কুড়মালি কবি মঙ্গল মাহাত-র সাক্ষাৎকার - সন্দীপ চট্টারাজ ও শিবপ্রসাদ গোস্বামী

প — নমস্কার, আপনার নামটা একটু বলবেন।
ম —    আমার নাম মঙ্গল মাহাত।
প —    মঙ্গল মাহাত। আচ্ছা, আপনি থাকছেন কোথায় এখন ?
ম —    ঝাড়গ্রাম নতুন বাসস্ট্যান্ড। পুরো ঠিকানা হচ্ছে রঘুনাথপুর ঝাড়গ্রাম, ১৪ নং ওয়ার্ড, ঝাড়গ্রাম পৌরসভা।
প —    আপনি যে ভাষায় লেখালেখি করছেন সেই ভাষাটার নাম কি ?
ম —    এই ভাষাটা হচ্ছে কুড়মালি ভাষা। Not কুড়মি, কুড়সি নয় কুড়মালি। অর্থাৎ এই কুড়মালি ভাষায় জঙ্গল মহল, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং আসামেও কিছু মানুষ ও ছত্রিশগড়ে কিছু আছে। এইগুলি বিশেষ করে এই রাঢ়ভূম অঞ্চলটা, এই ভাষা, এই সংস্কৃতি এই কালচার-এরই মানুষ বেশীর ভাগ। এক কথায় 75%-80% বলা চলে এই সংস্কৃতি এই কালচার নিয়ে এখনও বেঁচে আছে, চলেছে আর লেখাপড়ায় এখনও পর্যন্ত আমি যে ভাষায় চর্চা করছি, এই কুড়মালি ভাষায় আমরা আমাদের ৫২টা স্কুল চালু করেছি। কিসেওয়ার থেকে আমার সংস্থাটা হচ্ছে কুড়মালি কিসেওয়া সোসাইটি, All India Kurmali 
Chisaya Society। এই সোসাইটির পক্ষ থেকে ঝাড়গ্রামের এই এলাকাটায় বিশেষ করে ৫২টা স্কুল চলছে, যার মধ্যে ৮টা Code no. পেয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে। অর্থাৎ সরকারী স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ভাষায় আমি লেখালেখি করি। কুড়মালি সাহিত্যিক ভাষা, যেটা আমাদের মুখে বলা হয় ওটা হচ্ছে কেথিক কুড়মালী, অর্থাৎ কথা বলা হয় যে কুড়মালীতে তাকে বলা হয় কেথিক, বাংলায় যাকে বলে কথ্যভাষা। ঐ ভাষাতেও বিগত দিনে অনেক কবিরা লেখালেখি করেছেন। যেমন ভবতোষ সতপথি, উনি সরকারী স্বীকৃতিও কিছু পেয়েছেন। নামকরা একজন কবি এই এলাকার, উনি লিখেছেন কেথিক কুড়মালীতে যে ভাষায় আমরা সরাসরি কথা বলি। কিন্তু প্রত্যেক ভাষার একটা সাধুভাষা আছে। সেই ভাষায় Grammar থাকবে, আর আমাদের Grammar আছে। Dictionary আছে, ২১০০০ সাড়া আছে, আমরা সাড়া বলি কুড়মালিতে। ওটা বাংলা শব্দ। ইংরাজী Word, সেই ২১,০০০ শব্দের আমাদের কুড়মালি Dictionary ready হয়ে গেছে। যাই হোক ওটা লিখেছেন আমাদের নারান মাহাত। দরপশীলাতে বাড়ী। ওটা আমরা এখনও প্রকাশ করতে পারিনি। ওটা প্রকাশ করার জন্য আমরা অনেক মহৎ ব্যক্তির কাছে গেছি। যদিও অর্থ সাহায্য এখনও পাইনি। অনেক টাকার দরকার। সেই Dictionary আমাদের রেডি আছে। সেটা Follow করেই আমরা লিখছি। এর