ্রবাহমাত্রা প্রায় 106 অ্যাম্পিয়ার কিন্তু ঝলকানির স্থায়ীত্ব মাত্র প্রায় 106 সেকেন্ডের এবং আলোর ঝলকটি তৈরী হওয়ার কারণ ঐ সময় বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বায়ুতে উপস্থিত গ্যাসগুলির জ্বলনাঙ্কের অনেক বেশী হয় তাই পুড়ে আলো বিকিরণ করে।


১৫। বজ্রনিবারক কিরূপ কাজ করে?
উঁচু বাড়ি, সৌধ, ব্রীজ ইত্যাদি বজ্রপাত থেকে রক্ষা করার জন্য বজ্রনিবারক ব্যবহৃত হয়। ইহা এটি ধাতব দণ্ড যার উপরের অংশটিতে কয়েকটি সুচীমুখ কাঁটা থাকে এবং নিম্ন প্রান্ত মাটিতে বা জমিতে পুঁতে রাখা হয়। যখন তড়িৎগ্রস্থ মেঘ ঐ সুচাগ্র কাঁটাগুলির উপরে আসে তখন উহাতে বেশী পরিমাণে বিপরীত আধান জমা হয় এবং আস্তে আস্তে আধান নির্গত হয়। বায়ু কণা বিপরীত আধান পেয়ে মেঘের দিকে প্রবাহিত হয় এবং মেঘের আধানকে প্রশমিত করে ফলে বজ্রপাতের সম্ভবনা রোধ করে। তা সত্ত্বেও যদি বজ্রপাত হয় তবে ঐ ধাতব পরিবাহীর মধ্য দিয়ে মাটিতে বা জমিতে চলে যায় ফলে কোন ক্ষতি হয় না।


১৬। বৃষ্টি হয় কিরূপে?
জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায়। সেখানে চাপ কম থাকায় আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং শীতল হয়ে ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণারূপে বাতাসে ভাসমান ধুলিকণাকে আশ্রয় করে ভাসতে থাকে তখন একে মেঘ বলা হয়। মেঘের জলকণাগুলি পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে আকারে বড় ও ভারী হয় ফলে অভিকর্ষের টানে বৃষ্টিরূপে নেমে আসে।


১৭। ব্ল্যাক হোল (Black Hole) কি?
বিশ্বব্রহ্মান্তে অসংখ্য নক্ষত্রের সমাহার। বিজ্ঞানীদের মতে সব কিছুরই যেমন শুরু থাকলে শেষও থাকে, এই নিয়ম নক্ষত্রদের বেলাতেও থাকবে। নক্ষত্রদের মধ্যে আণবিক জ্বালানি শেষ হয়ে শীতল তারকায় পরিণত হয়। এই নক্ষত্রের ভর যদি সূর্যের ভরের দেড়গুণের চাইতে বেশী হয় তাহলে নিজের মহাকর্ষ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে না। তখন তারাটি চুপসে কৃষ্ণগহ্বরে অর্থাৎ ব্লাকহোলে পরিণত হয়। এই নিয়মটি ভারতীয় বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর প্রথম আবিষ্কার করেন তাই নিয়মটির নাম চন্দ্রশেখর সীমা। ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষ শক্তি এতবেশী, সেখান থেকে কোন কিছুই বের হতে পারে না, এমনকি আলেও নয় সম্প্রতি বিজ্ঞানী স্টিফেন হবিং ব্ল্যাকহোলের শেষ পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন যে ব্ল্যাকহোল শেষ পর্যন্ত ভর বিকিরণে রূপান্তরিত হবে। এই বিকিরণের নাম দেওয়া হয়েছে হকিং রেডিয়েশন। নাসার চন্দ্র এক্স রশ্মি টেলিস্কোপে তিন প্রকার ব্ল্যাকহোলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। প্রথমটি স্টেলার ব্ল্যাকহোল, পাঁচ হাজার আলোকবর্ষ দুরে, ভর সূর্যের 5-10 গুণ, দ্বিতীয়টির ভর সূর্যের ভরের পাঁচশ গুণ আর তৃতীয়টি সুপার মেসিব ব্ল্যাক হোল, ভর সূর্যের কোটিগুণ, দুরত্ব 26 হাজার আলোকবর্ষ দূরে। ইউরোপীয় CERN Lab এর বিজ্ঞানীগণ প্রোটন কণার মধ্যে সংঘর্ষ দ্বারা মিনি ব্লাকহোল Lab এ তৈরীর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। 


১৮। বিভিন্ন গ্রহে বা মহাশূন্যে মহাকাশ যান পাঠানো হয় সেগুলির শক্তির উৎস কি?
যে সকল মহাকাশ যান (মনুষ্যবিহীন) দুরবর্তী গ্রহে পাঠানো হয় সে সকল ক্ষেত্রে শক্তির উৎস হিসাবে রেডিও আইসোটোপ থার্মো ইলেকট্রিক জেনারেটর ব্যবহার করা হয়। তেজস্ক্রিয় (প্লুটোনিয়াম, ট্রনটিয়াম ইত্যাদি) যাদের অর্ধায়ু কম, তাদের বিকিরণ থেকে তাপ উৎপন্ন করে থার্মোকালের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরী করা হয়।
আর যে সকল গ্রহ পৃথিবীর নিকটতম (শুক্র, মঙ্গল ইত্যাদি) সে ক্ষেত্রে সাধারণত সৌর কোষের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরী করা হয়ে থাকে। 


