দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলা অথবা দক্ষিণ রাঢ়ের যে ভূখণ্ড দিয়ে সুবর্ণরেখা নদী প্রবাহিত হয়েছে, অববাহিকার অধিবাসীরা যে ভাষায় কথা বলে থাকে সম্প্রতি ভদ্রজনেরা তার নামকরণ করেছেন 'সুবর্ণরৈখিক বাংলা' বলে। যদিও স্থানীয় ভাবে এই ভাষাকে কুলটিয়া বা কুলাটিয়া ভাষা নামেই অভিহিত করা হয়। স্থানীয় ভাবে এই কুলটিয়া বা কুলাটিয়া শব্দটি বলতে সম্ভবতঃ নদী কুলবর্তী ভাষাকেই বলা হয়েছে।
পণ্ডিত জনের একাংশ আবার এই কথ্যভাষাকে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলা উপভাষা কিংবা ওড়িয়া-বাংলা ভাষা বলার পক্ষপাতি। যদিও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলা উপভাষা অথবা ওড়িয়া-বাংলা ভাষার কথ্যভূমি বলতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোপীবল্লভপুর থেকে পূর্ব-মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম অবধি প্রায় 17টি থানা এলাকাকে বোঝায়। সব মিলিয়ে যার আয়তন 5,500 বর্গ থানা এলাকাকে বোঝায়। সব মিলিয়ে যার আয়তন 5,500 বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু এই নিবন্ধে আলোচিত সুবর্ণরৈখিক বাংলা বা কুলটিয়া বাংলা কথিত হয়ে থাকে পশ্চিম মেদিনীপুরের মাত্র 6টি থানা এলাকায় এবং সব মিলিয়ে যা মাত্র 2502.8 বর্গ কিলোমিটারে বিস্তৃত।
ঝাড়খণ্ড থেকে নির্গত হয়ে সুবর্ণরেখা নদী গোপীবল্লভপুর থানার হাতিবাড়ির কাছে পশ্চিম বাংলায় প্রবেশ করেছে এবং দাঁতন থানা এলাকার সোনাকোনিয়া থেকে এই নদী উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলায় প্রবেশ করে তালসারি সংলগ্ন কীর্তিভাঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। গোপীবল্লভপুর, বেলিয়াবেড়া, নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল, কেশিয়াড়ী এবং দাঁতন এই 6টি থানা এলাকায় প্রায় 60 কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে সুবর্ণরেখা। আর তারই অববাহিকায় পলিমিশ্রিত উর্বর মৃত্তিকায় সম্মিলন ঘটেছে নানা জনগোষ্ঠীর। নানা ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষঙ্গের সাথে যুক্ত হয়েছে বেঁচে থাকার তাগিদে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডের ধারা। আর এসবের ফলশ্রুতিতে একটি স্বতন্ত্র উপভাষা হিসাবে কয়েকশ বছর ধরে টিকে রয়েছে সুবর্ণরৈখিক বা কুলটিয়া বাংলা। কোন পৃথক জনগোষ্ঠী বা বৃত্তিধারকদের ভাষা নয় এটি। এতদ অঞ্চলের সমস্ত জনগোষ্ঠীর একটি সার্বজনীন কথ্য ভাষার রূপ হিসাবেই সুবর্ণরৈখিক বা কুলটিয়া বাংলা স্বীকৃত হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলা উপভাষার সঙ্গে এর পার্থক্য এই যে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলা উপভাষা কেবলমাত্র ওড়িয়া বাংলার সম্মিলন কিন্তু সুবর্ণরৈখিক বাংলা বা কুলটিয়া বাংলায় তার চেয়েও ব্যাপকতর সংযোজন ঘটেছে। ঝাড়খণ্ডের হিন্দি ভাষা ছাড়াও এখানে সম্পৃক্ত হয়েছে সাঁওতালি, মুন্ডারী, কোল এবং শবরাদি অস্ট্রিক গোষ্ঠীর ভাষা সম্পদ।
