
শকুনটা তখন থেকে আমার পা ঠুক্রে যাচ্ছে, ক্রমশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলেছে আমার পায়ের পাতা, জুতোদুটো আগেই ফালাফালা করেছে, মোজাও টুঁটাফুঁটা, এখন পেয়েছে পায়ের পাতাদুটি। বারবার পাখিটা এসে আক্রমণ করছে, তারপর তীব্র ডানা ঝটপটিয়ে পাক খেল কয়েকবার আমার চারপাশে, তারপর আবার ফিরে এসে ঠোকরানো শুরু। এমন সময় রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে এক ভদ্রলোক আমার অবস্থা দেখে এগিয়ে এলেন। সব দেখে ভারি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে কেনই বা মিছিমিছি আমি এই যন্ত্রণা সহ্য করছি।
‘আমি অসহায়’, উত্তর দিলাম, ‘যখন প্রথম পাখিটা এসে আমায় আক্রমণ করে আমি তাড়াতে চেষ্টা করলাম খুব, এমনকি ওর গলা টিপেও ধরেছিলাম, কিন্তু কী জানেন এদের অসীম শক্তি, শেষে আমার মুখ লক্ষ্য করে তেড়ে আসল, তাই ভাবলাম পা’টাই বিসর্জন দিই বরং। দেখুন, প্রায় খেয়ে ফেলেছে পুরোটাই, সামান্য আর অবশিষ্ট আছে।’
‘উদ্ভট খেয়ালের বশে তুমি নিজেকে এমন কষ্ট দিচ্ছ’, তিনি বললেন, ‘একটা মাত্র বুলেট, তাতেই শকুনটার ভবলীলা সাঙ্গ হবে।’
‘সত্যি? আপনি পারবেন?’
‘আলবাত পারব, আনন্দের সাথে’, ভদ্রলোক বললেন, ‘তুমি একটু দাঁড়াও, বাড়ি থেকে আমার বন্দুকটা নিয়ে আসি, এই আধঘণ্টা মতো অপেক্ষা করতে পারবে?’
‘আমি জানি না’, তখন আমি যন্ত্রণায় শক্ত হয়ে আসছি, তারপর বললাম, ‘একবার একটু দেখুন না প্লিজ, যদি সম্ভব হয়।’
‘বেশ’, ভদ্রলোক বললেন, ‘যত তাড়তাড়ি সম্ভব আসছি।’
এই কথাবার্তা যখন চলছে, লক্ষ্য করলাম শকুনটা শান্তভাবে তা শুনছে এবং ক্রমাগত চোখ ঘুরিয়ে একবার আমাকে আরেকবার ওই ভদ্রলোককে দেখে চলেছে। বুঝলাম, আমাদের কথা সে সবটাই বুঝতে পেরেছে। ঠিক তখনই পাখিটা তার ডানা মেলল, তারপর আমার দিকে মুখ করে মাথাটা সামনে ঝুঁকিয়ে উড়ে গেল অনেকটা পেছনে তীব্র অভিঘাত সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে, পরমুহূর্তেই তীরবেগে ছুটে এসে তার ছুঁচলো ঠোঁটখানা আমূল ঢুকিয়ে দিল আমার মুখের ভেতরে, অনেকটা গভীরে। আমি সটান হয়ে পড়ে যাচ্ছি মাটিতে, সমস্ত যন্ত্রণা যেন কোথায় মিলিয়ে যাচ্ছে, মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি পাখিটাকে আমার রক্তে চিরকালের মতো ডুবে যেতে দেখে, আর তার নিস্তার নেই, কারণ সেই রক্ত তখন সকল গভীরতা পূর্ণ করে সমস্ত কূল প্লাবিত করে দিচ্ছে।