১৯। বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব ( Big Bang Theory) কি?
তেরশ কোটি বৎসর পূর্বে এক মহা শব্দ বা গর্জনের মধ্য দিয়ে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম হয়। Something out of nothing. অনন্তকাল ধরে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ও প্রলয় ঘটাবে। এটাই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে সর্বাধুনিক তত্ত্ব এবং এটাই বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব (Big Bang Theory) যার আবিষ্কারক বিজ্ঞানী গ্যামো। এই তত্ত্বের সাথে ভারতীয় হিন্দু দর্শনের ঋক বেদের নারদীয় সুক্ত। হান্দোগ্য উপনিষদে, এমনকি শ্রীশ্রী গীতা (৮/১৮) শ্লোকে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সত্যি অবাক হতে হয় এই সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের তত্ত্বটিকে অমর করে রাখার জন্যই হয়তো তিন দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের সৃষ্টি। Big Bang Theory এর সত্যতা (COBE) Cosmic Back Grand Explorer এর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন দুই বিজ্ঞানী J.C. Mather এবং G F Smoot তাদের মতে মহা বিস্ফোরণ ই বিশ্ব সৃষ্টির কারণ, তারা সেই বিস্ফোরণের রেশ ব্রহ্মাণ্ডে ছড়ানো শক্তির মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন। এই আবিষ্কারের জন্য তাঁরা 2006 এ পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। 


২০। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের আকার (shape & size) কিরূপ?
বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ সম্পর্কে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, ডপলার, হাবল, ফ্রিডম্যান, শিলিজার প্রভৃতি বহু বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত তত্ত্বের উপর বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বর্তমান যে স্বরূপ দাঁড়িয়েছে তা হল। “এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডটি অসীম, কিন্তু সসীম এবং বাঁকা। বস্তু যেখানে কম বাঁক সেখানে কম, বস্তু বেশি বাঁক ও বেশী, এটি অবার ক্রমবর্ধমান। এর জন্ম হয়েছে, সেই থেকেই বাড়ছে, বাড়তে থাকবে। তারপর কমতে শুরু করবে কমতে কমতে একদিন মৃত্যু ঘটবে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানী উকস্ এবং তার সহকর্মীগণ নেপথ্য বিকিরণ (Back Ground Radiation) বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে “মহাবিশ্ব Soccer ball এর মত পঞ্চবাহু বিশিষ্ট 12 টি তলের দ্বারা সীমাবদ্ধ স্থান।” এই মডেল অনুসারে কোন মহাকাশযান আলোর বেগে চলে ওই 12 টি তল ঘেঁসে চলতে থাকলে 74 বিলিয়ন আলোকবর্ষ পরে আবার যাত্রাস্থলে ফিরে আসবে। কত বিশাল মহাবিশ্ব!!


২১। ভবিষ্যতের শক্তির উৎস কি হবে?
প্রচলিত শক্তির উৎস হিসাবে আমরা কয়লা 23%, পেট্রোলিয়াম 39%, প্রাকৃতিক গ্যাস 23%, পারমাণবিক শক্তি 8%, এবং বাকী 7% হল অপ্রচলিত শক্তি। যে হারে শক্তি ব্যয়িত হচ্ছে এবং চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে অল্প দিনের মধ্যেই এই উৎসগুলি নিঃশেষ হবে এবং পরিবেশ উত্তরোত্তর দুষিত হবে। তাই ভবিষ্যতের শক্তির উৎস খুঁজতে হলে প্রথমে দেখতে হবে যাতে পরিবেশ দুষণ হবে না এবং খরচ কম হবে এবং সহজলভ্য হবে সে দিকে নজর দিতে হবে।
তাই আগামীদিনের পৃথিবীর শক্তির উৎস হিসাবে সূর্য শক্তিকে কাজে লাগানোর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। সূর্যের শক্তিকে সর্বাধিক মাত্র 26% ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে, আর এজন্য প্রযুক্তিকে আর উন্নত করতে হবে।
এছাড়া পরমাণু সংযোজন বা ফিউসান এর মধ্যে ডিউটরিয়াম ও ট্রিটিয়াম সংযোজন করে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে ফিউসান রিয়াকটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এই শক্তির জ্বালানী সমুদ্রের জলে প্রায় অফুরন্ত। এছাড়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর 0.7% হাইড্রোজেন, এমনকি মহাবিশ্বের দৃশ্য বস্তুর 75% হাইড্রোজেন। তবে আশার কথা ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এনার্জি রিয়াকটর (ITER) জাপানের রোক্কাসো (Rokkasho) নামক স্থানে ভারতসহ পৃথিবীর 7 টি দেশের বিজ্ঞানীগণ মিলিতভাবে তৈরী করতে চলেছেন প্রথম ফিউসান রিয়াক্টর যা হবে পৃথিবীর সূর্য। যেখান থেকে 2020 নাগাদ বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। কাজেই আগামীদিনে সাধারণ হাইড্রোজেন কে জ্বালানী হিসাবে এবং ফিউসনে ব্যবহার করে সস্তাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীগণ বলছেন স্বাভাবিক উষ্ণতায় অর্থাৎ (Cold Fusion) ফিউসানও সম্ভব! এ বিষয়ে গবেষণা চলছে, তাহলে তো কথাই নেই প্রতি পাড়ায় পাড়ায় কোল্ড ফিউসান কোষ ব্যবহর শুরু হয়ে যাবে।