একদা ওই জনপদের এই অংশে উড়িষ্যার স্থানীয় নৃপতিদের (ময়ূরভঞ্জ আদি) শাসন কায়েম ছিল। পরবর্তীকালে গোপীবল্লভপুরকে কেন্দ্র করে বাংলা থেকে উড়িষ্যায় প্রবাহিত হয়েছিল বৈষ্ণবধর্মের জোরালো স্রোত। সুবর্ণরেখার জলধারা এবং উর্বর মৃত্তিকায় জলজীবি ও কৃষিজীবি জনগোষ্ঠীর সম্মিলন হয়েছিল। সিংভূম, মানভূম সহ বিস্তৃত জঙ্গল ও পর্ব্বত থেকে এই এলাকায় অভিবাসন হয়েছিল শবরাদি শিকারজীবি মানুষের। নিশ্চিত এবং স্থায়ী জীবিকার সাথে আগমন হয়েছিল সাঁওতাল, কোল, মুণ্ডা প্রভৃতি উপজাতিদের। এই নানাবিধ সম্মিলনে সকলের জন্য প্রয়োজনীয় এক উপভাষার জন্ম হয়েছিল এক সময়, কালক্রমে তাই সুবর্ণরৈখিক বাংলা বা কুলটিয়া বাংলা।
শেষ অবধি এই কথ্য ভাষার ভিত্তিতেই তৈরি হল সাধারণের আচরিত সংস্কৃতি ক্রিয়াকাণ্ড-সমূহ। গৃহের অভ্যন্তরে ঠাকুরঘর থেকে তা প্রসারিত হল সর্বজনের আচরিত অনুষ্ঠানসমূহে। ব্রতাচার, বিবাহ, পূজা-পার্বন, প্রবাদ-প্রবচন, যাত্রা, পালাগানের ঠাঁই করে নিল এই ভাষা।
প্রাথমিকভাবে কথ্য ভাষার উপাদানে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ফুটে উঠতে থাকে মৌখিক সাহিত্যে। মৌখিক সাহিত্য আগাগোড়াই স্মৃতিবাহী। শিশুভোলানো ছড়া, ঘুমপাড়ানি ছড়া, বিবাহগীতি, ব্রত এবং পার্বনী গান, বারমাস্যা, প্রবাদ-প্রবচন ইত্যাদি নানাপ্রকার মৌখিক সাহিত্যের পাশাপাশি সৃষ্ট হল বিভিন্ন পালাগান। এতদঞ্চলের সেই পালাগানগুলির মধ্যে খ্যাত হল চুড়িয়া-চুড়িয়ানিপালা, ললিতার পালা, সীতাচুরি, যুগীযাত্রা ইত্যাদি। কালক্রমে তা লিখিত আকারের রূপ নিল। গোপীবল্লভপুরকে কেন্দ্র করে যখন এই অঞ্চলের বৈষ্ণবধর্মের প্রসার ঘটল তখন এখানকার বিভিন্ন পদকারীরা এই ভাষাতেই বেশ কিছু পদাবলী রচনা করলেন। একসময় এই ভাষাতেই গোলকনাথ বসু নামক একজন প্রধান শিক্ষক রচনা করলেন সোনার পাথরবাটি নামক দুখণ্ডের একটি উপন্যাস। ইদানিংকালে বেশ কিছু লেখক এই ভাষাতে সাহিত্য রচনায় ব্রতী হয়েছেন।
শব্দভাণ্ডার
তৈজসপত্র
হাড়ি – হাঁড়া
বাটি – তাটিয়া
ছোটবাটি – গিনা
ঘটি – নদীয়া
বড় বাটি – জাম
পোষাক পরিচ্ছদ
কাপড় – নুগা
বিছানা/মাদুর – মসনা
আয়না – আরশি
চিরুনি – পায়না
দিনকাল
সংক্রান্তি – সাঁকরাত
পূর্ণিমা – পুনাই
অমাবস্যা – আমাবস্যা
বৃহস্পতিবার – গুরুবার/লক্ষ্মীবার
রবিবার – রোববার
জ্বালানো কাঠ – জুমড়াকাঠ
বেড়াধার – আঁটাধার
খানাখন্দ – গজকান
আড়াল – অছাড়
চিৎকার – হুর
কোদাল – কদাল
একটা – গটে
এঁটো – সকড়ি/শুকুঁড়
অশৌচ – ছুতকা/ছুতা/অশুচ
আসুন – আখর/এখরা
এলাকা – বন্ধ
দোয়ার – দুয়ার
সামনে – ছামু
পিছনে – পিছু
তলা গোড়ায় – গড়া
সর্ম্পক