আগে আমাদের বঙ্কিম মাহাত, বর্তমান ঝাড়খণ্ডে বাড়ী, উনি অনেক সাহিত্য লিখে গেছেন। তবে উনি ওটাকে নাম দিয়েছেন Jharkhandi bangla। তবে তখন Grammar follow করা হয়নি। তবে আমাদের Ranchi-র অনন্ত কেশরী অনেক লেখেন। ওনার আমার কাছে, লেখা আছে ছবিও আছে। উনি আমার ঘরে তিনদিন ছিলেন। ওনার সাথেও সবরকম আলোচনা হয়েছে। ওনার Grammar Ranchi University-তে পড়ানো হচ্ছে, কুড়মালি Grammar । এইভাবে আমাদের ওড়িশার শশধর কাড়োয়ার সাহেব। উনিও খুব Active ।ওড়িশায় কাজ চালাচ্ছেন। আমাদের উদ্দেশ্য আছে। এই ভাষা স্বীকৃতি পাক। এই ভাষায় পঠন পাঠন চালু হোক। এই ভাষার ভিতরে অনেক কিছু আছে। আমাদের কিসোয়ার থেকে জয়ন্ত কুমার মাহাত হরফটি সৃষ্টি করেছেন এই কুড়মালি ভাষার জন্য, ওনার হরফ দিয়েই আমি লিখছি। যা থেকে আমি বুঝতে পারছি যে এত সহজ উচ্চারণ এই কুড়মালি ভাষার। কুড়মালি চারিদিশা কথাটার মানে হচ্ছে কুড়মালি সংস্কৃতি স্মরণ করা। কুড়মালি সংস্কৃতিতে যা কিছু আছে আমাদের, যেমন এই বাদনা, মকরপরব, করম, জিতু — আমাদের সংস্কৃতিতে যতসব আছে। আমাদের আজকে অনেক মানুষই ভুলে যাচ্ছে। তবে চালু আছে। সকলের ঘরে ঘরে এই যেমন দুদিন আগে গোরোইয়া গেল। এর মানে হল গোয়াল ঘরে গরুর পূজা করা। গরুদের দৌলতে যুগ যুগ ধরে, এখন না হলে Tractor হয়েছে, চাষের অনেক রকম সরঞ্জাম হয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণে। তবে যাই হোক আগেকার দিনে তো গরুর দ্বারাই চাষ হত। গরুর গোরাই সার ছিল একমাত্র অন্য কোনও সার ছিল না। গরুকে আমরা হাল করার কাজেও লাগাতাম। সেই গরুর ওপর নির্ভর করে আমাদের পুরো মানব সমাজ প্রতিপালিত হচ্ছে বললেই হয়। গরুর কাছ থেকে দুধ ও অন্যান্য কিছু পাই। তাই গাই আর মাই আমরা সমান মনে করি। অর্থাৎ নিজের জন্মদাতা মা আর গাই দুটোকেই সমান বলে মনে করি। মাকে আমরা যেমন ভক্তি শ্রদ্ধা করি, গাইকেও আমরা সেরকম শ্রদ্ধা করি। কোনও দিন পায়ে লাগলে আমরা মাকে যেমন প্রণাম করি। গুরুজনদের প্রণাম করি, তেমনি গাইকেও প্রণাম করি। আমরা হচ্ছি প্রাকৃতিক পূজারী। আমরা গাছকে দেবতার মত মনে করি। কোনও কারণে ফল পাড়তে গাছে উঠতে হয়।তাহলে গাছে ওঠার আগে প্রণাম করি। আর গাছ থেকে নামার পর প্রণাম করি। আমরা মূলত প্রকৃতির পূজারী বলে আমাদের ধরমটার নাম হচ্ছে সারনা ধরম।
প —    আপনি যে এই লেখালেখি শুরু করলেন তার শুরুর ঘটনাটা যদি একটু বলেন। কবে শুরু করলেন ? কেন শুরু করলেন এই ভাষায় লেখালেখি। অনুপ্রেরণাটা কিভাবে পেলেন?