২২। ভূমিকম্প কিরূপে ঘটে?
পৃথিবীর বুকে যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে ভুমিকম্প তার মধ্যে একটা। ভুমিকম্প হওয়ার বহু মতবাদ আছে। তবে নির্ভরযোগ্য আমেরিকান বিজ্ঞানী রিড অনেক গবেষণার পর যে তত্ত্বটি উপহার দেন তার নাম “স্থিতিস্থাপক প্রতিঘাত ও প্লেটটেকটনিস তত্ত্ব। এই তত্ত্বানুসারে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শিলাস্তর কোন কারণে যদি অস্বাভাবিক চাপের মুখে পড়ে তবে সংঘর্ষে শিলাস্তরের দুর্বল অংশ ভেঙে গিয়ে আকস্মিক স্থান চ্যুতি ঘটে ফলে প্রতিঘাত তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে এক কেন্দ্রিক বৃত্তাকারে। এই শিলাচ্যুতি প্রাকৃতিক ও পারমাণবিক বিস্ফোরণেও হতে পারে। এই শিলা চ্যুতি যে স্থানে ঘটে ঠিক উপরস্থ ভুপৃষ্ঠকে এপি সেন্টার বলে। সিসমিক তরঙ্গ পৃথিবীর কেন্দ্র স্থল থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে এবং কিছু পৃথিবীর অপর পিঠে গিয়ে বেঁকে যায় বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও লক্ষাধিক বার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। প্লেট টেকটনিক্স তত্ত্বানুসারে ভূ-ত্বক ছোট বড় মিলে মোট 13 টি প্লেটের উপর আছে, এবং এগুলি সমুদ্রতলদেশে ও মহাদেশের তলদেশে যথাক্রমে প্রায় 70 কিমি থেকে 150 কিমি গভীরে অবস্থিত এবং তারা পরস্পরের পরিপেক্ষিতে সর্বদা গতিশীল, যখন পরস্পর ধাক্কা খায় তখনই ভুমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই তত্ত্বের জনক ফরাসী বিজ্ঞানী এক্স লি পিঠোঁকে।


২৩। ভূমিকম্প কিরূপে পরিমাপ করা হয়?
ভুমিকম্প পরিমাপ করার জন্য সিসমোগ্রাফ যন্ত্র সমষ্টি ব্যবহৃত হয়। ইহু একক যন্ত্র নয়। এই যন্ত্রে পদার্থের জাড্য নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই যন্ত্র সমষ্টিতে তিনটি ওজন প্রত্যেকটির কেলাস নির্মিত পাতলা পাতের উপর ধাতব ব্লকের মধ্যে রাখা হয়। ভুমিকম্প হয় তখন ঐ কেলাস পাত বেঁকে যায়, বা নড়ে যায় তাতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়; এবং ঐ বিদ্যুৎ এর সাহায্যে যান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলন্ত কাগজের উপর তিনটি যন্ত্র থেকে তিনটি তরঙ্গাকিত দাগ বা রেখা উৎপন্ন হয়। ঐ যন্ত্র তিনটির প্রথমটি পূর্ব পশ্চিমে দ্বিতীয়টি উত্তর দক্ষিণে এবং তৃতীয়টি উপরে নীচে আন্দোলিত হতে পারে। ওই রেখা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা রিখটারে তৈরী স্কেল দ্বারা তীব্রতা, স্থান, দুরত্ব ইত্যাদি নিরুপণ করে থাকেন। এই স্কেলে 5 মাত্রা হলে স্থায়ীত্ব কাল মাত্র 2 সেকেন্ড অর্থাৎ মৃদু। 8.5 হলে স্থায়ীত্ব 37 সেকেন্ড ক্ষতি 5 এর চেয়ে 3000 গুণ। পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন স্থানে হাজারের বেশী স্থানে ভূমিকম্প সংক্রান্ত দপ্তর গড়ে উঠেছে। সেখানে দিনরাত পর্যবেক্ষণ চলে। 