বোন – ভন
পিসি – ঝি
বন্ধু - সালতি
কাজের মেয়ে – কাজের ঝি
মাস
বৈশাখ –
জৈষ্ঠ্য – জৈষ্ঠ্যি
আষাঢ় – আষাঢ়
শ্রাবন – শাবন
ভাদ্র – ভদর
আশ্বিন – আশি্ন
অগ্রহায়ন – অঘ্রান
পৌষ – মহসুর/মৌসর
মাঘ – মাঘ
ফাল্গুন – ফাগুন
চৈত্র – চৈইত
রঙ
সাদা – ধবা
লাল – নাল
কালো – কালা
হলুদ – হনুদ
বেগুনি – বেগনি
বঁটি – পনঘি
উনুন – চুলাই/চুলি
নতুন – নুয়া
পুরানো – পুন্যা
নামা – অলাই
ফেলা – পকাই
পথ – বাট
বেড়ার গেট – আঁখ/আগড়
সীমানা – পগার
পুকুর – গাড়িয়া/গেড়িয়া
কয়াল – এঙারা
গর্ত – গাড় ঢিল - হিঁটাল
জমির আল – হিড় খুঁটি – মাইখুঁটি
ভঁতা – কাঁদল/হাঁসিয়া (ঘরের পিছনের অংশ – উলি – কাঁদল)
বাঁশের ডাং – উখুনডাং। বেড়া দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত বাঁশের কঞ্চির ডাং – আঁকেডাং
বাঁশের বা কাঠের দণ্ড (দরজার পিছনে আটকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়) – হুড়কা
স্বার্থপর – এঁকুড়শঅড়ি (একলাচাওয়া) মজুর > মুনিস
প্রতি মাসে বছরে কিস্তিতে মজুরী > বর্তনা ফসলের অংকে মজুরী > সিদা
চালের সাথে আলুসবজিসহ দক্ষিণা দান করা > সিদা
কেবলমাত্র খাদ্যের বিনিময়ে কাজ > পেটভাতা/পেটভাতুয়া
ছেলে - টকা/ছা একদল ছেলে – টকা মেনে/ছালা
একটি টাকা – গুটিয়ে টাকা ইঁদুর – মুসা
চেয়ে দেখা বা চেয়ে থাকা – ভালিয়া
বিসাই – বিড়াল শিয়াল – শৃগাল
কোথায় আছো – কাই আছু
কোথায় যাচ্ছো – কাই যাউচু
কোথায় যাবে – কাই যাবু
কোথায় আছিস – কুনঠি আছু
কোথায় যাবি – কুঁটকে যাবু/কুঁড়ে যাবু
কোথায় গিয়েছিলেন – কাই যাইথল
কি করছিলেন – কি করথল
কোথায় গিয়েছিলি – কাই যাই থুলু
কি করছিলি – কি করথুলু
কি বলছেন – কি বলনটন/কি কওনটন
অদবা/অতবা > এখন/এক্ষুনি
কদবা/কতবা > কখন
অমনু > এমনি বুদা > বনবাদাড়
ছাঁদি > জড়ানো ফরকি > ঘুরে বেড়ানো
সড়কি > ঘসে পড়া
খসরি > খসে পড়া মহকি > গঁন্ধে ম ম
নেমে আয় – অনাই আয়
নামিয়ে দাও – অদরাই দাও/অলহাই দাও।
প্রবাদ –
1। বলনে মা মার খায়
না বলনে বাপ আঁইবা খায়।
2। রাজুর সাথে চলবু ধাউ
সাথে রাখবু জুমড়া কাঠ।
3। বাটে দেখা হইলা কামার
ফাল পাজাই দে আমার।
প্রবচন –
1। বাপের ভন পিসি
ভাত কাপড়ে পুষি।
2। পরের ধরে পর ধানী
শুকা পুড়্যা মহাজনী।
ধাঁধাঁ –
1। বন নু বারাইলা পোত
পেতি বলে তোর ভাতে মুতি।
2। এ পাড়ার মারলা তাড়া
তাড়া বলে বামুন পাড়া।
ছড়া –
1। কাতা ধারে বিছাতি বন
তোকে ছুঁতে কতক্ষণ।
2। লুক লুকানি ভানিয়া কানি
লুকাই যাবু জাইগা জানি।
3। এক তারা নারাঘারা
দুই তারা গরু মরা
তিন তারায় নাই দোষ
চার তারা ঘরে পোশ।
শব্দার্থ
বলবে – বলেদিলে বাপ – বাবা
আঁইবা – এঁঠো বাট – পথ
রাখবু – রাখা জুমড়া – জ্বালাকাঠ
হইলা > হলো ফাল – লাঙ্গলের ফাল
পাজাই > শান দেওয়া ভন > বোন
পুষি > পালন করা পরধানী >
শুকা > শুকনো মাছ পুড়্যা > পোড়ানো
