৷রোগ লক্ষণ ও চিকিৎসা

মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে এতক্ষণ বহু আলোচনা করা হয়েছে। এই আলোচনা প্রসঙ্গে এই রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচনা করা হয়েছে। এখন আমাদের দেশের চিকিৎসকগণ এ সম্বন্ধে কি মতামত প্রকাশ করেছেন, সে সম্পর্কে বলা হচ্ছে। আমাদের দেশস্থ বিজ্ঞ চিকিৎসকগণ বলেন যে—
কিছু কিছু রোগী জানেন যে, তাদের মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগ হয়েছে। আর অধিকাংশ রোগীই তাঁদের রোগের কথা জানেন না।
যারা এই রোগ সম্বন্ধে জানেন, তাঁদের সংখ্যা শতকরা সাত থেকে দশজন আর যাঁরা জানেন না, তাঁদের সংখ্যা শতকরা ৭৩ থেকে ৯০ নব্বই জন। যাদের রোগ সবে শুরু হয়েছে, অর্থাৎ প্রথমাবস্থায় এই রোগ যে আক্রমণ করেছে, তারা
তা বুঝতেই পারে না।
আগেকার দিনে এই রোগটিকে শহর অঞ্চলের রোগ বলেই সবাই জানতো। কিন্তু বর্তমানে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কারণ জানা গেছে বা প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, শহরতলী বা গ্রাম্য অঞ্চলেও এই রোগীর সংখ্যা অনেক।
এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার যে, গ্রাম অঞ্চলে যে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ আক্রমণ করে, তা হলো আমাদের মতে ‘জে’(J) ধরনের। ‘জে’ ধরনের বলার অর্থ হলো—–অপুষ্টির জন্য, শর্করা জাতীয় খাদ্য বা শর্করা বেশী খাওয়া এবং প্রোটিন না খাওয়ার জন্য প্রোটিনের অভাবে মধুমেহ রোগ বা ডায়াবেটিস রোগ হয়।
এর পর এই রোগ নিয়ে বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলতে থাকে। তারপর আবিষ্কার হয় ইনসুলিন। ইনসুলিন আবিষ্কারের পর চিকিৎসকগণ ভেবেছিলেন যে, এই রোগ তত মারাত্মক নয়, এবং সহজেই এই রোগ সারানো যাবে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল যে, ইনসুলিনের দ্বারা রোগীর রক্তে শর্করা অর্থাৎ (Sugar) সুগার কমিয়ে দেওয়াই বড় কথা নয় বা যথেষ্ট নয়, কারণ এতে রোগ আরোগ্য হয় না।
এটি এমন একটা রোগ চিনি কমিয়ে রাখলেও রোগীর দেহে ধমনীর জালিকাগুলি ক্রমে সংকুচিত হতে থাকে বা সঙ্কোচনের দিকে অগ্রসর হয়। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন রোগ দেখা দেবে এই রোগ থেকে। যা থেকে পরিণামে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই মধুমেহ বা ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যা মানব দেহের প্রতিটি পধান যন্ত্রকে আক্রমণ করে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।
ধরা যাক, এক ব্যক্তি চোখের রোগে কষ্ট পাচ্ছে, আবার আর একজন ভুগছে কিড্নী বা হার্টের রোগে, এদের অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, এর মূলে রয়েছে মধুমেহ বা ডায়াবেটিস। কাজেই রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষা না করা পর্যন্ত, এই রোগ সম্বন্ধে স্থির সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। এদিক থেকে রোগটিকে জটিল বলে অত্যুক্তি করা হয় না।
অনেকেই বলেন এই রোগটি নাকি বংশগত রোগ। কিন্তু সে কথাও সঠিক বলা যায়। না। কারণ এই রোগ বংশের কারো থাকলে যে তার সন্তানদের এই রোগ হবে, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই।
তবুও বলতে পারা যায়, এটি ভয়াবহ রোগ। কারণ এক ব্যক্তির দু'টি সন্তান। তাদের দু'জনেরই যদি এই রোগ হয়, আর তার পরে তাদের সন্তানদের মধ্যেও যদি এই রোগ হয়, তাহলে খুবই আশংকার বিষয়।
এদিক থেকে বিচার করে দেখলে মনে হয়, বোধহয় এই ভাবেই এই রোগ বাড়তে বাড়তে আজ অধিক সংখ্যায় এই ধরনের রোগীর অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। এইজন্য প্রতিষেধক ব্যবস্থা হিসাবে বলা হয়েছে, যে বংশে ডায়াবেটিস রোগ আছে, তাদের বিবাহ করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত এবং তিনি যে নির্দেশ দেবেন সেইমত চলা উচিত।