২৪। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব কি?
প্রথমেই দেখা যাক, ভূমিকম্পের আগে জীবজন্তুদের এবং অনেক কীট পতঙ্গাদের অস্বাভাবিক আচরণ হয়। যেমন ব্যস্ত হয়ে ছুটোছুটি করা, কান খাড়া হয়ে উঠা, গর্ত থেকে বেড়িয়ে পড়া ইত্যাদি সম্ভাব্য সংকেত সাহায্য করলেও বিজ্ঞানীদের মতে তার 20% সঠিক হয়। তবে প্রথম পুর্বাভাস সম্পর্কে চীনদেশে বিজ্ঞানী জানহেন একটি যন্ত্র তৈরী করেন নাম “ড্রাগন ও পেন্ডুলাম যন্ত্র”। পরবর্তী কালে রাশিয়ার বিজ্ঞানী ভুমিকম্পের পূর্বের ভূকম্পন তরঙ্গের বেগ এবং ভূগর্ভস্থ জলের রাসায়নিক চরিত্র পরীক্ষার মাধ্যমে সফল ভাবে পুর্বাভাস দিতে পেরেছেন। বিজ্ঞানীগণ বহু পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীর ভূমিকম্পন প্রবণ এলাকাকে চিহ্নিত করেছেন। এবং একটি মাত্রা দিয়েপ্রবণতা কতটা চিহ্নিত করেছেন। যেখানটায় 5 নম্বর চিহ্নিত হয়েছে সেই স্থান অধিক প্রবণ, মাঝে মাঝে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হতে পারে। তবে পূর্বাভাস ঠিক কখন হবে তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয়নি। কারণ হিসাবে অনেক বিজ্ঞানী বলছেন ভুমিকম্পের পূর্বে শিলাস্তরের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা ও চৌম্বকত্বের পরিবর্তন ঘটে থাকে। তবে ক্ষতি যাতে কম হয় তার জন্য প্রযুক্তিগত উন্নতি করে এমন বাড়ী তৈরী করা হচ্ছে যে রিখটার স্কেলে 10 ভূমিকম্প হলেও বাড়ী ভেঙে যাবে না।


২৫। ভূসমলয় কৃত্রিম উপগ্রহ কি?
কোন কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর কৌণিক বেগের সামনে কৌণিক বেগ নিয়ে পৃথিবী যে দিকে ঘুরে সেদিকে অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করলে পৃথিবীর সাপেক্ষে ঐ উপগ্রহের অবস্থান স্থির বলে মনে হবে। এই প্রকার উপগ্রহকে ভু সমলয় কৃত্রিম উপগ্রহ বলে। এই ধরনের উপগ্রহকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে 35930 কিমি উপরে স্থাপন করতে হবে এবং একে নিরক্ষতলে তল বরাবর এক কেন্দ্রীয় ও একই তলে অবস্থান করতে হবে। আমেরিকা 24 টি কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে গড়ে তুলেছে গ্লোবাল পজিসনিং সিস্টেম (GPS) যার দ্বারা পৃথিবীর যেকোন স্থানের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা এবং যোগাযোগ করা সম্ভব, কিন্তু ভু-সমলয় কক্ষে মাত্র তিনটি উপগ্রহের সাহায্য নিয়ে ঐ একই কার্য করা সম্ভব হয়েছে।


২৬। মরুভূমিতে শুধু বালি আর বালি থাকে কেন?
সমগ্র পৃথিবী পৃষ্ঠের 20% ই মরুভূমি। মরুভুমির আবহাওয়া শুষ্ক, উচ্চ উষ্ণতা, বৃষ্টি কম, এখানে দিনে প্রচন্ড গরম এবং রাতে প্রচন্ড ঠান্ডা, তাপের এই তারতমার জন্য পাহার ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে সিলিকন ডাই অক্সাইড বা বালিতে পরিণত হয়। এছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলে পাথর সহজেই ভেঙে যায়।


২৭। মহাবিশ্ব কত বড়?
সূর্যের মত প্রায় 10 হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে গঠিত আমাদের হায়াপথ যার নাম আকাশ গঙ্গা (Milky way)। রাতের আকাশে যত তারা দেখা যায় তার মধ্যে মাত্র 3 টি বাদে বাকি সব তারাই আকাশ গঙ্গার মধ্যে অবস্থিত। ঐ তিনটির নাম অ্যান্ড্রোমিডা (M31), (M32) এবং বৃহৎ ও ক্ষুদ্র মাগেলানীয়া মেঘ। অ্যারোমিগ পৃথিবী থেকে 4.2 আলোকবর্ষ দূরে।কতকগুলি ব্রহ্মাণ্ড (Galaxy) একত্রে একটি জোট গঠন করে আছে। আমাদের হায়াপথটি যে জোটে অবস্থিত তাতে প্রায় 200 টি ব্রহ্মাণ্ড আছে, নাম তার Local Group। এই জোটের প্রতিবেশী জোটটির নাম কন্যাজোট এতে ব্রহ্মাণ্ডের সংখ্যা আড়াই হাজার। সম্প্রতি 1320 কোটি আলোকবর্ষ দূরে এক নক্ষত্র পুঞ্জের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, নাম তার অ্যারেল (Abell 135) তরে আর কত দূর পর্যন্ত বা কত বিশাল এই মহাবিশ্ব মানুষের পক্ষে জানা আদৌ সম্ভব হবে কি! এবারে ভাবুন তো এই মহাবিশ্বে পৃথিবীর স্থান কোথায়?


