নয় : লোগো (একটি কম্পিউটার ভাষা)

যাই হোক তাতোন কাকাইয়ের নির্দেশমত স্কুলে কম্পিউটার শেখাতে শুরু করল। সপ্তাহে দু’দিন স্কুল ছুটির পর আর কাকাই শনিবার করে ক্লাসে আসতো। তাতোনের কিন্তু একটা পুরানো ঘটনা সবসময় খচ্ খচ্ করে করে মনে বিধতো। সেটা হল বুকুন অর্থাৎ তাতোনের মামাতো ভাই যখন কাকাইকে লোগো সম্বন্ধে নানা প্রশ্ন করছিলো তখন একবার তাতোন ওদের কথার মাঝে বলেছিলো ‘হ্যাঁরে লোগো আবার কি রে? ওটা দিয়ে কি হয়? শুনে বুকুন হেসে বলেছিলো, ও তুই বুঝবি না।’ বলে আবার কাকাই এর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে দিল। এই সামান্য ঘটনার পরে থেকেই তাতোনের কম্পিউটার শেখার আগ্রহের শুরু আর সেই সঙ্গে লোগো ব্যাপারটা কি সেটা জানারও। কাকাই আজ তাতোনকে লোগো কি? এর থেকে কি হয়? এসব শেখাবে বলে আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিল। তাতোনও প্রস্তুত। কাকাই শুরু করলো—“তোকে আগে বলেছিলাম কম্পিউটার নিয়ে কাজ করতে হলে কম্পিউটারকে কিছু নির্দেশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে দিতে হবে তথ্যও। তবেই সে মানুষের নিদের্শমতো কাজ করবে। এখন এই নির্দেশ দেওয়ার কিছু বিশেষ রীতি বা পদ্ধতি আছে। কম্পিউটার নিয়ে কাজ করতে হলে ওর ভাষায় কাজ করতে হবে। যাতে কম্পিউটার সেই ভাষাটি বুঝতে পারে। এখন এই ভাষা অনেক ধরনের হতে পারে। কি ভাষায় কাজ হবে সেটা নির্ভর করে কি ধরনের কাজ করা হচ্ছে কম্পিউটারের সাহায্যে তার ওপর। লোগো হল এই রকমই একটি কম্পিউটার ভাষা। পুরো কথাটি হল Language of Graphic Oriented. এর আবিষ্কর্তা হলেন সেমুর পেপার্ট নামক একজন আমেরিকান অধ্যাপক। লোগো কথার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই ভাষায় চরিত্র অর্থাৎ Graphics । গ্রাফিক মানে হল ছবির মাধ্যমে কোন কিছু প্রকাশ করা অথবা সংগঠিত করা।

যখন কম্পিউটার ভাষার মাধ্যমে কম্পিউটারকে কোন Command বা আদেশ দেওয়া হয় তখন সেই আদেশ বা Command এক বা একাধিক শব্দের মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে। Logo -র ক্ষেত্রে এই শব্দাদেশকে বলা হয় প্রিমিটিভস (Primitves)। তো এই হল লোগো সম্পর্কে প্রাথমিক কথা, এই কথা বলে কাকাই বলল, ‘তাতোন, এবার বলত কম্পিউটার বন্ধ অবস্থা থেকে চালু করা হলে পর পর কি কি হয়ে থাকে কম্পিউটারের মনিটরে’ ? তাতোন বলল, ‘প্রথমে সুইচ অন করলাম, এরপর স্ক্রীনে কয়েকটা লেখা ফুটে উঠল এবং চলে গেল যাকে আমরা বলি ‘সাইন অন মেসেজ’। এরপর দেখা যাবে C:\> এই লেখা আর চিহ্ন। অথাৎ কম্পিউটার রেডি পরবর্তী নির্দেশের জন্য’। ‘এই C অক্ষর আর বাকী চিহ্নগুলি মিলিয়ে যেটা মনিটরে ফুটে উঠল এটাকে কি বলে’, কাকাই