আজ কাকাই তাতোনকে বলেই রেখেছিল কম্পিউটারকে কিভাবে 0 আর 1 এর সাহায্যে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হয় সেই ব্যাপারটা বোঝাবে। আর ওর মাথাটাও একটু সাফ্ সুতরো করে রাখতে। না হলে বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। তাতোনও সেই মতো সকালে শ্যাম্পু ট্যাম্পু করে ব্রেকফাস্ট করে কাকাইয়ের ঘরে এসে হাজির। কাকাই তাতোনকে দেখে বলে উঠল, ‘এই যে এসে গেছেন তাতোনবাবু। তা এখন ক’টা বাজলো?’ তাতোন কাকাইয়ের দেওয়াল ঘড়িটার দিকে দেখে বলল, ‘ন’টা দশ’।
কাকাই বলল — ‘আর তোর ঘড়িতে ?’
তাতোন জন্মদিনে পাওয়া ইলেকট্রনিক ঘড়িটা দেখে বলল, ‘3’টা ।’

কাকাই বলল, — ‘তোর ঘড়িটাকে কি ঘড়ি বলে জানিস ? এটা হল ডিজিটাল ঘড়ি, চলে ডিজিটাল সিগন্যালে। আর দেওয়াল ঘড়িটা হলো অ্যানালগ জাতীয় ঘড়ি।
ডিজিটাল ঘড়িতে কি হয় জানিস? এতে একটা ব্যাটারি থাকে, সেটা একটা ইলেকট্রনিক সার্কিটকে চালনা করে। প্রতি সেকেন্ডে একটা করে পালস্ বা স্পন্দন সৃষ্টি করে এই সার্কিটটি। আর পালস্- টা যে সংখ্যা বা ডিজিটের মাধ্যমে গোনা হয়, সেটাই হল ডিজিটাল ঘড়ির সময়। তাহলে তুই বলতো, কাকাই বলল, ‘ডিজিটাল বলতে তুই কি বুঝলি? তাতোন বলল –“যে ব্যবস্থায় সংখ্যার মাধ্যমে গণনা করা হয় তাকেই ডিজিটাল বলে।
কাকাই বলল—“ঠিক বলেছিস। বেশীর ভাগ কম্পিউটারই যা আমরা সাধারণত ব্যবহার করে থাকি, ডিজিটাল ব্যবস্থায় চলে থাকে।
তাতোন বলল—“আচ্ছা কাকাই তুমি যে একটু আগে অ্যানালগ সিস্টেমের কথা বললে, ঐ সিস্টেমেও কম্পিউটার আছে নাকি?”
কাকাই বলল—হ্যাঁ আছে বৈকি। অ্যানালগ কম্পিউটারে সাধারণত সদাপরিবর্তনশীল কোন বস্তুর পরিমাপ করা হয়। যেমন ধর, আবহাওয়ার রিপোর্ট, কোন বস্তুর গতি, তাপমাত্রা এইসব। আর এইসব পরিমাপ সবসময়ই আনুমানিক হয়ে থাকে।
যাক যে কথা বলছিলাম ডিজিটাল ব্যবস্থায় একটা ঘড়ির বেলায় কতগুলো সংখ্যা নিয়ে গণনা করা হয় বলতে পারি?
তাতোন বলল—1 থেকে 59 অবধি। কারণ এরপরই 00 হয়ে যাবে আর ঘন্টার সংখ্যাটি এক ঘর বেড়ে যাবে।
কাকাই বলল—“গুড। আরও একটা ডিজিটাল বা সংখ্যা পদ্ধতি আছে আমাদের খুবই পরিচিত—সেটা কি বলত?
তাতোন বলল—কেন, আমরা যে সংখ্যা পদ্ধতির সাহায্যে অঙ্ক করে থাকি সেটাও তো কতকগুলো ডিজিট বা সংখ্যা নিয়ে করা।
কাকাই বলল—“বাঃ, আজ দেখছি সত্যিই তোর মাথাটা খুব সাফ হয়ে উঠেছে শ্যাম্পু করে। তাহলে বলতো তুই যে সংখ্যা নিয়ে অঙ্ক করিস সেটা কোন পদ্ধতি? আর তাতে কতগুলো সংখ্যা আছে?
তাতোন বলল—এতো খুব সোজা, ওটা হলো ডেসিম্যাল মানে দশমিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে আমরা 1 থেকে 9 অবধি নয়টা আর 0 মোট দশটা সংখ্যা ব্যবহার করে থাকি।’
কাকাই বলল—‘ঠিক, আর এই 10 টা সংখ্যা দিয়ে আমরা যে কোন সংখ্যা বোঝাতে পারি। যেমন ধর 9 এর পর 10, 99 এর পর 100 এইরকম আর কি। আচ্ছা এবার বলতো দশমিকের যে কোন সংখ্যার পাশে আর একটি সংখ্যা বসালে কি হবে? যেমন 3 এর পাশে 5 বসালাম। তাহলে কি হবে ? 35, এখানে 5 এর মান বা অবস্থানটাকে কি বলে?
তাতোন বলল — 5 আছে একক স্থানে (Unit Position) আর 3 আছে দশক স্থানে (Ten Position)