২৮। মহাবিশ্বে পৃথিবীর স্থান কোথায়?
অনন্ত মহাবিশ্বে প্রায় অসীম সংখ্যক গ্যালাক্সির মধ্যে আমাদের অবস্থান যে গ্যালাক্সিতে তার নাম আকাশগঙ্গা হায়াপথ (Milky way) বিজ্ঞানীদের মতে এর মধ্যে নক্ষত্রের সংখ্যা 1010 টিরও বেশী। এই হায়াপথের ব্যাস এক লক্ষ আলোকবর্ষ এবং এর কেন্দ্র থেকে ত্রিশ হাজার আলোকবর্ষ দূরে আমাদের সৌর জগতের রাজা সূর্যের অবস্থান। সূর্য তার পরিবারের সকলকে নিয়ে ছায়াপথকে ঘুরে আসতে সময় লাগে কুড়ি কোটি বৎসর। আমাদের ছায়াপথ (Milky way) এর হবি বা চিত্র অংকন করলে সেখানে আমাদের পৃথিবীর অবস্থান দেখানো খুবই কষ্টকর ব্যাপার হয়। কারণ হিসাবে এক বিজ্ঞানী বলেছেন একটি 100 বর্গফুট দেওয়ালে ডটপেন দিয়ে যত ডট চিহ্ন দেওয়া যাবে তার মধ্যে মাত্র একটি হল আমাদের সূর্য, এবারে ভাবুনতো পৃথিবীর স্থান কোথায়! এবার ভাবুন মহাবিশ্বে মানুষের স্থানই বা কোথায়?! 


২৯। মহাবিশ্ব তথা পৃথিবীর উদ্ভিদ ও প্রাণীর সৃষ্টি সরণী কিরূপ?
সৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কে প্রচলিত তিনটি মতবাদ আছে। প্রথমটির প্রবক্তা জ্যোতির্বিদ লেমেত্র। নাম “বিগ ব্যাং থিওরী”, দ্বিতীয়টির প্রবক্তা টমাস গোল্ড ও বস্তি। নাম “ক্রমাগত সৃষ্টি তত্ত্ব”, তৃতীয়টির প্রবক্তা বিজ্ঞানী স্যান্ডেজ। নাম “পালসেটিং তত্ত্ব”। তবে বর্তমানে বিগ ব্যাং থিওরির সমর্থক বেশী বলে মনে হয়। এই তত্ত্বানুসারে হজার হাজার কোটী বৎসর পূর্বে অতিঘন একটি গোলক হঠাৎ বিস্ফোরণে ভেঙে চারিদিকে ছড়িয়ে যায় এবং তখন থেকেই কয়েক হাজার কিমি বেগে ছুটে চলছে। আদি বিস্ফোরণই মুল কথা। সম্প্রতি নাসার (NASA) বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে জেনেছেন ঐ বিস্ফোরণটি হয়েছিল 1307 কোটি বৎসর পূর্বে, তখন ছিল না কোন বস্তু, গ্রহ, নক্ষত্র শুধু তাপ আর তাপ, এর 10 কোটি বৎসর পরে নক্ষত্রের সৃষ্টি হয়। আর পৃথিবী সৃষ্টি হয় মাত্র 350 কোটি বৎসর পূর্বে। এই তত্ত্বানুসারে বিগ ব্যাং এর পরের এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে সৃষ্টি হয়েছিল কার্ক, গ্লুওন, প্লাজমার মিশ্রণ। এরাই মহাবিশ্বের প্রথম পদার্থ, তারপর তাপ কমতে থাকায় কার্ক ও মুক্তন একত্রিত হয়ে তৈরী হয়েছে প্রোটন ও নিউট্রন। ক্রমান্বয়ে নিউক্লিয়াস, পরমাণু (92 প্রকার মৌল) 30 লক্ষ যৌগ যাদের মধ্যে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাটের অণু, নিউক্লিক অ্যাসিড তারপর কোষ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, এককোষী উদ্ভিদ ও প্রাণী। এরপর বহুকোষী উদ্ভিদ ও প্রাণী, সবশেষে বর্তমানের এই উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ।


৩০। মহাকাশ সম্পর্কে এত জানা সম্ভব হল কি করে? 
মহাকাশ সম্পর্কে জানার অসীম আগ্রহে প্রথম আবিষ্কৃত হয় দুরবীণ। এক্ষেত্রে দুটি লেন্সের মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণ (Refracting) ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। এর পরে আবিষ্কৃত হয় প্রতিফলন (Reflecting) দুরবীণ, এক্ষেত্রে বস্তু থেকে আগত রশ্মি আয়নায় প্রতিফলিত করে প্রতিবিম্ব, লেন্স-এর সাহায্যে দেখা হয়। পরবর্তীকালে আবিষ্কৃত হল রেডিও দুরবীণ, এক্ষেত্রে 1 মিলিমিটার থেকে 10 মিটার রেডিও তরঙ্গ অর্ধবৃত্তাকার ধাতব প্রতিফলকের উপর পড়ে, এই প্রতিফলকের ফোকাসে রাখা গ্রাহক অ্যান্টেনার দ্বারা তরঙ্গ সংগ্রহ করে কম্পিউটারের সাহায্যে বিশ্লেষণ করে নক্ষত্রলোকের আকার আকৃতি গঠন বিশদভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। পরবর্তীকালে কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে দুরবীণকে পৃথিবীর বায়ু স্তরের বাহিরে পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণের অনেক অসুবিধা দুর হয়েছে। নাসা (NASA) কর্তৃক মহাকাশে পাঠানো হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে বহু ছবি ও বহু তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর বৃহত্তম রেডিও দুরবীণটি অবস্থিত আমেরিকার অরিজোনায়। বর্তমানে আমাদের দেশে পুনেতে একটি দুরবীণ স্থাপিত হয়েছে। যার নাম জয়েন্ট মিটার ওয়েভ রেডিও টেলিস্কোপ (GMRT)। এটি এখন পৃথিবীর প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং এর সাহায্যে আরও বহু তথ্য আবিষ্কৃত হবে, তবে NASA ইনকারেড ক্যামেরা এবং স্পেকটোগ্রাফ ব্যবহার করে একটি টেলিস্কোপ নির্মাণ করে চলেছে যার নাম ওয়েব টেলিস্কোপ, এর সাহায্যে অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা তা ধরা সম্ভব হবে। তবে এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও পাঁচটি বৎসর।