জিজ্ঞাসা করল। তাতোন বলল, ‘এটাকে বলে সিস্টেম প্রম্পট’। কাকাই বলল, “ঠিক বলেছিস এবার তোর কাজ হল LOGO কথাটি সিস্টেম প্রম্পটের পরে লেখা আর ‘এন্টার কী’ চাপা। এবার স্ক্রীনে চলে আসবে লোগো প্রম্পট অর্থাৎ (?) চিহ্নিত স্ক্রীন। এখানে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস। লোগো প্রম্পট যেইমাত্র স্ক্রীনে এল অমনি স্ক্রীনটা দুভাগে ভাগ হয়ে গেল। উপরিভাগ হল গ্রাফিক এরিয়া অথাৎ এখানে ছবি ফুটে উঠবে আর নিচের ভাগটা হল টেক্সট এরিয়া। এখানে তোর দেওয়া কমান্ডগুলো ফুটে উঠবে। এবার তুই শুরু কর। প্রথমে অর্থাৎ Show turtle (ST) কমান্ড দিয়ে।

দেখবি স্ক্রীনে একটা ত্রিভূজাকৃতি চিহ্ন বা ফিগার দেখা যাচ্ছে। এটাকে বলে (TURTLE) টার্টেল। প্রথমে স্ক্রীনের ঠিক মাঝ বরাবর উপর দিকে মুখ করে এই টার্টেলটি অবস্থান করে, প্রথমাবস্থায় টার্টেলের এই অবস্থানকে বলে Home (হোম)। টার্টেলের এই অবস্থান বা চলাফেরা সবই হয় কম্পিউটার স্ক্রীনের উপরিভাগে অর্থাৎ (Graphics Area) গ্রাফিক্স এরিয়াতে। আর তুই এই টার্টেল (Turtle) কে চালাতে যে সব নির্দেশ বা কমান্ড দিবি সেটা ফুটে উঠবে স্ক্রীনের নীচের অংশে অর্থাৎ (Text Area) টেক্সট এরিয়াতে। আর যে নির্দেশ তোকে দিতে হবে টার্টলকে চালনা করতে তাকে কি বলবি’? কাকাই জিজ্ঞাসা করল তাতোনকে ‘ওটাকে বলব (Logo Primitives) লোগো প্রিমিটিভস’ তাতোন সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল। বলেই তাতোন কাকাইকে বলল, ‘আচ্ছা আমি টার্টেলকে কোন কোন দিকে চালাতে পারবো’। কাকাই বলল,-“সব দিকেই টার্টেলকে চালানো যায়। তবে তার জন্য আলাদা নির্দেশও আছে। আর এই সব নির্দেশ যদি ঠিকমতো দিতে পারিস তবে এই লোগোর সাহায্যেই তুই যে কোন ডিজাইন বা ছবি অনায়াসে আঁকতে পারবি। তবে এইসব নির্দেশ তোকে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে দিতে হবে। সেই নিয়মের কোন ভুল হলে কম্পিউটার তোকে জানাবে—This is not a Logo Procedure, আবার ধর, তুই টার্টেলকে স্ক্রীনে  কিভাবে আনলি, না ST অর্থাৎ Show Turtle নির্দেশ দিয়ে। কিন্তু এবার তুই যদি টার্টেলকে স্ক্রীন থেকে অদৃশ্য করতে চাস তারও একটা নির্দেশ আছে, সেটা হল Hide Turtle বা HT. HT কমাণ্ড দিয়ে রির্টান কী চাপলেই দেখবি টার্টল অদৃশ্য হল স্ক্রীন  থেকে। কিন্তু তার এঁকে যাওয়া দাগগুলি স্ক্রীনে থেকে গেল। এখন এই দাগগুলোকেও অদৃশ্য করতে হলে তোকে নির্দেশ দিতে হবে CS. অর্থাৎ Clear Screen.’ কাকাই তাতোনকে বলল, তুই নিশ্চয় লক্ষ্য করেছিস টার্টেল যখনই কোন একটা দিকে সরছে  তখন সে পেছনে একটা দাগ রেখে যাচ্ছে। এখন কথা হল টার্টেল কোন দিকে যাবে। সেটা তো আর ওর অর্থাৎ টার্টেলের নিজের ইচ্ছায় হবে না। ওকে বলতে হবে কতটা পথ কোন দিকে যাবে। 

