অাদিবাসী কোড়া নাগচিকির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস দীনেশ মুদি

আমাদের ভারতবর্ষ বৈচিত্রময় দেশ । এখানে বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মিলনস্থান। এই দেশে বিভিন্ন তপশীলি উপজাতিগুলির মধ্যে কোড়া (কোডা) আদিবাসী তার মধ্যে একটি। এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী অস্ট্রীক ভাষা গোষ্ঠীর মুন্ডারী শাখার অংশ। কোড়া আদিবাসীর ভাষা "কোডা জাগার" নামে এবং এই কোড়া (কোডা) ভাষার লিখিত রূপ বা লিপিকে "নাগচিকি" নামে পরিচিত কোড়া (কোডা) সমাজে। এই লিপির স্রষ্ঠা হলেন শ্রী দীনেশ মুদি (মাহুকাল সাপু কোডা)। লেখককে বর্ণ বা চিকির সৃষ্টির প্রধান অনুপ্রাণদাতা হলেন মাতা শ্রীমতি হাসি মুদি, কাকু শ্রী নরেন সিং এবং দাদু শ্রী হেমাল মুদি। এছাড়া বর্ণের (চিকি) ব্যাখ্যা ও সমাধানে লেখককে সাহায্য করেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি অনিমা মুদি, দাদা শ্রী চন্দ্রমোহন সিং ( মাস্টার মশায়), দাদা শ্রী যীসাই সিং (সমাজ সেবক)। এছাড়াও সর্বেশষ নাগচিকি Software বানিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি হলেন ভাই শ্রী সাধু সিং। নাগচিকি বর্ণটি লেখক লেখা শুরু করেছিলেন ২০০৫ সালে আর লেখাটি সম্পূর্ণ করে আদিবাসী কোড়া (কোডা) নাগচিকি বর্ণ প্রকাশ করেন ২০১২ সালে। 
নাগ চিকি রা-আঃ সিরজন জগল
নাগাচিকি বর্ণের সৃষ্টির পৌরাণিক গল্প
কোরা(কোডা) আদিবাসীদের পৌরাণিক গল্পে ছোটনাগপুরের সামাৎ রাজা রঘু মুদি বা কোড়া বুড়ো বুড়ি তাদের এক মাত্র শিশুকে গাছের তলায় ঘুমিয়ে রেখে মাটি কাটছিলেন বা রাজা মহাশয় হুন রাজার হাত থেকে ছেলের প্রাণ বাঁচানোর জন্য শিশুটিকে গাছের ছায়ার তলায় রেখে চলে যান এবং সূর্য কিরণের স্থান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওই বাচ্ছার ওপরে আবার সূর্য কিরণ পড়তে দেখে ঠিক সেই সময় কোথায় ছিলেন পঞ্চনাগ সাপ তার ফনা ফুলিয়ে ঐ বাচ্ছাটিকে ছায়া প্রদান করতে থাকেন।  ঠিক এর পর ঘটনাক্রমে ছেলেটি শুয়ে থাকা রাস্তার পাশ দিয়ে জঙ্গলে শিকার বা কাঠ কুড়াতে আসার পথে এসেছিলেন নদী পারাপার করে মুন্ডা বুড়ো বুড়ি, যা পরবর্তীকালে মুন্ডা বুড়ো বুড়ি ঐ কোড়া ( কোডা) বাচ্ছাটিকে তাদের সমাজের নামকরণে ব্যবস্থা করেন। এছাড়া এই পৌরাণিক গল্প নিয়ে আরেক রকম গল্প শোনা যায় তা হল, সেই সময় ছোটনাগপুরে হুন রাজাদের আক্রমণে কোড়া (কোডা) আদিবাসী ছেলেদের বা যুব বালকদের মেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়, এই সময় কোডাদের নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থা, পূজা পার্বণ বিরাজ ছিল ছোটনাগপুর সিংভূমে। মুরব্বীদের মুখে আরো শোনা যায় যে, হুন রাজার সৈন্যরা তীর ধনুক, তরবারী নিয়ে যুবক নিধনে বেরিয়েছিল। এছাড়া সেই সময়কালে আরো শোনা যায় যে হুন ও কোড়া আদিবাসীর মধ্যে যুদ্ধ বাধে তীর ধনুক, বল্লম, টাঁগি নিয়ে। শেষে কোড়াদের পরাজয় ঘটে। রাজা রঘু তার বোনকে নিয়ে ছোটনাগপুর ছেড়ে নদী পেরিয়ে যায়। মাঝি মুন্ডার কথা মতে কোড়া অাদিবাসীরা নিজেদের নামের পদবী পরিবর্তন করেন যথাক্রমে কডা, মুদি থেকে সিং পদবী নিয়ে মুন্ডা বসতিতে বাস শুরু করেন নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে হুন রাজার হাত থেকে। এটি হল কডা অাদিবাসীর সংক্ষিপ্ত সামাজিক পৌরাণিক গল্প। এখানে কডা সমাজের সামাজিকগত যে পৌরাণিক চিত্রটি ফুটে উঠেছে তা হল... নাগ রাজা পঞ্চনাগ, গাছ, সূর্য, রাস্তা, তীরধনুক, তরবারী, কোদাল, টািঁগ, সামাজিক রীতিনীতি, পূজো-পার্বণ, বিবাহ, ফল-মূল, জন্ম-মৃত্যু বিবাহ। কডা আদিবাসীর এই সব দৃষ্টান্তমূলক চিত্র থেকে চিকির আকারগত ও ভাষাগত, নাগচিকি নামক রূপ সৃষ্ট স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। 
নাগ চিকি নামের ব্যাখ্যা ও চিকির নাম মান্যতা স্বীকৃতি 
নাগঃ -  নাগ বলতে সমগ্র কডা (KORA) জাতি যে নাগ বংশীর বংশধর তা বুঝিয়ে থাকে এবং আদিবাসী কডাদের (KORA) আদি পূর্ব পুরুষদের মাতৃভূমির বাসস্থান যে ...'ছোটনাগপুর' তা বোঝাই .... এই ' নাগ ' ভাষাটির মাধ্যমে।
চিকি ঃ - চিকি বলতে বর্ণ বা অক্ষরকে বুঝিয়ে থাকে। 
' কডা ভাষার চিন্হাঁ ' ( বাংলা মানে চিহ্ন বোঝায় ) বাক্যের প্রথম উচ্চারিত শব্দ = চি 'এবং কিনাঃ' (বাংলার মানে কি বোঝায়) ভাষার উচ্চারিত প্রথম শব্দ কি, কে পাশাপাশি বসিয়ে চিকি ভাষা গঠন করা হয়েছে। 
যেমন ঃ — চিন্হাঁ (চিহ্ন) = চি, এবং কিনাঃ (কি?) = কি, এই দুটো ভাষার প্রথম শব্দ উচ্চারিত শব্দ দুটিকে জোড়া লাগিয়ে যার নাম দেওয়া হয়েছে = চিকি এবং যার মিলিত অর্থ বোঝায় অক্ষরকে। অর্থাৎ হল অাদিবাসী কডা (KORA) জাতির মাতৃভূমি এবং চিহ্নের প্রতীক হল " "নাগচিকি"।