৩১। মহাকাশ থেকে কোন বস্তু পৃথিবীতে আসার সময় জ্বলে ওঠে কেন?
কোন মহাজাগতিক বস্তু কণা পৃথিবীতে আসার সময় বায়ুমন্ডলের সাথে ঘর্ষণ হয় ফলে প্রচন্ড গরম হয়ে পড়ে অধিকাংশই বায়ুমন্ডলে হাইএ পরিণত হয়। কখনও কখনও পৃথিবীর বুকে নেমে আসা মহাকাশযান যখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে তখন প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়, ঐ তাপ থেকে মহাকাশযাত্রী তথা মহাকাশ যানের রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়।


৩২। মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ পশ্চিম থেকে পূর্বে করা হয় কেন?
পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর নিরক্ষরেখায় প্রতিঘণ্টায় প্রায় পনেরশ কিলোমিটার বেগে পশ্চিম দিকে থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। এই অবস্থায় অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে নিক্ষেপ করা হলে পৃথিবীর ঘূর্ণন বেগের জন্য মহাকাশযানকে সম্মুখের দিকে পনেরশ কিমি বেগে ঠেলে দেওয়া হয় যাতে মহাকাশযানের অভিষ্ট বেগ প্রায় ত্রিশ হাজার কিমি পেয়ে থাকে, অতটা বেগ উৎপন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানী কম দরকার হয়। সেজন্য মহাকাশযানকে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে নিক্ষেপ করা হয়ে থাকে। 


৩৩। মহাকাশ ভ্রমণ কবে থেকে শুরু হবে?
ইতিমধ্যেই সামান্য হলেও শুরু হয়ে গেছে। মহাকাশচারী নয়, দঃ আফ্রিকার মার্ক শাটল ওয়ার্থ প্রথম সাধারণ মানুষ যিনি মহকাশ ভ্রমণ সমাপ্ত করেছেন। এছাড়া আরও তিনজন ইতিমধ্যে ভ্রমণ করেছেন। বিজ্ঞানীগণ পরিকল্পনা করছেন, মহাকাশযান এমনভাবে তৈরি করছেন যাতে প্রথমে স্পেস স্টেশনে তারপরে হয়তো চাঁদে পরিভ্রমণের সুযোগ করে দেবেন। আর যাতায়াত খরচও যাতে কম হয়। বর্তমানে 1kg ভরের বস্তু পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠাতে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ পড়ে। সম্প্রতি মহাকাশে একবারে হয় জন যাত্রী নিয়ে যাওয়ার মহাকাশ যানের মডেল প্রদর্শনী হয়েছে লগুনে। হয়তো আগামী 2010 এর মধ্যেই কোন এরূপ মহাকাশ যানে যাত্রীরা সকলে গেয়ে উঠবেন বিস্ময়ে “আকাশ ভরা সূর্য তারা... আমি পেয়েছি মোর স্থন...” 


৩৪। মহাকাশ বিজয় সম্ভব হবে কি?
মহাকাশ অভিযান শুরু হয়েছে 50 বৎসর পূর্বে, এর মধ্যে মানুষ চাঁদে পা দিয়েছে কিন্তু কোন গ্রহে এখনও যেতে পারেনি। তবে প্লুটো গ্রহ বাদে বাকী সকল গ্রহে মোট 20 টি মহাকাশ যান পাঠিয়ে এদের সম্পর্কে বহু তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে, এর মধ্যে মঙ্গল 3 টি পাঠানো হয়েছে। আর প্লুটোর পথে নিউ হরাইজন নামক মহাকাশ যান যাত্রা শুরু করেছে, প্লুটোতে পৌঁছাবে 2015 সালে। এছাড়া পাইয়োনিয়ার 10, 11, যথাক্রমে 72, 73 সালে এবং ভয়েজার 1, 2 নামক মহাকাশ যান বহিঃ বিশ্বের সাথে যোগাযোগের জন্য পাঠানো হয়েছে 1977 সালে। এছাড়া গত 2005 সাল সৌর জগৎ ছেড়ে মহাবিশ্বে পাড়ি দিয়েছে একটি মহাকাশযান এর সাথে অন্য গ্রহ বা তারার সাক্ষাৎ হবে 40 হাজার বৎসর পরে। বিজ্ঞানীগণ আশা করছেন আগামী 2020 সাল নাগাদ মানুষ মঙ্গলে পা রাখবে। যদি আলোর বেগের কাছাকাছি বেগ সম্পন্ন মহাকাশযান তৈরী করা সম্ভবও হয় তবে আমাদের প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে পৌঁছাতে 22 লক্ষ বৎসর সময় লাগবে। কাজেই বর্তমান মানুষের জানা যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আছে তা দ্বারা সেই সুদুর মহাকাশ জয় করা সম্ভব হবে না। তবে আগামী পৃথিবীতে উন্নততম মানুষ সৃষ্টি হবে, তারা হয়তো পারবে মহাকাশ জয় করতে। 