‘প্রথমে টার্টেলকে ধর আমি বা তুই সামনে এগোতে বলব। অর্থাৎ Forward বা সংক্ষেপে FD বলে নির্দেশ দেব। এবার সামনে কতটা যাবে সেটা বলতে হলে নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। মানে কত ধাপ সামনে যাবে। যেমন FD 30 বললে টার্টল সামনের দিকে 30 ধাপ গিয়ে থেমে যাবে পরবর্তী নির্দেশের জন্য আর ত্রিশ ধাপ অবধি একটা লম্বা রেখা টার্টেল এঁকে দেবে স্ক্রীনের উপর।
ঠিক একইভাবে পিছনে আসতে হলে নির্দেশ দিতে হবে Backward বা BK কমান্ড। অথাৎ BK 20 বললে টার্টেল পিছন দিকে 20 ধাপ গিয়ে থেমে যাবে। ঠিক একইভাবে ডানদিক বা বাঁদিকে টার্টেলকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া যায়। যেমন ডানদিকে যাওয়ার জন্য নির্দেশ হল RT আর বাঁ দিকের জন্য LT, অর্থাৎ RT নির্দেশ পেলে টার্টেলের মাথা। ডানদিকে ঘুরে যাবে অনুরূপভাবে LT নির্দেশ পেলে বাঁদিকে। কিন্তু এখানে একটা কথা আছে। কাকাই তাতোনকে বলল, “কি কথা বলতো?” তাতোন বলল, ‘কি কথা’? কাকাই বলল, “RT বা LT কম্যান্ড দিয়ে ডানদিক বা বাঁদিকে টার্টেলকে ঘোরানো তো যাবে কিন্তু কতটা ঘুরবে সেটা ও কি করে বুঝবে? মানে টার্টলকে বলে দিতে হবে কত ডিগ্রী কোণে ওকে ঘুরতে হবে, কি বললাম বুঝলি” ? কাকাই জিজ্ঞাসা করল তাতোনকে, তাতোন বলল, “ডিগ্রীর ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। ডিগ্রীর মাপটাই বা কিভাবে হবে?” কাকাই বলল “তুই নিশ্চয় জানিস যে কোণ মাপার একককে বলে ডিগ্রী।

অর্থাৎ কোণ বা (Angle) মাপা হয় ডিগ্রী দিয়ে। অর্থাৎ 300, 450, 600, 900... এইভাবে। ধর, তুই একটা ঘড়ি দেখছিস্, ঘড়িতে তুই কি কি জিনিস দেখতে পাচ্ছিস্” ?, কাকাই তাতোনকে জিজ্ঞাসা করল। তাতোন বলল, “1 থেকে 12 অবধি সংখ্যা আর একটা ছোট অথাৎ ঘন্টার কাঁটা আর একটা বড় কাঁটা মানে মিনিটের কাঁটা।” কাকাই বলল, “ঠিক আছে, এবার তুই ধরে নে ছোট কাঁটাটা অর্থাৎ ঘন্টার কাঁটা 12 টার ঘরে স্থির হয়ে আছে, খালি মিনিটের কাঁটাটা ঘুরছে। তাহলে কি হবে মিনিটের কাঁটাটা যখন 1 এর ঘরে গেল বড় কাটা আর ছোট কাঁটা মিলে একটা কোণ হল। সেটা হল 300 আবার যখন ছোট কাঁটা 2-এর ঘরে গেল সেটা হল 600 এইভাবে 3 এর ঘরে 900, এইভাবে প্রতি সংখ্যার ঘরে 300 করে বেড়ে যাচ্ছে। তার মানে দুটো কাঁটার মধ্যের যে ফাঁকের সৃষ্টি হচ্ছে তার মাপকে আমরা বলতে পারি কোণ বা ANGEL আর এই কোণের পরিমাপ হল DEGREES. তো এবার তোকে কি করতে হবে? না RT বা LT নির্দেশ দেওয়ার পর টার্টেল কত ডিগ্রী ঘুরবে তার নির্দেশও দিতে হবে। অর্থাৎ RT 90 বললে বা LT 90 বললে টার্টেল ডানদিক বা বাঁদিকে সমকোণে অর্থাৎ 900 কোণে মুখ ঘুরে যাবে। এবার আবার FD 20 বা যেকোন সংখ্যা দিলে তত দূর অবধি ডানদিক অথবা বাঁদিকে টার্টেল এগিয়ে থেমে যাবে। আর অপেক্ষা করবে পরবর্তী নির্দেশের। এইভাবে তুই টার্টেলকে দিয়ে বর্গক্ষেত্রে, আয়তক্ষেত্র ত্রিভূজ বা যেকোন আকৃতির ছবি স্ক্রীনে আঁকতে পারবি।”

