যাক আজকে কাকাইয়ের মেজাজটা বেশ ভাল আছে মনে হচ্ছে, তাতোন ভাবলো এই বেলা একটা গেম খেলার কথা বললে কি হয় দেখা যাক না। কাকাই এক কথায় রাজি হয়ে গেল। তাতোন চুটিয়ে প্রায় একঘন্টা ধরে একটা গেমস্ খেলল। সত্যি তাতোন এখন নিজেকে কি বোকাই না ভাবছে। নিজেরই বাড়িতে এমন একটা মজার যন্ত্র আছে আর ও কিনা এই ঘরটাকে এড়িয়ে যেত এতদিন ধরে। তাততানের গেমস খেলতে খেলতে একটা কথা মনে হচ্ছে এই গেমস অংশটি ছাড়া অনেকটা ওর জন্মদিনে পাওয়া ক্যালকুলেটারের সঙ্গে কম্পিউটারের কিছুটা মিল খুঁজে পাচ্ছে। কথাটা কাকাইকে বলব বলব করে বলেও ফেলল। “আমার তো কম্পিউটারকে একটা হাই পাওয়ার ক্যালকুলেটার মেশিন বলে মনে হচ্ছে। তুমি কি বল? “ কাকাই একটু চুপ করে যে কাজটা করছিল সেটা শেষ করে বলল, “তুই কিন্তু খুব ভাল একটা প্রশ্ন করেছিস। কম্পিউটারের আদিপুরুষ অবশ্যই ক্যালকুলেটার, বা তুই এও বলতে পারিস ক্যালকুলেটার হচ্ছে অতি উন্নত ধরণের কম্পিউটারের একটা অংশমাত্র। ক্যালকুলেটারের কাজ তো ওর নামের মধ্যেই আছে। আর ওর কাজ ওখানেই শেষ অর্থাৎ ক্যালকুলেশন করা মানে গণনা করা। কিন্তু কম্পিউটারের কাজের শুরু ওখান থেকেই। এছাড়া কম্পিউটার আর ক্যালকুলেটারের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশী। এদের মধ্যে একমাত্র মিল হল এই দুটো যন্ত্রই হচ্ছে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র।

ক্যালকুলেটর প্রথমে ছিল ইলেকট্রোমেকানিক্যাল যন্ত্র পরে ধাপে ধাপে ইলেকট্রনিক্সে পরিণত হয়েছে। কম্পিউটারও প্রথমে ছিল ইলেকট্রোমেকানিক্যাল পরে ইলেকট্রনিক্সে রূপান্তরিত হয়েছে। এই মিলটা ছাড়া বাকি সবই অমিল। প্রথম অমিল হল এদের কাজ করার গতি। একটা মোটামুটি চার বা পাঁচ সংখ্যার যোগ বা বিয়ােগ করতে ক্যালকুলেটরে লাগে সব মিলিয়ে খুব কম করেও এক সেকেণ্ড। আর সেই জায়গায় কম্পিউটারের ঐ অংশটি করতে সময় নেবে এক সেকেণ্ডের হাজার ভাগের একভাগ। তাতোন তো শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসল। কাকাই সেই দেখে হেসেই খুন। তাতোন অবাক হয়ে বলল, “তুমি হাসলে কেন ?” কাকাই বলল, “হাসছি তোকে দেখে। আরে এতো সবচেয়ে কম ক্ষমতাওলা কম্পিউটারের সময়, এর পরে যে সব উচ্চক্ষমতাওয়ালা কম্পিউটার আছে সেগুলোর কথা বললে তোর হাতটা কোথায় রাখবি ভেবেই পাবি না। এই যে সময়টার কথা বললাম একে বলে এক মিলি সেকেণ্ড (1/1000 second = 103) এর পরে আছে এক মাইক্রোসেকেণ্ড (1/1000x1000 = 10 Second)। তারপর আছে এক ন্যানো সেকেণ্ড (1/1000x1000x1000 = 10 Second)। হ্যাঁ এরপরেও আছে, আর সেটা হল এক পাইকো সেকেণ্ড (1/1000x1000x1000x1000 = 10-12 Second)। বল এরপর কোথায় তোর হাতটা রাখবি ?” তাতোন তো ভেবেই পাচ্ছেনা যে একটা সেকেণ্ডকে অতো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা সম্ভব। দ্বিতীয় অমিল ‘কী বোর্ড’ (Key Board) অর্থাৎ যার মাধ্যমে নির্দেশ পাঠানো হয় কাজ করার জন্য। ক্যালকুলেটারে ‘কী বোর্ড’ ছোট এর বোতামের সংখ্যাও