কাকাই বলল, তার মানে এটা ভেঙ্গে দেখালে হবে 3x10+5x1। অর্থাৎ একককে 1 দিয়ে আর দশককে 10 দিয়ে গুণ করতে হবে। আবার 35 এর পর যদি কোন সংখ্যা
ধর 7 বসাই তাহলে হবে 357৷ অর্থাৎ 7 একক 5 দশক আর 3 হয়ে যাবে শতক (Hundred Position)। এখন তিনের মান হল 3x100, 5 এর মান 5x10, আর 7 এর মান 7x1। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস’ কাকাই বলল—“দশমিকে যতই তুই ডানদিক থেকে বাঁদিকে যাবি ততই সংখ্যার মান দশগুণ করে বেড়ে যাবে।
‘আর বাইনারি পদ্ধতিতে কি হয়, এখানে কেবল দুটি মাত্র সংখ্যা 0 আর 1
(শূন্য আর এক)। এই সংখ্যা দুটোর আর এক নাম হল বিট্স। দশমিকে যেমন 9 এর পর আর নতুন কোন সংখ্যা হয় না আমাদের লিখতে হয় 10 (দশ), ঠিক তেমনি বাইনারিতে 0 আর 1 ব্যবহার করেই যে কোন ধরনের সংখ্যা লিখতে হবে। যেমন ধর 0 শূন্য, 1 এক, এর পরে দুই লিখতে গেলে কি করে লিখবি?”
তাতোন বলল—‘কেন দুই (2) এইভাবে লিখবো।
কাকাই বলল—তা কি করে হবে? তোকে যে বললাম, বাইনারিতে কেবল দুটি মাত্র সংখ্যা (0 শূন্য’ আর ‘1’ এক) আছে। যা কিছু লিখতে হবে এই দুটি সংখ্যা দিয়ে।
তাহলে দুই কিভাবে হবে ? —তাতোন জিজ্ঞেস করল। কাকাই বলল — দুই
লিখতে হলে বাইনারিতে লিখতে হবে ‘10’ এইভাবে। কিন্তু একে দশ বলা যাবে
না। একে বলতে হবে ওয়ান জিরো বা এক শূন্য। ঠিক তেমনি তিন লিখতে গেলে লিখতে হবে 11 অর্থাৎ ওয়ান ওয়ান বা এক এক, এইভাবে চার হবে 100, পাঁচ 101, ছয় 110, সাত 111, আট 1000, নয় 1001 আর দশ হবে 1010 অর্থাৎ এক শূন্য এক শূন্য।
তাতোন বলে উঠল, তার মানে আমি যদি কম্পিউটারে 5 (পাঁচ) এই সংখ্যাটি লিখি তাহলে কী বোর্ড সেটাকে বাইনারি ডিজিট 101 বা এক শূন্য এক করে CPU তে পাঠিয়ে দেবে ?’
কাকাই বলল—“ঠিক তাই। আর ঠিক এইভাবেই A,B,C,D, অক্ষরগুলোও বাইনারীতে যথাক্রমে 1000001, 1000010, 1000011 1000100 এইভাবে কম্পিউটার পড়ে নেবে।
‘সংখ্যার ক্ষেত্রে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস নিশ্চয়,’
কাকাই বলল, ‘ দশমিকে যখন ডানদিক থেকে বাঁদিকে যাওয়া হয় তখন সংখ্যাগুলো দশগুণিতকে বেড়ে যায়। যেমন 10, 101,102, 103.... আর বাইনারীতে এটা দুই গুণিতকে বাড়তে থাকে। (যেমন 20, 21, 22, 23, 24......) এইভাবে।
‘ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। তাতোন বলে উঠল, বাইনারি যে দুই গুণিতকে বাড়ছে সেটা কি করে বুঝবো। কাকাই বলল, ‘সেটা বুঝতে হলে তোকে যে কোন বাইনারি সংখ্যার সঙ্গে ডেসিম্যাল সংখ্যার একটা ভাগফল তুলনা করে দেখতে হবে। তুই যে কোন একটা ডেসিম্যাল সংখ্যা পছন্দ কর। ধর 7 পছন্দ করলি। এখন ভাগশেষ এর বাইনারি সংখ্যা বের করতে হলে এই 7 সংখ্যাটিকে ক্রমাগত 2 দিয়ে ভাগ করে যেতে হবে যতক্ষণ না ভাগফল 0 হয়। ভাগফল 0 হলে এবার ভাগশেষকে পর্যায়ক্রমে নীচ থেকে ওপরে বাঁদিক থেকে ডানদিকে অথবা ওপর থেকে নীচে ডানদিক থেকে বাঁদিকে সাজিয়ে বসাতে হবে।

অর্থাৎ 7 এই দশমিক সংখ্যার বাইনারি সংখ্যা হল 111 (ওয়ান ওয়ান ওয়ান)। আবার এই 111 এই বাইনারি সংখ্যাকে দশমিকে নিয়ে যেতে হলে কি করতে হবে দেখ।