মেয়েদের মধ্যে এই রোগের মূল গুপ্ত অবস্থায় আছে কি না, সেটা জানা যায় তার প্রথম সন্তান জন্মাবার পরেই। তবে সম্পূর্ণ নয়, কিন্তু সম্পূর্ণ না হলেও শতকরা ৯৫% ভাগ জানা যায়। কিভাবে এটা জানা যায় তার বিবরণ দিচ্ছি। যেমন
১। যদি কোনও নারীর সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার সময় বেশ বড় ও লম্বা-চওড়া হয় আর ৪-৫ কিলো ওজন হয় অর্থাৎ ৯ থেকে ১০ পাউণ্ড।
আমাদের দেশে হৃষ্টপুষ্ট এই রকম সন্তান হলে সকলেই খুব আনন্দিত হয়, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা নয়, এতে আনন্দিত হবার চেয়ে চিন্তান্বিত হবারই কারণ বেশী থাকে। কেন না এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঐ নারীর দেহে মধুমেহ বা ডায়াবেটিসের মূল সুপ্ত অবস্থায় বিদ্যমান।
এর কারণ হলো দেহের অতিরিক্ত যে শর্করা (Sugar) সুগার রক্তে জমে না বা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায় না। সেটা এদের দেহে সঞ্চিত হয়ে গর্ভস্থ সন্তানকে লম্বা চওড়া করে তোলে। সেজন্য এদের সন্তান লম্বা-চওড়া ও বেশী ওজনের হয়ে থাকে। এছাড়াও এই রোগের মূল দেহে থাকলে আর অনেকগুলি লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন—
১। হঠাৎ একাধিক ওরা হয় দেহে।
২। বিনা কারণে হঠাৎ দেহের ওজন কমে যেতে থাকে।
৩। দৃষ্টশক্তি দ্রুত কমে যেতে থাকে।
৪। দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি ও পেশীতে বেদনা হয়।
৫। অত্যধিক পিপাসা ও জল খাওয়া।
৬। অত্যন্ত ক্ষুধা ও বার বার খাবার ইচ্ছা।
৭। বার বার প্রস্রাব পাওয়া।
এই রোগটি কিন্তু নতুন নয়, এটি বহু প্রাচীন রোগ। তার কারণ সুশ্রুত প্রভৃতি গ্রন্থে এই লক্ষণযুক্ত রোগের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। তাঁরা এই রোগটিকে বহুমূত্র রোগ বলে উল্লেখ করেছেন। মহর্ষি চরক এই রোগের নামকরণ করেছেন মধুমেহ রোগ। তিনি পরীক্ষা করে দেখেছিলেন যে প্রস্রাবে দেহস্থ শর্করা, যাকে আমরা সুগার (Sugar) বলি, সেটা বেরিয়ে যায় বলেই এবং বার বার প্রস্রাব হবার জন্যই এই নামকরণ তিনি করেছিলেন।
বর্তমানে বহু অভিজ্ঞ চিকিৎসক বলেন যে, শুধুমাত্র প্রস্রাব পরীক্ষা করেই যে এই রোগ ধরা পড়বে এমন কোনও কথা নেই; এর জন্য প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তওঁ পরীক্ষা করতে হবে। প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হলে পূর্ণ আহার করার কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা পরে প্রস্রাব সংগ্রহ করে
পরীক্ষা করলে হয়তো রোগ ধরা পড়তে পারে।
এখানে বলে রাখা বিশেষ দরকার যে, যেসব জায়গায় রক্ত পরীক্ষা করার সুযোগ নেই,
সেখানে প্রথমে প্রস্রাব পরীক্ষা করাতে হবে। তারপর রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এই রোগের বিভিন্ন কারণ এবং হরমোন জনিত কারণ সম্পর্কে এর আগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেজন্য এখানে আর সে সব বিষয়ে পুনরালোচনা করা প্রয়োজন মনে না করে বাদ দিলাম।
এই রোগাক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা শাস্ত্রে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর ফলে দেখা গেছে যে ১৫ বৎসর বয়স্কদের এবং তারপর থেকে ৪০ বছর বয়স ও তার পরের বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা সহজে করা যায়।
খুব অল্প বয়সে হলে—–ইনসুলিন বা ঐ জাতীয় রাসটিনন্ ডায়াবিনেজ প্রভৃতি প্রয়োগ করলে আরোগ্য হয়। চল্লিশের কাছাকাছি বয়স্কদের এইভাবে আরোগ্য করা যায়। কিন্তু ২৫ বয়স থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যকার বয়সের রোগীদের চিকিৎসা বেশ কঠিন।