নু – থেকে বারাইলা > বার হওয়া
পেতি – পেত্নি মুতি – প্রস্রাব
মারলা – মারা হলো ছুঁতে > ছুঁয়ে ফেলা
তাড়া > কাঠের বা বাঁশের দণ্ড
বামুন > ব্রাহ্মণ কাতা > নদীর পাড়
ডালিয়া > চেয়ে দেখা কানি > কাঠি (বাঁশের)
যাবু > যাওয়া জাইগা > জায়গা
নারাখারা > ছিন্নভিন্ন পোশ > প্রবেশ।
(সুবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী উড়িষ্যা প্রভাবিত অঞ্চলের প্রচলিত ভাষায় লেখা)
গহল চহল পূজার দিনে
- অর্ধেন্দু ত্রিপাঠী
ছলকি বুলে খালের পানি
উদকি উঠে নদী
ধব্ ধাবিয়া কাশি বুদায়
মনটা যে যায় ছাঁদি।
পাশের নোক রহিলা ধুরে
তার নাগি মন কুহলি মরে
কে দিলাগো অমন করি
তুমার সাঁগে বাঁধি
গহল চহল পূজার দিনে
দেহেটা উঠে কাঁদি।
টহকি উঠে নুয়া আঁগা
ফরকি বুলে ছা-গা
কহিথিল ওউ পড় পূজায়
নি যামু তোকে কইলকাতায়
পাশরি গেল ওউ ক দিনে
সবু হিলা বাঁগা
ডহকি উঠে মনে নিয়া
অমনু দিল দাগা।
হরষ মনের যত কথা
সবু পালায় ভাগি
গহল চহল পূজার দিনে
দেহেটা উঠে কাঁদি।।
কবিতা – অর্থ
গহল চহল পূজার দিনে
গহল চহল > জাঁকজমক
ছলকি বুলি > ছলকে ওঠা
বুদা > বনবাদাড়
বুদা > বনবাদাড়
নোক > লোক
নাগি > লাগি সাঁগে > সঙ্গে
নুয়া > নতুন
ফরকি > ঘুরে বেড়ানো
সরকি > খসে পড়া
পাশরি > ভুলে যাওয়া
বাঁগা > না
অমনু > এমনি
ছাঁদি > জড়িয়ে যাওয়া
ধুরে > দূরে
কুহলি > আকুলি
টহকি > জ্বলে
আঁগা > জামা
ছা-গা > ছেলেরা
মহকি > গঁন্ধে ম-ম
হিলা > হওয়া
ডহকি > ডগমগিয়ে
দেহে > দেহ
সুবর্ণরৈখিক বাংলায় (রোহিনী, নয়াগ্রাম, গোপিবল্লভপুর, বহড়া, গুড়া এলাকার আঞ্চলিক ভাষা) রচিত কবিতা।
অউটা জীবন
- ডাঃ শুভব্রত পালোই
খাটি খাই খাটি পহরি
খাটবা জীবন সারা
তাহিনে কেনে নোকের পাখে
মুড়টা তল করা ?
বনে বাদাড়ে আমার মেনে
খাটি সারা দিন,
খরা বন্যায় শীতে টুটরি
রহি বছর দিন।
নটা বুদায় পসি আমার
কেঁদূ পতর টেকি,
শাল পতর টেকি আনি
পতর থালি টিপি।
কুরকুট বাসার হদিশ রাখি
বিছেই সময় হিনে,
ডাগি গাছের আগাচুটিনু
মহু বাসা থিনে।
চেরমূল সব নড়েই করি
বাটি পিনো করি,
কা-গণ্ডাবাখব হিলা
গনি শুকলা করি।
মহুল ফুল ফুটনে থরে
মহকে বন সারা,
ভোর পঁহতায় কুড়েই ফুল
পাছিয়া ঠেকা পুরা।
বনের জিনিস খাই আমার
বনের জিনিস বিকি,
কাই থাইলান বাবুর দল
দেয়টেন বন কে কাটি।
অতবা লোকের মুলিয়া খাটি
ক-পইসা বা পাই
মৌসোর মাস হিনে থরে
নামাল খাটতে যাই।
গতর খাটেই অমনু করি
পেটের মজি জুটেই,
সারাদিনে বেলে খাই
পেটের জ্বালা জুড়েই।
নুহা আর সিমেন্ট ফেক্টারি
হিলা দেশে আসি
কত লোক হেঁসরি মরেন
হিসাব কি আর রাখি ?
সিধু কানু মস্ত বীর
হিলান অমনু খাই
বিরসা মুণ্ডার মতন রতন
পাইছি দেশে থাই।
বলতে গেলে অনেক কথা
হবেনি কথা শেষ,
তাহিনু আমার ভালোবাসি
আমকার ওই দেশ।
এটাই জীবন (বাংলা অনুবাদ)
- ডাঃ শুভব্রত পালোই
খেটে খাই খেটে পুরি
খাটবো জীবন সারা
তাহলে কেন লোকের কাছে
মাথাটা নত করা ?