এই বলে কাকাই তাতোননকে বলল, “আর দুটো প্রাথমিক কমান্ড আছে সে দুটো হলে লোগোর প্রাথমিক সব কটা কমান্ডই আমাদের জানা হয়ে যাবে। তুই লক্ষ্য করেছিস যখনই টার্টেল নির্দেশিত পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই এর পিছনে পিছনে একটা দাগ স্ক্রীনে ফুটে উঠছে। এখন তুই যদি কোনরকম দাগ ছাড়া টার্টেলকে চালাতে চাস। তাহলে তোকে Pen Up বা PU নির্দেশ দিতে হবে। ফলে কোন রকম দাগ ছাড়াই টার্টেল স্ক্রীনের উপরে চলাফেরা করবে নিদের্শমত। আবার যদি আগের অবস্থার অর্থাৎ টার্টেলকে দাগ দেওয়ার নির্দেশ দিতে হয় তখন বলতে হবে Pen Down বা PD নির্দেশ। এই নির্দেশ পেলে টার্টেল আবার স্ক্রীনের উপর দাগ দিয়ে চলাফেরা করবে নির্দেশ মত।” তাতোন এবার অনেকক্ষণ পর কাকাইকে একটা প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা কাকাই, LOGO র সাহায্যে দাগ দেওয়া বা না দেওয়া সবই তো বুঝলাম কিন্তু আমি একটা কথা ভাবছি ধর যদি আমি একটা দাগের নির্দেশ দিলাম টাৰ্টেলকে কিন্তু দাগ হয়ে যাবার পর দেখলাম সেটা ভুল। সেক্ষেত্রে আমি কি করব’ ? কাকাই বলল, “সে ক্ষেত্রে ভুল সংশোধন করতে হবে। তা জন্যও একটা লোগো প্রিমিটিভ বা নির্দেশ আছে, আর সেটা হল PEN ERASE বা PE. এবার তুই কতটা ERASE করবি সেটাও নির্দিষ্ট করে বলে দিতে হবে। অর্থাৎ ধর তুই FD 50 বলে কোন নির্দেশ দিয়েছিস এবার পুরোটা ERASE করতে হলে তোকে PEBK 50 বলে নির্দেশ দিতে হবে বা PEBK 30 বললে 30 ধাপ অবধি দাগ মুছে যাবে বাকিটা রয়ে বাবে। তো তাতোন ভায়া LOGO তো মোটামুটি শেখা হল এবার তাহলে বাড়ী ফেরা যাক্”, কাকাই তাতোনকে বলে উঠল। 
 তাতোন তো অবাক, ‘ মানে ! আমরা তো বাড়িতেই রয়েছি !’ 
 কাকাই বলল, ‘আমরা তো রয়েছি, কিন্তু টার্টেলকে বাড়ী ফিরতে হবে না ? এত ঘোরাঘুরির পর ওকে ওর বাড়ী মানে HOME এ যেতে হবে না ? তা সেই HOME নির্দেশ দেওয়া মাত্রই দেখবি টার্টেল হাঁফ ছেড়ে বাড়ীর দিকে দৌড় লাগাবে যে অবস্থানেই সে থাকুক না কেন। অর্থাৎ টার্টেল তার প্রাথমিক অবস্থানে ফিরে যাবে HOME নির্দেশ পাওয়া মাত্রই। তবে মানুষের সঙ্গে এই Logo TURTLE এর তফাৎ কি জানিস”? কাকাই জিজ্ঞেস করলো তাতোনকে। তাতোন বলল, ‘কি’? কাকাই বলল, “ মানুষ হলে একবার বাড়ী ঢুকলে হয়তো আর কিছুতেই ওকে আবার বের করা যাবে না। কিন্তু Logo Turtle কে বললেই সে আবার এক পায়ে খাড়া নির্দেশ শোনার জন্য।”