কম। তুলনায় কম্পিউটারের কী বোর্ড অনেক বড়। আর সেই সঙ্গে বোতামের সংখ্যাও অনেক বেশী। তৃতীয় অমিল হল মনিটর বা ডিসপ্লে স্ক্রীন। ক্যালকুলেটারের মনিটর ছোট জানালার মত। কম্পিউটারের মনিটর সে তুলনায় অনেক বড় প্রায় টিভির পর্দার মত। চতুর্থতঃ ক্যালকুলেটরের স্মৃতি অংশ খুবই কম পরিমাণ তথ্য মজুত করতে পারে আর সেটা তার নিজের স্মৃতি অংশে। | কিন্তু কম্পিউটারের স্মৃতি অংশের তথ্য মজুত করার ক্ষমতা অনেকগুণ বেশী। আর কম্পিউটারের নিজস্ব স্মৃতি অংশ ছাড়া বাইরেও অন্য ভাবে তথ্য মজুত করে রাখা যায়। আর পঞ্চমতঃ ক্যালকুলেটার একটা মাত্র যন্ত্র যার সাহায্যে আমরা কেবলমাত্র ক্যালকুলেশনই করতে পারি। আর কম্পিউটার হচ্ছে কয়েকটা যন্ত্রের সমষ্টি, সবকটা যন্ত্র মিলে হয় একটা কম্পিউটার সিস্টেম। যার কাজ হল তথ্য সংগ্রহ করা তার স্মৃতিভাণ্ডারে, সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ এবং গণনা করে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া মনিটর বা আউটপুটের মাধ্যমে। আর এতসব করা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। আর আসল যে। জায়গাটায় কম্পিউটার ক্যালকুলেটারকে হারিয়ে দিয়েছে সেটা কি বলতো ?” তাতোন জিজ্ঞেস করলো, “আগের পার্থক্যগুলো ছাড়া ?”
কাকাই বলল—“হ্যাঁ”, বলেই বললো, সেটা হলো যুক্তি।” তাতোন বলল—“মানে ?”
কাকাই বলল— “ধর, তোদের ক্লাসে ৩০ জন ছাত্র আছে। প্রত্যেকে কে কত নম্বর বিভিন্ন বিষয়ে পেয়েছে এবং তাদের মোট নম্বর কত, সেটা তুই কম্পিউটার ছাড়া ক্যালকুলেটারে পেয়ে যাবি।
কিন্তু ঐ ৩০ জন ছাত্রের পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে কে কোন ডিভিশন পেয়েছে সেটা বার করতে হলে ক্যালকুলেটার দিয়ে হবে না। কম্পিউটার চাই। কারণ কত নম্বর পেলে প্রথম ডিভিসন আর কত পেলে দ্বিতীয় ডিভিশন হবে এই যুক্তিবাদী চিন্তাটা কম্পিউটার ছাড়া পাওয়া যাবে না।”

এবারে কাকাই তাতোনকে বললে, “তুই এখন কম্পিউটার জিনিসটা কি সেটা আশা করি বুঝতে পেরেছিস। আচ্ছা এবার আমায় বল তো, একটা কম্পিউটারের সিস্টেমের মধ্যে তুই কি কি জিনিস চোখে দেখতে পাচ্ছিস আমার এই কম্পিউটার ঘরে।” তাতোন বলল, “ঠিক আছে আমি এক এক করে বলছি। প্রথমে হল কী বোর্ড (Key Board) দ্বিতীয় হল সি.পি.ইউ (CPU), তৃতীয় হল মনিটর (Monitor) আর চতুর্থটা প্রিন্টার (Printer) মোট চারটে অংশ আমি দেখতে পাচ্ছি।” কাকাই বলল, “এই যে চারটে অংশ তুই দেখতে পাচ্ছিস, এই অংশ গুলিকে কি বলে জানিস ? এগুলো হল হার্ডওয়্যার (Hardware)। এই অংশগুলি প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে তার বা কেবল (Cable) দিয়ে যুক্ত। এছাড়া কম্পিউটার চালাতে যে সব জিনিস দরকার হয় যেমন মাউস (Mouse), ফ্লপি ডিস্ক (Floppy Disk), ম্যাগনেটিক টেপ (Magnetic tape) বা যে সব মাইক্রোপ্রসেসর চিপ (Microprocessor chip) ব্যবহার করা হয় সবই এই হার্ডওয়্যারের পর্যায়ে পড়ে। অথাৎ সোজা কথায় যে যে যন্ত্রাংশগুলি আমরা চোখে দেখতে পাই বা স্পর্শ করতে পারি সেগুলিকে সবই হার্ডওয়্যার (Hardware) বলে।