নাগবংশি কড়া রাআ নাগ-চিকি
মারাং চিকি

নাগবংশি কড়া রাআ নাগ-চিকি
 হুডিঞ চিকি
 

নাগবংশি নাগছত্র কড়া রাআ নাগ-চিকি
 মারাং তিহি রা-আ চিকি


 


নাগচিকি নামের স্বীকৃতি ঃ
নাগচিকি নামটি স্বীকৃতি পাওয়া যায় ২০১৫ সালে রাণীসায়ে এবং শিব ডাঙ্গার আলোচনা সভার তর্ক-বিতর্ক মাধ্যমে "আদিবাসী কোড়া সমাজ কল্যাণ সংগঠন" (পশ্চিমবঙ্গ) এর কোর  কমিটি দ্বারা।
নাগ চিকি বর্ণটির কপিরাইট করা হয়েছে ঃ — Reg No. L-77751/2018
নাগ চিকির বৈশিষ্ট্য
নাগ চিকি রা-আঃ গুণ
১)    নাগচিকিতে মোট বর্ণ ৩০টি, এর মধ্যে ৬টি স্বর বর্ণ, ২২টি ব্যঞ্জন বর্ণ, ১টি লাঠা বর্ণ মু দাড়ম এবং ভাষা লেখার সাহায্যকারী দুটি শব্দের মাঝখানে আরেকটি বর্ণের নাম হল   'ফারচা' বর্ণ।
২)     শতকিয়ার ১ থেকে ১০০ টি  সংখ্যার বর্ণনা আছে ভাষা ও আকার গত। বাম দিক থেকে ডান দিকে লেখা হয়। 
৩)    গোটা বড় অক্ষরে এবং টানা অক্ষরের লেখার ধরন আছে নাগ চিকিতে। 
৪)     নাগ চিকি বর্ণের সৃষ্টি হয়েছে কোড়া (কডা) আদিবাসীর সামাজিক পৌরাণিক প্রেক্ষাপট চিত্র থেকে (নাগ রাজা কডা ছেলে ছায়া প্রদান দৃশ্য) থেকে। 
৫)     কডা আদিবাসীর দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক জিনিস তীরের ফলা, টাঁগি, রাস্তাঘাট, তালপাখা , কাস্তে, মাছ ধরার কাঁটা, যাঁতি, কাঁটা কোদাল, ছাতার বাঁট, মেয়েদের নাকের অলঙ্কার নাক মাছি, প্রকৃতির অঙ্কুর গাছ, ছত্রাক, পানের পাতা, ফল, চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবী, পাখি, সাপ, ঘাস ফড়িং এবং মানব শরীর থেকে নাক, কান প্রভৃতি থেকে বর্ণের আকার এবং চিকির ভাষার নাম এসেছে।
৬)     নাগ চিকির সংযুক্তা বর্ণ নেই। 
৭)     নাগ চিকিতে  শব্দ বা বানান  লেখার ক্ষেত্রে দেবনাগরিক, ইংরেজির আংশিক এবং নাগ চিকির নিয়মকে সংমিশ্রণে ঘটিয়ে গঠিত হয়েছে.... নাগ চিকি কডা ভাষা লেখার ব্যাকরণ। 
৮)     টানা হাতের অক্ষর ওপর থেকে টেনে নীচে লেখা ধরন আছে।