এর কারণ হলো—এদের খাবার ঔষধ, অর্থাৎ ট্যাবলেট প্রভৃতিতে এদের বিশেষ কাজ হয় না। অপর পক্ষে ইনসুলিন ইঞ্জেকশান দিলে সাময়িক ভাল থাকে বটে, কিন্তু পরে রোগ লক্ষণ ক্রমে বেড়ে যেতে থাকে। সেজন্য এদের পক্ষে কোন্টা বিশেষ কার্যকরী, সেটা পরীক্ষা করে, তারপর চিকিৎসা করতে হবে।
এই রোগ থেকে পরবর্তী যেসব রোগ দেখা দেয়, সেগুলি হলো—গ্যাংগ্রিন, নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিক হৃদৌর্বল্য, ডায়াবেটিক রক্ত চাপ, ডায়াবেটিক কফরোগ প্রভৃতি। এইসব কঠিন ও দুরারোগ্য ব্যাধি পরবর্তীকালে দেখা দিতে পারে। আর এইসব রোগে রোগীর জীবন বিপন্ন হয়।
আজ পর্যন্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, মাঝে মাঝে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দেওয়া অথবা ট্যাবলেট খাইয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া, এ-রোগের আরোগ্যের কোনও ঔষধ বের হয়নি। তার ফলে রোগী যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন তাকে ঔষধ ব্যবহার করে যেতে হবে। তা না হলে বিপজ্জনক অবস্থা আসতে পারে।
এইসঙ্গে নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষাও করাতে হবে। রক্ত পরীক্ষাও করতে হবে। সেই সঙ্গে ঔষধ খেতে হবে। এদিক থেকে একে একটি দুরারোগ্য এবং জটিল অবস্থা আনয়নকারী ভয়াবহ রোগ বলা হয়। মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগটি সাধারণতঃ দু'ধরনের হতে দেখা যায়, এর মধ্যে প্রথমটি
হলো—কিডনীর জন্য বহুমূত্র রোগ।
কিডনীর জন্য যদি এটি হয়, তাহলে রোগী বার বার প্রস্রাব করে। তবে প্রস্রাব বার বার হলেও তাতে শর্করা (Sugar) জাতীয় বস্তু দেহ থেকে বেরিয়ে যায় না। একে বলা হয় ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Diabetes insipidus)।
দ্বিতীয় প্রকার বহুমূত্র বা মধুমেহ হলো এমন একটি রোগ, যা হলো মানব দেহে যে শর্করা জাতীয় খাদ্য হজম হয়ে গ্লুকোজে (Glucose) পরিণত হয়, সেটা দেহে শোষিত অর্থাৎ এ্যাবজর্ব (Absorb) না হয়ে, প্রস্রাবের সঙ্গে তার প্রায় অধিকাংশই বেরিয়ে যায়। এই রোগটিকে বলা হয ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes Mellitus) বা আসল ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ।
মানবদেহের রক্তে থাকে শর্করা, কিন্তু রক্তে মূত্র থাকে না। দেহস্থিত গ্লুকোজ (Glucose) *এইভাবে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে গেলে, শরীর ক্রমে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
এ-ছাড়া মূত্রের স্বাভাবিক স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি (Specific Gravity) অর্থাৎ আপেক্ষিক গুরুত্ব হলো ১০১০ থেকে ১০২০ পর্যন্ত। কিন্তু এই রোগ আক্রমণ করলে মুত্রের আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific Gravity) বেড়ে গিয়ে ১০৩০ থেকে ১০৫০ হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে আরও বেড়ে গিয়ে ১০৬০ থেকে ১০৭০ পর্যন্ত হয়ে যায়।
রক্তের মধ্যেও গ্লুকোজ বেড়ে যায়। গ্লুকোজ দেহে ঠিকমত এ্যাবজর্ব (Absorb) অর্থাৎ শোষিত হয় না।
অগ্ন্যাশয় অর্থাৎ প্যাংক্রিয়াস (Pancreas)-এ এক ধরনের কোষ আছে, এ-কথা আগেই আলোচনা করেছি। এর নামই হলো আইলেট অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স (Islets of Langerhans)।
এই আইলেট অব্ ল্যাঙ্গারহ্যান্স কোষ থেকে ইনসুলিন (Insulin) নামে এক ধরনের রসক্ষরণ হয়। এই রসের সাহায্যেই মানবদেহে গ্লুকোজ (Glucose) ঠিকমত শোষিত হয়।