এবারে তাতোন তোকে আমি একটা বাইনারি আর একটা ডেসিম্যাল সংখ্যা দিচ্ছি, কাকাই বলল, “তুই এই সংখ্যা দুটোকে যথাক্রমে ডেসিম্যাল আর বাইনারী পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতো।
তাতোন বলল, “ঠিক আছে। দেখি চেষ্টা করে।
কাকাই দুটো সংখ্যা দিলো একটা 35 আর একটা 11011
তাতোন যেটা করে দেখলে সেটা হলো—

অর্থাৎ 100011 হল 35 এর বাইনারি সংখ্যা আর 27 হল 11011 এর ডেসিম্যাল। বা দশমিক সংখ্যা। কই খুশী হয়ে বলল, ভেরী গুড। এবার উল্টোটা করে দেখ, তোর উত্তর ঠিক আছে কিনা।

কাকাই তাতোনকে বলল, “এবার আশা করি বাইনারি সংখ্যার ব্যাপারটা তোকে বোঝাতে পেরেছি।”
তাতোন বলল, “হ্যাঁ কিছুটা মাথায় ঢুকেছে মনে হচ্ছে। তবে যদি অভয় দাও তো একটা প্রশ্ন করবো ?” কাকাই বলল, “নিশ্চই করবি। বল্ কি তোর প্রশ্ন ?” তাতোন বলল, ‘বাইনারি ব্যাপারটা যেগুলো এতক্ষণ বোঝালে সবটাই তো দেখলাম সংখ্যা নিয়ে। কিন্তু যখন অক্ষর বা চিহ্নের প্রশ্ন আসছে তখন কি হবে ? কাকাই বলল, ‘খুব ভাল প্রশ্ন। কম্পিউটার প্রযুক্তিতে যে কোন অক্ষর সংখ্যা বা চিহ্নকে তার জন্য নির্দিষ্ট বাইনারি সংকেতে পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত এই চেহারাটিকে বলে ‘অ্যাসকি কোডেড ভাসান বা অ্যাসকি রূপ। যেমন A অক্ষরটির অ্যাসকি কোড হল 1000001 (?) জিজ্ঞাসার চিহ্ন—এর অ্যাসকি কোড হল 0111111 আবার কমার (Comma) অ্যাসকি কোড বা সংকেত হল 0100111. তুই হয়তো ভাবছিস’, কাকাই বললো, এই অ্যাসকি (ASCII) কথাটা এলো কোথা থেকে? এর পুরো কথাটা হলো ‘আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড কোড ফর ইনফরমেশন ইন্টারচেঞ্জ’ শব্দগুলির প্রথম অক্ষর নিয়ে। তাতোন বলল, “তাতো বুঝলাম কিন্তু কোনটা সংখ্যা, কোনটা অক্ষর বা কোনটা চিহ্ন এটা কম্পিউটার বুঝবে কিভাবে, শুধু এই অ্যাসকি কোডে ?

কাকাই বলল, হ্যাঁ, যখন কী বোর্ডে কোন অক্ষর বা সংখ্যা বা চিহ্নের জন্য কী চাপা হয় তখনই সেই অক্ষর বা সংখ্যা বা চিহ্নের একটা সিগন্যাল একটা সারকিটের মাধ্যমে সি পি ইউতে যায়। এই সারকিটটার নাম ‘এনকোডার’। এর কাজ হচ্ছে সিগন্যালটাকে একটা আট ডিজিটের কোডে রূপান্তরিত করে প্রধান প্রসেসরে পাঠানো। আবার প্রসেসিং অথাৎ সি পি ইউয়ের কাজ শেষ হলে ঐ আট ডিজিটের কোডটা আবার একটা ‘ডিকোডার’ নামে সারকিটের মধ্যে দিয়ে পুনরায় সংখ্যা বা অক্ষরে পরিবর্তিত হয়ে মনিটর বা আউটপুটে চলে যাচ্ছে।
১ বাইট = ১ ক্যারেক্টার।
১ কিলোবাইট = ১০২৪ বাইটস
১ মেগাবাইট = ১০২৪ কিলোবাইট
১ গিগাবাইট = ১০২৪ মেগাবাইট

আবার অক্ষরের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছিস, যে চারটে অক্ষরকে বাইনারি কোডে লিখেছি সেগুলি সবই আট সংখ্যা বিশিষ্ট। অর্থাৎ আটটা বিট বা সংখ্যা দিয়ে তৈরি হচ্ছে একটা অক্ষর বা বাইট। যখনই কোন নির্দেশ কম্পিউটারে দেওয়া হয় কম্পিউটার সেই নির্দেশকে ০ আর 1 হিসাবে পরিবর্তন করে স্মৃতি অংশে জমিয়ে রাখে। আর সম্পূর্ণ নির্দেশ আসার পর আউটপুট বা ফলাফল বাইনারী থেকে আবার অক্ষর বা সংখ্যায় পরিবর্তিত হয়ে মনিটর বা অন্য আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে প্রকাশিত করে।