বনে জঙ্গলে আমরা সবাই
খাটি সারাদিন
খরা বন্যায় শীতে কুঁকড়ে
থাকি বছর দিন।
ঝোপে ঝাড়ে ঢুকে মোরা
কেঁদু পাতা তুলি,
শাল পাতা তুলে এনে
বানাই পাতার থালি।
কুরকুট বাসার খোঁজ রাখি
পাড়ি সময় হলে,
ভাঁগি গাছের আগডালেতে
মৌ বাসা হলে।
শেকড় বাকড় জোগাড় করে
বেঁটে ভালো কের,
ক-গণ্ডাবাখর হলে
গুনি শুকনো করে।
মহুল ফুল ফুটলে পরে
সু-গন্ধে বন ভরে,
ভোর সকালে কুড়াই ফুল
ঝুড়ি ঝুড়ি ভরে।
বনের জিনিস খাই মোরা
বনের জিনিস বিকি
কোথায় ছিল বাবুর দল
দিচ্ছে বনকে কাটি।
এখন লোকের মজুর খেটে
ক-পয়সা বা পাই
অঘ্রায়ন মাস হেল একবার
পূব খাটতে যাই।
শরীর খাটিয়ে এমনি করে
পেটের দানা জোগাই
সারাদিনে একবার খেয়ে
পেটের জ্বালা জুড়াই।
লোহ আর সিমেন্ট ফেক্টারি
হলো দেশে এসে
কত লোক হাঁপিয়ে মরে
কেউ কি হিসাব রাখে।
সিধু কানু মস্তবীর
হলেন এমনি খেয়ে
বিরসা মুণ্ডার মতন রতন
পেয়েছি দেশে থেকে।
বলতে গেলে অনেক কথা
হবে না কথা শেষ,
তাহলেও মোরা ভালোবাসি
আমাদের এই দেশ।
[ বর্তিকা 2009 ডিসেম্বর কোলকাতা থেকে প্রকাশিত। ]
কার মুঁহুঁ চাঁহি উঠথুনু কে জাঁনে ভ্রমর
- ডাঃ শুভব্রত পালোই
ঘরে আছু নাকি টুনিয়া ভাই
ঝড়িয়াটায় আজ তোর ঘরে মকা খাই।
আরটিকে আঘু যাইথিনু নদীবাটিয়া
কি দেখবুরে ভাই বন্যিয়া চারবাটিয়া।।
আরে মকা নাইতো বাদাম বারকা
আর ভাজা নাইতো ভাজা করা।
মুই বলথিনু কি – কাল জাল বারকাইবা
দেখবুনা খেল – কতগা করি মাছ ধরবা।।
দূর বাবু তুই বেজাঁয় দেরি করুটু
নাই আছে তো – নাই বলি দিবু।
চাষটা এবছর এক দম হজি গেলা
এ বছর বন্যিয়া ত – সে বছর খরা হিলা।।
তোর ঘরে মনে হয় গধি আঁডুলি যাইছে
কিছু নাইত – ফঁটায় দকতা হিনেবি দে
আঘু অনেক ইলশা উঠথায় সুবনরেখায়
অখঁঅ সে ইলশা কুঁঠে আছে জাঁউ ? কল্কাতায়।।
দূর শালা, মকে আজ একদম ডুবেই দিলু
কিছু নাইত – অন্তত বিঁড়ি গটায় দিবু।
পড়নেভি জ্বালা – চাষ করনেভি জ্বালা
তার চেয়ে বল – মাছ ধরা অনেক ভালা।।
কার মুঁহুঁ চাঁহি উঠথুনু কে জাঁয়ে
কালপুষ্যাভি গটায় পুষি পারুনি ঔ খাঁয়ে।
পিঠটা নাহিনে শুল শুলাই দিতা ঘঁটায়
নিদটাভি তাহিনে মাঝি দিতঁ মটকায়।।
কবিতা – অর্থ
আছু > আছো টুনিয়া > ছোট
ঝড়িয়া > প্রকৃতি ঝড় জল
মকা > ভুট্টা
আরটিকে > আরো একটু
আঘু > আগে
যাই থিনু > গিয়েছিলাম
বাটিয়া > নদীর পরে
বন্যিয়া > বন্যা প্লাবিত
পরবাটিয়া > চারদিকে
বলথিনু > বলছিলাম
বারকাইবা > বের করবো
কআ > কতগুলো
ধরবা > ধরা হবে
বেজাঁয় > অনেকক্ষণ
করুচু > করছিস দিবু > দিবে
হজি > পরে যাওয়া হিলা > হলো
ফঁটায় > এত ফোঁটা
দকতা > দোক্তা
উঠযায় > উঠতো ইলশা > ইলিশ
কুঁঠে > কোথায়
অখঁতা > এখনতো
মকে > আমাকে জাঁউ > জানো
মুঁহুঁ > মুখ দিলু > দিলে
ঋণস্বীকার –
1। সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, 2। বিনয় ঘোষ, 3। বঙ্কিমচন্দ্র মাহাত, 4। নরেশ জানা
শব্দভাণ্ডার
তৈজসপত্র
হাড়ি – হাঁড়া
বাটি – তাটিয়া
ছোটবাটি – গিনা
ঘটি – নদীয়া
বড় বাটি – জাম
পোষাক পরিচ্ছদ
কাপড় – নুগা
বিছানা মাদুর – মসনা
আয়না – আরশি