৩৫। সমুদ্রের লবণাক্ত জল পান করার উপযোগী করা হয় কিরূপে?
সমুদ্রের জলকে পানের উপযোগী করার বহু পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টাও চলছে। যে পদ্ধতিগুলি সাধারণত ব্যবহৃত হয় তারমধ্যে পাতন, তড়িৎ বিশ্লেষণ, মেমব্রেন, জলকে বরফে পরিণত করে, তবে সবচেয়ে উপযোগী শ্রেষ্ঠ পদ্ধতিটির নাম মালটি স্টেজ ক্লাশ ডিস্টিলেসন পদ্ধতি।
পাতন পদ্ধতিতে জলকে বাষ্পীভূত করে পুনরায় বাষ্পকে ঘণীভূত করে জলে পরিণত করা হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে সমুদ্রজলকে তড়িৎ বিশ্লেষণ করে সোডিয়ামকে ক্যাথোডে এবং ক্লোরিনকে ক্যাথোডে জমা করে জল পৃথক করা হয়। মেমব্রেন পদ্ধতিতে প্রণিজ বা উদ্ভিদ ঝিল্লি ব্যবহার হয় যার মধ্য দিয়ে লবণ যেতে পারে না জল যেতে পারে।
মালটি স্টেজ পদ্ধতিতে নিম্নতাপে, উচ্চ শুন্যতায় (Vaccum) জলকে বহুবার দ্রুত বাষ্পে পরিণত করা হয়। কিন্তু প্রতিক্ষেত্রেই বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়ে থাকে এবং তা করা হয় সৌরশক্তি, আণবিক শক্তি, ইত্যাদি ব্যবহার করে।


৩৬। সমুদ্রের তলদেশে মানুষ কিরূপে যায়?
মানুষের দেহ স্বাভাবিকভাবে 3 থেকে 4 অ্যাটমোস্ফিয়ার চাপ সহ্য করতে পারে। সমুদ্রের যত নীচে যাওয়া যায় তত চাপ বৃদ্ধি পায়। প্রতি 10 মিটার নীচে চাপ প্রায় 1 কেজি প্রতিবর্গ সেন্টিমিটারে বৃদ্ধি পায়। সর্বচেয়ে গভীর প্রশান্ত মহাসাগরের মেরিয়ানির তলদেশ 11.5 কিমি সেখানে চাপ হবে প্রচন্ড, কাজেই সমুদ্রের তলদেশে যেতে হলে বিশেষ নমনীয় ধাতুর পোষাক পড়ে যেতে হবে যাতে থাকবে লাইফলাইন, বায়ু পাম্প, হেলমেট, ভারীবস্তু ইত্যাদি।
ডুবো জাহাজে 250 মিটারের বেশি গভীরতায় যেতে পারে না। তবে আর নীচে যাওয়ার জন্য ক্যাথিস্ফীয়ার যন্ত্র এবং আরো উন্নত যন্ত্র ক্যাথিফেকি যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।


৩৭। সমুদ্র তীরবর্তী বীচের কাছে ঢেউ সমুদ্রের মাঝের চেয়ে বেশী হয় কেন? 
সমুদ্র উপকূল রেখা বা স্থলভাগ হঠাৎ শেষ হয়ে যায় না সামান্য ঢালু হয়ে সমুদ্রের নীচে ক্রমশঃ প্রবেশ করে। এই অঞ্চলকে মহীসোপান বলে। সমুদ্রের মধ্যে ঢেউ উলম্ব বড় বৃত্তকার রূপে প্রবাহিত হয় তীরের দিকে আসতে থাকে এবং যখন ঢেউ মহীসোপানে বাধাপ্রাপ্ত হয় তখন ঢেউ এর উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে এবং তীরের দিকে ধাবিত হয় এবং তীরে আছড়ে পড়ে। তবে ঢেউ এর উচ্চতা বায়ু প্রবাহের গতি ও বেগের উপর নির্ভর করে। এছাড়া অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বেশী হয়ে থাকে চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণের জন্য।


