স্কুলে কম্পিউটার প্রদর্শনীর আয়োজন করে তাতেনের নিজের একটা কথা মনে হয়েছে বন্ধুবান্ধবদের হাবভাবে যে সে একটা আলাদা সন্ত্ৰম পাচ্ছে অন্যান্যদের তুলনায়। অঙ্ক স্যারও যে একটু ভুল করলেই খুব রুক্ষ ভাবে বকাঝকা করতেন তিনিও এখন অতটা রুক্ষভাবে তাতোনের সঙ্গে অন্তত কথা বলছেন না।
ইতিমধ্যে একদিন তাতোনকে হেডস্যার ডেকে পাঠালেন তাঁর ঘরে। তাতোতো ভয়েই অস্থির কেন ডেকেছেন, সে আবার কি অন্যায় করলো এইসব ভেবে। যাই হোক দুরুদুরু বুকে ঘরে ঢুকেই তাতে এতোটা অবাক হল যে বলার নয়। হেডস্যারের সামনের চেয়ারে এক ভদ্রলোক বসে আছেন। হেডস্যার একগাল হেসে (যেটা খুবই দুর্লভ দৃশ্য, বিশেষত ছাত্রদের কাছে) বললেন ‘এসো এসো, দেখ কে এসেছেন আজ আমাদের স্কুলে, ভদ্রলোক আর কেউ নয় স্বয়ং তাতেনের কাকাই। তাতোন একটা কথা ভেবে নিশ্চিন্ত হল যে আর যাই হোক হেস্যারের আপ্যায়নের ভঙ্গি, কোন অভিযোগ জানাতে কাকাইকে ডেকে পাঠানো নয়। আর কাকাইটাকেও বলিহারি আজ সকালেও স্কুলে আসার পথে আমাকে স্কুটারে করে নামিয়ে দিয়ে গেল। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও কিছু জানায়নি। এখন তাকিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
কিন্তু তাতোনের অবাক হওয়ায় আরও কিছু বাকি ছিল। আর সেই জন্যই তাকে ক্লাস থেকে তলব করা। সেটা হল হেডস্যার এবং অন্যান্য স্যারদের খুব ইচ্ছা আমাদের স্কুলেও চালু হোক কম্পিউটার, আর সেটা চালানোর অর্থাৎ শেখানোর দায়িত্ব নিন তাতোনের কাকাই। শুনে তো তাতোনের ভেতরে ভেতরে একটা অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছিল। কিন্তু তারপরের কথাটা শুনে খুব হতাশ হয়ে পড়ল। সেটা হল তাতোনের কাকাইয়ে সময়ের যা অভাব তাতে উনি কোনভাবেই রাজি নন। তাতোন ভাবলো এইজন্যই বুঝি হেডস্যার তাতোনকে ডেকে পাঠিয়েছেন ওকে দিয়ে রাজি করানোর জন্য। কিন্তু একাজটা অর্থাৎ কাকাইকে রাজী করানোটা যে হেডস্যারের সামনে হোঃ হোঃ করে অট্টহাস্য করার মতই কঠিন কাজ সেটা তাতোন ছাড়া কে আর ভালো বুঝবে। অন্য কোথাও বা অন্য কেউ হলে হয়তো তাতোন তাই করে বসতো। এই সব সাতপাঁচ ভাবছে তাতোন এই সময় হেডস্যার হঠাৎ গলা খাঁকরি দিয়ে বলে উঠলেন, ‘যাইহোক, আমরা তোমার কাকাইকে সপ্তাহে একদিন আসতে রাজি করিয়েছি। কিন্তু উনি বলছেন অন্তত পক্ষে দুদিন থেকে তিন দিনের কমে কখনই সব শেখানো সম্ভব নয়। তাতোন সব শুনে যাচ্ছে আর ভাবছে কথাটা তো মনে হয় ঠিকই কিন্তু এখন কথা ওকে ডেকে শোনানোর কি আছে, ওর পক্ষে তো এ পরিস্থিতিতে কোন মন্তব্য করাই উচিত নয়। তাই চুপ করে বসে রইল ঘাড় হেট করে। এই সময় কাকাই বলে উঠল, আর বাকি ক্লাস দুটো তোকেই নিতে হবে। তাতোন জীবনে কখনও এতটা অবাক হয়নি, বোধ হয় এই মুহূর্তে শচীন তেন্ডুলকার এসে পিঠ চাপড়ে হাই তাতোন, বললেও এতটা অবাক হত না।
ওর মুখের অবস্থা দেখে কাকাই আর হেডস্যার দুজনেই হেসে ফেললেন। হেডস্যার বললেন, মনে হচ্ছে তোমাকে আমার পড়া ধরতে বলেছি। শুনে কাকাইও খুব জোরে হেসে উঠলো। এই হাসাহাসিতে তাতোন কিছুটা সম্বিত ফিরে পেলো। বলে উঠলো, কিন্তু আমি কতটা কি পারবো ? তাছাড়া..... কাকাই বলল, সে সব তোকে কিছু ভাবতে হবে না। আমি যা যা বলব তুই তাই শিখিয়ে যাবি। মনে কর তুই আজ থেকে তোর ক্লাসের মনিটর, এতক্ষণে তাতোন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।