নদী

রাত্রি কালো, তার চেয়েও কালো নদীর জল, 

ভোরের সূর্য পেতেছে তার কমলা আঁচল। 

শান্ত নদীর নরম মুখে, বটের ছায়া পড়েছে ঝুঁকে, 

বক, মাছরাঙা খেলা করে তার জরাজীর্ণ তীরে, 

লম্বা দাড়ি বটের ঝুরি দুলছে যে সমীরে।

 

শ্রান্ত পথিক বসে বটছায়, গ্রীষ্মের দুপুরে, 

তৃষ্ণায় তার ছাতি ফাটে, জল খায় সে আঁজলা ভরে। 

নতুন জীবন পেল তার প্রাণ, ক্লান্ত কাক সেরে নেয় স্নান, 

সাপের খোঁজে ঘুরছে নেউল, দূরে জারুল বনে, 

চড়ুইগুলো কিচিরমিচির করছে আপনমনে।

 

বধূরা সব সকালবেলা এসে কলস কাঁখে, 

নদীর থেকে জল নিয়ে যায় গল্প করার ফাঁকে। 

নদী-সাথে সেরে মৃদু আলাপন, স্থির করে গেছে সান্ধ্য লগন, 

সান্ধ্য-স্নান সেরে যাবে ঘরে, সন্ধ্যা-প্রদীপ দিতে, 

দেব-আরাধনা, দিয়ে ধূপ-ধুনা, সন্ধ্যা-আরতিতে।

 

অনেক যুদ্ধ দেখেছে যে নদী, দাঁড়িয়ে এ-পৃথিবীতে; 

ঝড়, বন্যা, খরা, মহামারী কয়েক শতাব্দীতে। 

খরায় মজে যে মাথা খুঁটে মরে, বন্যায় জল উপচিয়ে পড়ে, 

রক্তে সান্দ্র হয়েছে তবুও হয় নি তো গতিরোধ, 

রক্ত দিয়ে এ-পৃথিবী তার, করে গেছে ঋণ শোধ।।