৩৮। সাইক্লোট্রোন কি?
সাইক্লাটোন একটি যন্ত্র, যে যন্ত্রে ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণা প্রোটন, ডয়টেরন, আলফা বগাদের ত্বরিত বা অতি শক্তি সম্পন্ন কণায় পরিণত করা যায়। এই যন্ত্রে অতিবৃহৎ চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে দুটি অর্ধ বৃত্তাকার ইলেকট্রোডের মধ্যে আহিত কণা বা আয়ণ কে প্রবাহিত করানো হয়, ফলে প্রতি অর্ধবৃত্তাকার পথ পরিক্রমা কালে কলার শক্তি ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং প্রয়োজন অনুসারে শক্তি নিয়ন্ত্রিত করে একটি নির্দিষ্ট পথে যন্ত্র থেকে বের করে এলে প্রয়োজন মত কাজে লাগানো হয়। পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটানো, আণবিক গবেষণা, তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ গঠন এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে শক্তিশালী তরঙ্গ তৈরীতে এই যন্ত্র বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। কালকাতার লবণ হ্রদে একটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এই যন্ত্র চালু হয়েছে বিজ্ঞানীদের ধারণা এই যন্ত্রে 120 থেকে 130 Mev শক্তির কণা তৈরী করা সম্ভব।


৩৯। সগরের জলে কি কি উপাদান আছে?
সাগরের জলে নানা প্রকার লকা দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে তাই জল নোনা। সাগরের জলে খাবার লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে প্রায় 3%। এছাড়া ক্যালসিয়াম সালফেট, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড, সালফেট, পটাশিয়াম ক্লোরাইড থাকে। আর আছে অফুরক্ত হাইড্রোজেন, ভারী হাইড্রোজেন যা থেকে ফিউসান প্রক্রিয়ায় আগামীদিন অফুরন্ত শক্তি উৎপন্ন করা যাবে। বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে দেখেছেন যে প্রতিঘণ কিমি জলে প্রায় পাঁচশ কেজি সোনা আছে তবে তা পৃথক করে সংগ্রহ করা খুব ব্যায় সাপেক্ষ। সমুদ্রে মোট লবণের পরিমাণ 120 মিলিয়ন টন তা দিয়ে পৃথিবীর স্থলভাগকে প্রায় 152 মিটার পুরু করে ঢেকে দেওয়া যাবে।


৪০। সানগ্লাসের রং পরিবর্তন হয় কেন?
সানগ্লাসে যে কাঁচে ব্যবহার হয় তা সাধারণ কাচের মত নয় ওই কাঁচ তৈরীর সময় উহাতে সাধারত সিলভার ক্লোরাইড বা ক্লোরাইড লবণ এবং কিছু ধাতু মিশ্রিত করা হয়। এবার ওই কাঁচের উপর যখন আলট্রাভায়োলেট রশ্মি পড়ে তখন উহাতে মিশ্রিত লবণ কৃষ্টালগুলি উত্তজিত হয়ে ক্রমশ ধাতব অংশ আলাদা হয়ে পড়তে থাকে এবং কাচর বর্ণ ক্রমশ পরিবর্তীত হয়ে গাঢ় হতে থাকে এবং চোখকে আলো ও তাপ থেকে রক্ষা করে। যখন সানগ্লাস আল্লা থেকে দূরে রাখা হয় তখন আবার ধাতব অংশ যুক্ত হয়ে লবণ তৈরী করে এবং বর্ণ তখন থাকে না।


৪১। সুনামি (Tsunami) কি?
বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণত টেকটনিক মুভমেন্ট এবং অগ্ন্যুৎপাতের ফলে তৈরী হওয়া ভূ-কম্পের প্রভাবেই তৈরী হয় সুনামি। সুনামি' একটি জাপানি শব্দ যার অর্থ খুব দীর্ঘ, নীচু সিসেমিক সামুদ্রিক ঢেউ। সুনামিতে সমুদ্রের তলদেশে কম্পনের ফলে প্রচন্ড জলোচ্ছাসের সৃষ্টি হয়। প্রবল ঢেউ আছড়ে পরে উপকূলে। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর খন্ডটি সুনামির মুক্তাঞ্চল বলে পরিচিত। কিন্তু বিজ্ঞানীগণ বলছেন ভারত মহাসাগরে বুকেও সুনামি হতে পারে। সেটা এতদিন কেউ আন্দাজ করতে পারেনি। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূল সুনামির সম্ভাবনা কম কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীদের মত হল সুনামি আর সামুদ্রিক ঢেউ এর শক্তি অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং সমুদ্রের গভীরতার গুণফলের বর্গমূলের সমান। যেহেতু এই দুই স্থানের উপকূল ভাগএর গভীরতা কম তাই শক্তি ও কম হবে। প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সিস্টেমের প্রধান কেন্দ্র হাওয়াই দ্বীপের এওয়া তাটে। আমাদের দেশেও সতর্কতা কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে, যার মাধ্যমে আগে থেকে সতর্ক বা বিপদ জানাতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় শুধু রেডিও, টিভিতে নয় যদি এমন ব্যবস্থা করা যায় যে দেশের ল্যান্ডফোন ও মোবাইল ফোনে সতর্ক বার্তা বা সংকেত একই সাথে জানানোর ব্যবস্থা করতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানী কম হবেই।