ম —    আমি ছোট থেকেই, ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি করতাম। কখনও বাংলা এবং কখনও কেথিক কুড়মালিতে লিখতাম। প্রথম অবস্থায় আমার দু-একটা কেথিক কুড়মালি কবিতা ঝাড়গ্রাম পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। এই কেথিক কুড়মালিতে প্রকাশ হওয়ার পরে যারা সাহিত্য চর্চা করছেন, তারা খবর পায়। আমার খাতার ভিতরেই সব ছিল। এবং যখন প্রকাশ হয় ঝাড়গ্রাম পত্রিকাতে, তখন পরিচিত হওয়ার পর আমাকে কিসোয়া সংস্থাতে সদস্য করে। সেটা সাত আট বছর হল। সদস্য হওয়ার এক বছরের ভিতরেই হরফ এবং Grammar যা কিছু আছে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিই। এখানেই গত পাঁচ বছর একটা রুম আমার 18 - 11 ঘর। আমি কিসোয়া সংস্থাকে Free দিয়েছিলাম। ওখানে যে আমাদের ৫২টা স্কুল আছে, তাদের শিক্ষকদের Basic Training আমার ঐ ঘরে হত। প্রতি রবিবার। এক-দু মাসের মধ্যেই আমি ওদের Trainer হয়ে যাই। আমি কিন্তু বেশী শিক্ষিত নই। আমাদের ওই শিক্ষকদের মধ্যে কেউ MA পাস, কেউ BA পাস, বা HS পাস আছে। কিন্তু কুড়মালি ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বা ব্যাকরণ-এর দিক দিয়ে আমি Trainer হয়ে যাই। তারপর এই লেখালেখি।
প —    সেখান থেকেই ভাষার প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয় ?
ম —    ভাষার প্রতি ভালোবাসা আমাদের চিরকালই। কিন্তু লেখালেখি হত কেথিক এই। এই আগের সালে আমার লেখা বেরিয়েছে কুরকুট নিয়ে। বড় বড় মুখ দিয়ে বলা এখানকার মানুষ, কুরকুট খেয়ে বেঁচে থাকে। সেটা কিন্তু ঠিক না। কুরকুট এক ধরনের পিঁপড়া। ওটা চাটনি করে খাওয়া হয়। ওষুধ করেও খাওয়া হয়। বিশেষত ওটাতে মাছের চাষ ভালো হয়। তাই আমার মনে হয় কুরকুট নিয়ে লেখা দরকার। তাই প্রথমে আমি ওটা লিখেছিলাম প্রকৃত কুড়মালিতে। পরে ওটা আমি বাংলাতে লিখি। সেটা আমাদের সাহিত্যে আড্ডায় গ্রাহ্য হল। ওটা গত ২০১৫ সালে ঝাড়গ্রাম যুব মেলাতে প্রকাশ পেল সংহিতা পত্রিকাতে।
প —    আপনাদের এই কুর্মি সমাজ ব্যবস্থা সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন।
ম —    কুর্মি কথাটি এসেছে কুড়ঘুস থেকে অর্থাৎ কুড়াকুড়ি। মাটি খোঁড়া বলে কুর্মিরা চাষীবাসী মানুষ, আমার লেখা এক নাটক-এ এটা দেওয়াই আছে। কুর্মিরা মাটি কেটে, পরিষ্কার করে চাষ আবাদ করেছিল। এখনও নজর করলে বোঝা যায়। কুর্মিরা যেখানেই থাকুক না কেন, জমি এদের থাকবেই। গরু এদের থাকবেই ও চাষ এরা করবেই। এরা মূলত কৃষিজীবী। এদের সংস্কৃতি কৃষি প্রধান।
প —    আপনার কথা অনুযায়ী কুর্মি সমাজ বলতে চাষীবাসী সমাজ ও প্রকৃতির পূজা করত?
ম —    প্রকৃতির কথা বললেই চলে আসে করম। করম হচ্ছে কৃষির যত রকম বীজ, যেমন চারা হবে কিনা, সেই বিজ্ঞানীদের মতন করে নমুনা দেখান। বিজ্ঞান সম্মত করে বলা, করম পূজাতে বীজ করা হয়। তবে অনেকেই একসাথে করে নেয়। করম পূজার মাধ্যমে চাষ-এর মঙ্গল করা হয়।
প —    কিন্তু এখন কি কুর্মি সমাজ-এর সবাই চাষবাস নিয়ে থাকতে চায় ?
ম —    ওটা নয়। এখন ব্যাপারটা আলাদা। আগে যেমন কথা ছিল — লেখাপড়া ঘোড়ার ডিম/চাষ করলে খাবি বছর দিন। এই কথাটা পুরো মনুষ্য সমাজে ছিল। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে যে, চাকরী এখন চাই, চাকরী চাই কারণ টাকা চাই বেশী। টাকা বেশী চাই কারণ খরচ বেড়ে গেছে। আগে মানুষের ঘুমোতে পয়সা লাগত না। এখন ঘুমোলে ফ্যান ঘুরছে। আগে ঘুম ভাঙলে খরচা ছিল না। এখন ঘুম ভাঙলেই কোলগেট লাগে। আগে জুতো ছিল না। এখন জুতো দরকার। খরচা বেড়েছে। ঐ খরচা বেশী হওয়ায় মানুষ চাষ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এক বিঘা ধানে মাত্র সাত হাজার হবে, কিন্তু ঐ টাকায় চলবে না। বৌ-এর ভালো লিপস্টিক, শাড়ী কেনার জন্য টাকা দরকার।
প —    আচ্ছা এই মুক্ত অর্থনীতি বা বাজার-এর প্রভাব আপনাদের কুর্মি সমাজ-এর ওপর কিভাবে পড়ল ?