কাকাই এবার একটু থেমে তাতোনকে বলল, “আচ্ছা এবার তুই বলতো শুধু এই সব হার্ডওয়্যার থাকলেই কি একটা কম্পিউটার চালানো যাবে ?” তাতোন বলল, “তার মানে আবার কি চাই?” কাকাই বলল, “বারে তুই এতদিন ধরে কি শিখলি? ধর তোর। নিজের সম্বন্ধে কম্পিউটারকে কোন প্রশ্ন করবি। তার উত্তরটা ওকে জানিয়ে না রাখলে ও বলবে কি করে ? তার মানে কম্পিউটারকে তোর সম্বন্ধে তথ্য দিতে হবে না ?” তাতোন বলল, “তাতো হবেই। কম্পিউটারের নিজের তো কোন বুদ্ধি নেই। ওকে তো নির্দেশ দিতে হবে কি কাজ ওকে করতে হবে।” কাকাই বলল, “ঠিক তাই। কম্পিউটারকে শুধু তথ্য দিলেই হবে না। কি ভাবে কাজ করবে তার রাস্তাও বলে রাখতে হবে আগে থেকে। যেমন ধর, একটা কম্পিউটারকে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ কি করে করতে হবে শিখিয়ে দিতে হবে। এরপর তুই বা যে কেউ কোন অঙ্ক দিলে কম্পিউটার মুহুর্তের মধ্যে করে দেবে। এই যে আগে থেকে তথ্য দেওয়া বা কি পদ্ধতিতে কাজটা করতে হবে সেই নির্দেশ দিয়ে রাখা কম্পিউটারকে, এই তথ্য বা নির্দেশ যেটা চোখে দেখা যায় না বা স্পর্শ করা যায় না একে বলে সফট্ওয়্যার (Software), সফট্ওয়্যার ছাড়া কম্পিউটারকে একরকম মৃতই বলা যায়। কারণ একে ছাড়া কম্পিউটার কোন কাজই করতে পারবে না। এই সফটওয়্যার আবার দুরকমের হয়। একটা হল যে সব নির্দেশ মেসিনের মধ্যে দেওয়া থাকে যাতে করে মেসিনটা চালু করা যায় বা প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্তুত করা যায় পরবর্তী কাজের জন্য। এই সফওয়্যারের নাম হলো সিস্টেম সফট্ওয়্যার (System Software). আর একটা সফটওয়্যার হলো বিভিন্ন ধরণের কাজের জন্য বিভিন্ন রকম নির্দেশ কম্পিউটারকে দেওয়া। যেমন তুই যে কিছুক্ষণ আগে একটা গেমস খেললি ওটাও একটা সফট্ওয়্যার, আবার আমি যে আমার অ্যাকাউন্টিং এর কাজ করছি এটাও একটা সফট্ওয়্যার। এরকম অজস্র সফট্ওয়্যার বাজারে পাওয়া যায়। এদের প্রত্যেকের কাজও আলাদা আলাদা। এদের বলে অ্যাপ্লিকেশন সফট্ওয়্যার (Application Software), একে প্রোগ্রামও বলা যায়।

“তাহলে আজকে তাতোন তুই কি কি শিখলি এক কথায় বলতে পারবি ?” কাকাই তাতোনকে জিজ্ঞাসা করল। তাতোন একটু ভেবে নিয়ে বলল, “না এককথায় পারবো না তবে অল্প কথায় পারবো।” কাকাই হেসে ফেলে বলল, “ঠিক আছে তাই বল।” তাতোন বলল, “কম্পিউটার হল সফট্ওয়্যার আর হার্ডওয়্যারের মিলিত শক্তিতে চালিত একটি যন্ত্র। যে যন্ত্রে আমরা সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে নির্দেশ বা তথ্য পাঠিয়ে হার্ডওয়্যারের সাহায্যে আমাদের কাজগুলো করিয়ে নিই। কি ঠিক বললাম তো?” কাকাই বলল, “হ্যাঁ অল্পকথায় ঠিক আছে। কিন্তু তাতোন ভায়া কম্পিউটার সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু জানার আছে। আর সেটা তো এরকম অল্প কথায় হবে না। অতএব আজ এই পর্যন্তই থাক, এরপর আর একটু গভীরে যাওয়া যাবে।