ভগবান ও ভূতে সবাই বিশ্বাস করে। কিন্তু বলে না। পাছে নাস্তিকের অহংকার মুছে যায়। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু লেখক সিরাজের কথাই ধরা যাক। ও মুখে বলত, ভুত টুত কিছু নেই। অথচ ওর ভূতের ভয় ছিল মারাত্মক। আসলে ভুত নেই এটা বলাটাই ফ্যাশন। কিন্তু তারা ভয় পায়। আবার চাষা ভুশরা ভূতে বিশ্বাস করে কিন্তু ভয় পায় না। কারণ, তাদের অন্ধকারেও কাজ করতে হয়, তারাও একা থাকে।
ভূত নিয়ে যে সতিকা রের অভিজ্ঞতা আমার জীবনে, তার সূত্রপাত কটিহারে গিয়ে। জীবনে প্রথম ভূতের সঙ্গে মোলাকাত। তবে মেমসাহেবের সঙ্গে আমার চাক্ষুষ সাক্ষাৎ ঘটেনি কখনো। শুধু জুতোর শব্দ শুনেছি। দিনের পর দিন নিশুতি রাতে আমার এবং শুধু আমারই ঘুম ভাঙিয়ে সে এসে চলে গেছে। এটা আমার জীবনে একটা বিরাট অভিজ্ঞতা। কাজেই আমি কখনো অবিশ্বাস করতে পারব না যে ভুত নেই। তাছাড়া এটা একদিন দুদিন নয়, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ঘটেছে। কোন বার্তা কি বয়ে এনেছেন সেই মেমসাহেব আমার জন্যে? কী জানি! তবে এটুকু জানি, পারিপার্শিক থেকে যেটুকু দেখা যায়, সেটুকু অনুভব করা যায়,।দৃশ্যমান, শ্রবণ যোগ্য, জড় ও যাবতীয় যা আছে, তাই সব নয়। আমাদের জানার বাইরে, অন্য মাত্রায়, অন্য তরঙ্গে অজানা কত কী যে রয়ে গেছে, তার ইয়াত্তা নেই। হায়, আমাদের মস্তিষ্কের বড়াই। মানুষের যেটুকু মস্তিষ্কে দেওয়া আছে, তার অতিরিক্ত মেধা তার নেই। বিশ্ব রহস্যের কাছে তার বিজ্ঞান দর্শন এখনো নতজানু।
কটিহার ছেড়ে চলে এলাম। কিন্তু মেমসাহেব ছাড়ল না আমায়। বাবা এক সাহেবের কাছ থেকে সফাসেট ও চার টে চেয়ার সমেত একখানা মস্ত বার্মা সেগুলোর ডাইনিং টেবিল কিনেছিলেন। নিশুতি রাতে মেমসাহেব তার হাই হিলের শব্দ তুলে এসে মাঝেমাঝেই পরিক্রমা করে যেত টেবিলটা। সেই শব্দ, সেই অনুভূতিটা টের পেতাম শুধুমাত্র আমিই।
সাক্ষাৎকার:রমাপদ পাহাড়ি