ম —    আমাদের সমাজের প্রধান সমস্যা হচ্ছে, যেহেতু আমরা কৃষিজীবি। কিছু মানুষ ধান সিদ্ধ করে সংসার চালাত, যেগুলো স্বচ্ছল ঘর তাদের ঘরে ধান সিদ্ধ করে কিছু অস্বচ্ছল পরিবার সংসার চালাত। কিছু গরীব মানুষ ধান কুটে সংসার চালাত। কিছু গরীব মানুষ চিঁড়ে করে সংসার চালাত। কিছু গরীব যারা লাঙল বিক্রি করে সংসার চালাত। কিছু শ্রমিক কাজ করে সংসার চালাত। কিন্তু এখন ধান কাটা, কুটা বা অন্য কাজে লোক লাগছে না। আমার মনে হচ্ছে কিছু দিন পরে আমরা মানুষগুলা পঙ্গু হয়ে যাব। কোনও কাজ নেই। গ্রামে মাটি কাটা হলেও লোকের প্রয়োজন হচ্ছে না। পুকুর কাটাতেও লোক লাগছে না। চাষের কাজ, মাটির কাজ সব যন্ত্র দিয়ে করানো হচ্ছে ফলে মানুষ কাজ পাচ্ছে না। 
প —    আচ্ছা এই যে কুড়মালি ভাষা নিয়ে লেখালেখি শুরু করেছেন, এই ভাষা এখনও পর্যন্ত অষ্টম তপশিল-এর অন্তর্ভূক্ত নয়। এই নিয়ে আপনার মতামত কি ?
ম —    আমাদের এখনও পর্যন্ত যা লড়াই চলেছে এবং মানুষ যেভাবে এগিয়ে আসছেন, দুজন প্রফেসারও আছেন। বিদ্যাসাগর ইউনিভারসিটিতে ডক্টরেট করেছন পরিতোষ মাহাত এবং কলকাতার গৌতম মাহাত— ওনারা বলেছেন আমরা যদি ঠিকঠাকভাবে ভাষাটিকে তৈরী করে নিয়ে যাই তবে আমরা আমাদের দাবীটা পাব। আমাদের 29-30 No. ধারায় বলা আছে যে ভাষার নিজস্ব সংস্কৃতি – Grammar, 
Dictionary, পঠন পাঠন এইসব থাকালে সরকার থেকে দিতে বাধ্য থাকবে। সেই জায়গায় আমরা পৌঁছে গেছি, এবং এটা আমরা Memorandum দিয়েছিলাম মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে। উনি স্বীকার করেছিলেন এবং ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। সেটা পেপারেও বেরিয়েছিল। তারপরে আর কিছু হয়নি। তবে গত জঙ্গল মহল মেলাতে আমরা আর একবার Memorandum দিয়েছি। আমরা আশায় আছি। 
প —    আপনার ব্যক্তিগত লেখালেখি বা কাজ নিয়ে বলুন।
ম —    আমার প্রথম প্রকাশিত বই হচ্ছে সারসগুন বিহা। কথাটার মানে হচ্ছে কুড়মালি পরম্পরায় চলে আসছে কুড়মালিদের বিয়েতে কোনও ব্রাহ্মণ লাগে না। আমাদের বিয়েতে জামাই নিজের জামাই না থাকলেও কোনও সম্পর্কিত জামাই — সেই জামাই পুরষালি করে, ন্যাগ-এর ন্যাগ যা কিছু করার করে। ন্যাগ কথার অর্থ হল নিয়ম নিষ্ঠা। বিশেষ করে টাকনা বাঁধা এটা জামাই-এর দ্বারাই হয়। মেয়ের ও ছেলের বিয়েতে জামাই প্রয়োজন। সারসগুন বিহা বইটাতে ৬৩টা Part-এ বিশ্লেষণ করে দেওয়া আছে এবং গান দেওয়া আছে। এই বইটাতে পুরো বিয়ে ও জন্ম-এর পরবর্তী কাজ দেওয়া আছে। প্রকাশিত হয়েছে ২০১৫ সালের করম পরবের সময়। “কুড়মালি চারিদিশা” — কথাটার মানে হচ্ছে কুড়মালি সংস্কৃতি স্মরণ করা। আমাদের যত সংস্কৃতি আছে সবটা তুলে ধরতে পারিনি। তবে প্রায় মূল জিনিসটা বলা আছে। এই বইটা আমরা সমাজের আচার, কালচার, সংস্কৃতি নিয়ে লেখা আছে এবং তার সাথে এই জঙ্গল মহল-এর মানুষের জীবন জীবিকা নিয়েও বলা আছে। এই বইটা নিয়ে আলোচনা আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়েছে। এই দুটো বই ছাড়া আর একটি নাটক আমি লিখেছি — যার নাম হচ্ছে রাঙামাটির দেশে, নাটকটি বাংলাতে লেখা। 
প —    আচ্ছা যে ভাষাতে আপনি সাহিত্য চর্চা করেছেন, এত লড়াই চালাচ্ছেন, সেটা নিয়ে নতুন প্রজন্ম কি ভাবছে ?
