ধনপতি সাঁপুই এর ছেলের নাম দীন দয়াল - বাবলু গিরি

আমার ঠাকুরদারা ছ‍্যালো চাষি-
বাবা কোলকেতায় বিরাট চিমনিওয়ালা
কারখানার চাকরি ছেড়ে-
এখন গেরামে হুকো টানে ।
পড়শিরা ও যথাযথ-
খবর পেলাম ধম্মতলায় চাঁদের হাট বসবে
আমায় নে যেতে হবে গেরামের ভবঘুরেদের,
ওখানে নাকি বেপ্লবের কথা হবেখন ।
আমি ধনপতি সাঁপুই জনমজুর খাটি ।
সবাই হেঁটে হেঁটে মুখোশ পরে নেবো ।
এইভাবে দুপুর হেঁটে যাবে, রাত্তির টলতে টলতে
নিজেকে মনে হয় একবার যদি নেতা হয়া যায়
আমি ধনপতি সাঁপুই, নেকাপড়া জানিনেকো -
রেতের বেলা ছায়াছবি আসে মনে-
রাজা হইয়েছি,রাজ মুকুট - আর ধনপতি সাঁপুই
আমার প্রজা, খাজনা আদায়ের লগ‍্যে
বাঁইধিয়া আনছি ।
ধনপতি কঁদতেছে আর বলতেছে হুজুর এইবারটা মাপ কইরা দ‍্যান, চার চারটে ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেতে পেয়ে মরুম ।
আমি রাজা ধনপতি বলছি, আর খাজনা না দিলে আমিই তরে মারুম ।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় -
আমার ঠাকুরদা ছেলো চাষি-
বাবা কোলকেতার কারখানার পিয়ন, এখন হুকো টানে -আমি ধনপতি সাঁপুই জনমজুর ।
মা আদর করে নাম রেখেছেলো ধনপতি ।
আজকাল কাজ নেইগো, সরকারি একশ দিনের কাজের লগ‍্যে মিছিল করতে লাগে।
কলকেতায় গিয়ে বেপলবের ভাষণ শুনতে লাগে •••তার উপর পঁচাশ দিনের পয়সা দিবে।
যখন দিগন্ত জুড়ে
কণকপ্রভা ধানক্ষেত পেকে ওঠে,
কৃষ্ণা দ্বাদশীর চাঁদের মতো কাস্তে হাতে উত্তপ্ত সূর্য মেখে মেখে আমি যখন ধান কাটি।
মনেহয় এই স্বর্ণ ফসল আমার দুবেলা নাইবা জুটবে, তবুতো আমার ভারতবাসি অভুক্ত থাকবেনা ।
আমি যখন সম্রাটের মতো শব্দ নিয়ে "রাজমিস্ত্রির" কাজ করি গগনচুম্বি ফ্ল‍্যাটবাড়িতে, মনে হয় আহা যেমন রাতের জোৎস্না ঢুকে পড়ে আমার ভাঙা ঘরে।
এনারা কি তেমন ভাগ‍্যবান হবেন যে হুড়মুড়িয়ে বর্ষা ঢুকে পড়বে আমার ঘরের মতো ।
আমি শুধুই দেখে যাই, হীরে চমকানো গয়না,
তাদের গাড়ি,প্রাসাদ,আভিজাত‍্যের পাহাড় ।
তাদের পোষাক দেখি, চলন বলন, মনে
হয় আমরা অন‍্য কোনো পৃথিবীর মানুষ, ওদের সেবা করার জন‍্য,জন্মেছি এই পৃথিবীতে ।

আমি ধনপতি সাঁপুই জনমজুর, আমার ঠাকুরদা ছেলো চাষি,বাপ কোলকেতার চিমনিওয়ালা কারখানার পিয়ন।
আমার ছেলের নাম দীন দয়াল সাঁপুই ।