তাতোনের বাড়ি আজ হৈহৈ-রৈরৈ ব্যাপার। ওর মামাতো ভাই বুকুন বড়দিনের ছুটিতে আজ দিল্লি থেকে ওদের বাড়ি বেড়াতে আসছে। দু’জনই প্রায় সমবয়সী। পড়েও একই ক্লাসে। আর বেশ কয়েকদিনের জন্য যে আসছে সেটা না বলে দিলেও তাতোন ভালই বোঝে সেটা। এমনিতে তাতোনের বাড়িতে বন্ধু বলতে ওর পোষা কুকুর ঝিমি। আর কিছুটা ওই কাজের দিদি লক্ষ্মী। ঝিমির সঙ্গেই ওর যত খেলা, যত মজা করা। এছাড়া বেচারা করেই বা কি? বাবাতো সেই সকালে ওকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে যায় আর ফেরে সেই রাত্রে। লক্ষ্মীদিদির তো আর কাজের শেষ নেই। কিছুটা সময় মা দেয় বটে তবে তার বেশিটাই পড়াশোনার জন্য। আর আছে। কাকাই। সে তো সব সময়ই তার ঘরে কম্পিউটার নিয়ে বসে। কিছু বললে বলে ‘ওইতো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড’। তাতোন তো কিছুতেই ভেবে পায় না যে একটা যন্ত্রের সঙ্গে, যে কিনা ঝিমির মতো দৌড়ােয় না, চেঁচায় না, খায় না দায় না, তার সঙ্গে মানুষের এত বন্ধুত্ব হয় কি করে। যদি না কাকাইয়ের মাথার.............।
যাক ক’দিন ভালই কাটবে মজা আর হুল্লোড় করে। একটা করে ট্যাক্সি আসে আর তাতোন সদরে ছুটে যায়। অবশেষে বেলা দুটো নাগাদ বুকুনরা অর্থাৎ তাতোনের মামা মামীমা আর বুকুন এসে হাজির হল। তারপর বিশ্রাম নিয়ে খাওয়াদাওয়া করে বুকুনরা এক ঘুম দিলো। ব্যাস, লম্বা ট্রেন জার্নি করে বুকুনের ঘুম আর ভাঙে না। এদিকে আনন্দের চোটে তাতোনের চোখ থেকে ঘুম উধাও। দেখতে দেখতে সন্ধ্যে পার হয়ে গেল, বুকুনের ঘুম আর ভাঙে না। আর আজ যেহেতু রবিবার বাড়িতে বাবাও হাজির। কিছুতেই বাবা ওদের ঘুম ভাঙাতে দেবে না। কেননা ওদের নাকি খুব ধকল গিয়েছে। ভাগ্যিস স্কুলে ছুটি পড়ে গিয়েছে বড়দিনের, তাই তাতোনের চোখে জলটা বেরোয়নি। খেলাটা কালকের জন্য তোলা রইল। যাই হোক, সন্ধ্যের পর বুকুনের ঘুম ভাঙল। শুরু হল দুই বন্ধুর যতো রাজ্যের গল্প। ওদের খেলার গল্প, বন্ধুদের গল্প, স্কুলের গল্প, ঝিমির গল্প, কি নয়? দেখতে দেখতে প্রায় নটা বেজে গেল। এমন সময় মা এসে বলল কাকাইকে ডেকে আনার জন্য, সবাইকে খেতে দেবে। এবার তাতোন বুকুনকে বলল ‘চল চল, তোকে একটা মজার জিনিস দেখাবো’, বলে কিছুটা মজা দেখানোর ছলে বুকুনকে কাকাইয়ের কম্পিউটারের ঘরে নিয়ে গেল। ব্যাস, এখানেই তাতেনের বোধহয় একটা মস্ত ভুল হয়ে গেল। বুকুন ঘরে ঢুকেই আনন্দে লাফিয়ে উঠল। আরে, আগে বলিসনি তো! তোদের বাড়িতে কম্পিউটার আছে। মুহুর্তের মধ্যে কাকাইয়ের সঙ্গে ভাব জমিয়ে নিল বুকুন। আর জেনে নিল কাকাইয়ের কাছে কি কি গেমস আছে। কাকাইকে রাজি করিয়ে ছাড়ল যে আগামীকাল ওকে একটা গেমস খেলতে দিতে হবে। তাতোন তো এতদিন অতগুলি বোতামওলা যন্ত্র দেখে হাত দেওয়া তো দূরের কথা ও ঘরেই ঢুকতো না, খুব দরকার ছাড়া। আর বুকুনতো দেখছি নিজেই কম্পিউটার চালাবে বলছে। আর কাকাইয়ের