ম —    কুড়মালি ভাষা মাতৃভাষা। এটা শেখার আগ্রহ তাদের মধ্যে আছে। তবে উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের বাংলা ও ইংরাজী জানতে হয়। তবে কুড়মালি ভাষাতে সব কিছুই জানা বা শেখা যাবে। এই ভাষাও অন্য ভাষার থেকে কোনও অংশে কম নয়, ইংরাজী ভাষাতে কারো মা মারা গেলে সে Mother বলে কাঁদবে। বাংলাতে মা বলে কাঁদবে ও কুড়মালিতে মাই বলে কাঁদবে। কিন্তু সবার চোখ থেকেই জল পড়বে। যে ভাষাতেই শেখো, তোমার জ্ঞান একই হবে, কুড়মালি সাহিত্য যদি ভালো হয়, তবে তা অবশ্যই পাঠযোগ্য হবে। কুড়মালিতেও ভালো সাহিত্য সম্ভব। তবে এই ভাষার প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ প্রচুর। তবে কুড়মালির শব্দ বাংলা চুরি করে নিচ্ছে। যেমন পড়ুয়া বলতে আমরা ছাত্রকে বুঝি। এই কয়েক বছর আগে আমি Paper বা TV-তে এইসব দেখতে পেয়েছি। এই পড়ুয়া শব্দ কুড়মালির মৌলিক শব্দ। যে কুড়মালিতে ছাত্রকে বলে পড়ুয়া ও শিক্ষককে বলে পড়ুয়ালা। কিন্তু বাংলাতে পড়ুয়া শব্দের সাথে মিল করে কোনও শব্দ নেই। সেটাই প্রমাণ করে পড়ুয়া কুড়মালি শব্দ।
প —    এখন Paper, TV, Radio চলে এসেছে। বিভিন্ন বাংলা, হিন্দি ভাষার গান সবাই শুনছে। এই সব ভাষার প্রভাব কি কুড়মালি ভাষার ওপর পড়ছে ?
ম —    এখন দেখা যাচ্ছে অনেক শব্দই মিশছে, যা এখন হয়ত বলতে পারছি না। TV দেখতে দেখতে বোঝা যাচ্ছে বা গানের ক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে কুড়মালি মৌলিক শব্দ বা আমরা ব্যবহার করি ঘরে দুয়ারে অনেক ব্যবহার হচ্ছে বাংলা ভাষাতে। যেগুলো হয়ত বাংলা অভিধানে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলা, নাটক, গান প্রভৃতিতে ব্যবহার হচ্ছে।
প —    কুড়মালি ভাষারও কি পরিবর্তন হচ্ছে ?
ম —    পরিবর্তন নয়। আমরা যেটা দেখছি, দুঃখও হচ্ছে আমরা যখনই আমাদের মৌলিক শব্দ যেমন “পড়ুয়া”টা আমাদের শব্দ বলব, তখনই বলা হচ্ছে না ওটা বাংলা শব্দ। কুড়মালি ভাষার শব্দ চুরি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভাঁড়ার শূন্য হয়ে যাচ্ছে। আমরা দাবী করতে পারছি না যে ওটা আমাদের।