ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য নির্ণয়

(১) এই রোগে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্য বর্জন করতে হবে।
(২) গুড়, চিনি, আলু, চিড়া, অন্যান্য মিষ্টদ্রব্য ত্যাগ করতে হবে।
(৩) প্রোটিন জাতীয় খাদ্যই হলো এই রোগের প্রধান খাদ্য। খুব সামান্য ফল ও খুব অল্প পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট খাদ্য খতে হবে।
(৪) সাধারণ খাদ্য হিসাবে—প্রোটিন ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম।
(৫) ফ্যাট জাতীয় খাদ্য – ৫০ গ্রাম।
(৬) কার্বোহাইড্রেট–১০ থেকে ১৫০ গ্রাম।
(৭) ভাত খুবই কম অথবা ত্যাগ করতে হবে।
(৮) ভাতের পরিবর্তে সুজির বা আটার রুটি খেলে উপকার হয়। 
(৯) ছানা, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দই প্রচুর খেলেই ভাল হয়।
(১০) তেল বা ঘি যতটা পারেন কমিয়ে, তার পরিবর্তে মাখন খাওয়া ভাল। 
(১১) তরকারীর মধ্যে—শাক, শশা পটোল, উচ্ছে, ট্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, ফুলকপি, পালং, টম্যাটো প্রভৃতি উপকারী।
(১২) ফলের মধ্যে নারকেল, ফুটি, তরমুজ, আপেল সেদ্ধ খাওয়া উপকারী। উপরোক্ত খাদ্যগুলি হিসাব করে রোগীর জন্য প্রায় ৩০০০ ক্যালোরো সমন্বিত একটি পৃথক খাদ্য তালিকা তৈরী করতে হবে, এবং সেই তালিকা অনুযায়ী রোগীকে খেতে দিতে হবে। 
(১৩) চা, কফি, কোকো প্রভৃতি খেতে হলে চিনির পরিবর্তে স্যাকারিন ব্যবহার করবেন। ছানা, দই প্রভৃতির সঙ্গে সামান্য পরিমাণে স্যাকারিন ব্যবহার করা যায়। 

ডায়াবেটিস রোগীরা যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
(১) যে কোন রকমের মিষ্টি, আইসক্রিম, কুলফি, চকোলেট, মিছরি।
(২) যেসব সবজিতে বেশী মাত্রায় স্টার্জ রয়েছে; যেমন—আলু, মিষ্টি আলু, শাঁকালু, ভাতের মাড় বা ফেন।
(৩) সুজি, ময়দা, সাদা আটা, বেশিনে পালিশ করা চাল।
(৪) দুধ থেকে তৈরী যেসব খাবারে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। যেমন—খোয়া, পনির, চিজ, দই।
(৫) ঘি, মাখন, ডালডা বা তেলেভাজা ভাজা পরোটা, পুরি, সিঙ্গাড়া, পকোড়া। 
(৬) যেসব ফলে সুগার বা স্টার্জ বেশী থাকে। যেমন–কলা, আঙ্গুর, লিচু ও আম।

ডায়াবেটিস রোগীরা যেসব খাবার খেতে পারেন
(১) শর্করাহীন কৃত্রিম মিষ্টি।
(২) সবুজ শাকসব্জি, উচ্ছে, করলা, বেগুন, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, সয়াবিন, সজনে, কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড়, পেঁয়াজকলি তাছাড়া বিভিন্ন শাকপাতা।
(৩) আটার সাথে ভুসি মিলিয়ে রুটি খেতে হবে। 
(৪) মাখন তোলা দুধ ও তা থেকে তৈরী দই।
(৫) সেঁকা পাঁপড়, তন্দুরী রুটি খেতে পারেন। 
(৬) কমলালেবু, মৌসুম্বী, অল্প পরিমাণ আপেল ও তরমুজ।
(৭) খেতে পারেন ডিমের সাদা অংশ, ছোট দেশীমুরগী ও সবধরনের ছোট মাছ। 
(৮) মাঝে মধ্যে খেতে পারেন ব্র্যান্ডি বা সেই ধরণের পানীয়।

আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা
পূর্বোক্ত প্রকারে একটি খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করে, নিয়মিত সেই অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাবে। তখন প্রস্রাব পরীক্ষা করলে আর চিনি পাওয়া যাবে না। এই সঙ্গে ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
১। রক্তে যদি চিনি বেশী জমে যায়, তাহলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন— 
(ক) কয়েকটি ডুমুর পাতা ধুয়ে বেটে রস বার করে ছেঁকে নিয়ে সেই রস খেলে, অতিরিক্ত শর্করা কমে গিয়ে প্রস্রাব পরিষ্কার হয়।
(খ) বেশী পিপাসা থাকলে—জলের সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেলে পিপাসা কমে যায়। 
(গ) আমলকীর রস ৪/৫ চামচ খেলে অথবা আমলকী টুকরো করে কেটে মুখে রেখে চুষে খেলে পিপাসা কমে যায়।
(ঘ) স্নানের পূর্বে দেহে ভালভাবে সরষের তেল মালিশ করতে হবে।
(ঙ) লঘু ব্যায়াম বা প্রাতে ও সন্ধ্যায় উপযুক্ত স্থানে ভ্রমণ উপকারী। 
(চ) নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করাতে হবে। প্রয়োজন হলে রক্ত পরীক্ষাও করাতে হবে।