চিরুনি – পায়না
দিনকাল
সংক্রান্তি – সাঁকরাত
পূর্ণিমা – পুনাই
অমাবস্যা – আমাবস্যা
বৃহস্পতিবার – গুরুবার লক্ষ্মীবার
রবিবার – রোববার
জ্বালানো কাঠ – জুমড়াকাঠ
বেড়াধার – আঁটাধার
খানাখন্দ – গজকান
আড়াল – অছাড়
চিৎকার – হুর
কোদাল – কদাল
একটা – গটে
এঁটো – সকড়ি শুকুঁড়
অশৌচ – ছুতকা ছুতা অশুচ
আসুন – আখর এখরা
এলাকা – বন্ধ
দোয়ার – দুয়ার
সামনে – ছামু
পিছনে – পিছু
তলা গোড়ায় – গড়া
সর্ম্পক
বোন – ভন
পিসি – ঝি
বন্ধু - সালতি
কাজের মেয়ে – কাজের ঝি
মাস
বৈশাখ –
জৈষ্ঠ্য – জৈষ্ঠ্যি
আষাঢ় – আষাঢ়
শ্রাবন – শাবন
ভাদ্র – ভদর
আশ্বিন – আশি্ন
অগ্রহায়ন – অঘ্রান
পৌষ – মহসুর মৌসর
মাঘ – মাঘ
ফাল্গুন – ফাগুন
চৈত্র – চৈইত
রঙ
সাদা – ধবা
লাল – নাল
কালো – কালা
হলুদ – হনুদ
বেগুনি – বেগনি
বঁটি – পনঘি
উনুন – চুলাই চুলি
নতুন – নুয়া
পুরানো – পুন্যা
নামা – অলাই
ফেলা – পকাই
পথ – বাট
বেড়ার গেট – আঁখ আগড়
সীমানা – পগার
পুকুর – গাড়িয়া গেড়িয়া
কয়াল – এঙারা
গর্ত – গাড়
ঢিল - হিঁটাল
জমির আল – হিড়
খুঁটি – মাইখুঁটি
ভঁতা – কাঁদল হাঁসিয়া (ঘরের পিছনের অংশ – উলি – কাঁদল)
বাঁশের ডাং – উখুনডাং। বেড়া দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত বাঁশের কঞ্চির ডাং – আঁকেডাং
বাঁশের বা কাঠের দণ্ড (দরজার পিছনে আটকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়) – হুড়কা
স্বার্থপর – এঁকুড়শঅড়ি (একলাচাওয়া) মজুর মুনিস
প্রতি মাসে বছরে কিস্তিতে মজুরী বর্তনা ফসলের অংকে মজুরী সিদা
চালের সাথে আলুসবজিসহ দক্ষিণা দান করা সিদা
কেবলমাত্র খাদ্যের বিনিময়ে কাজ পেটভাতা পেটভাতুয়া
ছেলে - টকা ছা একদল ছেলে – টকা মেনে ছালা
একটি টাকা – গুটিয়ে টাকা ইঁদুর – মুসা
চেয়ে দেখা বা চেয়ে থাকা – ভালিয়া বিসাই – বিড়াল
শিয়াল – শৃগাল
কোথায় আছো – কাই আছু
কোথায় যাচ্ছো – কাই যাউচু
কোথায় যাবে – কাই যাবু
কোথায় আছিস – কুনঠি আছু
কোথায় যাবি – কুঁটকে যাবু কুঁড়ে যাবু
কোথায় গিয়েছিলেন – কাই যাইথল
কি করছিলেন – কি করথল
কোথায় গিয়েছিলি – কাই যাই থুলু
কি করছিলি – কি করথুলু
কি বলছেন – কি বলনটন কি কওনটন
অদবা অতবা এখন এক্ষুনি
কদবা কতবা কখন
অমনু এমনি
বুদা বনবাদাড়
ছাঁদি জড়ানো
ফরকি ঘুরে বেড়ানো
সড়কি ঘসে পড়া
খসরি খসে পড়া
মহকি গঁন্ধে ম ম
নেমে আয় – অনাই আয়
নামিয়ে দাও – অদরাই দাও অলহাই দাও।
প্রবাদ –
1। বলনে মা মার খায়
না বলনে বাপ আঁইবা খায়।
2। রাজুর সাথে চলবু ধাউ
সাথে রাখবু জুমড়া কাঠ।
3। বাটে দেখা হইলা কামার
ফাল পাজাই দে আমার।
প্রবচন –
1। বাপের ভন পিসি
ভাত কাপড়ে পুষি।
2। পরের ধরে পর ধানী
শুকা পুড়্যা মহাজনী।
ধাঁধাঁ –
1। বন নু বারাইলা পোত
পেতি বলে তোর ভাতে মুতি।
2। এ পাড়ার মারলা তাড়া
তাড়া বলে বামুন পাড়া।
ছড়া –
1। কাতা ধারে বিছাতি বন
তোকে ছুঁতে কতক্ষণ।
2। লুক লুকানি ভানিয়া কানি
লুকাই যাবু জাইগা জানি।
3। এক তারা নারাঘারা
দুই তারা গরু মরা
তিন তারায় নাই দোষ
চার তারা ঘরে পোশ।
