কবিতা - সর্বানী ঘড়াই

সময়ের স্রোত
জন্ম মৃত্যুর বাস যে শরীরে
সে শরীর আজ তোমাকে দিলাম
হে ধরিত্রীপুত্র তুমি গ্রহণ কোরো
মন ছাড়া এ শরীর তার ছেঁড়া একতারার মতো
শব্দ তরঙ্গে উচ্চারিত হয় না ভালবাসার মন্ত্র
যারা বৃিষ্টতে ভিজেছিল চাঁদনী রাতে
তারাও ডুব দিয়েছিল অন্ধকারে
পৃথিবীকে গ্রাস করার জন্য মাটির
গভীরে শক্তি সঞ্চয় করে যে শেকড়
সেও বোঝে মাটির ভালবাসা
কত সাবলীল ভাবে আশ্রয় নেয় মাটির বুকে
সমৃদ্ধ হয়, লড়াই চলে বেঁচে থাকার
পারস্পরিক টান শেকড়ও বোঝে মাটিও বোঝে
মন বোঝে মনের ভাষা, জীবন উপলক্ষ মাত্র
এ শরীর মাটি ছোঁয়ার আগে কিছু িচহ্ন রেখে যাও
ধূসর প্রেক্ষাপটে, আর এক রাসলীলা লেখা হোক
জীবন বারবেলায়, কিছু ভাললাগার মুহূর্ত নিঃশব্দে
আলাপচারিতা করুক নিজের সাথে —
একটা হলুদ পাতার বৃন্ত থেকে ঝরে পড়ার 
বিয়োগ ব্যথার শেষহীন সে অনুরণন
তার শব্দহীন শব্দ অনুভব করো বুকের ভেতর
অচ্ছেদ্য এই প্রাণের টান, হীন হয়ে যাক তোমার ভেতর
যতদিন না মৃত্যু এসে কাঁধে হাত রেখে বলে
চলো, এবার তো যাওয়ার সময় হলো।
 


জীবনযুদ্ধ

স্নায়ুতে স্নায়ুতে ক্ষুধার্ত বাতাস
বিধ্বস্ত বিক্ষত দেহে নিঃশব্দ অসিহষ্ণুতা
রক্তের কলঙ্ক ডাকে মধ্যরাতে,
পাশবিকতার দুঃসহ মহড়ার।
গোপনে আগুন বাড়ছে ধানক্ষেতে
জঙ্গলে নির্জন আস্তাকুড়ে —
কলঙ্কিত কালো কােলা রক্তের মতো
অন্ধকার হানা দেয় আমাদের চারপাশ
রুদ্ধশ্বাস এ জীবন ছট্ ফট্ করে সারা রাত।
গৃহস্থের উঠোন জুড়ে স্তব্ধতা
সারি সারি কবরের স্তুপ বুক নিয়ে
জেগে থাকে নিশ্চুপ ইতিহাস
মিছিলের কোলাহলে পদপিষ্ট হয়
জিজ্ঞাসা, চরিত্রহীন পরিচয় নিয়ে
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে লাশকাটা ঘরে
আজকের ভবিষ্যত।


ঘাসফুল

শাল পিয়ালের ফুলে মাতাল হয় যে-মন
এসো নির্জনে চাষ করি মাটির অঙ্কুর
ভালোবাস এ দিগন্ত সবুজ ছোঁয়া মাটি
যুগে যুগে বাঁচতে চাই উত্থানে পতনে
অদৃশ্য স্বপ্নে, সমাচ্ছন্ন হোক 
প্রতীক্ষিত শুভক্ষণ,
এসো চৈত্রের হাওয়া সমৃদ্ধ করো পূর্ণ যৌবন
অমৃতের স্পর্শ চায় সৃষ্টির প্রথম সুর।
এসো দুর্ভিক্ষ মৃত্যুহীন ধমনীর জ্বলন্ত প্রলাপ
অসংখ্য স্পন্দনে চলে মৃত্যু অভিযান
জীবন মৃত্যুর সীমানায় শুধু নিষ্ঠুর সান্ত্বনা
খিদের তীব্র জ্বালা ফুটপাত জুড়ে
তীব্র আর্তনাদ, এ বয়স শুধু ভীরু কাপুরুষ নয়
প্রতিবাদী দীর্ঘশ্বাসে জয়ধ্বনিত হোক পৃথিবীর বাতাস
শোষণের মাঝে ছাই হোতে হোতে ভূমিষ্ঠ হোক
আর এক নব জাতক।