আইলেট অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স (Islets of of Langerhans)-এর কোষ অর্থাৎ সেল (Cell) গুলি অকর্মণ্য হলে বা কর্ম-ক্ষমতার অভাব হলে ইনসুলিন নামক রসক্ষরণ কমে যায়। তারই ফলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। পরিণামে এই রোগ আক্রমণ করে।
সাধারণতঃ মধ্যবয়স্ক, অলস প্রকৃতি, মেদবহুল দেহ, এবং ভোগী লোকদের এই রোগ বেশী হতে দেখা যায়। যাঁরা দৈহিক পরিশ্রম খুব কম করেন, মানসিক শ্রম বেশী করেন, তাদের এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। এই জন্যই উচ্চ মধ্যবিত্তদের মধ্যে এবং ধনীলোকদের মধ্যে প্রায় এই রোগাক্রান্ত লোক দেখতে পাওয়া যায়।
অনেক ক্ষেত্রে আবার বংশগত কারণেই এই রোগ হয়ে থাকে। মাতা-পিতার এই রোগ থাকলে, তাদের সন্তানদেরও মধ্যবয়সে এই রোগ আক্রমন করার সম্ভাবনা বেশী থাকে। তবে মাতাপিতার এই রোগ থাকলেই যে সন্তানদের এই রোগ হবে, এ কথা সঠিকভাবে বলা যায় না।
রোগ নির্ণয় 
লক্ষ্মণ : এই রোগ খুবই ধীরে ধীরে শুরু হয়। সেই সময় যেসব লক্ষণ দেখা যায়, তা
হলো
(১) ঘন ঘন পিপাসা পায়, সেই সঙ্গে রোগীর বার বার প্রস্রাব হতে থাকে।
(২) রোগীর অর্থাৎ রোগ আক্রমণ করেছে সন্দেহ হলে তার প্রস্রাব বেনাডিক্টস্ সলিউশান (Benedict's Solution) দিয়ে টেস্টটিউবে (Test tube) ফোটালে সেটা নাপ রং বা হলুদ রং হয়ে যায়। রক্তে শর্করা (Sugar) বেড়ে যায়।
(৩) প্রচণ্ড ক্ষুধা পায়।
(৪) রোগীর পেট শীর্ণ হতে থাকে।
(৫) রোগী শরীর দুর্বল ও শীর্ণ হতে থাকে দিন দিন।
(৬) কিছু খেলে সেই খাদ্য দেহের কাজে না লেগে সব বেরিয়ে যায়।
(৭) দেহের ত্বক অর্থাৎ চামড়া খসখসে হয়ে যায়।
(৮) চুলগুলি চিক্কণ ভাব থাকে না, রক্ষ দেখায় এবং চুল পাতলা হয়ে যায়।
(৯) হাত পায়ের নখ পাতলা ও অশক্ত হয়ে পড়ে এবং সহজেই ভেঙে যায়।
(১০) ঠোঁট শুষ্ক হতে থাকে। দাঁত ক্ষয়ে যেতে থাকে। (১১) পায়খানা ঠিমতো হয় না, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
(১২) রোগীর চাঞ্চল্য ও উৎসাহ থাকে না, সর্বদা একটা বিমর্ষ ভাব দেখা দেয়।
(১৩) দৃষ্টি শক্তি ক্রমে ক্রমে কমে যেতে থাকে।
(১৪) রতিশক্তিও ক্রমে ক্রমে কমে যেতে থাকে। (১৫) রোগাক্রান্ত ব্যক্তির অনেক সময় চুলকানি, ফোঁড়া ও ব্রণ হয়।
(১৬) অনেকের আবার দুষ্টব্রণ বা কার্বঙ্কল হতে দেখা যায়।
(১৭) সামান্য ক্ষত থেকে গ্যাংগ্রীন (Gangrene) উপসর্গ দেখা দেয়।
(১৮) রক্তে এ্যাসিটোন (Acetone) বেড়ে গেলে রোগী তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে বা মূৰ্চ্ছিত হয়ে পড়ে। চিকিৎসা শাস্ত্রে একে বলে কোমা (Come)। এ অবস্থায় অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে এ থেকে পরবর্তীকালে ক্ষয়রোগ আক্রমণ করে থাকে।
রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা
(ক) রক্ত শর্করা (Blood Sugar) ব্লাড সুগার অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে।
(খ) স্বাভাবিক উপবাসে ৮০ থেকে ১২০ মিঃ গ্রাঃ ১০০ এম. এল।
(গ) এর দু'ঘণ্টা পরে কিছু খেয়ে পোস্ট প্যানড্রিয়াল (Post Pandrial) ১০০ মিগ্রা.
১০০ এম. এল.।
উপসর্গ
(১) ডায়াবেটিস কোমা (Diabetes Coma) অর্থাৎ সংজ্ঞাহীনতা। (২) ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি অর্থাৎ চক্ষুর রেটিনার রোগ বা চক্ষু থেকে রক্তপাত
প্রভৃতি হয়।
(৩) ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি অর্থাৎ কিডনীর রোগ।
(৪) ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি (নার্ভের রোগ অর্থাৎ স্নায়ু রোগ) একে আবার নিউরাইটিসও বলা হয়।
(৫) ধমনী ও হৃদপিন্ডের রোগ।
(৬) যক্ষ্মা, কাৰ্বাঞ্চল, ফোঁড়া, গ্যাংগ্রিন ইত্যাদি রোগের জীবাণু সংক্রমণ।
(৭) লিঙ্গে বা যোনিতে ছত্রাক সংক্রমণ।