বলবে – বলেদিলে
বাপ – বাবা
আঁইবা – এঁঠো
বাট – পথ
রাখবু – রাখা
জুমড়া – জ্বালাকাঠ
হইলা – হলো
ফাল – লাঙ্গলের ফাল
পাজাই – শান দেওয়া
ভন বোন
পুষি পালন করা
পরধানী
শুকা শুকনো মাছ
পুড়্যা পোড়ানো
নু – থেকে, বারাইলা বার হওয়া
পেতি – পেত্নি, মুতি – প্রস্রাব
মারলা – মারা হলো
তাড়া কাঠের বা বাঁশের দণ্ড
বামুন – ব্রাহ্মণ
কাতা নদীর পাড়
ছুঁতে ছুঁয়ে ফেলা
ডালিয়া চেয়ে দেখা
কানি কাঠি (বাঁশের)
যাবু যাওয়া
জাইগা জায়গা, নারাখারা ছিন্নভিন্ন
পোশ প্রবেশ।
(সুবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী উড়িষ্যা প্রভাবিত অঞ্চলের প্রচলিত ভাষায় লেখা)
গহল চহল পূজার দিনে
- অর্ধেন্দু ত্রিপাঠী
- ছলকি বুলে খালের পানি
উদকি উঠে নদী
ধব্ ধাবিয়া কাশি বুদায়
মনটা যে যায় ছাঁদি।
পাশের নোক রহিলা ধুরে
তার নাগি মন কুহলি মরে
কে দিলাগো অমন করি
তুমার সাঁগে বাঁধি
গহল চহল পূজার দিনে
দেহেটা উঠে কাঁদি।
টহকি উঠে নুয়া আঁগা
ফরকি বুলে ছা-গা
কহিথিল ওউ পড় পূজায়
নি যামু তোকে কইলকাতায়
পাশরি গেল ওউ ক দিনে
সবু হিলা বাঁগা
ডহকি উঠে মনে নিয়া
অমনু দিল দাগা।
হরষ মনের যত কথা
সবু পালায় ভাগি
গহল চহল পূজার দিনে
দেহেটা উঠে কাঁদি।।
কবিতা – অর্থ
গহল চহল পূজার দিনে
গহল চহল জাঁকজমক
ছলকি বুলি ছলকে ওঠা
বুদা বনবাদাড়
বুদা বনবাদাড়
নোক লোক
নাগি লাগি
সাঁগে সঙ্গে
নুয়া নতুন
ফরকি ঘুরে বেড়ানো
সরকি খসে পড়া
পাশরি ভুলে যাওয়া
বাঁগা না
অমনু এমনি
ছাঁদি জড়িয়ে যাওয়া
ধুরে দূরে
কুহলি আকুলি
টহকি জ্বলে
আঁগা জামা
ছা-গা ছেলেরা
মহকি গঁন্ধে ম-ম
হিলা হওয়া
ডহকি ডগমগিয়ে
দেহে দেহ
সুবর্ণরৈখিক বাংলায় (রোহিনী, নয়াগ্রাম, গোপিবল্লভপুর, বহড়া, গুড়া এলাকার আঞ্চলিক ভাষা) রচিত কবিতা।
অউটা জীবন
- ডাঃ শুভব্রত পালোই
- খাটি খাই খাটি পহরি
খাটবা জীবন সারা
তাহিনে কেনে নোকের পাখে
মুড়টা তল করা ?
বনে বাদাড়ে আমার মেনে
খাটি সারা দিন,
খরা বন্যায় শীতে টুটরি
রহি বছর দিন।
নটা বুদায় পসি আমার
কেঁদূ পতর টেকি,
শাল পতর টেকি আনি
পতর থালি টিপি।
কুরকুট বাসার হদিশ রাখি
বিছেই সময় হিনে,
ডাগি গাছের আগাচুটিনু
মহু বাসা থিনে।
চেরমূল সব নড়েই করি
বাটি পিনো করি,
কা-গণ্ডাবাখব হিলা
গনি শুকলা করি।
মহুল ফুল ফুটনে থরে
মহকে বন সারা,
ভোর পঁহতায় কুড়েই ফুল
পাছিয়া ঠেকা পুরা।
বনের জিনিস খাই আমার
বনের জিনিস বিকি,
কাই থাইলান বাবুর দল
দেয়টেন বন কে কাটি।
অতবা লোকের মুলিয়া খাটি
ক-পইসা বা পাই
মৌসোর মাস হিনে থরে
নামাল খাটতে যাই।
গতর খাটেই অমনু করি
পেটের মজি জুটেই,
সারাদিনে বেলে খাই
পেটের জ্বালা জুড়েই।
নুহা আর সিমেন্ট ফেক্টারি
হিলা দেশে আসি
কত লোক হেঁসরি মরেন
হিসাব কি আর রাখি ?
সিধু কানু মস্ত বীর
হিলান অমনু খাই
বিরসা মুণ্ডার মতন রতন
পাইছি দেশে থাই।
বলতে গেলে অনেক কথা
হবেনি কথা শেষ,
তাহিনু আমার ভালোবাসি
আমকার ওই দেশ।
এটাই জীবন (বাংলা অনুবাদ)
- ডাঃ শুভব্রত পালোই
খেটে খাই খেটে পুরি
খাটবো জীবন সারা
তাহলে কেন লোকের কাছে
মাথাটা নত করা ?