প্রশ্নের বুকুনের দেওয়া উত্তরগুলি তো নিজেই শুনল। ওদের স্কুলে নাকি এখন থেকেই সপ্তাহে দুদিন কম্পিউটার ক্লাস হয়। নিজের হাতে কম্পিউটার চালাতে হয়, লোগো টোগো কি সব শেখানো হয়। তাতোনদের স্কুলে ওসবের কোনও বালাই নেই। ওদের তো কোন ছার, উঁচু ক্লাসেও হয় বলে কোনওদিন শোনেনি। সত্যি বলতে কি ওদের স্কুলে কোনও খেলার ব্যবস্থাই নেই। খালি বছরে একবার স্পোর্টস হয়। তাতে কার যে কি লাভ হয়—ওর ছোট মাথায় ঢোকে না। আর বুকুনের স্কুলের নিজস্ব মাঠে অন্য সব গেমস হয় যার যেটা ভাল লাগে। তার ওপর। আবার কম্পিউটার গেমস।
কিন্তু একটা ব্যাপার কিছুতেই তাতোনের মাথায় ঢুকছে না। ওই যন্ত্রটা দিয়ে কিভাবে গেমস খেলবে। যাই হোক, সেটাতো কালকের আগে জানা যাচ্ছে না। কাল যখন বুকুন গেমস খেলবে তখন ভাল করে দেখতে হবে। এই সঙ্গে আর একটা পোকা তােতানের মাথায় নড়তে শুরু করেছে, সেটা হল, বুকুনের মতো ওকেও কম্পিউটারটা শিখতে হবে।

খেতে খেতে কাকাইয়ের কাছে একবার কথাটা পেড়েও দেখলো তাতোন। ব্যস, কাকাইকে আর দেখে কে। ঘর ফাটিয়ে হাসি। এইজন্য কাকাইকে কিছু বলতে নেই। কোনও রকমে হাসি থামিয়ে সবার অবাক করা মুখের দিকে তাকিয়ে কাকাই বলল ‘এবার রেষারেষি শুরু হয়ে গেল। তাতোন বুঝল আগ্রহের আতিশয্যে সবার সামনে কথাটা বলা ঠিক হয়নি।
যাইহোক, কাকাই শেখাতে রাজি—তবে কতকগুলি শর্তে। কাকাইয়ের শেখানোর শর্তগুলিও ভারি অদ্ভুত। অগত্যা সেটা মানতেই হল। শর্তগুলি হল, কাকাইয়ের নিয়মে শিখতে হবে। অর্থাৎ শুধু গেমস শেখার জন্য কম্পিউটার শেখা নয়। কম্পিউটারকে তোমার বন্ধু করতে হবে, না হলে কম্পিউটার তোমার কথা শুনবে না। কাকাইয়ের মাথাটা বোধহয় সত্যিই..........! তোমার স্কুলের পড়া শেষ করে তবেই কম্পিউটার শিখতে আসবে। আর সবচেয়ে কষ্টদায়ক শর্ত হল ডাক পাওয়া মাত্র যেখানে যে অবস্থায় থাকি না কেন হাজির হতে হবে। অর্থাৎ কাকাইয়ের ফাইফরমাস খাটতে হবে।
যাইহোক, দু’দিন ধরে কম্পিউটার গেমস দেখে তাতোন বুঝল যে খেলাটা সত্যিই খুব মজার আর খেলাও আছে অসংখ্য রকমের। কিন্তু এর জন্য কম্পিউটার শেখার কোনও প্রয়ােজন নেই। সেই জন্যই বোধ হয় কাকাই শর্তটা করে নিয়েছিল যে শুধুমাত্র গেমস-এর জন্য কম্পিউটার নয়। এছাড়া আর একটি অসুবিধা আছে। সেটা হল কম্পিউটার না শিখলে কিভাবে শুরু করা যাবে খেলাটা। সব সময় তো আর কাকাই কম্পিউটারটা রেডি করে দেবে না।
বুকুনরা ফিরে যাওয়ার পর কাকাইয়ের কম্পিউটার শেখানোর পর্ব শুরু হল। আর কাকাইও তেমনি। এত আস্তে আস্তে শেখাচ্ছে যে কি বলব। খালি নিজের কাজই করছে। একেই স্কুলের পড়া শেষ করে তাতোন কতটুকুই বা সময় পায়। আর কাকাইকে তাড়া দিলেই বলে, তোর তাড়াতে কম্পিউটার হাঁফিয়ে যাবে, বা কখনও বলে, তোর মাথায় এখন স্কুলের পড়াগুলি ট্রাফিক জ্যাম করে আছে, কম্পিউটার পড়বার জায়গা দিচ্ছে না, তাই বুঝতে পারছিস না। একটু পরে আসিস্।