বনে জঙ্গলে আমরা সবাই
খাটি সারাদিন
খরা বন্যায় শীতে কুঁকড়ে
থাকি বছর দিন।
ঝোপে ঝাড়ে ঢুকে মোরা
কেঁদু পাতা তুলি,
শাল পাতা তুলে এনে
বানাই পাতার থালি।
কুরকুট বাসার খোঁজ রাখি
পাড়ি সময় হলে,
ভাঁগি গাছের আগডালেতে
মৌ বাসা হলে।
শেকড় বাকড় জোগাড় করে
বেঁটে ভালো কের,
ক-গণ্ডাবাখর হলে
গুনি শুকনো করে।
মহুল ফুল ফুটলে পরে
সু-গন্ধে বন ভরে,
ভোর সকালে কুড়াই ফুল
ঝুড়ি ঝুড়ি ভরে।
বনের জিনিস খাই মোরা
বনের জিনিস বিকি
কোথায় ছিল বাবুর দল
দিচ্ছে বনকে কাটি।
এখন লোকের মজুর খেটে
ক-পয়সা বা পাই
অঘ্রায়ন মাস হেল একবার
পূব খাটতে যাই।
শরীর খাটিয়ে এমনি করে
পেটের দানা জোগাই
সারাদিনে একবার খেয়ে
পেটের জ্বালা জুড়াই।
লোহ আর সিমেন্ট ফেক্টারি
হলো দেশে এসে
কত লোক হাঁপিয়ে মরে
কেউ কি হিসাব রাখে।
সিধু কানু মস্তবীর
হলেন এমনি খেয়ে
বিরসা মুণ্ডার মতন রতন
পেয়েছি দেশে থেকে।
বলতে গেলে অনেক কথা
হবে না কথা শেষ,
তাহলেও মোরা ভালোবাসি
আমাদের এই দেশ।
(বর্তিকা 2009 ডিসেম্বর কোলকাতা থেকে প্রকাশিত।)
কার মুঁহুঁ চাঁহি উঠথুনু কে জাঁনে ভ্রমর
- ডাঃ শুভব্রত পালোই
ঘরে আছু নাকি টুনিয়া ভাই
ঝড়িয়াটায় আজ তোর ঘরে মকা খাই।
আরটিকে আঘু যাইথিনু নদীবাটিয়া
কি দেখবুরে ভাই বন্যিয়া চারবাটিয়া।।
আরে মকা নাইতো বাদাম বারকা
আর ভাজা নাইতো ভাজা করা।
মুই বলথিনু কি – কাল জাল বারকাইবা
দেখবুনা খেল – কতগা করি মাছ ধরবা।।
দূর বাবু তুই বেজাঁয় দেরি করুটু
নাই আছে তো – নাই বলি দিবু।
চাষটা এবছর এক দম হজি গেলা
এ বছর বন্যিয়া ত – সে বছর খরা হিলা।।
তোর ঘরে মনে হয় গধি আঁডুলি যাইছে
কিছু নাইত – ফঁটায় দকতা হিনেবি দে
আঘু অনেক ইলশা উঠথায় সুবনরেখায়
অখঁঅ সে ইলশা কুঁঠে আছে জাঁউ ? কল্কাতায়।।
দূর শালা, মকে আজ একদম ডুবেই দিলু
কিছু নাইত – অন্তত বিঁড়ি গটায় দিবু।
পড়নেভি জ্বালা – চাষ করনেভি জ্বালা
তার চেয়ে বল – মাছ ধরা অনেক ভালা।।
কার মুঁহুঁ চাঁহি উঠথুনু কে জাঁয়ে
কালপুষ্যাভি গটায় পুষি পারুনি ঔ খাঁয়ে।
পিঠটা নাহিনে শুল শুলাই দিতা ঘঁটায়
নিদটাভি তাহিনে মাঝি দিতঁ মটকায়।।
কবিতা – অর্থ
আছু আছো টুনিয়া ছোট
ঝড়িয়া প্রকৃতি ঝড় জল
মকা ভুট্টা
আরটিকে আরো একটু
আঘু আগে
যাই থিনু গিয়েছিলাম
বাটিয়া নদীর পরে
বন্যিয়া বন্যা প্লাবিত
পরবাটিয়া চারদিকে
বলথিনু বলছিলাম
বারকাইবা বের করবো
কআ কতগুলো ধরবা ধরা হবে
বেজাঁয় অনেকক্ষণ
করুচু করছিস দিবু দিবে
হজি পবে যাওয়া হিলা হলো
ফঁটায় এত ফোঁটা দকতা দোক্তা
উঠযায় উঠতো ইলশা ইলিশ
কুঁঠে কোথায় অখঁতা এখনতো
মকে আমাকে জাঁউ জানো
মুঁহুঁ মুখ দিলু দিলে
ঋণস্বীকার –
1। সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, 2। বিনয় ঘোষ, 3। বঙ্কিমচন্দ্র মাহাত, 4। নরেশ জানা